চাঁদির মতন ঠোঁট (পর্ব-৪)

শামীম চৌধুরী ২৮ নভেম্বর ২০২০, শনিবার, ০৬:১৭:৫০অপরাহ্ন পরিবেশ ২৩ মন্তব্য

আগের পর্বের লিংকঃ বিপদমুক্ত হলেও দূর্লভ পাখি (পর্ব-৩)

পর্ব-৪

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আড়ারকুল গ্রামে গিয়েছিলাম মূলতঃ দেশী বাবুই পাখির ছবি তোলার জন্য। সেই সময় বাবুই পাখির প্রজননকাল ছিলো। তাই এত বড় শিল্পীকরের বাসা সহ ছবি তোলার আগ্রহ জেগেছিলো । সময়টা ছিলো সম্ভবতঃ ২০০৯ সালের অক্টোবর মাস। আমরা আড়াকুল গ্রামে এক গৃহস্থ্যের বাড়িতে যাবো। সেখানেই তালগাছে বাবুই পাখি বাসা বানাচ্ছিলো। গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটছি। বিস্তর জায়গা জুড়ে বালুর মাঠ। তারই মধ্যে ঘন শণ গাছের ঝোঁপ। হঠাৎ ঝোঁপের ভিতর অন্যরকম পাখির কন্ঠ শুনে থেমে গেলাম। দুই চোখে খোঁজা-খুঁজি শুরু করলাম। এমন সময় ৮/১০টা পাখি ফুরুৎ করে ঝোঁপের ভিতর থেকে উড়ে গেল । পাখিগুলি প্রথম দেখা। তাই কৌতুহুল ও উত্তেজনা দুটাই বেড়ে গেল। বাবুই পাখির দিকে মনোনিবেশ না করে অচেনা ও নতুন পাখিগুলির পিছু নিলাম। পাশের একটি বড়ই গাছে পাখিগুলি বসলো। ধীর পায়ে উত্তেজনা শরীরে সামনে দিকে গেলাম। ক্যামেরা তাক করে ফোকাস করলাম। পাখির ছবিটি তুলে আনন্দে বাবুই পাখির ছবির জন্য রওনা হলাম। এই পাখির ঠোঁটের উপরি ভাগ রূপার চাঁদির মতন। এই কারনেই হয়তো পাখি বিশেষজ্ঞগন এই পাখির নামকরন করেছেন চাঁদি-ঠোঁট মুনিয়া। পরবর্তীতে অসংখ্যবার এই পাখির ছবি বিভিন্ন স্থান থেকে তুলেছি।

 
দেশি চাঁদিঠোঁট মুনিয়া ১১-১১.৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের ও ১২ গ্রাম ওজনের Lonchura (লঙ্কুরা) গণের অন্তর্ভুক্ত এক প্রজাতির ছোট আকারের পাখি।এরা বসবাসের জন্য নিরাপদ জায়গা পছন্দ করে। তাছাড়ও কাশবন, বালুময় শণবন, নদীতীরের আবাদি জমি ও কাঁটা ঝোপে বিচরণ করে। এরা ছোট- বড় দলে বিচরণ করলেও একাকীও চলে । এরা অন্য সব মুনিয়া প্রজাতির সঙ্গে বিচরন করলেও একটু লাজুক স্বভাবের ও চঞ্চল প্রকৃতির
 
 
দেশি চাঁদিঠোঁট মুনিয়া ধূসর ঠোঁট ও কালো লেজের পাখি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির সাদা কোমর, দেহের পেছনের অংশ,ডানা পিঠ ফিকে ও মেটে বাদামি। লেজ দেখতে লম্বা সুচালো কালো। দেহতল সাদা বর্ণের। ঠোঁট ত্রিকোনাকার ও ধূসরাভ। পা, পায়ের পাতা ও নখর ধূসরাভ-পাটল রঙের।স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন প্রজনন সময় ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। এরা মূলত তৃণভোজী প্রাণী। খাদ্য তালিকায় ঘাসের বিচি,কচি ঘাসের আগা ও শস্যদানা রয়েছে। শুকনো খড় লতাপাতা বাসা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়েপাখি ৪-৮টি ডিম পাড়ে। পুরুষ ও মেয়েপাখি উভয়েই ডিমে তা দিয়ে ছানা ফুঁটায়। ডিম থেকে ছানা ফুটতে সময় লাগে ১১-১৩ দিন। ছানাদের পরিচর্যা ও দেখাশুনা বাবা-মা দুজনেই করে থাকে।
 
ভারতীয় উপমহাদেশ, মধ্য প্রাচ্যের এদের দেখতে পাওয়া যায়। প্রকৃতিগতভাবে এরা মুনিয়ার সমগোত্রীয়। এরা আমাদের দেশীয় ও আবাসিক পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও এ পাখি ভারত,পাকিস্তান,নেপাল,সৌদি আরব,জর্দান,কুয়েত,কাতার,ইসরায়েল,শ্রীলঙ্কায় দেখা যায়।
 
বাংলাদেশে সুলভ পাখি হিসেবে পরিচিত। দেশের সব জায়গাতেই এদের বিচরন আছে। বাংলাদেশের বণ্য আইনে এই পাখিটি সংরক্ষিত নয় বলে অসৎ ব্যবসায়ীরা খাঁচায় বন্দী করে পথে ঘাটে নির্বাধায় বিক্রি করে বেড়াচ্ছে।
 
বাংলা নামঃ দেশী চাঁদি-ঠোঁট মুনিয়া
ইংরেজী নামঃ Indian silverbill or white-throated munia
বৈজ্ঞানিক নামঃ Euodice malabarica
 
ছবিগুলি ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থেকে তোলা।
১১৯২জন ১০৬৭জন
0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