
‘দুর্গা’ শব্দটিকে যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব এটি
দ+উ+র+গ+আ – এই ভাবে সৃষ্ট।
প্রতিটি বর্ণ নিজস্ব অর্থ বহন করছে।
১.দ অক্ষর – দকারং দুর্গতিহারং দুরন্তব্যাধিনাশনং দুর্গমেদুঃখদারিদ্রনাশায় দকারায় নমো নমঃ।
( অর্থাৎ যিনি দুর্গের নাশকারিনী, দুর্গতিহরণকারিনী , দুরন্তব্যাধিনাশকারিনী , দুঃখদারিদ্রনাশকারিনী, ভবরোগ বিনাশকারিনী সেই ‘দ’ কারকে নমস্কার)
২.উ অক্ষর – উকারং উগ্রতারেষং উগ্রশক্তিসমন্বিতং উচ্চৈঃপদপ্রদাতারং উকারায় নমো নমঃ।
(মহা-উগ্রশক্তিসমন্বিত উগ্রতারা যিনি , যিনি নিজ উচ্চপদ অর্থাৎ পরমপদপ্রদাত্রী, সেই ‘উ’ কারকে নমস্কার)
৩.র অক্ষর – রকারং রণমত্তারং রতিসন্তাপহারকং রসনারসসংযুক্তং রকারায় নমো নমঃ।
(যিনি রণমত্ত, রতিসন্তাপহারক, রসনাতে রস সংযোগকারিনী ‘র’কারকে নমস্কার)
৪.গ – গকারং গুণসম্পন্নং গ্রহদোষনিবারকং গুহ্যপদপ্রদাতারং গকারায় নমো নমঃ।
(গুণসম্পন্না, গ্রহদোষনিবারণকারিনী , যিনি পরম গোপনীয় নিজ ব্রহ্মপদপ্রদাত্রী সেই ‘গ’কারকে নমস্কার।
৫.আ – আকারং আত্মনাসক্তং আপদাপদবিগ্রহং আশুসন্তোষণং দেবং আকারায় নমো নমঃ।
(তদগতমনা, আত্মতত্ত্বে আসক্ত ব্রহ্মস্বরূপা , সর্ব আপদেরও আপদস্বরূপবিগ্রহ , কালেরও কাল যিনি, আশু অর্থে শীঘ্র সন্তোষকারিনী ‘আ’কারকে নমস্কার।
দুরন্ত ব্যাধিনাশকারিনী, দুর্গতি হরণকারিনী, শীঘ্র সন্তোষকারিনী, মায়া দুর্গের নাশকারিনী, সমস্ত বিপদেরও বিপদ যিনি, কালেরও কাল যিনি, যার চরণ ব্রহ্মপদ, সেই হলো ভগবতী দুর্গার স্বরূপ l
দেবীর গমনাগমন-
“রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া ঘোটকে শনিভৌময়োঃ।
গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং নৌকায়াং বুধবাসরে।।”
অর্থাৎ,দেবীর আগমন বা গমন রবি বা সোমবার হলে দেবীর যাত্রা গজপৃষ্ঠে;শনি বা মঙ্গলবার হলে অশ্বারূঢ়া অবস্থায়;বৃহস্পতি বা শুক্রবারে দেবীর গমনাগমন দোলায় ও বুধবারে নৌকার মাধ্যমে।
ফল-১.গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা।
২.ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে।
৩.দোলায়াং মড়কং ভবেৎ।
৪.নৌকায়াং শস্যবৃদ্ধিস্তথাজলম্।
দেবীর আগমন সপ্তমী তিথিতে এবং গমন দশমীতে।
এ বছর(১৪২৭ বঙ্গাব্দ)সপ্তমী শুক্রবার ও দশমী সোমবার। সুতরাং,দেবীর আগমন দোলায় ও গমন গজে।
দেবীর অস্ত্রের মাহাত্ম্য।।
ত্রিশুল: মহামায়ার হাতে ত্রিশূল তুলে দিয়েছিলেন মহাদেব৷ শোনা যায়, ত্রিশূলের তিনটি ফলার আলাদা আলাদা অর্থ রয়েছে। মানুষ তিনটি গুণ, তমঃ, রজঃ ও সত্যকে ব্যাখ্যা করে এই তিন ফলা৷
গদা: যমরাজ দিয়েছিলেন দিলেন কালদণ্ড বা গদা৷ যা আনুগত্য, ভালবাসা এবং ভক্তির প্রতীক।
বজ্রাস্ত্র: দেবরাজ ইন্দ্র দিয়েছিলেন বজ্রাস্ত্র৷ মায়ের হাতের এই অস্ত্র দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক।
সাপ: শেষ নাগ দিয়েছিলেন নাগহার৷ বিশুদ্ধ চেতনার প্রতীক হল এই সাপ।
অগ্নি: অগ্নিদেব দিয়েছিলেন এই অস্ত্র৷ জ্ঞান এবং বিদ্যার প্রতীক এই অগ্নি।
শঙ্খ: বরুণ দিয়েছিলেন শঙ্খ৷ যা জীব জগতে প্রাণের সৃষ্টি করে।
চক্র: মায়ের হাতে চক্র তুলে দিয়েছিলেন বিষ্ণু৷ যার অর্থ হল সমস্ত সৃষ্টি ও জগতের কেন্দ্রে অধিষ্ঠান রয়েছেন দেবী দুর্গা ।
তির-ধনুক: বায়ু দিয়েছিলেন ধনুক ও তির৷ উভয়ই ইতিবাচক শক্তির প্রতিক৷
পদ্ম: দেবীর হাতে ব্রহ্মা তুলে দেন পদ্ম৷ পাঁকে জন্মায় পদ্ম। কিন্তু তবু সে কত সুন্দর। তেমনই মায়ের আশীর্বাদে যেন অন্ধকারের মধ্যেও আলোর আবির্ভাব হয় সেই বার্তাই দেয় পদ্ম ফুল।
তলোয়ার: তলোয়ার হল মানুষের বুদ্ধির প্রতীক৷ যার জোরে সমস্ত বৈষম্য এবং অন্ধকারকে ভেদ করতে পারে মানুষ৷
..
