
দুই
কুকুর মহিলাটিকে চেপে ধরে বসলেন। অনেক রুদ্ধশ্বাস অনেক বাক যুদ্ধ। একাকী খোলা প্রান্তরে হরিণ আর বাঘের লড়াই। একে অপরের বাঁচার লড়াই। এক পর্যায়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হলো। শব্দ শোনে গ্রামের উৎসুক মানুষেরা যখন এগিয়ে এলেন কিন্তু তখন চেয়ারম্যানকে পাওয়া গেলো না। যদিও মহিলাটির শরীরে ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেলো।
কিন্তু তাতে মহিলার বিপদ আরও বেড়ে গেলো। চেয়ারম্যানের মতো মান্যগণ্য ব্যক্তির নামে অপবাদ দেওয়ার জন্য পরদিন সকালে পঞ্চায়েত বসিয়ে মহিলাকে জুতার মালা পড়িয়ে পুরো গ্রাম ঘুরানোর জন্য সিদ্ধান্ত দিলেন সবাই মিলে।
মুশফিক অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়েন। এতোক্ষণ ধরে তাদের সবকথা শুনেছিলো সে। চেয়ারম্যানের মোটা নাক ভাঁজ হয়ে লাঠিমের মতো গোল। একটা বিষধর সাপকে পেলে উৎসুক মানুষ যেভাবে আক্রমণ করে, যেভাবে পালানোর জন্য ব্যর্থ মাথা তোলে সাপটি সে কিন্তু তেমন পারছে না। তার জীবন একটা কবর হাহাকার আর শূন্যে ভিটা। চেয়ারম্যানের চোখ থেকে নিক্ষিপ্ত তীর যেন ধমকের সুরে মেয়েটাকে জীবন্ত কবর দিয়েছে।
এলাকার মানুষ যারা বিচারকার্য সম্পন্ন করতে এসেছেন তারা যেন একেকটা পাষণ্ড জেলের নিষ্ঠুর জাল। তাদের কথার জাল ছিদ্র করার মতো শক্তি ও সাহস কোনটাই ছিলো না মহিলার।
শুধু শ্রাবণের বৃষ্টির মতো কান্না তার ভিজিয়ে ছিলো তার নিজেরই বুক। অগত্যা কান্না করছে বলে ফজল বেপারি ভেংচি দিয়ে বলেন, “কান্না থামা নষ্টা মেয়ে, এলাকাটা তুই নষ্ট করে দিলে, আবার কান্না চোখের পানি, পানি দিয়ে কী হয়, কিচ্ছু হয় না শয়তান মহিলা! ”
বিচারকার্য শেষ হওয়ার পরে যে যার মতো চলে যাচ্ছে। কিন্তু বিধবা মহিলাটির উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তি নেই সে নিঃশেষ হয়ে পড়ে রইলো মাটিতে।
অদূরে বসে কাঁদছে তার দুটো শিশু সন্তান তাদের চোখে যে ভয় সে ভয় বোধহয় দোজখেও নেই। যেন তাদের চোখের সামনে তাদের মা’কে টেনে হিঁচড়ে খেয়ে ফেলছে হিংস্র বাঘ এবং তারা কোনভাবে বেঁচে আছেন।
মরুভূমিতে কী এতো তৃষ্ণা থাকে? এতো অনাবৃষ্টি এতো অশান্তির পোড়া রোদ। একটু পানির জন্য কাতরতা। পানি ! পানি।
কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব সবাইকে ডেকে বললেন, শয়তান মহিলাকে কেউ পানি দিবে না। যে পানি দিবে তার বিচার আমি করব।
চোখের সামনে ঘটনাগুলো দেখছিলেন মুশফিক কিন্তু পানি না দেওয়ার বিষয়টা সে আর সহ্য করতে পারলেন না। তার কান থেকে ধোঁয়া বের হওয়া শুরু হলো। রাগের সময় তার নিঃশ্বাসের বাতাস ফুটতে তাকে চারশো ষাট ডিগ্রি তাপমাত্রায়।
মুশফিক চেয়ারম্যানের দিকে তাকিয়ে দিলারাকে টেনে উঠালেন এবং পানি পান করালেন। চেয়ারম্যান বললেন , এর পরিণাম কী জানিস তুই মুখপোড়া?তোকে আমি গ্রাম ছাড়া করব। এই কথা শোনে মুশফিক গোখরোর মতো ফুলে উঠলো।
মুশফিক বললেন, “আপনার আর কি করার বাকী আছে চেয়ারম্যান সাহেব, আপনি তো সবই করেছেন, যা করা দরকার তা কিছুই করেননি আপনি! কিন্তু যা দরকার নেই তার সব-ই আপনি করেন করছেন। এর জন্য একদিন আপনাকে মাশুল দিতে হবে।”
এই কথা শোনার পর চেয়ারম্যান উদ্যোত হাতে আঘাত করতে এলেন মুশফিককে, মুশফিক চোখ গরম করে ঘোরে দাঁড়ালেন।মুশফিকের রাগান্বিত নিঃশ্বাস গিয়ে পড়লো চেয়ারম্যানের উপর।
চেয়ারম্যান মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন এবং সাথে সাথে তার মৃত্যু হলো। ফজল বেপারিও পড়ে গেলেন তার নাক-মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো রক্তের ফোয়ারা। এ-ই দৃশ্য দেখে সবাই দৌড়ে পালালেন। সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন শুধু মুশফিক আর বিধবা মহিলাটি।
৮টি মন্তব্য
রিতু জাহান
প্রথম এক পর্ব আছে?
গরম নিঃশ্বাসে মৃত্যু!!
প্রথম পর্ব থাকলে এখানে ট্যাগ করে দিন।
তাইলে গল্পটা বুঝতে সুবিদে হবে।
দালান জাহান
https://sonelablog.com/%e0%a6%a6%e0%a7%82%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%bf/
দালান জাহান
প্রথম পর্বের লিংক
রিতু জাহান
আচ্ছা,,,,
আরজু মুক্তা
এইরকম মুশফিক ঘরে ঘরে তৈরি হোক। সমাজটা গেছে একেবারে।
শুভ কামনা ভাই
দালান জাহান
ধন্যবাদ কবি শুভেচ্ছা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মুশফিকদের জন্য শুভকামনা। এমন প্রতিবাদ জেগে উঠুক ঘুমন্ত অবস্থা থেকে। চমৎকার উপস্থাপন। অফুরন্ত শুভকামনা ও শুভেচ্ছা
দালান জাহান
ধন্যবাদ কবি শুভেচ্ছা