ঈদের আগের দিন।
রিকশা সেন্টার পয়েন্ট এর সামনে থামল।
টাকা দে মার্কেট করবো।
আমার তথৈবচ অবস্থা।
আল্লাহ যানে কতো খসে।
দোয়া দুরুদ পড়ে ব্যাগে হাত দিলাম।
বিশ টাকার একটি বিশাল নোট উঠে এল।
দিতেই। আল্লাহ তোরে ভালো রাখুক।
মনে মনে বললাম। দিলেই দোয়া।
না দিলে চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা।
কাজিন অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি।
অফিস থেকে ফিরে মাকে নিয়ে বের হলাম।
মালিবাগ মোড় থেকে শুরু।
একজন কে দিলাম। বরাদ্দকৃত দশ টাকা।
আজ মনে হয়, এদের বিস্ফোরণ ঘটেছে।
মগবাজার মোড় পর্যন্ত যেতে আরো চার জন।
ভাগ্য ভালো। বললাম – একজন নিয়ে গেছে।
সুন্দর একটি হাসি দিয়ে চলে গেল।
নিয়ে গেছে বলতেই। আর চাইলো না।
বুঝলাম নীতি বোধ আছে।
ফেরার পথে আবার দেখা।
দেখলেই অন্য দিকে তাকিয়ে ভাবনায় ডুবে থাকি।
তবু রক্ষা হয় না। রিকশা বেইলী রোডের জ্যামে আটকা।
সামনে একজন এসে দাঁড়ালো।
সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বললাম। আপনাদের একজন নিয়ে গেছে।
যাক, এ যাত্রায় দশ টাকা জীবন পেল।
একদিন বাসে একজন শিক্ষার্থীর কাছে টাকা চাইলো।
মেয়েটি বলল – আমি তো স্টুডেন্ট।
তোর বাপে তোরে টাকা দেয় না। তোর বাপে তোরে দেয় তুই আমাগো দিবি। নাছোড়বান্দা। মেয়েটির কাছ থেকে নিয়ে ছাড়লো। মনে মনে ভাবলাম। দেরি করে লাভ নাই।চাওয়ার আগেই দিয়ে দেই। বরাদ্দকৃত দশ টাকা।
ঢাকা চট্টগ্রাম যাওয়া আসার সময়। ট্রেনেও হামলা।দেখলেই চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরতাম।যাওয়ার সময় বলতো। দেখ দেখ টাকা দেওয়ার ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। নাহ, কষ্ট করে ঘুম ভাঙতে হতো না। লাভের লাভ দশ টাকা বেঁচে যেত।
এতক্ষণ যাদের কথা বলছিলাম। তাদের খপ্পরে পড়ে নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সমাজে যারা তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া নামে পরিচিত। এরা কেন জানি না মেয়ে সেজে থাকতে মনে হয় ভালোবাসে। এদের অত্যাচারে মাঝে মাঝে অতিষ্ঠ লাগে। আবার কষ্ট হয়। এরা পরিবার, পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা ভাবে বাস করে।
১৭টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
আপনি কিন্ত উল্লেখ করেননাই কাদের কথা বলছেন। ভিক্ষুক ও তো ধরে নেয়া যায়! কিন্ত আমি ধরে নিচ্ছি আপনি থার্ড জেন্ডার নিয়ে বিরম্বনার কাহিনী তুলে ধরেছেন। এই কিছুদিন আগেই পড়েছিলাম এমন চক্করের গ্যাঁড়াকলে। এদের খিস্তি শুনলে স্রেফ চাকু দিয়ে সমস্ত রাগ উগড়ে কোপাইতে ইচ্ছা করে আমার।
আবার কিছু আছে খুবই শিক্ষিত ভদ্র আচরন করে। ওদের জন্য তখন ঠিকঠাক মায়া লাগে।
হালিমা আক্তার
ধন্যবাদ আপা। আপনি ঠিকই ধরেছেন। থার্ড জেন্ডার সম্পর্কে লিখেছি। আপনার মন্তব্য পড়ে, আরেকটু এডিট করে দিলাম। এদের বিরম্বনার শেষ নেই। কেউ টাকা না দিলে যা করে বর্ণনা করা যায় না। চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
অনন্য অর্ণব
@বন্যা আপু, আমি একবার এক হিজড়ার খপ্পরে পড়ছিলাম। উপকূল এক্সপ্রেস এ নোয়াখালী যাচ্ছিলাম। চৌমুহনী স্টেশন থেকে হিজড়া উঠে, তার এক স্টেশন পরেই আমার গন্তব্য। আহা সে কি বিচ্ছিরি কাণ্ড। টাকা চাইলো, দেবো না বলতে না বলতেই কাপড় খুলে নেংটো হয়ে যাচ্ছিলো। পরে অবশ্য ওটাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম। সাথে আরো তিন চারটা ছিলো, ট্রেন থামতেই সব দৌঁড়ে পালাইছে।
হালিমা আক্তার
রেলে ওরা ভালোই ঝামেলা করে। টাকা না দিয়ে উপায় থাকে না। টাকা না দিলে ওই অস্ত্র ব্যবহার করে। কি বিচ্ছিরি অবস্থা।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
এ বিপদ আজ সর্বত্র আপুা
আগে নিতো চেয়ে টাকা, আর এখন নেয় জোর করে!
