ঢাকায় আমার প্রথম পা শাহাবাগ মোড়ে জাতীয় যাদুঘরের সামনে। এসেছিলাম শিক্ষা সফরে। যাদুঘর দেখলাম। দূর থেকে দেখলাম পি জি হসপিটাল (আই পি জি এম আর)। ঢাকায় প্রথম পা রাখার অনুভূতিটা পুরাতন ডায়েরীতে পাওয়া যেতে পারে। আমার কাছে এটি ছিল আমার অনেক পাওয়ার মধ্যে একটি। ছোটবেলায় একটা নাটক হতো “ঢাকায় থাকি”। খুব ভাবতাম কবে ঢাকা দেখব! তখন ভিউকার্ড-পোস্টকার্ডের যুগ। শাপলা চত্বর, অপরাজেয় বাংলা, শহীদ মিনার, সংসদ ভবন, স্মৃতিসৌধ – এ সবের ভিউকার্ডগুলো আমার শুধু ভালই লাগতো না, আমি সংগ্রহও করতাম। সেই ঢাকা ঘুরে বেড়ানোর জন্য ঘন্টা দুয়েকের মত ফ্রি টাইম দেয়া হলো। আসলে টাইমটি ছিল আমাদের মধ্যেকার ঢাকা পার্টিদের (যাদের বাসা ঢাকায় ছিল) পরিবারের সাথে একটু দেখা করতে দেয়ার সুযোগ মাত্র। আমার কোথাও যাবার নেই – ঢাকায় আমি কাউকে চিনি না। আমার এক বন্ধু বলল “চল, বাসে বসে না থেকে আমার সাথে চল আমাদের বাসায়”। আমি রাজি হয়ে গেলাম। ঢাকায় কারও বাসায় প্রথম যাচ্ছি এও আমার কাছে সেদিন বেশ অনুভূতির ব্যাপার ছিল। একটা বাসে উঠে পড়লাম। নামার সময় ও সম্ভবত আট আনা (৫০ পয়সা) দিয়েছিল স্টুডেন্ট বলে – শাহাবাগ থেকে দৈনিক বাংলা। ওর বাসা ছিল আরামবাগ।
ফের আমার ঢাকায় আসা এইচএসসির পরে। মাঝখানে একবার এসেছিলাম দুই রাতের জন্য। সে ছিল আমার জীবনের অনেক কষ্টের রাতের একটি, আজ তা আর বলব না। কিন্তু আমি চাইলেই সেই রাত, সেই আমাকে, সেই আমার বন্ধুদের, আমার বন্ধুদের গার্ডিয়ানদের, আমার মাকে খুব স্পষ্ট দেখতে পাই, শুনতে পাই। সে যাগগে, চিঠিযোগে আগেই ঠিক করা ছিল আমি ঢাকায় উঠব ডি-১৩, সিভিল এভিয়েশন কলোনী, পুরাতন এয়ারপোর্ট এই ঠিকানায় – আমার বড় ভাইয়ের বান্ধবীর বাবার বাসায়। ভাইয়া চীন থেকে চিঠিতে মাকে অবশ্য জানিয়েছিল তাদের সম্পর্কের কথা এবং সে তাকেই বিয়ে করবে দেশে এসে তাও জানিয়েছিল। ব্যাপারটা আমার পছন্দ না হলেও এ ছাড়া আমার আর পথ ছিল না ঐ সময়ে। যদিও বলেছিল আমাকে কিছু আনতে হবে না তবুও আমি একটা কাঁথা এনেছিলাম আমার মা’র গন্ধমাখা। মজার ব্যাপার হলো কাঁথাটি এখনও বর্তমান আমার বাসায় কুড়ি বছর পরেও।
তখনও শুভেচ্ছা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছি কি না ঠিক মনে নেই, তবে ঢাকা আমি চিনি না। চিনি শুধু ফার্মগেট, পুরাতন এয়ারপোর্ট আর দৈনিক বাংলা, সাথে জনতা ব্যাংক ভবন আমার নিশানা হিসাবে। জনতা ব্যাংককে ডানে রেখে বামের গলিতে ঢুকতে হয় আমার সেই বন্ধুটির বাসায় যেতে। আরেকটি জায়গা আমাকে মনে রাখতে হতো ওর বাসায় যেতে – আরামবাগ ক্লাবের পিছন দিয়ে পায়ে হাঁটা পথে যেতে হবে – তখন বক্স কালভার্ট রোড হয়নি। আগাতে থাকলে এক সময় পড়বে একটি ক্যাসেটের দোকান – অলির ভিসিআর, ভিসিপির দোকান। বাকিটা আর মনে রাখতে হয় না।