প্রণমী মা আগমনী
~ প্রদীপ চক্রবর্তী
শরত সাজে ফুটছে শিউলি,
ঐ শোনা যায় ঢাকের ধ্বনি।
শরতের সুশোভিত সদ্যভোরে,
শঙ্খনাদের ধ্বনিতে মেঘ জমেছে ঘুমঘোরে।
শুভ্র কাশফুলে মৃন্ময়ী মায়ের চিন্ময়ী রূপের আগমনী,
রামচন্দ্রের অকাল বোধনে অসুরবিনাশিনী।
মন্ত্রমুগ্ধে দীক্ষিত মা পরমেশ্বরী,
চক্ষুদানে পরিপূর্ণ দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী ।
অকাল বোধনে নতুন ছোঁয়া,
বেলপাতাতে আজ মায়ের মনোলোভা।
সিংহ গ্রীবায় বেষ্টিত মা ত্রিনয়নী,
দশরূপে দশপ্রহরণধারিণী।
ষষ্ঠীসন্ধ্যায় লালপাড়ে শাড়ি,
মা এসেছেন এবার বাপের বাড়ি।
শুভ্র ললাটে রক্তাক্ত সিঁদুর তাঁহার,
কুমকুম আবরণে চন্দ্রহার।
সপ্তমীতে ঢাকের বাদ্যি,
অষ্টমীতে মায়ের অঞ্জলি।
নবমীতে খুশীর জোয়ার আর ঘোরাঘুরি,
দশমীতে সবাই মিলে সিঁদুর খেলাখেলি।
ষষ্ঠীর এই পূূণ্য লগ্নে,আমন্ত্রণ অধিবাসে,
প্রণমী জানাই মাগো তোমার পাদপদ্মে।
বছর বছর এসো পূজোর সময় হলে,
এ মিনতি করি মাগো তোমার চরণকমলে।
মঙ্গল করো, রক্ষা করো, হে মুক্তকেশী,
এই বিশাল ধরণী।
.
শুভ মহাষষ্ঠী।
সকলকে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা।
১৭টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
শুধু বলছি , আপনাকে শারদীয় শুভেচ্ছা এই মহাষষ্ঠী তে।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ শারদীয় শুভেচ্ছা, দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
জিসান শা ইকরাম
কিছুই জানতাম না এ সম্পর্কে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে এমন পোষ্ট দেয়ার জন্য।
শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা তোমাকেও।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ শারদীয় দুর্গাপূজাট শুভেচ্ছা, দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
রোকসানা খন্দকার রুকু
পড়লাম কিন্তু বেশ কঠিন লাগলো॥ আপনারা এতকিছু কিভাবে মনে রাখেন।
শারদীয় শুভেচ্ছা রইল। শুভ কামনা। শুভ সকাল।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা, দিদি।
ভালো থাকুন অনেক।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা, দিদি।
ভালো থাকুন অনেক।
আরজু মুক্তা
সকল কলুষতা দূর হোক।
শারদীয় শুভেচ্ছা
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ শারদীয় দুর্গাপূজাট শুভেচ্ছা,দিদি।
ভালো থাকুন অনেক।
সকলের মঙ্গল হোক।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ, অনবদ্য দাদা। মহা সপ্তমীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো। লেখাটি প্রিয়তে নিলাম। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দিদি।
শুভ শারদীয় দুর্গাপূজাট শুভেচ্ছা।
ভালো থাকুন অনেক।
সুপায়ন বড়ুয়া
দুর্গা শব্দের বিষদ জেনে ভাল লাগলো।
শুভ শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা।
ভালো থাকুন। শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনাকেও শারদীয় শুভেচ্ছা।
ভালো থাকুন, দাদা।
তৌহিদ
এতকিছু জানতাম না, আজ জানলাম আপনার লেখার মাধ্যমে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর বিশ্লেষণমূলক লেখা আমাদের উপহার দেবার জন্য।
শারদীয় দূর্গা পূজার শুভেচ্ছা রইল দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনাকেও শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা।
ভালো থাকুন, দাদা।
সাবিনা ইয়াসমিন
একটা উৎসবকে কেন্দ্র করে এত কিছু মনে রাখতে হয় এই পোস্ট না পড়লে বুঝতেই পারতাম না! অনেক কিছু জানা হলো, শেখা হলো।
তথ্য সম্মৃদ্ধ পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা রইলো 🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দিদি।
শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা রইলো।
অনেক ভালো থাকুন।