
ফাগুন,
ভালোবাসা নিও। কেন জানি আজ হঠাৎ করে তোমায় লিখতে ইচ্ছে করছে। চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে তোমার সুন্দর হাসিমুখ। ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে ঐ ছড়িয়ে যাওয়া হাসিগুলো।
আচ্ছা বলোতো, কতদিন আগে তোমায় দেখেছিলাম ? আমি মনে করতে পারছি না। কি করবো বলো? যেদিন প্রথম দেখা হলো, সেদিন থেকেই সময়টা যেন থমকে গিয়েছিলো। তারপর কেমন করে পার হয়ে গেলো অজস্র মুহূর্ত ! সময়ের অংকে আমি ভিষণ কাঁচা, অতো গুনতে পারিনা, তাই হিসেব নিকেশ করা বাদ দিয়েছি। কি হবে এত গুনে? হিসেব রেখে কেই-বা কবে ভালোবাসে!!
তারপর কেমন আছো প্রিয়? কেমন যাচ্ছে দিনগুলো আজ-কাল? নিজের যত্ন নিচ্ছতো ঠিকমতো? আর আমাদের স্বপ্ন-গাছ টা? ওটাতে কি নতুন কোনো ফুল ফুটেছে? আমি ফুল ফোটাতে পারছিলাম না বলে তুমি রাগ করে নিয়ে গেলে, কত কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। কিন্তু জোর-বিশ্বাস আছে, তুমি তাতে ফুল ফোটাবেই। ভালোবাসার বিনিময়ে সবইতো তোমায় দিয়ে দিয়েছি। শুধু বিশ্বাস টা ছাড়া।
বিশ্বাস! অল্প শব্দে কত বিশালতা বহন করে তাইনা! আমার খুব অদ্ভুত লাগে এই শব্দটায়। যখন এটা স্থির থাকে তখন স্বরণে আসে না, যখন স্বরণে আসে তখন অস্থির মনে এর ভিত্তি খুঁজে নিতে হয়!! আমরা আমাদের ভালোবাসার সাথে এই বিশ্বাসের আদান-প্রদান করলে ভালো হতো। কেন যে করলাম না প্রায়ই ভাবি। ভাবতে ভাবতেই আনমনা মন থেকে বিশ্বাস টা ফুড়ুৎ করে উড়ে যায়। আকাশ-বাতাস, বাস্তব-কল্পনা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ঘুরতে থাকে। আমি বিশ্বাসকে বশে আনি, আর বিশ্বাস খুঁজতে থাকে তোমাকে… এবার যদি বশে আনতে পারি তাহলে শক্ত শেকলে বেধে রাখবো। এত জ্বালাতন আর ভাল্লাগে না।
জাদু, কাল বিকেলে কোকিলের ডাক শুনেছি। নির্জন দুপুরের বিরহী ডাক নয়, উল্লাসিত কুহুতান! যেন কোন আগমনী বার্তা দিচ্ছিলো! অনেক অপেক্ষার পর যেমন খুশির খবর আসে, তেমনি আনন্দের আর উচ্ছ্বাসের সুর ছিলো সেই ডাকে। প্রথমে অবাক, তারপর বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে শুনেছিলাম।
প্রিয়, শীত প্রায় শেষ হয়ে এলো। বসন্ত এসে গেছে প্রকৃতির দ্বার-প্রান্তে। চারিদিকে বসন্তের সাজ-সরঞ্জাম উপচে পরছে! প্রেমিক যুগলেরা ফেব্রুয়ারী মাসের চৌদ্দ তারিখে ভ্যালেন্টাইন ডে পালণ করে। এর আগে নাকি সাতদিনে সাতটা উৎসব থাকে। সাত তারিখ থেকে শুরু করে চৌদ্দ তারিখে গিয়ে শেষ হয়। এই সাতদিনে একে অপরকে সাত রকমের উপহার দেয়। আবেদন, ফুল, চকলেট, টেডিবিয়ার, আশ্রয়, সমর্পণ আর শপথ। এরপর সারাজীবনের জন্যে এই উপহার সিস্টেম চালু হয়ে যায়। ব্যাপার টা দারুণ না?
ফাগুন, তুমি কবে আসবে? আমি এবার তোমার কাছে ভ্যালেন্টাইন ডে চাই। জনম জনম ধরে আমরা প্রেম করছি, অথচ আমাদের একটাও ভ্যালেন্টাইনের স্মৃতি নেই, ভাবতে পারো?