দুটি বাস খুব ভাল করে চিনতাম তিন নম্বর বাস ফার্মগেট যাবার জন্য আর আট নম্বর বাস দৈনিক বাংলা যাবার জন্য। তিন নম্বর বাস আরও কতদূর যায় আমার তেমন জানা ছিল না। একদিন গেলাম সেই বন্ধুর বাসায়। অনেকক্ষণ থাকলাম। রাতে খেলামও ওদের বাসায়। রাত একটু বেশি হয়েছে – দশটার কাছাকাছি হবে। বন্ধু আমাকে এগিয়ে দিতে এলো। কোন কোন গলির ভিতর দিয়ে ও একটা চওড়া রাস্তায় নিয়ে এলো। রাস্তার ওপাশে একটা বড় বাস দাঁড়ানো। “দোস্ত, দৌড় দে। উঠে পড়, ডাইরেক্ট চলে যাবি” বলেই বন্ধুটি একটু ধাক্কা দিল আমাকে। আমিও কিছু না বলে বাসে উঠে গেলাম। বাসের সামনে লেখা ‘৬ নং’। এ বাসে আমি কখনও চড়িনি। বাস ছেড়ে দিল। আমি খুব চেনার চেষ্টা করছি আমার পার হয়ে আসা রাস্তার কোথায় আছি আমি। নাহ, কিছুই চেনা লাগছে না। আমি চিন্তায় পড়লাম, কোন বাসে উঠলাম আমি? কোন ভুল করছি না তো? আমি কিছুই চিনতে পারছি না কেন? বাস একটু দূরে গিয়ে আবার থামল। এবার আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম। আমি শাপলা চত্বরে কেন? ওর বাসায় যেতে তো কখনও শাপলা চত্বর পড়েনি! তাহলে আমি কোন বাসে? এই চত্বরে তো অনেক রাস্তাই মিশেছে দেখছি! আমি তো যাব ফার্মগেট, পুরাতন এয়ারপোর্ট। এ তো যাবে গুলশান শুনছি! আমি কিছু একটা ভুল করছি। আমি মনে হয় হারিয়ে গেছি! খুব ভয় করছে আমার। কাউকে জিজ্ঞাসা করতেও আমার ভয় করছে, যদি বুঝে ফেলে আমি হারিয়ে গেছি! নাহ, কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। আগে বাস থেকে নামতে হবে আমাকে। আমি হারিয়ে গেছি। হুড়মুড় করে বাস থেকে নেমে গেলাম। প্রথম শাপলা চত্বরে পা আমার।
এদিক ওদিক তাকালাম। নাহ, কিছুই চিনি না আমি। রাস্তার ধারে এক দোকান থেকে সিগারেট জ্বালিয়ে ভাবছি কাউকে জিজ্ঞেস করি “ভাই, এখান থেকে ফার্মগেট যাওয়ার বাস আছে কি না”। কিন্তু তার আর প্রয়োজন হলো না। দেখলাম একটা ছোট বাস থেমেই ডাকছে “ফারামগেট, ফারামগেট, ডাইরেক্ট ফারামগেট”। ধড়ে যেন পানি পেলাম। সিগারেট ফেলেই উঠে পড়লাম বাসে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বাস ছেড়ে দিল। আমার ভয় একটু কমেছে কিন্তু চিন্তা রয়েই গেছে, আমি এখনও চিনতে পারছি না কেন? আমার চেনা নিশানার কিছুই চোখে পড়ছে না কেন? হ্যাঁ! মেলাতে পেরেছিলাম প্রেসক্লাব আসার পরে। শাহাবাগ আসার পরে বুকে আরও জোর পেলাম। নেমে গেলাম ফার্মগেট, তখন বাজে রাত সাড়ে দশটার মত। হারিয়ে যে যাইনি এই খুশিতে তিন নম্বর বাস বাদ দিয়ে হেঁটেই চলে গেলাম পুরাতন এয়ারপোর্ট, আমার ডি-১৩। আন্টি সেদিন নাকি খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন “ছেলেটা কিছু চেনে না, কোথাও হারিয়ে গেল না তো?”
