আলোচিত সেই ডিসি কেলেঙ্কারির সমাধানটা কী এভাবে ধর্মীয় বিধানের মধ্যেই খোঁজা হবে? বিয়ের মাধ্যমেই এর সমাধান হয়ে যাবে? প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদবীটির ভার কী তবে এতোই হালকা? এর কী কোনই প্রভাব পড়বে না জনমনে?
ঘটনাটি তো কোন সাধারণ নাগরিকের জায়গা থেকে ঘটেনি। রীতিমতো দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে কর্মস্থলে অবস্থানকালীন ঘটিত ঘটনা। এখানে পদবীটি থেকেও বড় কথা হচ্ছে কর্মস্থলে অবস্থানকালীন পদবীটির প্রশাসনিক মর্যাদা। এতো সম্মানিত একটি পদবী নিয়ে কর্মস্থলে অবস্থানকালীন সময়ে এরকম একটি ঘটনার জন্ম দেয়া মানে মর্যাদাপূর্ণ পদবীটির অসম্মান করা। প্রশাসনিক পদবীটি ঘিরে যে গুরুগাম্ভীর্যতা বিরাজমান, তা হালকা করা। এটা কেবলই ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যাপার নয়, একজন নাগরিকের জায়গা থেকে তা ঘটেনি। দায়িত্বের বাইরে তিনি একজন সাধারণ নাগরিক কিন্তু যখন তিনি দায়িত্বরত, তখন তিনি গুরুত্বপূর্ণ এ পদবীকে ঘিরে আবর্তিত। তিনি তখন প্রশাসক। তো, সাধারণ নাগরিকের প্রশাসক যদি এতো পাতলা মানের হন, তো নাগরিক তাঁর নিয়ন্ত্রণকে আমলে নেবে কেনো? ধর্মীয় বিধানে সমাধান টানার আগে রাষ্ট্রযন্ত্রকে এ বিষয়গুলো ভেবে দেখা উচিত।
এভাবে সমাধান টানলে এ ধরণের অপরাধপ্রবণতা আরো বাড়বে নিশ্চিত। ধর্মীয় বিধান দিয়ে ব্যক্তিক পাপের ভার লাঘব হয়, কিন্তু রাষ্ট্রীয় অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে রাষ্ট্রীয় বিধিব্যবস্থায় হাঁটতে হবে।
ঘটনাটি এখন আর ব্যক্তি পর্যায়ে নেই, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে হলে আমার কোন বক্তব্য ছিলো না।
এবার আসি অন্যকথায়।
আমরা সকলেই জানি, অনেক অফিসেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দ্বারা অধীনস্থ নারীকর্মীরা হ্যারেজমেন্টের শিকার হয়ে থাকেন। পদাধিকারবলে উর্ধ্বতনদের অনেকেই সে সুযোগটা নিয়েই থাকেন। অনেক অসহায় নারীকেই এ পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। এহেন পরিস্থিতিতে পড়লে যারা নিজেদের গা বাঁচাতে এড়ানোর চেষ্টা করেন, তারা বিভিন্ন রকমের হেনস্থার শিকার হয়ে থাকেন। এমনও হয় যে, হেনস্থার সীমাহীন পর্যায়ে উপনীত হলে কেউ সুযোগ থাকলে শিকারির হাত থেকে বাঁচতে চাকুরী থেকে অব্যাহতি নেন। আবার কেউ কোনরকমে টিকে থাকতে চাইলেও ক্ষিপ্ত শিকারির কলাকৌশলের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে অব্যাহতি নিতে বাধ্য হন। আর কেউবা জীবন জীবিকার যাঁতাকলে পিষ্ট বলে শিকারির জালে ধরা দিয়ে বাধ্য হয়ে অন্তর্জালায় দগ্ধ হন। মূলত এখনো আমাদের সমাজে নারীদের ‘মানুষ’ দৃষ্টিতে না দেখে ‘মেয়ে মানুষ’ নজরেই দেখা হয়। স্থুল এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়তো আরো এক শতাব্দী সময় লেগে যাবে।
আবার এর অন্যদিকটাও আছে। উচ্চাভিলাষী কিছু কর্মজীবী নারীও আছে, যাদের দ্রুত আসমান ছোঁয়ার নেশা। তারা খুব সহজেই সিঁড়ি ভাঙতে কর্মস্থলের উর্ধ্বতনের দিকে নজর দেয়। কাউকে কাউকে দেখা যায়, একবার হাতের মুঠোয় নিতে পারলে রীতিমতো ভেড়া বানিয়ে ফার্স্টলেডীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। শুনেছি, আলোচিত এই ঘটনার নারী চরিত্র সাধনাও নাকি তেমনই একজন ফার্স্টলেডী ছিলো। যে কিনা একজন অফিস সহায়ক হয়েও বিশাল ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলো। সারা অফিসে সেই হয়ে উঠেছিলো মুল নিয়ন্ত্রক।
যাহোক, যদি সত্যিই বিয়ের মাঝেই এর সমাধান খোঁজা হয়, তবে এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রশাসনিক এ পদবীটির ভার, মর্যাদা, গুরুগাম্ভীর্যতা হ্রাস পাবে। রাষ্ট্রীয় আইনে দ্বীতিয় বিবাহের ক্ষেত্রে সহজ অনুমতি আদায়ে প্রথম বউকে এভাবে মাইনকা চিপায় ফেলা যাবে। ব্ল্যাকমেইলিং এর মাধ্যমে স্বার্থসিদ্ধি করতে সাধনাদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকবে।
কাজেই, রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবশ্যই ভাবতে হবে।
২০টি মন্তব্য
শিরিন হক
সুন্দর লিখেছেন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ।
নাজমুল আহসান
ধর্মকে বর্ম করার প্রবণতা জামাতিদের যেমন আছে, বামাতিদেরও আছে।
