১৯৪১ সালের ১১ ই ডিসেম্বর জাপানের ১৫ ডিভিশন সৈন্য বাহিনীর বার্মা আক্রমন করার মধ্য দিয়ে এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে জাপানিজ বাহিনীর প্রত্যক্ষ যুদ্ধের সুচনা হয়। আগ্রাসী জাপানিজ সৈন্য বাহিনীর হাত থেকে এই ভারতীয় উপমহাদেশ রক্ষা এবং হারানো রাজ্য বার্মা পুনরুদ্ধারের মিশনে জেনারেল উইলিয়াম স্লিমের নেতৃত্বে মাঠে নামে ব্রিটিশ বাহিনী। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানিজ বাহিনীর সঙ্গে ব্রিটিশ বাহিনীর বেশ কিছু রক্তক্ষয়ী লড়াই হয় যার মধ্যে অন্যতম কোহিমার যুদ্ধ ,আরাকানের যুদ্ধ ইত্যাদি । ১৯৪৫ সালের ৬ই মে জেনারেল ফ্রাঙ্ক মেসারভের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনীর রেঙ্গুন দখলের মধ্য দিয়ে এই ফ্রন্টে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। বিভিন্ন ফ্রন্টে নিহত ব্রিটিশ সৈন্যদের উপযুক্ত মর্যাদায় সমাহিত করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় বেশ কিছু ওয়ার সিমেট্রি যার দুটোর অবস্থান আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশে। একটি চট্টগ্রামে অপরটি কুমিল্লা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে ময়নামতিতে অবস্থিত। যারা ষ্টিফেন ষ্পিলবার্গের সেভিং প্রাইভেট রায়ান সিনেমাটা দেখেছেন তারা হয়তো এই ধরনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ওয়ার সিমেট্রির সঙ্গে পরিচিত আছেন। সবমিলিয়ে ৭৩৬ জন সৈন্যকে সমাহিত করা হয়েছে ময়নামতির এই ওয়ার সিমেট্রিতে। এলাকার লোকজনের কাছে এটি ইংরেজদের কবরস্থান নামে পরিচিত হলেও এখানে শুধু ইংরেজরাই নয়, ঘুমিয়ে আছে ওয়েষ্ট আফ্রিকান ডিভিশন, নাইজেরিয়ান ডিভিশনের অনেক আফ্রিকান সৈন্যও। নিজের জীবন দিয়ে ব্রিটিশদের সাম্রাজ্য রক্ষায় অবদান রাখলেও আফ্রিকার এই কালো মানুষদের অতুলনীয় বীরত্বের কথা মনে রাখেনি সাম্রাজ্যবাদীদের তৈরী এই নিষ্ঠুর ইতিহাস। এই নিষ্ঠুর ইতিহাস উপযুক্ত সম্মান দেয়নি যুদ্ধে অংশ নেয়া ভারতীয় সৈন্যদেরও। ময়নামতির এই ওয়ার সিমেট্রির এক কোণায় সমাহিত করা হয়েছে কিছু পরাজিত জাপানিজ সৈন্যকে। ভিনদেশী এই সৈনিকদের সমাধি গুলো পড়ে আছে অযত্নে, অবহেলায়। বীর ভোগ্যা এই বসুন্ধরায় পরাজিতদের আর কেইবা সম্মান দেয় …
আফ্রিকান রাইফেলসের কর্পোরাল কিলিয়ানি ইয়েঙ্গানার সমাধিফলক
কিছুদিন আগে কুমিল্লায় ঘুরতে গেলে গিয়েছিলাম সেখানে, ছবিগুলোও সেখানে তোলা। যারা কখনো যান নি সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ময়নামতির এই ওয়ার সিমেট্রি থেকে, ভাল লাগবে। কল্পনায় হয়তো নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন সাত দশক আগের সেই ঝঞ্ছা বিক্ষুদ্ধ দিনগুলোতে। মাত্র বিশ বছর বয়সে প্রান হারানো সার্জেন্ট ষ্ট্যাফোর্ডের সমাধির দিকে তাকিয়ে হয়তো উপলব্ধি করতে পারবেন মানুষের সাম্রাজ্য বিস্তারের এই যুদ্ধ গুলো কতটা নির্মম, কতটা নিষ্ঠুর, কতটা বিষাদময় …’
১৮টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
এটির কথা পড়েছি অনেক
ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও দেখতে যাওয়া হয়নি
যাবো একবার ভাবছি।
শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ।
আবু খায়ের আনিছ
জিসান ভাই আমার কথাগুলোই বলে দিয়েছে। যাওয়া ইচ্ছা আছে কোন এক সময়।
অপার্থিব
ঘুরে আসেন । আশা করি ভাল লাগবে। ধন্যবাদ।
অপার্থিব
ইতিহাসের সাক্ষী এমন জায়গাগুলোতে গেলে অন্য রকম একটা অনুভূতি তৈরী হয়। সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন।
ধন্যবাদ।
মরুভূমির জলদস্যু
এখানে গিয়েছি আমি। যায়গাটা এতটাই নিশ্চুপ আর ঠান্ড যে আলাদা একটা অনুভূতি এনে দেয়।
অপার্থিব
এটাকে একটা স্মৃতিসৌধ বলা চলে। পরিবেশটাও তাই সবসময় শান্ত স্নিগ্ধ রাখা উচিত। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
নীতেশ বড়ুয়া
চট্টগ্রামের মানুষ তাই চট্টগ্রামের ওয়ার সেমিট্রিতে যাওয়া হয়েছে।
সেখানে সবাই ঘুরতে যায়, শান্তভাবে দেখে… পরিবেশটাই অন্যরকম সেখানে… আফ্রিকান ডিভিশনের কেউ আছেন কি না খেয়াল করে দেখিনি… এইবার গেলে চেক করতে হবে।।
ভাল লাগলো পোস্টটি 🙂
অপার্থিব
চট্টগ্রামেরটাতে যাওয়া হয়নি। নেক্সট টাইম চিটাগং গেলে সেটিও দেখে আসবো। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
অনেক বছর আগে গিয়েছিলাম। জীবনের প্রথম সিমেট্রি দেখা। ক্যামেরা ছিলোনা সাথে, কিন্তু ডায়েরী ছিলো। কাগজ-কলমের স্মৃতিগুলো এখনও আছে। ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি পোষ্টের জন্যে।
অপার্থিব
সম্ভব হলে আপনার স্মৃতিগুলোও এই ব্লগে লিখে ফেলুন। পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
দীপংকর চন্দ
রণসমাধিক্ষেত্রের অদ্ভুত আবহ কেমন যেন আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে!!!
উপস্থাপনে ভালো লাগা। অনেক।
শুভকামনা জানবেন। অনিঃশেষ।
অপার্থিব
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। -{@
শুন্য শুন্যালয়
সুন্দর করে বর্ননা করলেন অপার্থিব, দেখবার আগ্রহ জমিয়ে রাখলাম। দেশে গেলে ঢু দেব আশা করছি।
সমাধিগুলোর সম্মান কে দেবে বলুন? আমরা মুখ ঘুড়িয়ে নেয়া জাতি, সহজেই সব ভুলে যেতে পারি।
অপার্থিব
আমরা মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভুমিগুলোকেই ঠিকমত সম্মান দেই না আর এগুলো তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভিনদেশী সৈনিকদের সমাধি। ব্রিটিশ অর্থায়নে এই ওয়ার সিমেট্রির রক্ষনাবেক্ষন হয় বলে এর পরিবেশ কিছুটা ভাল তবে দর্শনার্থীরা এই সমাধিগুলোকে কতটা সম্মান দেয় তা আর বলাই বাহুল্য। ধন্যবাদ।
অরুণিমা
এমন সিমেট্রি দেখলে মন কেমন শান্ত হয়ে যায়।শান্ত এক পরিবেশ,সবাই নিশ্চিন্তে ঘুমায়।
অপার্থিব
মর্মান্তিক স্মৃতি বিজড়িত এই সিমেট্রিগুলোর পরিবেশ শান্ত স্নিগ্ধই রাখা উচিত …তবে কুমিল্লার এই সিমেট্রির সাম্প্রতিক পরিবেশ খুব একটা ভাল বলে মনে হয় নি আমার কাছে। ধন্যবাদ।
জাহিদ হাসান শিশির
আমি এটা নিজের চোখে দেখে এসেছি। তবে সময়ের অভাবে পুরো সিমেট্রি ঘুরা হয়নি।
কামাল উদ্দিন
এফিটাফের কথাগুলি পড়লে মনটা বিষন্ন হয়ে উঠে। চট্টগ্রামেরটায় গিয়েছিলাম, ময়নামতি যাওয়া বাকী