গ্রীষ্মের আগুন-পোড়া দৃষ্টিতে
শুভ্রতার ছাই-ঘর্ষনে
এ চোখে খেলেছে আষাঢ়-শ্রাবণ,
প্রতিক্ষার আখিতে ঝরেছে বর্ষা
প্লাবিত হয়েছে হৃদয়ের উপকুল ;
শরতের বিকেল কিনেছি
উদাসীনতার দামে,
হেমন্তের ভীরু হাওয়ায়
লেখা চিঠি গুলো উড়িয়েছি বেনামে..
শীত চেয়েছে সারাবেলা
নিরবিচ্ছিন্ন উষ্ণতা,
বুক-চাঁদরে আচ্ছন্ন হয়ে অনিদ্রা এলো
নিবিষ্ট-নিবিড়তায়।
বিনা ফাগুনে বসন্তের আকাশ
হলো এক সাদাকালো ক্যানভাস,
বণ্যেরা ভুলেছে সবুজের উৎস-রুপ,
প্রিয় ফাগুন,
তুমি এসো বিশুদ্ধ রঙের প্রতিচ্ছবি হয়ে,
ফাগুনের আগুনে স্রোতস্বিনী হবো।
ভালো থেকো জাদু, মনে রেখো। আসছে বসন্তে নাহয় তাড়াতাড়ি এসো…
— তোমারই নদী —
৩১টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
চিডি আর কবিতা একলগে!
পরে পড়ুম।
সাবিনা ইয়াসমিন
একটা গানও দিতে চেয়েছিলাম। জায়গায় কুলালো না 🙁
সুপায়ন বড়ুয়া
ওয়াও !
মনের মাধুরী মিশিয়ে
পত্র লেখে নদী
ফাগুন, তুমি এসো ফিরে
যদি নিরবদি।
চিঠির সাথে কবিতা লিখি
ভালো লাগে যদি।
খুব ভালো। শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
ফাগুন আসবে, আসতে তাকে হবেই। কতো কষ্ট করে চিঠি পাঠিয়েছি সোনেলা ডাকঘরে। সে না এলে উঠোনবাসিরা তাকে আস্ত রাখবে নাকি? 😜
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চিঠি আর কবিতা দুটোই মনোমুগ্ধকর। ঋতু গুলো খুব ছোট্ট পরিসরে বর্ণিত হলো। ধন্যবাদ আপু। শুভ সকাল
সাবিনা ইয়াসমিন
বড় বড় দিনগুলোর অনুভব ছোট করেই দিলাম, আমিতো কবি না। অ-কবিতায় সব ঋতুর ছন্দ মিলবে না ডিয়ার 🙂
ভালোবাসা নিরন্তর ❤❤
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার লিখেছেন আপু।আসছে বসন্তে না হয় তাড়াতাড়ি এসো…
ইনশাআল্লাহ তাড়াআসবে তো
সাবিনা ইয়াসমিন
আমিন। ইনশাআল্লাহ আপনাদের দোয়া কবুল হবে। 🙂
সুরাইয়া পারভীন
ইনশাআল্লাহ তাড়াতাড়িই আপু। এতো চমৎকার আহ্বান কী করে প্রত্যাখ্যান করে দূরে সরে থাকবে বলুন?
সাবিনা ইয়াসমিন
এতো করে আশ্বাস দিচ্ছেন দেখে আমারও প্রত্যাশা বেড়ে গেছে 🙂
শুভ কামনা ও ভালোবাসা অবিরত ❤❤
আরজু মুক্তা
এটা পড়ে ঐ গানটার কথা মনে পরলো। ফাগুনের দিন শেষ হবে একদিন।
সাবিনা ইয়াসমিন
এটা আমার অনেক প্রিয় একটি গান 🙂
মনে মনে মিলে গেলো কিভাবে!!
শুভ কামনা ও ভালোবাসা ❤❤
বন্যা লিপি
এই চিঠি পড়ে তো যেমন তেমন মন্তব্য দেয়া যাবে না। আসবো আবার।
সাবিনা ইয়াসমিন
হু, তাড়াতাড়ি এসো। এমন ভাবে কমেন্ট দিয়েছো যে, মনে হচ্ছে তুমিই ফাগুন হয়ে গেছো 😡😡
সঞ্জয় মালাকার
দিদি চিঠি আর কবিতা দুটোই মনোমুগ্ধকর।
আসছে বসন্তে নাহয় তাড়াতাড়ি এসো…
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ধন্যবাদ দাদা।
অফুরন্ত শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
মোঃ মজিবর রহমান
এতো আবেগ যেখানে মাখামাখি,
প্রিয়োতার সুরেলার হাতছানি
স্বপ্নের ডাক আহবান উকিবুকি
যথা আপনে আসবেই জানি।
সাবিনা ইয়াসমিন
ওয়াও! আপনার কবিতা কমেন্টে কি জবাব দিবো বুঝতে পারছি না। এত বলি আপনাকে কবিতা লিখতে, আর আপনি শুধুই বাহানা করেন 🙁
ভালো থাকুন ভাইজান,
আমাদের সাথে থাকুন।
শুভ কামনা সারাক্ষণ 🌹🌹
মোঃ মজিবর রহমান
আমি আছি আপনারা ভাল থাকুন 🇧🇩
ফয়জুল মহী
সুন্দর ও সাবলীল লেখনী।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ধন্যবাদ মহী ভাই।
ভালো থাকুন সব সময়,
শুভ কামনা 🌹🌹
ছাইরাছ হেলাল
জাদু-প্রিয়কে যতই কুহুতানের গল্প-টল্প বলুন না কেন,
গিফটের ভয়ে এবার কেন কোন-বার ই আসবে বলে মনে হয় না!
