বিশাল মনোহর বাতানুকুল অপেক্ষাকক্ষ ডাক্তার সাহেবের। অপেক্ষা করছি ডাক্তার সাহেবের। এই তো এলো বলে। বিরাট বপুর স্লিম টিভিতে ঝাকানাকা হিন্দি ছবিছুবি চলছে, চোখে গিলছি কানে পট্টি দিয়ে। দক্ষ কারিগরি ব্যবস্থাপনায় আমার রুগীর সিরিয়াল নম্বরটি ‘টু’। আর যায় কোথায়, মার দিয়ে কেল্লা অবস্থা।
শানেনজুলে আসি এবারে।
একজন গ্রাম্য, অবশ্যই গাঁইয়া বুইড়া ভাম প্রকৃতির মানুষ, যথার্থ অপদার্থটি আমার কাছে এসে হাজির চৌক্ষের সমস্যা নিয়ে। এই ষাটোর্ধ আবাল কিসিমের মানুষটি এক সকালে আবিষ্কার করে যে তার একটি চোখ কেমুন জানি ঝাপসা ঝাপসা লাগতেছে। তা লাগুক না। এমন বয়সে লাগতেই পারে। মুখে বললেও মনে মনে প্রমাদ গুনে দ্রুত এই ডাক্তারের শরণাপন্ন হলাম। বুড়োটার মন খারাপ। মুখে হাড়ি বেধে একটু দূরত্বে বসে বসে কড়িকাঠ গুনছে। গুনতে থাক বাবা, আমি ডাক্তারের খোঁজ নেই। এবারে জানলাম একটু দেরি হবে আসতে, সামান্য অসুস্থ। সাহেবের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, ক্লিয়ার হলেই এসে পড়বে।খুব বেশি সময় নেবে না। আর রুগী-পত্তর আরও আসুক। ভিড়-ভাট্টা না হলে কিসের বড় ডাক্তার। মাইনকা চিপায় যখন পড়েছি তখন আর কী করা। অগত্যা ছাইয়া দিল মে আনায় মন দিলাম। এর মধ্যে রোগ-শোক সীমিত আকারে আসতে শুরু করেছে লঘু পায়ে। হঠাৎ হাই হিলের মৃদু ছন্দ কানে যেতেই গা ঝাড়া দিয়ে চক্ষুষ্মান হলাম চোখ রগড়ে। বাতাসে হাল্কা সুঘ্রাণ ছড়িয়ে উনারা দু’জনে আসন গাড়লেন। নারীর ক্ষমতায়নের যুগে ভর করে বৃহৎ ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি দ্বয়। এটি হালের ট্রেন্ড, দুষ্ট ডাক্তারদের জ্ঞান আহরণে ও বিতরণে খুব সুবিধা। মাভৌ, মাভৈ।
সহসাই ডাক্তার সাহেব হাসি মুখে প্রবেশ করলেন, সবাই কম বেশি উচ্চ-অনুচ্চ কণ্ঠে ছালাম প্রদান করলেন। অবশ্য সাহেব কতটা গ্রহণ- বর্জন করলেন তা বোঝা গেল না। অবশ্য কিন্নরীরা উচ্চ কণ্ঠেই মধু মধু সুরে কলকাকলি করে গেলেন। সাহেবের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া যা বোঝা গেল তা সঙ্গত কারণেই চেপে যাচ্ছি।
একটু পরেই আমাদের ডাক এল ডাক্তার সাহেবের তরফ থেকে। অপদার্থ রোগীকে নিয়ে প্রবেশ করলাম, মন দিয়ে প্রাথমিক তথ্যাদি নিলেন। দেখলেন এবং রোগীর দু’চোখে দু’ফোটা ঔষধ ঢেলে আরও আধা ঘণ্টা পরে আবার দেখবেন বলে অপেক্ষা করতে বললেন। আমার রোগী এই অপেক্ষায় বেজায় অখুশি। আমি অতটা না। ভাবলাম এবারে একটু তাকাতাকি করি। অপেক্ষার লেবু সময়টিকে লেমনেড বানানোর চেষ্টা করে দেখার কঠিন ও ব্যতিক্রমধর্মী সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু বিধি বাম। আমার অদক্ষ চেষ্টা কামিয়াবির ধারে কাছেও পৌঁছে দিল না। ভগ্ন মনে হাল ছেড়ে না দিয়ে কঠোর পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসলাম। ফলাফল ইউরেকা পর্যায়ে পড়ে অবশ্যই। দু’টির চালাক চালাক টিকে এক্টিভ ও অন্যটিকে প্যাছিভ বলে মনে হতে লাগল। আমার মনে কু ডাক দিয়ে ‘রংধনু’ ছড়িয়ে গেল। হায় পোড়া কপাল। (মাফ চাই)
চেম্বার থেকে ডাক এল। আবার দেখলেন অনেক ঔষধ লিখে দিয়ে যা বললেন তা এ রকম… একটি চৌক্ষের অবস্থা প্রায় ভয়াবহ। ঢাকায় গিয়ে মেজর অপারেশন করাতে হবে যা বেশ ঝুঁকিপূর্ণই। এ দেশে মাত্র দু’তিন জন চিকিৎসক আছেন মাত্র এ জন্য। ঠায়-ঠিকানা লিখেও দিয়ে অতি দ্রুত ঢাকায় যেতে বললেন।
মুখে পাষাণহৃদয় ভাব নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এসে প্রমাদ গুনে দুরু দুরু বক্ষে চেক ও রিচেকের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। ধারি বুড়োটা বিড় বিড় করে বলছে——-
চৌক দুইডা, একটা দিয়াও কাম-কাইজ চালাইয়া নেওন যাইবে। খুপ অসুবিধা হইবে না। তবে শরিলে কিছু জিনিস একটাই, হেডা একবার হুইয়া পড়লে আর সুবিধা অয় না, হৃদয় বলে কথা………
পাকা শয়তানটি কী বলে কী বোঝায় কে জানে।
চলবে……
২১টি মন্তব্য
স্বপ্ন
ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি আজকাল মেয়েরা?দেশ তো ভালোই এগিয়েছে।এখানেও রংধনু? :p হুম জীবন একটাই এটিকে চলমান রাখতে হবে। মজার হয়েছে লেখা।
আদিব আদ্নান
আমরা এগিয়ে যাচ্ছি দ্রুত গতিতে।
অনিকেত নন্দিনী
অপেক্ষার লেবু সময়টিকে রঙধনু বানাবার চেষ্টা করে দেখার কঠিন ও ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাপারটা মনে ধরেছে। 😀
অঃটঃ ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদ্বয় মেয়ে আর লেখক যদি ছেলে হয় তো এই গল্পে রঙধনু আসে কিভাবে? ;?