এখন বুঝি সব। ঘটনাটি মনে পড়লে মাঝে মাঝে হাসি পায়। আমার সেই সন্দেহের ‘৬ নং’ বাসটি যে কমলাপুর হয়ে আরামবাগ ঘেঁসে মতিঝিল-গুলিস্তান হয়ে আমার পুরাতন এয়ারপোর্টের বুকের উপর দিয়ে গুলশান যায় তা আমার জানা না থাকাটাই ভাল হয়েছে। তা না হলে ঢাকায় হারিয়ে যাওয়ার স্বাদ আমি পেতাম কি করে?
৩৬টি মন্তব্য
খসড়া
বেশ ভাল লাগল । আমাদের সবার জীবনেই এমন মজার মজার ঘটনা থাকে। কজনই বা তা তুলে আনতে পারে এমন ভাবে।
অরণ্য
আপনার ভাল লাগল জেনে আমারও ভাল লাগল। শাহানা আফরিন স্বর্ণার “গুনশান একটি ভয়ের নাম!” পড়তে গিয়ে ঘটনাটি মনে পড়ে গেল। ভাবলাম লিখেই ফেলি।
শুভ কামনা আপনার জন্য।
শাহানা আফরিন স্বর্ণা
সবচেয়ে ভাল লাগে যখন জানি এখন যে ৬ নাম্বার বাস ঠিক ই ছিল হাহা 😀
ঢাকা যে আমারও প্রাণের শহর।
বেশ লাগল এই স্মৃতি 🙂
আপনি তো এখন অনেকদিন আছেন ঢাকায় 🙂 ঢাকা কে আগের মত ভাল লাগে না কি ?
আর ২০ বছর পুরনো কাথাটির কথাও ভাল লেগেছে খুব 🙂
অরণ্য
আপনার ঢাকা নিয়ে লেখা পড়তে গিয়েই এ লেখা, এ স্মৃতিচারণ। ৬ নম্বর বাসকে আমরা বলতাম মুড়ির টিন। মুড়ির টিন আসলে ঠিকই ছিল, পরে বুঝেছি। আগের ঢাকাই ভাল ছিল আমার কাছে। রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা লাগত। এখনতো রাস্তায় বের হলে কান্না পায়।
আর কাঁথাটি বহু জায়গা ঘুরে এখনও আছে, আমি রাখতে চেয়েছি বলে। কোচিং করার সময় মেসে, ভার্সিটিতে ভর্তির পরে হলে, হল ছাড়ার পর বোনের বাসায় এবং বিয়ের পরও রাখতে পেরেছি কাঁথাটি। মানুষের কিছু জিনিস বোধহয় থাকে এরকম।
মোঃ মজিবর রহমান
বেশ লাগ্ ল ।
অরণ্য
ধন্যবাদ মজিবর রহমান ভাই। অনেকদিন পরে আপনাকে দেখছি। মাঝখানে বেশ ব্যস্ত ছিলেন মনে হয়। ভাল লাগলো আপনাকে দেখে। ভাল থাকবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
অফিসের কাজে ব্যাস্ত থাকতে হয়যে।
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
সুন্দর লেখা। এখন হারাতে চাইলেও আর পারবেননা
অরণ্য
আসলেই চাইলেও আর হারাতে পারব না। গা ঢাকা দেয়াও বড় মুশকিলের কাজ হবে। তবে আজকের মোবাইল-ফেইসবুকের যুগের পোলাপায়েনরা দারুন স্মার্ট। গুম বা গায়েব না হলে কেউ হারাবে না, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
মাহামুদ
মানে ভাই আপনি যে লোকেশন দিলেন তার নাম শাহিনবাগ তাইনা?