বিশ্বাস নামক অদ্ভুতুরে বস্তু কামনা না করাই ভাল!
মেকি বর্ষা যতই পড়ুক
উপচে দু’কুল
প্লাবনে প্লাবনে উথলে উঠুক,
ফাগুন-আগুন জ্বলে কুজ্ঝটিকা হয়ে
আগত অনাগত বসন্তে!
সাবিনা ইয়াসমিন
সবাই দোয়া-শুভেচ্ছা দিলো আর আপনি কিনা এসব বলে আমার মনের দেয়ালে হাতুড়ি পিটাচ্ছেন! এক্কেবারে উপরে লিখলেন কি, আর এখন কি দিলেন!
মহারাজ, এই ছিলো আপনার মনে!!!! আমি হতবাক, নির্বাক, অবাক হলাম 😱😱
কামাল উদ্দিন
……….বলেন কি এমন তথ্য তো জানা ছিল না, কাল সাত তারিখ, এখন থেকেই তাহলে প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
সাবিনা ইয়াসমিন
আহা, আপনাকে এমন তথ্য জানাতে পেরে আমি ধন্য হলাম 🙂
এক সপ্তাহের এই উৎসবে কি কি প্রস্তুতি নিলেন আমাদেরও একটু জানাবেন প্লিজ 😜😜
ততোক্ষণ পর্যন্ত শুভ কামনা জারি থাকবে অজান্তা ভাই 😀😀
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ নামজান্তা আপু……শুভ সকাল
জিসান শা ইকরাম
বিশ্বাসের হাত পা ভেংগে শিকল দিয়ে নিজের জেলখানায় বন্দী করে রাখুন, যেন কোনভাবেই পালাতে না পারে 🙂
এ কেমন কথা! একটা ভ্যালেন্টাইনের স্মৃতিও নাই!
এই ভ্যালেন্টাইন দিবসে ফাগুন না এসেই পারবেনা, এত আকুলতা তাকে স্পর্ষ করবেই।
নদীর উচ্ছাস দু কুল প্লাবিত করুক,
লেখাটি একটু বেশিই ভাল হয়েছে।
লেখা শেখা লাগবে আপনার কাছে।
সাবিনা ইয়াসমিন
দারুণ বলেছেন। এবার বিশ্বাস টাকে ফিরে পাওয়া মাত্রই ওটা দিয়ে একটা কঠিন শিলাস্তরের ভাস্কর্য বানিয়ে ফেলবো। নড়তে-চড়তে পারবে না, পারবেনা উড়া-উড়ি ঘুরা-ঘুরি করতে। এক জায়গাতেই দাড়িয়ে থাকবে স্তম্ভের মতন 🙂
চমৎকার মন্তব্য দিয়ে লেখকদের লেখাগুলো কেমন করে স্বরণীয় করে তুলতে হয়, তা শিখতে হবে আপনার কাছ থেকে।
অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো আপনার জন্যে 🌹🌹
পর্তুলিকা
নদীর সব চিঠি ফাগুনের নামে। চিঠি কি শুধু নদীই লেখে? ফাগুন কি সোনেলায় আ্যড নাই? তার উত্তর কোথায় লেখে?
সাবিনা ইয়াসমিন
ফাগুনের কাছে চিঠি গুলো পৌঁছে যায়।
সে কেবল সোনেলায় নয়, এ্যাড হয়ে আছে এখানে-সেখানে-সবখানে। যেখানে নদী বইবে, ফাগুনের ছাঁয়া তার সাথে থাকবে। আজকের নদী ফাগুনের হাতেই গড়া 🙂
শুভ কামনা 🌹🌹
নিরব সাগর
অসাধারণ চিঠি ।