গ্রামের হতদরিদ্র দিন মজুর । কিছুটা হাবাগোবা টাইপের । আকাল হেতু শহরে কাজের সন্ধানে এসে হারিয়ে যায় বা নিখোঁজ হয় । গ্রামে রয়ে যায় তার স্ত্রী ও ছোট ছোট দুই সন্তান প্রচন্ড অভাবের মধ্যে । এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে সহায় সম্বলহীন এই ভাগ্যহত পরিবারটির বেঁচে থাকাই দায় হয়ে যায় । এহেন চরম বিপদে সাহায্যের আশায় গ্রামের ভূস্বামী থেকে সমাজপতি সবার কাছেই ধর্না দেয়া শেষে এক অবস্থাসম্পন্নের বাড়ীতে কাজের মানুষ হিসাবে নিযুক্ত হয় । অবশ্য স্বাস্থ্যবতী হওয়ার কারণে ‘বিনিময়’ প্রথায় সাহায্যের প্রস্তাব যথেষ্ট প্রতুল ছিল । সে পথ মাড়ায়নি এই নারী । ছোট শিশু দুইটিকে নিয়ে কায়-কস্টে খেয়ে ,আধপেটা খেয়ে ও না খেয়ে দিন পাড় হতে থাকে । এই শিশুদের কথা ভেবে বিয়ে ও করেনি । বড় ছেলেটি কলেজে ও মেয়েটি স্কুলে পড়ে । তাদের পিতা ফিরে আসে প্রায় পনের বছর পর । পরিবারটিতে ঈদের আনন্দ ।
কাজ দেয়ার নাম করে আরো কিছু লোকের সাথে দুর্গম স্থানে নিয়ে আটকে রেখে এত বছর জোর করে শুধু খাবারের বিনিময়ে কাজ করিয়ে নিয়েছে । নদী ,সমুদ্রে মাহ ধরা থেকে আর অনেক অনেক কঠিন পরিশ্রমের কাজ বছরের পর বছর । কোন কান্নাকাটিতে ই মন গলেনি দস্যুদের । এত বছর পর হঠাৎ করে দয়া হয়। লোক সাথে করে বাড়ীর কাছাকাছি পৌছে দিয়ে গেছে ।
দুদিনের মাথায় সমাজপতিদের বৈঠকে ফতোয়া জারি হয় যে স্বামীর দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে তাদের তালাক হয়ে গেছে । এখন হিল্লা বিয়ে দিতে হবে । যারা এই ফতোয়া জারি করেছেন তাদের মধ্যে ‘বিনিময়’ এর প্রস্তাবকারী গন ও আছেন ।
পরে মিডিয়ার কারণে জানাজানি হয়ে গেলে সব কিছু ভেস্তে যায় ।
আমার কথা হল – ফতোয়া ভালো কিংবা মন্দ , দেয়া যাবে কী যাবে না সেটি আমার প্রশ্ন না । প্রশ্ন হল বিশেষ একটি ‘কর্ম’ হলেই ফতোয়া উজ্জীবিত হয়ে ওঠে কেন ? গ্রামে যে ইয়াবা ব্যাবসায়ী ,ভূমি দস্যু ও চোরাকারবারীদের সর্দার বহাল তবিয়তে আছে তাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া কেন ‘দাঁড়িয়ে’ যায় না ?
যে কেউ আমাকে জ্ঞ্যান দ্যান করার চেষ্টা করতে পারেন , আমি প্রস্তুত ।
২৭টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
কর্ম সম্পাদনের সাথে ফতোয়া বাজীদের চেতনা উত্থিত হবার যোগসুত্র আছে। কর্ম সম্পাদনের ইচ্ছা যত প্রবল, চেতনা উত্থীত হবার বেগ তত বেশী। ।
আদিব আদ্নান
আপনি ঠিকই বলেছেন বিশেষ কর্মটির বেলায়ই সব চেতনা দন্ডাইত হয় ।
এটি কেবল হতদরিদ্রের বেলায়ই ঘটে ।
ভালো থাকবেন আপনি ।
জিসান শা ইকরাম
নরম মানুষকে পিষতে একটু আরাম লাগে এদের।
প্রতিরোধ নেই কোন
সমাজের প্রায় সবাই মজাও নেয়।
ছাইরাছ হেলাল
অনেকদিন পর লিখলেও কঠিন জিনিস তুলে ধরেছেন । না খেয়ে থাকার সময় ফতোয়া কোথায় থাকে
কেউ বলতে পারে না । দারিদ্রের সুযোগে আর কত কাল ‘কর্ম’ সম্পাদন চলিবে কেউ বলতে পারে না ।
আপনাকে অবশ্যই ধন্যবাদ ।
আদিব আদ্নান
একটু নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছি । আপনাদের সহযোগিতাও পাচ্ছি ।
সরল ধর্মীয় বোধের সুযোগ নিচ্ছে লম্পটরা । জানি না এ নিগ্রহ কতকাল চালু থাকবে ।
আপনারা সবাই পড়ছেন ভাবতেই ভালো লাগছে ।
লীলাবতী
অন্য কোন অন্যায়ে এদের ফতোয়া দেয়া যেন নিষেধ। শুধু নারীর বেলায়ই এদের ফতোয়া দেয়া ফরজ হয়ে পরে। ভালো বিষয় তুলে ধরেছেন।