অরণ্য
জ্বী ভাইয়া, শাহিনবাগ। আরো ভালো করে বললে পুরাতন এয়ারপোর্টের ফাইটার বিমানটার উলটো দিকে ১০০ গজের মধ্যেই ছিল সেই ডি-১৩।
খেয়ালী মেয়ে
যাক অবশেষে ফার্মগেট খুঁজে পেলেন, তা না হলে কি যে চিন্তা হতো তা আর ভাষায় বুঝানো যেতো না :p
আমি একটা কাঁথা এনেছিলাম আমার মা’র গন্ধমাখা, লাইনটা খুব মনে ধরেছে (y)
অরণ্য
একটা লাইন আপনার মনে ধরেছে, তাতেই আমি খুশি। এত হাসি তামাসার মধ্যেও কিছু একটা ভাল যে আপনি নিয়েছেন তা আমি বুঝতে পারছি। ভাল থাকবেন।
শাহানা আফরিন স্বর্ণা
আগের ঢাকা দেখার তো আর সুযোগ হচ্ছে না 😀
আর ঢাকার প্রতি আমার আগ্রহও আমি হারাচ্ছি না আমি কারণ এখন ঢাকা থেকে দূরত্ব আরও বেড়ে গেল 🙂
যাই হোক আমার স্বপ্নের শহর সপ্ন হয়েই থাকুক আরও কয়েকটা বছর 🙂
আর হ্যা আমার লেখায় আপনি উৎসাহিত হয়ে স্মৃতিচারণ করেচছেন এই ভেবে কিন্তু আমার দারূণ লাগছে 😀
অরণ্য
আপনার ভাল লাগছে জেনে যে আপনার লেখায় আমি উৎসাহিত হয়েছি, এবং তা ঠিক। আমার ভাল লাগছে শেষ পর্যন্ত লিখতে পেরে আর আপনাদের ভাল লাগায়। আপনার মন্তব্য পড়তে গিয়ে মনে হলো আপনাকে একটা গান শেয়ার করি – নচিকেতার ‘স্বপ্নের শহর’।
http://doridro.net/download/Indian%20Bangla%20Songs/Indian%20Bangla%20Adhunik/Nachikata/Nachiketa%20-Mixed%20Songs/Shopner%20Shohor.mp3.html
ভাল থাকবেন। আপনার শহর আসলে আপনারই।
জিসান শা ইকরাম
নিজকে হারিয়ে ফেলা বেশ মজার
জীবনে একবারো যদি না হারাই,তবে এটি ক্যামন জীবন?
ভালো লাগলো আপনার হারিয়ে যাবার কাহিনী।
ভিউকার্ড, ভিসিআর প্রসঙ্গ পড়ে মনে পরলো অনেক কিছু।
মা এর দেয়া কাথা এখনো আছে ! রেখে দিয়েন যতনে।
শুভ কামনা।
অরণ্য
জিসান ভাই, আপনার মন্তব্য সম্ভবত এক লাইন হয় না। আপনাকে কিছু লিখতেও আমার এক লাইনে কুলায় না। আমার দু’একটা লেখা (লিখেছিই খুবই অল্প) অনেককেই অতীতে নিয়ে যায়। আসলে আমি নিজেই আমার অতীত মাঝে মাঝে খুব স্পষ্ট দেখতে পাই লেখা শুরু করলেই। কিছু জিনিস আসলে মানুষ ভোলে না, অনেক সময় একটু আড়াল থাকে – এই আর কি!
কাঁথাটা আছে আমার কাছে, কতটা যত্ন করে রেখেছি তা জানিনা। তবে এখন থেকে ওকে যত্ন করে রাখব ঠিক করলাম। আমার মা আমার কাছে (আমি জানি সবার মা-ই সবার কাছে) একটু আলাদা। আমি বাবাকে হারিয়েছি আমি যখন ক্লাস থ্রিতে। কাজেই পিতামাতার সাফল্যের ক্রেডিট আমি পুরোটাই দেই আমার মাকে। মজার ব্যাপার আমার ভাইবোনদের মধ্যে আমি সবচেয়ে কম থেকেছি আমার মা’র কাছে। ক্লাস ফাইভের পরেই মা আমাকে পাঠিয়ে দেন তাঁর মামার কাছে। সেই থেকে চলছি তো চলছিই। বিয়ের পর প্রথম বাসা নিলাম – দুই রুম ছিল। ভেবেছিলাম একটা আমার মা’র রুম হবে। তা আর হয়নি। পরে তার নাম দিয়েছিলাম ‘রিডিং রুম’। এখন থাকি তিন রুমের বাসায়, এক রুম পড়েই থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় ‘মা যদি রাজি হতেন আমাদের সাথে থাকতে!’। আমি জানি না উনার সাথে আমার এভাবে কখনও থাকা হবে কি না। আমার কাছে আমার দেখা সবচেয়ে সাহসী মানুষ আমার মা। লিখতে লিখতে আসলে এত লিখে ফেলেছি বুঝতে পারিনি। 🙂