এই ডিসি শুয়োরের পরিকল্পনাটা কী হতে পারে আমি আন্দাজ করতে পারছি। যেহেতু আলোচনা হয়েছে, চাকরি চলে যেতে পারে, সে কৌশলে বিয়ের পরিকল্পনা করেছে। আমার বিশ্বাস এর আগের স্ত্রীও এই পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত আছে। এই জাতীয় শুয়োরদের বউ-বাচ্চাও শুয়োরই হয়।
সুতরাং বিয়েটা হচ্ছে তিন পক্ষের সম্মতিতেই। এখন বিয়ে দিয়ে চাকরি রক্ষা করবে, পরে সুযোগ বুঝে যার ঘরে সে ফিরে যাবে। ল্যাঠা চুকে গেল।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
চাকুরী রক্ষা করার শর্ত বিয়ে! এখানেই আমার আপত্তি। বিয়ে ধর্ম রক্ষার শর্ত হতে পারে। কিন্তু কর্মস্থলে যে অপকর্মটি ঘটেছে এর যথাযথ শাস্তি না হলে আগামীতে নারীদের জন্য কর্মস্থল নিরাপদ হবে না। আর পদবীর মর্যাদা তো চিরতরে হারাবেই।
তৌহিদ
মানুষের নৈতিক স্থলন কতটা হলে এমন হতে পারে ভাবা যায়!! প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই লোকটি যে ঘৃণিত কাজ করেছে, তার বিয়েতে মত দিয়ে( যদি সত্যিই দিয়ে থাকে!) তার স্ত্রীরও সমান নৈতিক স্থলন ঘটেছে কিন্তু। সবাই ক্ষমতায় টিকে থাকা আর চেয়ারের লোভে রোগাক্রান্ত।
এতদিনে দেশের গোয়েন্দা সসংস্থার রিপোর্টে ডিসির এই অন্যায় কর্ম অবশ্যই প্রমাণিত হয়েছে। সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিদের উচিত ছিলো তাকে বহিঃস্কার করা। অথচ হয়তো হতে যাচ্ছে তার উলটো। সরকারি অফিসে নিজস্ব বিশ্রামাগার বাংলাদেশের কোন সংবিধানে আছে জানতে চাই?
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখাটি ভালো হয়েছে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বউয়ের নৈতিক স্খলন ঘটেছে আমি মানবো না। নারী যখন মা হয়ে যায় তখন আর তার নিজস্বতা থাকে না, এখানেই সে দুর্বল। তার সমস্ত কিছু আবর্তিত হয় সন্তানদের ঘিরে।
আর অন্য কথাগুলোর সাথে সম্পূর্ণই একমত পোষণ করছি।
শামীম চৌধুরী
মানুষের বেসিক কোনদিন পরিবর্তন হয় না।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এজন্যই বোধকরি আগেকার সময়ে পদ পদবীর ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস একটা মুখ্য শর্ত ছিলো।
নিতাই বাবু
এসব খারাপ মানুষদের শুধু চাকরি গেলেই অন্তত আমি খুশি নই! আমি খুশি হবে এরূপ কর্মের আরও দশজনের চেয়ে এই বদমাইশ ডিসির ডবল সাজা হলে। তা হলো,
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমার আপত্তি এক জায়গাতেই, কর্মস্থলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পদবীর অমর্যাদা করা, এর শাস্তি অবশ্যই হওয়া উচিত।
মনির হোসেন মমি
দুনিয়া সব স্বার্থের পাগল। কে কখন ভাল মন্দ বুঝা বড় দায়। খোজঁ নিলে এ রকম অজস্র ঘটনা এ দেশে প্রায় ঘটে থাকে।এ নিয়ে হৈচৈ করেও তাদের (নারী-পুরুষ) নৈতিক পরিবর্তন আনা যাবে না।আর পদটির কথা বলছেন! এ দেশে কোন পদটিতে পবিত্রতা আছে বলা যাবে? মানুষের নৈতীক পরিবর্তন বড় বেশী প্রয়োজন। চমৎকার লেখা ফেবুকে পড়েছিলাম। ইদানিং কম লিখছেন ব্লগে একটু সময় বের করে আসুন আমরা আপনার লেখা মিস করছি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমি জানি এরকম বহু হয়, হয়ে আসছে সৃষ্টির আদিকাল থেকেই। আপত্তি এক জায়গাতেই, সেটা কর্মস্থল।
মনির হোসেন মমি
হুম সহমত।
ইঞ্জা
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আপনার ভাবনাটা মোটেই অমূলক নয় আপু, সম্পূর্ণ একমত আপনার সাথে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা আপু
আরজু মুক্তা
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন
মারজানা ফেরদৌস রুবা
??
সাবিনা ইয়াসমিন
নীতিহীন কাজে নৈতিকতা খোঁজা হাস্যকর। যারা এসব করে বেড়ায় তাদের কাছে স্বার্থসিদ্ধ করাটাই মূল লক্ষ্য। কে কয়টা বিয়ে করবে, কে কতগুলো পরকিয়ায় লিপ্ত হবে, এটা কার কেমন ব্যাক্তিগত, এসব নিয়ে তর্কের শেষ নেই। তবে পদ আর পদবীর অমর্যাদা রুখতে হলে ডিসি সাহেবেকে অব্যাহতি দেয়া দরকার মনে করি। সম্মানিত স্থানের মর্যাদা যে করতে পারেনা তার দ্বারা ভালো কিছু আশা করা যায়না।
শুভ কামনা রুবা আপু। 🌹🌹
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ঠিক, যে মর্যাদা রাখতে পারে না, তাকে সেখানে রাখা উচিত নয়।