
আজও মনে পড়ে বাড়ির উঠোনে শুয়ে থাকা কুকুরটাকে, যে স্কুল যাওয়ার পথে আগ বাড়িয়ে দিত ।
দাদাজানের নামাজের তাশাহুদ পাঠের বৈঠকের সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ; জড়িয়ে ধরে থাকতো যে বিড়ালটি, ওকে ও আর ভুলতে পারলাম কই?
সেবার বন্যায় ঝড়ে আহত পাখিটিকে বাঁচাতে ভাইয়ের প্রানান্ত চেষ্টা ব্যর্থ হওয়া, ধড়ফড় করে মরে যাওয়া পাখিটির মুখটা আজও ভুলিনি।
ভাইয়ের যেন ভাই মরেছে,শোকাহত ছেলেটা দিগ্বিদিক ছুটেছে।
আহা শৈশব, অপাপবিদ্ধ শৈশব!
সেই কিশোরদের কেউ কেউ বড় হয়ে প্রাণ নেয় আবরারের, রিফাতের।
বড় অদ্ভুত মনস্তত্ত্ব!
পৌঢ়ত্বের দারপ্রান্তে এসে দেখি __
বাড়ির ঘাটার পাঁচগাছিয়া, বৌছি, গোল্লাছুটের দাগ নিশানা মুছে গেছে মন থেকে!
এখন শুধু জাবর কাটা আর স্বর্গ মর্ত্যের মাঝামাঝি ঝুলে থাকা।
বুকের ভেতর আস্ত একটা পোড়ো-বাড়ির অস্তিত্ব টের পাই যার গা থেকে একেকটি করে ইট খসে পড়ে,
দেয়ালে শেওলা-ছাতার দল নতুন নতুন শাখ মেলে।
শুনশান নীরবতা পালন যার নিত্যসূচি।
পিরানহার মতো তীক্ষ্ণ আর ধারালো অনুভূতির দাঁতগুলো চেপে ধরে ছিঁড়েখুঁড়ে খায়।
খাঁখাঁ দুপুর একান্তে বিষন্ন ভায়োলিনে সুর তোলে একমনে, সে সুর কেটে কেটে দ্বিখণ্ডিত করে অন্দর-সদর।
চামড়ার ভাজে,চোখের খাঁজে জৌলুশ হয়তো হারিয়ে গেছে কিন্তু ইচ্ছে ঘুড়ি এখনো উড়ে পুকুর পাড়ের আকাশে।
জীবনের সৌন্দর্য প্রসারিত হাতে নিরন্তর ডাকে।
আসি আসি করে আশা জাগিয়ে ভুলে থাকি নিরালে শহুরে চাকচিক্যের মোহনজালে।
বেঁচে থাকার অদমনীয় লোভে লোভাতুর হয়ে ;সকল শোক, তাপ,ও জরা পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছি আরেকটি নতুন ভোরের সোপানে।
এই শীতে যদি শীত আসে অগস্ত্র্যযাত্রার রথে।
ক্ষতি কি তাতে, বাবা মার পাশে গুটিশুটি মেরে ঘুমুবো নিশ্চিন্তে।
আস্তিকত্ব তাকিয়ে রয় স্ব প্রশ্ন দৃষ্টিতে __
তার কি জো আছে? কপর্দকহীন আমলনামা হাতে।
ক্ষমা কোরো প্রভু এই গোনাহগারে ;
নসীব কোরো নাজাতে।
১৩টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
যাহ মন খারাপ হয়ে গেল। সোনেলায় বিরহের ছড়াছড়ি কেন চলছে বুঝি না।
এই মধ্যবয়স মানেই চলে যাওয়ার গান শুরু হওয়া। মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে আমিও মাঝে মাঝে তাহাজ্জুদে বসে যাই। জীবনের খেরোখাতা বড় অদ্ভুত! তোমার ওই জাবর কাটার মতোই।
মাঝে মাঝে ভাবি জাবর কাটাই যদি জীবন হয়, তাহলে পৃথিবীতে এতো মায়া, প্রেম কেন?