ভাল থাকবেন ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
মা এর তুলনা কেবল মা এর সাথেই হয়। আপনার বাবার আত্মা শান্তি পাক। মা এর জন্য শ্রদ্ধা।
স্মৃতি লিখতে আমিও চাই,আসলে সময় করে উঠতে পারিনা।
আমি নিজের বাসা ছেড়ে দিয়ে মায়ের কাছে থাকি এখনো।বাবার গড়া পুরানো বাসায়।মায়ের ওম নেই এখনো।এখনো ভাবি মা হচ্ছেন জগতের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।
আপনার জন্য একটা লিংক দিয়েছি, আমার নাটকের পোষ্টের মন্তব্যে। পড়ে দেখুন, ভালো লাগবে।
শুভ কামনা।
অরণ্য
আপনি খুবই ভাগ্যবান যে আপনি আপনার মা’র সাথে আছেন – জগতের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। আপনার মাকে আমার সালাম জানাবেন। ভাল থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
যাক, আপনার স্মৃতিচারণ সুন্দর করেই করতে পেরেছে।
বিড়ি খাওয়াটা বেশ আগে ভাগেই শিখে নিয়েছিলেন দেখছি। আপনার কষ্টের রাতের কথা শোনার অপেক্ষায় আছি।
অরণ্য
ধন্যবাদ ছাইরাছ ভাই।
বিড়ি খাওয়া শুরু করেছিলাম ২৯শে মার্চ, ১৯৯৩। ঘটনাটি ছিল ১৯৯৫ এর। আমার মনে হয় সিগারেটখোররা কারণে অকারণে যে কোন ইনফরমেশনের জন্যে সিগারেটওয়ালা বা সিগারেটের দোকানদার সবচেয়ে ভাল বন্ধু মনে করে। রাতটা নিয়ে লেখা যেতে পারে। একটু মুড লাগবে। তবে লিখে ফেলব একদিন।
ভাল থাকবেন।
মেহেরী তাজ
এভাবে না হারালে এমন মজাদার লেখা আমরা পেতাম?ভালো লেগেছে খুব।
অরণ্য
হুঁ! মজাদার লেখা! লেখাও দেখি মজাদার হয়!
প্রথম হারানোর অনুভূতি আমার নওগাঁতে। আমার প্রথম শহরে দ্বিতীয় দিন ছিল সেটি।
বনলতা সেন
পারলে এখন একবার হারানোর চেষ্টা করে হারিয়ে যান, অন্তত একটি ভাল লেখার জন্য হলেও।
অরণ্য
হারাতে বোধহয় আর পারব না, তবে পালাতে পারব। যদি পালাই আর ফের ফিরে আসি, তখন একটা লেখা পেলেও পেতে পারেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আরে ও ভাই! আপনার এই স্মৃতিচারন তো আমায় মনে করিযে দিলো আমার ঢাকায় গোড়াপত্তনের প্রথম সময়কার কথাগুলো।
আহ!! সেই ভিউকার্ড, পোষ্টকার্ড। কতো যে সংরক্ষনে রাখতাম। শাবানা, ববিতা, হেমামালিনী, শ্রীদেবী কতো কি!!!
আরো ছিলো, ডাকটিকেট!
অরণ্য
মনে হচ্ছে আপনিও আমার যুগের কিংবা কাছাকাছি যুগের মানুষ। আমি নায়িকাদের ভিউকার্ড রাখতে পারতাম না, মানা ছিল ওগুলো রাখা। তবে নায়িকাদের পোস্টার রাখতাম আলমিরাতে। মমতার একটা গরম পোস্টার বহুদিন ছিল আমার শহীদুল্লাহ হলে। আপনাদেরকে লিখতে গিয়েও কত কি মনে পড়ছে আমার! আপনিও লিখুন সময় নিয়ে।
ভাল থাকবেন।
শুন্য শুন্যালয়
যাদের কাছে ঢাকা নতুন, ভুল বাসে ওঠা যে কি ভয়ংকর মনে হয় তার কাছে, সেটা আমি বুঝতে পারি। হারিয়ে আর যেতে পারলেন কই? ঠিক বাস পেয়ে গেলেন ঠিক সময়ে। সহজ গতিতে লিখেছেন, পড়তে ভালো লেগেছে। ঢাকার ছবির ভিউকার্ড সংগ্রহ করতেন দেখে মজা পেলাম। আমি করতাম আমির খানের হা হা।
অরণ্য