আদিব আদ্নান
দু’টির চালাক চালাক টিকে এক্টিভ ও অন্যটিকে প্যাছিভ বলে মনে হতে লাগল।
এখানে এভাবেই পর্যবেক্ষণ শেষে রংধনু আবিস্কার। আপনি ভাল করেই পড়েন বুঝতে পারি।
অনিকেত নন্দিনী
প্রশংসায় আপ্লুত হয়ে গেলুম।
(চশমা পরা ইমো নাই কেনো? ;( )
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বেশশ আনন্দ পেললাম -{@
আদিব আদ্নান
আমিও আনন্দিত।
মেহেরী তাজ
আবার রংধনু?? ?
আচ্ছা চলুক……
আদিব আদ্নান
আপনি ই প্রথম এখানে লিখেছেন মনে পড়ে।
চলবে।
বন্দনা কবীর
চমৎকার উপস্থাপনা। চলুক ধারাবাহিক ভাবে…………
আদিব আদ্নান
চেষ্টা করে যাব সাধ্যমত। আপনারা সবাই উৎসাহ দিচ্ছেন।
সিকদার
:D) :D) :D) :D)
আদিব আদ্নান
কষ্ট করে লিখে বলুন যা বলার।
লীলাবতী
অপেক্ষাকক্ষ শব্দটি এই প্রথম পড়লাম।খাটি বাংলা শব্দ 🙂 বর্ননায় হাহাপগে 😀
আদিব আদ্নান
খাঁটি কিনা জানিনে মন চায় তাই লিখি। এখনই হাহাপগে হলে পরে কী হবে বুঝতে পারছি না।
ব্লগার সজীব
মেহেরী তাজ বলেছেনঃ
আবার রংধনু?? ?
আচ্ছা চলুক…… :D)
আদিব আদ্নান
সেইতো রংধনু আমাদের দেখিয়েছে। চলবে অবশ্যই।
শুন্য শুন্যালয়
কানে পট্টি দিলেও ছাইয়া দিল মে আনা রে ঠিক পৌঁছে গেছে। কান, চোখ, আর মাথা তো আগেই ত্রিভূজ আকৃতির ছিল, সব ছাপিয়ে পর্যবেক্ষন ক্ষমতা, বাপরে!!
রংধনু দিয়ে দুস্টু ডাক্তারদের জ্ঞান আহরন আর বিতরনের পন্থা কিন্তু খারাপ না। লুংগির বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে নারী কোথায় কোথায় পৌঁছে গেছে, ভাবতেই আছি।
একি সেই আগের আদিব ভাই, ইউরেকা পর্যায়ে পরে এমন আবিষ্কার আমিও করলাম, লেখা কোথা থেকে মই বেয়ে কোথায় উঠে গেছে।। সাব্বাস।
আদিব আদ্নান
এখানে এই লেখায় মই কোথায় পেলেন বুঝলাম না। আপনার মত লিখতে পারিনা বলেই হয়ত এ সব বলছেন।
ওদের দেখে রংধনুর কথা মনে পড়ে। ডাক্তার সাহেবের সাথে বার্তা বিনিময়ের সময় আবার অন্য কিছু মনে পড়ে।
দুষ্ট মন কর কিছু যে দেখে। আপনি আবার কী ইউরেকা করলেন তা আমরা জানতেও পারলাম না।
সব্বাস এখনই দিলে হবে না।
মিথুন
তবে শরিলে কিছু জিনিস একটাই, হেডা একবার হুইয়া পড়লে আর সুবিধা অয় না, হৃদয় বলে কথা………
সুপার। ধাড়ি বুড়ো দারুন একটা কথা বলে ফেলেছে। আপনার উপস্থাপনা ঈর্ষনীয়……
আদিব আদ্নান
পোড়া চৌক্ষে যা দেখি তাই বলি। বুইড়া কে শয়তান শয়তান লাগে। কী সব বলে সব বুঝতেও পারি না।
এখানে সবাই কোবতে- ফোবতে লিখে ফেলে কঠিন কঠিন করে বুঝতে ও আরি না। নিজে নিজে যা মনে হয় তাই
লিখে ফেলি।