কারো বাড়িতে নতুন বাচ্ছা হয়েছে খবর পেলে তো রক্ষা নেই।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
হালিমা আক্তার
ওদের চাওয়া মানে দিতেই হবে। না দিলে রক্ষা নাই। এদের মধ্যে কিছু দেখেছি কাজ করে খায়। তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অধিকার যার হারিয়ে যায় সেই বোঝে এর কষ্ট কতোটা। বাবা মা জন্মদিয়ে দায়িত্ব নেয় না। সমাজ নেয় না। তো, এরা করবে কি?
যদিও আজকাল ভং ধরা কিছু আছে। তবে পরিবার বা রাষ্ট্র এদের দায়িত্ব নিলেই এসব বন্ধ হবে।
আমি অ বশ্য ভালো করেই দেই। এমনি তো কতো টাকাই যায়।
হালিমা আক্তার
ওরাও পরিবারের সাথে থাকতে চায় না। যখন বুঝতে পারে ওরা স্বাভাবিক নয়। তখন নিজ থেকেই পরিবার ছেড়ে দেয়া। আমিও দেই। কিন্তু এক ঘন্টার রাস্তায় যদি ৮/১০ বার আসে তখন আর উপায় থাকে না। আবার না দিয়ে পারা যায় না। ইদানিং মনে হচ্ছে বেশি উপদ্রব করছে। ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
অত্যাচারে অতিষ্ট লাগে খুব, আবার ওদের কষ্টের দিক ও ভাবনায় আসে।
এর শেষ কোথায়-কীভাবে তা ও বুঝতে পারি না।
হালিমা আক্তার
হয়তো একসময় অবস্থার উন্নতি হবে। এদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করা যায়। হয়তো চাঁদাবাজি কমে আসবে। ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
নার্গিস রশিদ
প্রথম থেকেই যদি ওরাকে লেখাপড়া, ট্রেনিং আর কাজের ব্যাবস্থা করা হতো তা হলে তারা এরকম আলাদা ভাবে ঘুরে বেরাতনা। আলাদা করা থেকে আইন দিয়ে বন্ধ করা হলে সমাজ থেকে বিছিন্ন হতো না মনে হয়।
হালিমা আক্তার
আমি যতটুকু জানি। আর দশজনের মতো স্বাভাবিক নয়। জানতে পারলে। ওরা পরিবার থেকে বের হয়ে আসে। ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি চাহিবা মাত্রই দিয়ে দেই। বিরক্ত হই না, আর ওরাও অত্যাচারী হয় না। আমি মনে করি ওরা যতটা অত্যাচার(?) করে তারও বেশী সহ্য করে। ঝিনুকেরও নিজেকে বাঁচাতে শক্ত খোলসের আশ্রয় নিতে হয়, আর ওরাতো তৃতীয় মানুষ। মানুষরুপী অমানুষদের হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য ওদেরও খোলস লাগে।
শুভ কামনা 🌹🌹
হালিমা আক্তার
চাইলে দিতেই হয়। ওদের চাওয়া টা যখন সাধ্যের বেশি হয়। একজন শিক্ষার্থীর কাছে মাপা টাকা থাকে। পাড়ার দোকান থেকে ওদের চাহিদা মতো দিতে হয়। আমার কলিগের কাছ থেকে কিছুদিন আগে ৫০০০ টাকা নিয়ে গেছে। বাসায় কেউ ছিলো না। বাসায় ঢুকে ভাবির কাছ থেকে ছোট শিশুকে নিয়ে আর দিবে না। আমার কলিগ ফোন পেয়ে বাসায় যায়। পরে ৫০০০ টাকা দিলে তার শিশু সন্তান কে ফিরিয়ে দেয়।
শুভ কামনা রইলো।
রিতু জাহান
আল্লাহ্!
আপুউউ আমার একবার ব্যাগ নিয়ে দৌড় দিছিলো রংপুরে।
পরে সে ব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বের হলে দিতেই হয়। আমার ক্লাস টেনে পড়ুয়া ছেলেকেও ছাড়ে না।
তবু ভালো থাকুক তারা।
হালিমা আক্তার
সত্যি কথা, ওদের দেখলে ভয় করে।তাই চাইতেই দিয়ে দেই। চট্টগ্রাম সি আর বি তে প্রতিদিন দিতাম। একদিন দিতে চাইনি। দেখি ভয়ানক অবস্থা। এরপর থেকে চাইলে দিয়ে দেই। সমাজ বিচ্ছিন্ন ওদের জন্য খারাপ লাগে। শুভ কামনা রইলো।
রিতু জাহান
আমারও খারাপ লাগে।
তাই কিছু বলি না। তবে ওদের উগ্রতা আছে এটা অস্বীকার করা যাবে না।