মায়ের মুখ...
মায়ের মুখ…

রাতে জমজমাট আড্ডায় ঊর্মীর মেয়ে কাঁকনের অনেক কিউট কিউট কথায় বেশ মজা পাচ্ছিলাম আমরা সবাই। কাঁকন ম্যাকমাষ্টার ইউনিভার্সিটি থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে পড়ছে। এ দেশের বাচ্চারা অনেক ইনোসেন্ট হয়। কথা হচ্ছিলো আমাদের দেশের বিয়ে প্রসঙ্গে। তো কথায় কথায় এলো বৌভাত ব্যাপারটি। কাঁকনের প্রশ্ন করলো আচ্ছা বরভাত/স্বামীভাত বলে কিছু নেই কেন? ওর এমন প্রশ্নে হাসির হুল্লোড় পড়ে গেলো। আর হাসিতে তো আমার অনেক সমস্যা। শুরু হলে থামতেই চায়না। আর রাত দুটার সময় অমন জোরে জোরে হাসি। যাক চারটের দিকে শুতে গেলাম। কিসের কি ঘুম কি আর আসে? সেলফোনে বসে লিখলাম। প্রিয় এক বন্ধুকে হঠাৎ দেখি অন। কিন্তু বেশীক্ষণ ছিলোনা। অল্পসময় গপ্পো হলো। চলে গেলো, কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা। সকাল এগারোটায় ঘুম ভাঙ্গলো। সকালে কিছু না খেয়েই রেডি হলাম নবমী পুজোর অঞ্জলী নিতে। ওদিকে কাঁকনের পরীক্ষা ছিলো তাই ও চলে এলো হ্যামিল্টনে। আমি-ঊর্মী-তীর্থ থেকে গেলাম। রওয়ানা হলাম এবার টরেন্টো দূর্গাবাড়ীতে। টরেন্টো দূর্গাবাড়ীতে অঞ্জলী নেবার পর হঠাৎ দেখি নূপুরদাকে। বান্ধবী রুমার বর। রুমা সেই মেয়ে, যে আমার নিঃশ্বাসের ভাষাও বুঝতো। গোপনে রেখে দেয়া কতো চাওয়া অবলীলায় পূরণ করে দিয়েছে। অনেক বদলে গেছে ও যদিও। তাও একটা টান অনুভব করি। ও-ও যে করেনা তা নয়। তবে সুনিপুণা গৃহিনী হওয়াতে সেই সময় কোথায় আমাকে ভাববার? তাতে কি! একটা চমক তো পাবারই কথা। অন্তত চমক দেয়া ব্যাপারটি একসময় অনেক দিয়েছি কিনা রুমাকে! একটা শাড়ী কিনলাম পুজোর মেলা থেকেই। কথা বলছিলো কারুর সাথে। বললাম হাতটা দে। এখনও মনে রেখেছে প্রশ্ন ছাড়াই হাতটা বাড়িয়ে দিলো। হাতে শাড়ীটা দিয়ে বললাম আমার চাকরীর টাকায় কেনা। শান্ত-শিষ্ট(আমার উল্টো) মেয়েটি চিৎকার করে উঠলো, “নীলা এসব কি? না, না। তুই এখনও ওভাবেই খরচ করিস! এটা আমি নেবোনা। তুই শাড়ীটা ফিরিয়ে দে। টাকা জমানো এখনও শিখলি না?” থামিয়ে দিয়ে বললাম এখন চুপ! ইচ্ছে হলে নিবি, নইলে ওই যে দোকান ফিরিয়ে দিয়ে আয়। চুপ মেরে গেলো। “নীলা তুই বদলালি না।” যেদিন বদলাবো সেদিন আমায় পারবি মেনে নিতে? হেসে ফেললো। সেদিন মায়ের মুখ না, রুমা-ঊর্মী ওদের সাথেই গল্প। রুমা চলে যাচ্ছিলো, বললাম আজ তোর বাসায় যাবো। লাফিয়ে উঠলো, “সত্যি?” বিশাল একটা অভিমান জন্মেছিলো। কানাডা এসেছি ২০১১ সালে। ২০১৫ সালে ওর বাসায় গেলাম। ওর ফোন ধরতাম না। আমার অভিমানগুলো কেউ বোঝেনা। রাগ ভেবেই ধরে রাখে। যাক নূপুরদা খুব খুশী বললেন রুমার সাথে থাকতে সেই রাত। কিন্তু ঊর্মীকে ফেলে যেতে ইচ্ছে করেনি। আর ওর বাসায় এসে উঠেছি, সেটাও ব্যাপার ছিলোনা। ওহ বলতে ভুলে গেছি, অষ্টমী পুজোর দিন বাপি-মামনির নামে মায়ের কাছে ভোগ দিয়েছিলাম। সেই ভোগ আনতে বাংলাদেশ-কানাডা হিন্দু কালচারাল সোসাইটিতে গেলাম। ভোগ নিয়েই রুমার বাসায়। কতো গল্প। পুরোনো দিন। আমার বোকামী-পাগলামী নিয়ে ঊর্মী আর রুমার কথোপকথন শুনছিলাম। মজা পাচ্ছিলাম খুব। সেই সহজ সারল্য আজও কি আছে? নেই তো। খুঁজে পাইনা।
<>এই রুমা চলতো এখুনি জিন্দাবাজার।
#এই সন্ধ্যায়?
<>যাবি? ওকে আমি যাচ্ছি।
#না, না দাঁড়া রেডি হয়ে নেই।

