শৈশবের সেই স্মৃতিমাখা হারাইনা পুকুরটি এখনও বিদ্যমান কিন্তু সভ্যতার করাল গ্রাসে আগের সেই যৌবনটি আর নেই।বড় বড় গাছগুলোকে ধ্বংস করে গড়ে উঠেছে বাসস্হান।পানির যে অবস্হা তাতে পয়জনও ভয় পাবে সেখানে সাতার কাটতে।বেচে আছে কোনমতে এ যেন কোন মতে পৃথিবী হতে পাশ কাটিয়ে যেতে পারলেই বেচে যায়।(ছবি ছিল সাইজ বড় হওয়াতে পেষ্ট করতে পারলাম না বলে দুঃখিত )
ছোট বেলা হতেই আকাঁ আকীঁর মাঝে আমার ভীষন ঝোক ছিল।কাগজ নষ্টের জন্য বাবার কাছ থেকে অনেক বকা খেয়েছি।পড়া লেখার পাশাপাশী দু একটি টিউশনিও করতে হয়েছে।পরিবারের কাছ থেকে আমার লেখা পড়ার খরচ তেমন একটা নিতাম না।টউশনির এবং মাঝে মাঝে কারো বিয়ে সাদি হলে মেঝেতে আলপনা থেকে শুরু করে গায়ে হলুদের মঞ্চ তৈরী করতাম ।কখনও সারা রাত জেগে অনুষ্টানের সাজ সজ্জা বর্ধিত করতাম।এতে যা আয় হত তা লেখা পড়ায় খাটাতাম।ইন্টার পর্যন্ত কোন প্রাভেট পড়িনি।পরীক্ষার ছয় মাস আগ থেকে পুরো দমে পড়া শুরু করতাম।হয়তো আরো আগে থেকে শুরু করলে আরো ভালো রেজাল্ট করতে পারতাম।তবে ক্লাশে যেতাম প্রতিদিন।প্রতিদিনের ক্লাশের উপস্হিতিই আমাকে আমার সাফল্যের মূল।ইন্টার পাশ করি ১৯৯২তে তখন আমি কোন বিষয়ে ডিগ্রী নেব সে ব্যাপারে কারো কাছ থেকে কোন হেল্প পাইনি।তখন এলাকায় হাতে গনা কয়েকজন মেট্রিক পাশ ছিল।এখনতো পাশের অভাব নেই।ইন্টার পাশের পর চিন্তা করলাম আর্টের উপর লেখা পড়া করব তাই ঢাকা চারুকলায় গেলাম ভর্তি হতে।তখন সবে মাত্র চারুকলা বিশ্ব বিদ্যালয়ের আন্ডারে অনার্স কোর্চ চালু করেছে।ভর্তি ফরম নিয়ে জমা দিলাম।ইন্টার ভিউর মাধ্যমে ভর্তি হতে হবে।চারুকলায় প্রশিক্ষন নিলাম এক মাস।যথারিতী তারিখে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়।একটি খালি মাটির কলস আমাদের সামনে রাখা হয় হুবহু আকঁতে হবে।সাইজ,পদার্থ যেন ঠিক থাকে।রিটেন্টও ছিল।পরীক্ষায় ৬০টি সিটে প্রায় হাজার খানেক এ্যাপলাই।সম্মানের সহিত কৃতকার্য হলাম।এখন বাকী রইল ভাইভা পরীক্ষা।স্বভাবত মনের মধ্যে টিক টিক করছে কি জানি জিজ্ঞাসা করে।ভাইভা হতে বের হয়ে আসা বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করলাম কাকে কি জিজ্ঞাসা করল। এক একজনের এক এক কথা।কাউকে গান গাইতে বলেছেন,কাউকে নাচতে কাউকে কবিতা বলতে ইত্যাদি।এবার আমার পালা মনে সাহস নিয়ে ঢুকলাম যথারিতী সম্মানের সহিত সালাম দিয়ে অনুমতি নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম।অবাক হলাম আমাকে নাচ গান কিছুই জিজ্ঞাসা করছেনা যা জিজ্ঞাসা করল তার সৎ উত্তর দিলাম।
-তুমি কোথায় থাক?
-সিদ্ধির গঞ্জ -নারায়নগঞ্জ।
-তোমার ঢাকা শহরে কেউ কি আছে?