আপনার আমির খান প্রিতি শুনে আমার দিব্যা ভারতীর কথা মনে পড়ল। আসলে দিব্যাও না, দিব্যাকে নিয়ে আমার এক বন্ধুর অতি পাগলামি। ব্যাটা পুরা পাগল ছিল দিব্যার জন্য। দিব্যার পোস্টার, ভিউকার্ডের হিউজ কালেকশন ছিল তার। আমরা তখন ক্লাস টেনে হব মনে হয়। রাতে খবর পেলাম, দিব্যা ভারতী আর নেই। ব্যাটা পাগলের সে কি কান্না! তার জান মরে গেছে! 😀
রাইসুল জজ্
মজা পেলাম । আপনি যেভাবে বললেন সেভাবে অনেক বার হারিয়ে গেছি । কখনো বগুড়ায়, কখনো রাজশাহী তে কখনো সিলেটে, কখনো ঢাকায় । কিন্তু কখনো মনে হয় নি হারিয়ে গেছি । এখনো প্রায়ই আমি হারিয়ে যাই । হারিয়ে যেতে মজা পাই ।
অরণ্য
ধন্যবাদ ভাইয়া। আসলে এই হারিয়ে যাওয়া কিছুক্ষণের জন্যে নিজের মধ্যেকার এক অনুভূতি ছাড়া আর কিছুই নয়। ছোটবেলায় কোন এক পুজার মেলায় বড় বড় মানুষের ভিড়ে যখন সামনে আর বড় বোনকে দেখতে পাচ্ছিলাম না তখনও মনে হয়েছিল এই বোধহয় আমি হারিয়ে গেছি। কিন্ত সে অনুভূতি ছিল এক মিনিটেরও কম।
ব্লগার সজীব
আনন্দ পেলাম অরণ্য ভাই। সাধারণ একটি ঘটনা কত সুন্দর করে উপস্থাপন করলেন।
অরণ্য
ধন্যবাদ সজীব ভাই। আসলেই এটি খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগছে। ভাল থাকবেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
কতো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। আহা ঢাকা। কতো কথা। ক্লাশ সিক্সে মেশোর কোলে রিক্সায় চড়া আর দুঃখ কবে বড়ো হবো। কমলাপুর ষ্টেশনে ১৯৯২ সালে বাপিকে খুঁজে না পেয়ে ভেতর ভেতর কাঁপুনি। মুখে ভাব ভয় কিসের! ৬ নং মুড়ির টিন 😀 ওটাতেও চড়েছি। নীলক্ষেতে বই কিনতে গিয়ে পার্সের বদলে অনেক আদুরে স্মৃতির অ্যালবাম চুরী হয়ে যাওয়া। ওই অ্যালবামটার জন্যে আজও যন্ত্রণা হয়। বড়ো মাসীর বাসা থেকে চলে আসবো রাস্তায় রিক্সা পাচ্ছিলাম না। তখন ইডেন কলেজের গেট বন্ধ হয়ে যাওয়া, ভাগ্য ভালো সেদিন রাজনৈতিক নেত্রীরা উনারাও দেরী করে ফেলেছিলেন আসতে, ওই ফাঁকে আমিও যেতে পেরেছি। বকুলতলায় শাড়ী পড়ে বান্ধবীরা হাসির হুল্লোড়ে। বলধা গার্ডেনে সব ভাই-বোনদের নিয়ে একসময়্কার বিশেষ একজনের জন্মদিন পালন করা। উত্তমের বিমানবাহিনীর মেসের বাইরে অপেক্ষা, এলেই গালি-বকা। মিরাজের আইবিএ হোষ্টেলে আড্ডা। বন্ধু আশু, ভাই মুন্না-রানা-বিলু-স্নিগ্ধা— ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা। কামরুলের মেসে জীবনের প্রথম খুনী দেখা। বান্ধবী মুক্তি(হাইস্কুলের বান্ধবী) -সুস্মিতার(মাষ্টার্সের) বাসায় ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা। মুক্তির মেয়েটার সাথে কুটি-পুটি করা। কুটুলিটার প্রথম জন্মদিনের দিন গিয়ে দেখি মুক্তির বাসার দরোজা বন্ধ। প্রথম জন্মদিনেই ওটার আবার পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া। নীরব হোটেল, সন্তুর(নাম কি ঠিক?) চায়েনিজ রেষ্টুরেন্ট…কতো কতো কথা মনে পড়ছে।
অরণ্য ভাইয়া কোন ব্যাচের আপনি? ১৯৯৩ সালে আমি অনার্স প্রথম বর্ষে ছিলাম। লিখুন আরোও স্মৃতি। -{@
অরণ্য
আপনি বেশ আড্ডাবাজ ছিলেন তা পরিষ্কার বুঝতে পারছি। 🙂 লিখতে আমিও চাই। লিখব। 🙂
অরণ্য
ওহ ভুলে গেছি। আমি ১৯৯৩ এ এসএসসি। ভার্সিটি শুরু ৯৫/৯৬।