চিন চিন ব্যথা

মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন ২৪ জুলাই ২০১৬, রবিবার, ০১:৪২:৩১অপরাহ্ন গল্প ৩২ মন্তব্য

ক্লাস করে বাসায় ফিরছিলাম। কিছুক্ষন পর মনে হইলো কেউ একজন আমাকে ফলো করছে। তাও আবার একটা মেয়ে!

যে দিন কাল পড়ছে বিপদ আপদ শুধু আমার চারপাশে ঘুরে। এ মেয়ে আমাকে ফলো করছে কেন? কি কারন হতে পারে। দেখে ভদ্র মনে হচ্ছে! আরে ধুর! ভদ্র হলে আবার আমাকে ফলো করবে কেন! ভদ্র মেয়েরা তো কাউকে ফলো করে না। নিশ্চয়ই এর কোন মতলব আছে। দেখা যাবে একটু পর দৌঁড়ে মেয়েটা আমার কাছে এসে বলবে…..
-এই যে শুনুন! আপনাকে আমার বয়ফ্রেন্ডের মতো লাগছে। আপনি কি আমার বয়ফ্রেন্ডের জমজ ভাই?
-আমি বলবো আপনার মাথা ঠিক আছে?আর মেয়েটা রাগে কটমট করতে করতে ব্যাগ থেকে একটা ছুরি বের করে বলবে, ” ওই! শালা কি আছে বের কর ” …

বিপদ আসার আগেই এখান থেকে কেটে যাওয়া দর্কার।আমি দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম। মেয়েটা প্রায় দৌঁড় দিলো আমার দিকে। আমারও কি দৌঁড় দেয়া উচিৎ! কিছু বুঝে উঠার আগেই মেয়েটা আমার কাছে এসে বললো…
– এই যে হ্যালো! আপনি কি ভয় পাচ্ছেন নাকি??

-কেন! আমি ভয় পাবো কেন! আমি তো চোর, গুন্ডা না, আর আপনিও তো পুলিশ বা বাঘ ভাল্লুক না।

-ছিন্তাইকারীনি হতে তো পারি।

-মানে? আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নাই। দেখছেন না হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি।

-হি হি হি! আরে। আমি মজা করলাম। আপনি ভয় পেয়েছেন তবে নিজের বুদ্ধি দিয়ে সেটা ঢাকতে চাইছেন।

-আপনার হাসি সুন্দর। আমার কাছে কি চান?

-চাই বেশি কিছু না। আমার বাদাম খেতে ইচ্ছা করছে। আমি বাদাম কিনবো, আপনি বাদাম ছিঁলে আমাকে খাওয়াবেন।

-ইয়ার্কি করেন! আমি কেন আপনাকে বাদাম ছিঁলে খাওয়াবো! আপনি একা একা খান। আমার এতো টাইম নেই।

-ইয়ার্কি না। আপনাকে আমার ভালো লেগেছে। কিছু সময় কাটাতে চাচ্ছি। দেখি প্রেম হয়ে যায় কিনা।

-কি অদ্ভুত! আপনার ভালো লাগলেই হবে নাকি! আপনাকে আমার ভালোলাগছে না। বিউটিপার্লার থেকে সাজুগুজু করে আসলেই কেউ সুন্দরী হয়ে যায় না।

-আরে আপনি এত ভ্যাদা কেন! আমি সাজুগুজু করি নাই। আমি এমনই। চাইলে ছুঁয়ে দেখতে পারেন। কোন আটা ময়দা পাবেন না।

-আমি মেয়েটার গালে একটা হালকাগুতা দিলাম। কিছুই হলো না। আমি বলিলাম আঠালো আটা ময়দা লাগাইছো! এজন্যই উঠে না।

-মেয়েটা খিল খিল করে হেসে দিলো। সে হাসি দেখে আমার বুকে চিন চিন ব্যথা অনুভব হইলো। মেয়েটা বললো! তাই! আচ্ছা! আমার ব্যাগটা ধরেন। বেগে পানি আছে। আমি মুখ ধুঁয়ে নিচ্ছি।

– হু! আমি ব্যাগ ধরি আর তুমি চিৎকার দিয়া বলো আমি ছিন্তাইকারী! তারপর…

-উফ! থামেন তো! এতো সন্দেহ করলে হয় কি করে! ধরুন তো!

মেয়েটা মুখ ধুঁয়ে নিলো। তবে চেহারা এবার আরো সুন্দর হয়ে গেল! কি অদ্ভুত! এমনও হয় নাকি!

আমি মেয়েটাকে বাদাম ছিঁলে তার হাতে দিচ্ছি। আর সে খাচ্ছে। কিছুক্ষন পর বললো ” হাতে দিচ্ছো কেন! খাইয়ে দাও ”
-আমি কি তোমার স্বামী নাকি বয়ফ্রেন্ড!
-তুমি আমার সব।

নাহ্! এবার টেনশন হচ্ছে! আমি নিশ্চয়ই কোন কঠিন বিপদে পড়তে যাচ্ছি। মেয়েটা কি চাচ্ছে আসলে! ভাবতে ভাবতে ভাবতে কয়েকজন লোক এলো। তাদের দেখে মনে হইলো এরা মানুষ মোটাতাজা করন বড়ি খেয়ে এসেছে। একেকজন এককেটা “বিগশো” টাইপ। সাথে তিনজন মহিলা।

তারা এসে খুব বিনয়ের সাথে বললো “ভাইয়া আপনি কে?
-আমি জহির। আপনারা কে?
-জ্বী! আমরা নিপার পরিবারের লোকজন।
-নীপা কে?
-সেকি! আপনি যার সাথে বসে আছেন সেই তো নীপা।

আমি নীপার দিকে তাকালাম। নীপার হাসিমাখা মুখটা শুকনা হয়ে গেল। নীপা যেন তাদের দেখে ভয় পেল!
আমি বলিলাম ….
-তা আপনারা এখানে কেন?

-আসলে নীপা মানসিক ভারসাম্যহীন তো। বাসা থেকে বের হয়ে গেছিলো। আপনাকে ধন্যবাদ ওর খেয়াল রাখার জন্য।

নীপাকে তারা নিয়ে যাচ্ছে আর আমি চেয়ে আছি। মেয়েটাকে সবেমাত্র ভালোলেগে উঠেছিলো আর এখন ভালালাগা অদ্ভুত একটা হাহাকারে রূপ নিচ্ছে 🙁

৫৬৬জন ৫৬৬জন
0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