আদিব আদ্নান
ঠিক । ওরা একটি বিষয়েই আগ্রহী । ফতোয়ার শাস্তিও নির্দিষ্ট । প্রায়ই হিল্লা বিয়ে ।
ধর্মের ধ্বজাটি এদের হাতেই একচেটিয়া । স্পষ্ট বক্তব্যের জন্য আপনাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ।
প্রহেলিকা
এই ফতোয়াবাজ রা উৎপেতে থাকে কখন “কর্ম” সম্পাদন হবে এবং তাদের ফতোয়া ব্যবহার করা হবে তবে তা শুধু দরিদ্রের উপর প্রযোজ্য। ধনীর উপর ফতোয়া ঢালতে গেলে শেষে যে ঐ ফতোয়াবাজদের উপরই নূতন ফতোয়া এসে পরবে তা তারা ভালো করেই জানে। ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি পোষ্ট দেওয়ার জন্য।
আদিব আদ্নান
একটি বিশেষ শ্রেণি এই বর্বরতার স্বীকার । ভুরি ওয়ালারা কখনও ফতোয়ার আওতায় এসেছে এমন নজির
আমরা দেখতে পাই না । আস্ত ইট ঝোলানো খুবই দরকার ।
খুবই ভাল বলেছেন ।
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
আদিব, তোমার লেখার স্টাইল, শব্দ চয়ন আর সুন্দর ভাবনা আমাকে মুগ্ধ করেছে ভাই । শুভেচ্ছা নিও । -{@
আদিব আদ্নান
ধুর আমি কোন লেখক নই । চর্চাও করি না । প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ ।
তবে আমাকে ‘তুমি’ বলা যাবে না ।
আপনি ভালো থাকবেন ।
ব্লগার সজীব
ফতোয়াবাজরা যৌন তাড়নায় মুখিয়ে থাকে। এদের কাছে গ্রামের মানুষ অসহায়।
আদিব আদ্নান
কড়া হলেও আসল কথাটি অকপটে বলার জন্য আপনাকে এক বস্তা ধইন্যা ।
ব্লগার সজীব
ধইন্যা পাতার দাম জানেন ভাই ? এক বস্তা ধইন্যা পেলে তো ধইন্যা বেঁচে একমাস নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবো 🙂
শিশির কনা
লেখার সাথে সহমত। গ্রাম্য সমাজকে এসব অসভ্যরা নিয়ন্ত্রন করে।
আদিব আদ্নান
ওদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে একটি বৃহৎ জন গোষ্ঠি ।
ভালো থাকুন আপনি ।
বনলতা সেন
মানুষের রূপে পশুদের তীব্র ঘৃণা জানাচ্ছি থু থু ছুড়ে ।
আদিব আদ্নান
শুধু থু থু ছুড়লে কাজ হবে বলে মনে হয় না । পাথর হয়ে চেপে বসেছে যে ।
আপনি আমার এ সব লেখা পড়ছেন তা দেখেও বিশ্বাস করতে পারছি না ।
ধন্যবাদ দিয়ে আপনার মর্যাদা কমাতে পারব না ।
লীলাবতী
শুধু একটি ভাবনায় থমকে যাওয়া চলবেনা। সামনে আগান 🙂
আদিব আদ্নান
সত্যিই বলছেন । থেমে গেলে চলবে না । অবশ্যই নূতন লেখা নিয়ে এগিয়ে যাব ।
আবার এসেছেন দেখে ভালও লাগল ।
অজানা এক পথে চলা
ফতোয়াবাজরা সব মতলববাজ হয় ।
আদিব আদ্নান
আপনি যথার্থ বলেছেন । ফতোয়া নিপাত যাক ।
ভাল থাকবেন আপনি ।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
এই সব ফালতু ফতোয়াবাজদের কোপা সামছু কোপা বলে কুপিয়ে মারা উচিৎ ।
আদিব আদ্নান
আপনার মত সবার এই সাহস থাকলে কবে ওরা উড়ে যেত খড় কুটোর মত ।
ভালো থাকবেন ।
শুন্য শুন্যালয়
কাকে যে জ্ঞান দান করতে হবে প্রভু তাইতো বুঝিনা।
এইগুলার বিচার হয়নি কখনো, হবেওনা।
ভালো পোষ্ট। আপনি খালি সমস্যা মনে করায় দেন ক্যান? :Cry-Out:
আদিব আদ্নান
এক বুক আশা নিয়ে অপেক্ষা করব এই অবিচার নিপাতের ।
আমি যে সাধারণ মানুষ তাই এ সব চোখে লেগে যায় । তবে ছোট ছোট আনন্দ ও দেখি । আপনাদের তাও বলব ।
অনেকদিন লিখছেন না মনে হয় ।
ভালো থেকে আমাদের পড়ার সুযোগ দিন , আমি না বুঝলেও ।
মিথুন
ফতোয়া বাজরা এমনই হয়। এদের দিয়ে সমাজের কোন উপকার কি হয়েছে ? নতুন লেখা চাই ভাইয়া।