একফালি তিক্ততা বেড়েই চলেছে ব্যাক্টেরিয়ার মতন.. আগামীকাল সকালের অপেক্ষা,ভোর হতেই ছুঁড়ে ফেলব অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু ডাষ্টবিনে।পাথুরে দেয়ালে ছত্রাকও আমার চাই না। বৃথা চেষ্টা গুলো বুকশেলফে সাজায়ে রেখে কি লাভ বল ? এরচেয়ে ভালো ,শরীরের শিরা গুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে অবসর সময় পার করা ।
স্বপ্ন বুনতে গেলেই বুঝি, কোথায় যেন ভুল । হাতের উলটো পিঠে অংক কষি কিন্তু ফলাফল শূণ্য । তবে কি স্বপ্ন ভুল চোখে দেখেছিলাম? মিথ্যা আস্ফালন রেখে, আয়নার সামনে গভীর দৃষ্টি ঐ আমির সাথে । নাভি ছিঁড়ে আসে অট্টহাসি।
ধীরে ধীরে ডুবে যায় মুখোশের তলে।আজ সব কিছুর মুক্তি। বিষ দংশনে নীল ওষ্ঠাধর । ছুরির আঘাত তখনও ঝুলে আছে বুকপকেটে ।আধো বুজা চোখের দিকে তাকিয়ে আঁৎকে উঠি! কি মায়াভরা দু’টো চোখ ! অব্যক্ত কথার আত্নচিৎকারে সম্বিৎ ফিরে পায়। পাইপের মতন বহুদূর চলে গেছে অন্ধকার টানেলের শেষ প্রান্ত…..
বিদ্যুৎ ঝলকে বিস্ফোরিত আলো , সে আলোয় দেখি গতকাল। বাবার আঙ্গুল ধরে হাঁটা ছোট ছোট পা। মায়ের আদরে বোনা উলেন সোয়েটার। আমাদের লাল ইটে সাজানো বাড়িটা মনে পড়ে। গেটের দেওয়াল আঁকড়ে ধরে ঝুলত কঞ্চিলতা। ফুলের গন্ধে মৌমাছির সাথে প্রজাপতিও আসত রঙ্গিন পাখনা মেলে। ছোটবেলার দস্যিপনা , ঐ রঙ্গিন প্রজাপতিকে হারিয়ে ছূটে যেতাম ছাতিম গাছের দিকে।তখনো আমি ভালো করে চিনিনা গাছের ডা্লে দৌড়ানো কাঠবিড়ালি। চিনতাম ভালোবাসা , এই মাত্র ছেঁড়া একটা ছাতিম পাতায় যতটুকু ধরে।
জানালার ওধারে লেবুগাছটায় হলুদ কুড়ি এসেছে , হাত দিয়ে ছুঁয়ে ঘ্রাণ নিই। হাতের ছোঁয়ায় নড়েচড়ে উঠে গাছ।প্রায়ই পাতার আড়ালে বসে একটা পাখি গান গায়, পাখির হাতে সুরের নোট । পাশ দিয়ে ভেসে যায় নচিকেতার গান ।কখনও জিজ্ঞাসা করা হয়নি, পাখি তোর নাম কি ? নাম না জানা পাখিটা ভিন্ন রঙ্গের পালক নিয়ে ঘুরত।যেদিন দু’আঙ্গুলের ফাঁকে রঙ্গিন পেন্সিল ধরতে শিখলাম , সেদিন বুঝলাম।পাখি যে রঙ নিয়ে আসে তার নাম ভালোবাসা।
সেদিনের সেই অনাকাংখিত প্রহরে হারিয়ে গেল কিশোরী মনের রঙ্গিন ফ্রক। হারিয়ে গেল চঞ্চলতা।বুকের উপর হাঁচড়ে উঠে টনটনে সন্ধ্যা।দেয়ালের প্লাস্টার গড়িয়ে নামে বিকট রাত । আলোছায়ার ভিতর পেঁচিয়ে ধরে ভয় সমস্ত শরীর।
এখন সহজেই জানালার কার্নিশ ছুঁয়ে যায় হাত। ছুঁয়ে যায় বিপরিতে হেটে যাওয়া লাজুকতা। শুধু ছুঁতে পারিনি তাকে। তানপুরা থেমে যায়। জীর্ণপাতা খসে পড়ে নিঃশব্দে।