বলার পাঁচ মিনিটের মধ্যে বেড়িয়ে পড়া। রুমার ছেলেটা এসে ভাবনার দরোজা বন্ধ করে দিলো। অনেক কিউট ছেলে। গ্রেড টেন-এ পড়ে। মেয়েটা তো আরোও কিউট। গিয়ে বললাম আমিও খেলবো। বলে,
#তুমি এসব পারবে না খেলতে।
<>আমায় শিখিয়ে দাও।
#আমি ভালো শেখাতে পারিনা। ও পারে। আমার ফ্রেন্ড ভালো টিচার।
<>আমায় শিখিয়ে দেবে?—–ওর বান্ধবীকে জিজ্ঞাসা করলাম। মাথা নাড়িয়ে বললো শেখাবে। যদিও খেলার মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝিনি। কিন্তু বন্ধুত্ত্ব হয়ে গেছে। রুমার মেয়ে কারো সামনে গান করেনা। আমায় গান শোনালো। বললাম আরেকটা শুনতে চাই। বললো, “এজন্য ভালো লাগেনা গাইতে। একটা তো শুনিয়েছি।” বললাম একটা হাগ দাও। আর একটা কিসু। বেশ আদর করে দিয়ে বললো, “নীচে যাও এখন।” বললাম তোমায় আমি মা ডাকবো। বললো “অতো বড়ো মেয়ের মা আমি না।” বললাম তাহলে বন্ধু, ঠিক আছে? তাতে রাজী হলো। একটা খুব সুন্দর বিকেল সন্ধ্যার বুকে গিয়ে মুখ লুকালো। আমি আর ঊর্মী উঠলাম। রেডি হতে হবে কারণ কালচারাল মন্দিরে রাতের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ইন্ডিয়া থেকে সারেগামাপা অনুষ্ঠানের বিজয়ী শিল্পী কুশল পল-এর একক সঙ্গীতানুষ্ঠান। রাতে গিয়ে দেখি বসার জায়গা তো দূর, দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও নেই। কোনোক্রমে স্টেজের সামনে দুটো জায়গা পেয়ে গেলাম তাও নীচে। বহুদিন পর এভাবে বসে অনুষ্ঠান দেখার মজাই আলাদা। অনুষ্ঠান শুরুর আগে এলাকার এম.পি এলো। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্টেজ থেকে নেমে যাচ্ছিলো। আবার কমিটির সদস্যারা গিয়ে বললো আরো কিছু বলতে। বেচারা এমন বোধ হয় কখনো দেখেনি। আমাদের দেশের এম.পি যদি মাইক্রোফোন হাতে পায়, তাহলেই হয়েছে। থাক রাজনীতির কথা। কুশলের এন্ট্রিটা দারুণ ছিলো। “কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে তোমারে দেখিতে দেয়না…” উনিশ বছরের ছেলেটার কন্ঠ আমায় অনেক নাড়া দিয়েছে। বুড়োর গান থেকে লালন-বাউল-আধুনিক(পঞ্চাশ-ষাট-সত্তর-আশি-নব্বই শতক), বিশেষ করে মান্না দে(মান্নার বাংলা আর কিশোরের হিন্দী গান আমার খুবই প্রিয়), কিশোর কুমার, শচীন কর্তা, রাহুল কোনোকিছুই বাকী রাখেনি। যদিও শ্রোতা-দর্শক চিৎকার দিয়ে যাচ্ছে নাচের গান গাইতে। মজা হলো কুশল নিজের তৈরী গল্প বলা শুরু করলো, আর সেই গল্প দিয়েই জনপ্রিয় গান গাইলো। আমাদেরই এক পরিচত দিদি যিনি শুধু মজা করতে পারেন। চিৎকার দিয়ে বললেন, “Kushol start the songs for the dance. No more soft music.” কুশল বললো, “Who ever said this should come say it to my face.” দিদি সামনে এগিয়ে যেতেই শুরু হলো হিন্দী-ইংলিশ ড্যান্স গান। আর কে বসে থাকে? শুরু হলো, নীলা কি বসে থাকার মতো মেয়ে?  :p