খাদিজাতুল কুবরা
ঐ স্মৃতিকাতর হয়ে আজকাল বিকেল সন্ধ্যা কাটে।
ফেলে আসা পথটা মসৃণ ছিলোনা সামনের দিকে ও মখমলি গালিচা নেই তবুও এগিয়ে যাচ্ছি মহাপ্রয়াণের দিকে।
জীবন হয়তো এমনই। আমরাই কল্পলোক সাজিয়ে জয় পরাজয়ের ভীতি সৃষ্টি করি।
ভালো থেকো বন্ধু
বোরহানুল ইসলাম লিটন
অতুলণীয় সমাপ্তি!
সময়ের সাথে সাথে হয়তো হেরে যায় গহনের অদ্যম্য ইচ্ছা
তবুও চঞ্চলা স্মৃতিগুলো বেঁচে থাকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো
যদিও সব ফেলে এক সময় জীবটাকেউ সপে দিতে হয় কালের গর্ভে।
অশেষ মুগ্ধতায় শুভ কামনা রেখে গেলাম নিরন্তর।
খাদিজাতুল কুবরা
একরাশ প্রীতি শুভেচ্ছা।
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
অতুলণীয় সমাপ্তি!
সময়ের সাথে সাথে হয়তো হেরে যায় গহনের অদ্যম্য ইচ্ছা
তবুও চঞ্চলা স্মৃতিগুলো বেঁচে থাকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো
যদিও সব ফেলে এক সময় জীবটাকেই সপে দিতে হয় কালের গর্ভে।
অশেষ মুগ্ধতায় শুভ কামনা রেখে গেলাম নিরন্তর।
মোঃ মজিবর রহমান
কবির কবিত্ব কাব্যময় জুড়ে।
আসলে এখন চল্লিশোর্ধ পেরুলেই সামনে যাবার ইচ্ছে থাকছে তাই ঐপারে যাবার ডাক সবাই আশা করছে! খুব ভালী লাগল। শেষে সবার ইচ্ছে একই পুরণ হোক।
খাদিজাতুল কুবরা
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভালো থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দারুন বলেছেন তো । সত্যিই আমরা জাবর কাটছি স্মৃতিগুলো রোমন্থন করে। সেই সময় আর ভালোলাগা, আর কখনো ফিরে আসে না। অবিরাম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
খাদিজাতুল কুবরা
শৈশব কৈশোর সমৃদ্ধ স্মৃতি জীবনকে অলংকৃত করে সে হিসেবে আমরা তেপান্তরের মাঠ পেয়েছি। পেয়েছি বর্ণিল আনন্দ।
অনেক ভালোবাসা দিদি ভাই
হালিমা আক্তার
এখন তো চল্লিশে তারুণ্যের শুরু।
কে কখন চলে যাব জানিনা। ইহকাল ও পরকালের মধ্যে যে সেতু তার দৈর্ঘ্য খুবই সংক্ষিপ্ত। কিন্তু ওই পারের কোন রসদ হাতে নাই। খুব সুন্দর লিখেছো।
খাদিজাতুল কুবরা
ঠিকই বলেছেন আপু সময়ের সাথে সংজ্ঞাগুলো বদলাচ্ছে।
কিন্তু কখন ডাক আসে সে সংশয় ও পিছু ছাড়েনা।
ভালোবাসা রইলো আপু।
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ আবেগময় পাঠ করতে জল নেমে এলো কবি আপু এক সময় এভাবে গল্প শুনতাম আর এখন গল্পের বর্ণ হয়েছি ভাল থাকবেন সময়
খাদিজাতুল কুবরা
হ্যাঁ দাদা শৈশব আমাদেরকে আবেগপ্রবণ করে তোলে।
ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