আঙ্গুলের নির্দেশের কাছে হার মানলো বাড়ন্ত শরীর। সমাজের নিয়মে বেঁধে গেল জীবনের সীমানা। নারী হবার দায়ে দন্ডিত অসহায় মেয়ে।ইচ্ছা করে থামিয়ে দিই ত্বকের নীচে বেড়ে চলা রক্ত মাংস ধমনী।
২১টি মন্তব্য
তানজির খান
সমাজ ব্যবস্থা নারীকে বন্দী করে রেখেছে শত সহস্র কোটি বছর ধরে।সময় যদি আসে মুক্তির তাকে আর কে আটকাবে? শৈশব ফিরে আর আসবে না, যাপিত জীবনের কোন সুখ মুহুর্তও ফিরে আসবে না,না ফিরে আসবে মেয়াদত্তীর্ন বেদনা অথবা ভালবাসা।এই লেখাটির সাথে অনেক লেখা যোগ হবে,পত্রিকায় রেডিও টিভিতে হাজারো কণ্ঠ এক সাথে উচ্চারিত হবে তবেই না আগামী প্রজন্ম মুক্তি পাবে।
শুভ কামনা রইল -{@
সাঞ্জনা চৌধুরী জুঁথী
আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাটাই এমন যে চাইলেই মেয়েরা অনেক কিছু করতে পারে না।তাদের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষার অনেক নিরব্র নিঃশব্দে গলা টিপে হত্যা করতে হয়।
তবে আমি আশাবাদী, সময় বদলাচ্ছে। সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গিও ধীরে ধীরে বদলে যাবে একদিন…
আপনার প্রতিও রইল অনেক শুভকামনা -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
কতোটা অব্যক্ত যন্ত্রণা নিয়ে লেখাটা, অনুভব করছি রে।
আমাদের তবুও কিছুই করার থাকেনা। যেনো অমনই জীর্ণ এক দশা বয়ে বেড়ানোর জন্যে আমাদের পরিচয় আমরা নারী। যুগের পর যুগ ধরে তো এমনই চলে আসছে। আমাদের শৈশব-কৈশোর স্থির। ছেলেমানুষী সভ্যতা পরিপক্ক পুরুষের চরিত্রের সাথে চলতেই থাকে। কিন্তু কোনো পরিপূর্ণ নারীর জন্যে তেমন কিছুই নেই। শারীরিক গঠন, বয়সী বদল সব মিলিয়ে নিজস্বতা হারাতে হারাতে একসময় এসে দেখা যায় “অমন মানায় না এ বয়সে” অথবা “মহিলার ভাব দেখো। নিজেকে যে কি মনে করে! বয়স হয়েছে কতো ভাবে-সাবে যেনো ছুড়ি।” আমাদের সমাজ-ব্যবস্থার মাথা যেনো পুরুষ। সিমন দ্য বোভেয়ার-এর একটি কথা না বললেই নয়, “Society, being codified by man, decrees that woman is inferior, she can do away with this inferiority only by destroying the male’s superiority.”
তবুও জানি একদিন সব পাল্টাবে। এই যেমন আমি কখনো নিজেকে বদলে যেতে দেইনি। আর তুইও তো। বুকের ভেতর একটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠলো। ভালো থাকিস। -{@ (3
সাঞ্জনা চৌধুরী জুঁথী
নারী হয়ে জন্মানোই যেন আজন্মের পাপ। যত বিধি নিষেধ, যত নিয়ম কানুনের বেড়াজাল সব নারীদের জন্যই বরাদ্দ। সে নারীই সুখি যে যর ধারন করে, বহন করে সয়ে যায় ধারিত্রীর মতন।
সময় পাল্টাচ্ছে, সুফল পাবে আমাদের উত্তরসূরি নারীরা। ভালো থাকিস পাখি
(3
নীলাঞ্জনা নীলা
ফুল খারাপ থাকতে দেখেছিস কখনো?