রাত একটায় বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ আড্ডা। ঘুম। তারপর সকাল, আবার ফিরে আসা সেই গন্ডিতে টরেন্টোকে পেছনে রেখে হ্যামিল্টনে। যেখানে কিছুক্ষণের উপস্থিতি নয়, সবসময়কার নিয়মতান্ত্রিক জীবন। পুজো আবার আসবে, কি জানি কাল কে দেখেছে! আমি বাঁচি আজকে, ঠিক এখন। সবাইকে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।

নীল সমুদ্রে ডুবে যেতে চাই, অস্থি-মজ্জ্বায় জং ধরে গেছে
হে দেবী তোমার বিসর্জনের সুনন্দ শঙ্খধ্বনির মতো মিলিয়ে যেতে চাই।
লবণাক্ত বাতাসের কাছে যদি সমর্পিত হয় জলীয় বাষ্প
আমি তবে নই কেন!
যেটুকু আনন্দ নিঃশ্বাসে,
যে বসে আছে অপেক্ষায় আমার,
শুধু তার জন্যে দিনকে বলি ফুরোও তাড়াতাড়ি।
এও জানি সব ফুরিয়ে নেবে তোমার চলে যাবার সাথে সাথেই
তবুও কেন এতো তাড়া আমার যাবার!
নির্জনতার যাত্রায় চলে যেতে চাই, ঠিক ফিরে আসা আবার তুমি এলে
প্যাঁচানো সাপের মতো ঢেউগুলো মোচড় দিয়ে এসে কূলে আঘাত করে চলে যায়
আমি আর কূল হতে চাইনা।
দেবী যাবার সময় এই হাতে তোমার হাত রাখো।

(টরেন্টো, কানাডা//২১ অক্টোবর, ২০১৫ ইং। )

হ্যামিল্টন, কানাডা
৫ অক্টোবর, ২০১৫ ইং।

 

রুমা এবং...ফটোসেশন - এক
রুমা এবং…ফটোসেশন – এক
ফটোসেশন - দুই
ফটোসেশন – দুই
নবমী পুজোর দিনের ফটোসেশন - এক
নবমী পুজোর দিনের ফটোসেশন – তিন
আরোও তুলতে হবে মাম?...
আরোও তুলতে হবে মাম?…ফটোসেশন – চার 
অনিচ্ছাতে ফ্লাশের সামনে তীর্থ...
অনিচ্ছাতে ফ্লাশের সামনে তীর্থ…ফটোসেশন – পাঁচ 
ফটোসেশন...
ফটোসেশন – ছয় 
মঞ্চের ঠিক সামনে নীচে বসে...
মঞ্চের ঠিক সামনে নীচে বসে…ফটোসেশন – সাত 
শিল্পী কুশল পাল...
শিল্পী কুশল পাল…
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার শুরুতে এলাকার এম.পির শুভেচ্ছা বক্তব্য...
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার শুরুতে এলাকার এম.পির শুভেচ্ছা বক্তব্য…
৭০৪জন ৭০৪জন
0 Shares

৪৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