-না স্যার।
কিছুক্ষন চুপ করে বল্ল আচ্ছা যাও পরে এসে রেজাল্ট দেখে যেও।পরে এসে রেজাল্ট আর পেলামনা।ভাইবা বোর্ড হতেই বিদায়।স্রষ্টা দিল না আমাকে চিত্র শিল্পীও হতে।তবে থেমে নেই ,আপন মনে সময় পাস করার অবলম্ভন হিসাবে এখনও ক্যানবাসে দেই তুলির আচঁর।
১৯৯৪ সাল ডিগ্রী পাস করে প্রত্যহ সকালে পত্রিকায় চাকরী খুজি ।তখন প্রতিযোগীর সংখ্যার চেয়ে চাকুরীর সংখ্যা নগণ্য যা আছে তা আবার মামা-খালু আর টাকার কাছে জিম্ভী।রাজনৈতিক সুবাদে প্রথম চাকরী করি মাত্র ১৮০০ টাকা বেতনে ঢাকা ভেজিট্যাবল ওয়েল এর ফতুল্লায় স্পর্ক টি শার্ট এ এইচ আর ডি হিসাবে।এর মাঝে খুজতে থাকি অন্যত্র।হয়তো পারতাম নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে আর্টের কোন এক দোকান দিতে।কিন্তু আর্টকে পেশা হিসাবে নিতে বিবেগ বাধা দেয়।আমার কাছ থেকে আর্টের উপর প্রশিক্ষন নিয়ে অনেকে অনেক ব্যাবসায় সাফল্যের সাথে ব্যাবসা করছে।প্রায় প্রতিদিন মনের সাথে যুদ্ধ করি কি হবে আমাকে দিয়ে ?বাবা রিটায়ার্ড।সংসারের বড় ছেলে ।সংসারের হালতো ধরতে হবে কিন্তু কি ভাবে?হতাশায় থাকি প্রতিনিয়ত আর একটার পর একটা চাকুরীর ইন্টারভিউ দিতে থাকি।এর মধ্যে কয়েক জোড়া সেন্ডেল ক্ষয় হয়ে গেছে।মা বাবা কিংবা পাড়াপ্রতিবেশী কিছু অপ্রত্যাশিত কথা বলবে সে কারনে কাজ থাক আর না থাক প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে বের হই আর রাতে বাসায় ফিরে চুপচাপ শুয়ে পড়ি।মা কাছে আসে কিছু হয়তো বলবে কিন্তু আমার নীরবতা মাকে কিছু বলতে নিরুৎসায়িত করে।এর মধ্যে পেলাম এস,আই এ লোক নিয়গের খবর।তখন এর চাহিদা ছিল আকাশ চুম্ভী।যথারিতি দুই দিন চেষ্টার পর ইন্টারভিউ ফরম সংগ্রহ করে ইন্টারভিউ দিলাম।একই সুর ভাইবাতে তবে এখানে ভিন্ন আড়াই লক্ষ টাকা লাগবে ভাইবা বোর্ডের সরাসরি অফার।
-সরি স্যার।টাকার বিনিময়ে আমি চাকরী চাই না।
বলে সালাম দিয়ে চলে আসি।সত্যি কথা বলতে কি এত টাকাও তখন আমার পক্ষে যোগার সম্ভব হত না।তাছাড়া টাকার বিনিময়ে যে চাকরী সে চাকরীতে ঘোষ না নিলে বিনিয়োগকৃত টাকা উঠবে কি করে।
এবার অপেক্ষার পালা বিদেশ যাবার।টুরিষ্টে সিঙ্গাপুর যেতে খরচ হবে লাখ খানেক।এক দালালের মাধ্যমে পাসপোর্টে ভিসা লাগালাম ইন্ডিয়ার যাওয়া আসার সিল ছাপ্পর মারলাম টাকার বিনিময়ে দুই নম্বর।তারপর ডলার ইনডুস করলাম $১৪00 ডলার আর আপ ডাউন টিকেট কাটলাম ২২০০০ টাকায়।ফ্লাই ওকে করে রাত ১২ টায় সিঙ্গাপুর এয়ালাইনসে ফ্লাই করব।আমার সাথে আরো একজন তার ডান হাতের তিনটি আঙ্গুল কাটা তাই তাকে আমরা আঙ্গুল কাটা বাবুল বলি।পাসপোর্টের সব কিছুই দুজনের এক রকম।প্রথম বিদেশ সফর নিজেই সব কিছু রেডি করে রবিবার রাত ১২টায় ফ্লাইটে ঢাকা হযরত শাহ জালাল(রাঃ)আন্তজার্তিক বিমান বন্দরে গিয়ে ইমিগ্রেসনে দুজনেই পাস পোর্ট দিয়ে ইমিগ্রেসন পাস করলাম।সে দিন সিঙ্গাপুর এয়ার লাইন্সে লটাড়ী হয় ।লটারীতে আমার কপাল এত ভাল যে আমি রাফেলস ক্লাশ পেয়ে গেলাম।একে বারে পাইলটের সামনের সিটে সব ইউরোপিয়ানদের সাথে।জানালা দয়ে বাহিরের আকাশের মেঘের লীকোচুড়ি,মাঝে মাঝে চন্দ্রেরঁ হৃদয় ছোয়া জোৎস্না ….
চলবে..
১১টি মন্তব্য
খসড়া
ছবিটা খুব সুন্দর। ভাল লাগল বরাবরের মতই। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
মা মাটি দেশ
জ্ঞান সীমিত তাই জ্ঞানের পরিধী বাড়াতে আপনাদের সাথে শুরু করলাম নিজ বাস্তবতা দিয়ে।পাশে থাকায় অনেক ধন্যবাদ।
লীলাবতী
খুব ভালো লেগেছে ভাইয়া । পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ।কষ্টের স্মৃতিগুলো সোনেলাকে বলতে পেরে নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে।
জিসান শা ইকরাম
দারুন লিখেছেন ভাই ।
পরের পর্বের অপেক্ষায়
মা মাটি দেশ
লেখার শুরু থেকে আপনার উৎসাহই নিজেকে মেলে ধরতে পারছি।অনেক শুভেচ্ছা।
শুন্য শুন্যালয়
অনেক সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন ভাইয়া… পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করবো, সাথে ছবি চাই… বড় হলে windows photo viewer e কম্প্রেস করে নেবেন …
মা মাটি দেশ
আপনাদের অনুপ্রেরনাই আজও সোনেলায় বেচে আছি বলতে পারছি না বলা বাস্তবতা।ধন্যবাদ।
নীলকন্ঠ জয়
খুব ভালো লাগছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
তৌহিদ
এখন আর সিঙ্গাপুরে এভাবে যাওয়া যায় না।আপনি ভাগ্যবান।