নীলাঞ্জনা নীলা
ওহো ভুলে গেছি। আপনি করে বলবো, ফুল আমাকে কি কখনো আপনি খারাপ থাকতে দেখেছেন? 😀
সাঞ্জনা চৌধুরী জুঁথী
নারী হয়ে জন্মানোই যেন আজন্মের পাপ। যত বিধি নিষেধ, যত নিয়ম কানুনের বেড়াজাল সব নারীদের জন্যই বরাদ্দ। সে নারীই সুখি যে যর ধারন করে, বহন করে সয়ে যায় ধারিত্রীর মতন।
সময় পাল্টাচ্ছে, সুফল পাবে আমাদের উত্তরসূরি নারীরা। ভালো থাকিস পাখ 🙂
শুন্য শুন্যালয়
কোন লেখায় মন দিতে পারছিনা। লেখাটি কেমন সাঁই সাঁই করে টেনে নিয়ে গেলো নীচ পর্যন্ত যেখানে নিয়মেই থেমে যেতে হয়েছে। লেখার প্রত্যেকটি লাইন খুব যত্ন নিয়ে লিখেছেন, “চিনতাম ভালোবাসা , এই মাত্র ছেঁড়া একটা ছাতিম পাতায় যতটুকু ধরে”, মুগ্ধ হয়েছি সাঞ্জনা। পুরো লেখাটিতেই দহন। (y)
সাঞ্জনা চৌধুরী জুঁথী
সময় করে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাছি।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এখন সহজেই জানালার কার্নিশ ছুঁয়ে যায় হাত। ছুঁয়ে যায় বিপরিতে হেটে যাওয়া লাজুকতা। শুধু ছুঁতে পারিনি তাকে। তানপুরা থেমে যায়। জীর্ণপাতা খসে পড়ে নিঃশব্দে।
এমনটি আমরা কখনো চাইনা তবুও ঘটে যায় ঘটে আর এটাই হয়তো জীবনের নিয়ম।
সুন্দর মনধরা লেখাটি -{@
সাঞ্জনা চৌধুরী জুঁথী
যাক! আশস্ত হলাম। আমার লেখা আপনার মনে ধরাতে পেরে। ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা অন্তহীন…
ছাইরাছ হেলাল
আপনার লেখার হাত তো চমৎকার, উপস্থাপন তাও এক কথায় অনন্য।
আসলে যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই নিষ্পেষণ সহসাই উপ্ড়ানো যাবে তা মনে করি না,
এ বোঝা আমাদের বয়ে যেতেই হবে,
হয়ত তা কোন একদিন ভিন্নতায় ভিন্ন রূপ নেবে, আমরা অপেক্ষা করব।
সাঞ্জনা চৌধুরী জুঁথী
এত সুন্দর কমেন্টের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
মরুভূমির জলদস্যু
ফুল আর পাখির জন্য শুভকামনা অহরহ
সাঞ্জনা চৌধুরী জুঁথী
ফুল আর পাখির তরফ থেকে আপনাকে অনেক অভিনন্দন। -{@
জিসান শা ইকরাম
এমন ভাবে শব্দের বুনন খুব কম দেখেছি আমি
পড়ে গেলাম নিমিষেই
আর্তনাদকে এভাবেই প্রকাশ করতে হয়।
শুভ কামনা।
সাঞ্জনা চৌধুরী জুঁথী
আপনার কমেন্ট মন খুশি করল।মন দিয়ে পড়ার জন্য ধন্য হলাম। 🙂
অরুনি মায়া
অনেক অনেক অনেক সুন্দর উপস্থাপন |
চমৎকার লিখেছেন |
অভিমানের এমন বহি:প্রকাশ খুব সহজ নয় |
এত সুন্দর একটা লেখা উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ আপু |
সাঞ্জনা চৌধুরী জুঁথী
ভালোলাগলো আপনাদের কিছু দিতে পেড়ে… সাথেই থাকবেন আশা করি। অভিন্দন…
ব্লগার সজীব
লেখা পড়ে কিছুটা মন খারাপ হলো আপু।
সাঞ্জনা চৌধুরী জুঁথী
সেকি! পরবর্তিতে মন ভালো করার লেখা পোষ্ট করব। 😀 এবার খুশি?