
ওকে আমি বাসুলিয়ার গায়েন বলে ডাকি। ওর একটা নাম আছে।থাকুক।ওকে আমি ভূত বলেও ডাকি। মাঝে মাঝে ভূতের মতো আচরন করে বলে। আমাকে অনেক কিছু ডাকে।যখন যেমন মনে চায়! পেঁচী, পেত্নী, বোঁচা, কানি, শালিক, চড়ুই,বাবুই, কত্ত নাম! আসল নামটাই ভুলে যাই আমার মাঝে মাঝে।আমারো একটা নাম আছে। ঝুমুর। রেগে গেলেই বলে…….” আমার যা খুশি ডাকুম, তাতে কানি’র কি? ” কেমনটা লাগে তখন?
ভূতের মতো হঠাৎ প্রশ্ন করে —কি করছো?
— বসে আছি। ভাল্লাগছে না।
–ঘুড়ি ওড়াতে ইচ্ছে করছে।
—ঘুড়ি??
—হ্যাঁ
—ওড়াও
—আমি বানাতে পারি।
—বানাও
ওড়াও
আমার খুব ভালো লাগে দেখতে ঘুড়ি ওড়ানো।
—আমারো
—ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকতে পারি।
কেমন করে নিয়ন্ত্রনে উড়ছে আকাশময়—
—একদম একদম……
—-প্যাঁচ লেগে গেলেই ভোঁকাট্টা!
—-হা হা হা হা হা…..
চিঠি পাঠানো যায়!!
—আছে নাকি এরকম অভিজ্ঞতা?
—কারো কাছে না
ঘুড়ির সুতোয় কাগজ রেখে দিলে বাতাসে চলে যায় ঘুড়ির কাছে।
—জানো, সেদিন ছাদে উঠেছিলাম আমাদের। উঠিনা তো খুব একটা! এত উঁচুতে থাকি আমি! আমার চারিদিকেও সব উঁচু উঁচু বাড়ি। সব বাড়ির ছাদে তখন মানুষ। নিচের রাস্তাঘাট সব ফাঁকা। এ ছাদ থেকে সে ছাদের কিশোর ছেলেরা ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলো। চিৎকার করে করে একে অপরের নির্দেশনা মেনে মেনে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। আমি ঠোঁট বিস্তৃত করে হাসি হাসি মুখে ওদের ঘুড়ি ওড়ানো দেখছিলাম। কি বিশাল আকাশটাতে রংবেরংয়ের ঘুড়ি উড়ছে। যারা ওড়াচ্ছে তারা সব দালান বাড়ির ছাদে। ছাদগুলোতে রেলিং দেয়া। সীমানা বাঁধা আছে।
হঠাৎ এক কিশোর বালক চিৎকার করে উঠলো…..ভোঁকাট্টাআআআআআ…..সুতো কেটে ঘুড়ি গোত্তা খেতে খেতে নিচের দিকে নেমে আসছে। নাটাই আরেকজনার হাতে দিয়ে ছেলেটা ছুটছে। সিঁড়ি দিয়ে লাফ ঝাঁপ দিয়ে ,পড়িমরি করে নেমে আসছে ।
আমি হাহাকার করে উঠলাম……
নামিসনে বাছা –নামিসনে পুরো শহরে লকডাউন চলছে…….
২৬টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভীন
নামিসনে বাছা –নামিসনে পুরো শহরে লকডাউন চলছে…….
আর কতদিন চলবে এই লকডাউন? আর কতো ঘরে বন্দী থাকবে বাড়ন্ত শিশুদের দুরন্ত সময়?
চমৎকার হয়েছে আপু গল্পটি।👏👏👏
বন্যা লিপি
গল্পের মূল বিষয়ের প্রতি নজর রেখেছেন আপনি। এটাই লেখার সার্থকতা আমার।
তবে বুঝতে পারছি সিমীত শব্দে লিখতে গিয়ে পুরো ব্যাপ্তিটা কিছুটা অধরা রয়ে গেছে। ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।
শুভ কামনা।
ফয়জুল মহী
কমনীয় ভাবনায় সৃজনশীল লেখা।
সাবিনা ইয়াসমিন
লকডাউনের এই দিনগুলোতে জানালার পাশে বসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আমিও একটা ঘুড়ি খুঁজি। একটা উড়ন্ত ঘুড়ির দেখা পেলে মন্দ হতো না।
কিন্তু আকাশে এখন কোনো ঘুড়ির দেখা পাইনা। মনেহয় আকাশেও লকডাউন চলছে। সেখানে কেবল তার নিজস্ব জিনিস গুলো ছাড়া আর কারো ঢুকতে মানা… কিসব ভাবছি বলোতো!! মন উদাস হয়ে গেছে আসলে। তোমার তবুও একটা ঘুড়ি আছে, ঘুড়ি বানানোর বাসুলিয়া আছে,, তাই শব্দে ছন্দে লিখতে পারছো। আমি থেমে যাচ্ছি লকডাউনের প্রবল প্রতাপে।
আমার জন্য একটু দোয়া করো বন্যা।
ভালো থেকো,
ভালোবাসা নিও ❤❤
বন্যা লিপি
ধন্যবাদ জানবেন
বন্যা লিপি
আসলেই কি বলছো বলোতো সাবিনা?
সিমীত শব্দের প্রকাশ আসলেই আমাকে ভাবনায় ফেলে দিলো। মূল বক্তব্যের দিকে দৃকপাত না করেই ” জনে জনে মানুষ আলাদা আলাদা ভাবনা” ভেবে নেবে এটাই স্বাভাবিক।
প্রথম অংশ রেখেছি সম্পূর্ণ কাল্পনিক একজোড়া কৈশোরীত্তর্ণ তরুন তরুনীর কথপকথনের ছায়ায়। দ্বিতীয় অংশে বোঝানো হয়েছে — একদল কিশোর লকডাউনের সীমাবদ্ধতায় খোলা মাঠ ছেড়ে শহরের উঁচু উঁচু ভবনের রেলিং ঘেরা সীমানায় ঘুড়ি ওড়ানোর ইচ্ছে পূরণ করে যাচ্ছে।এই অংশটা সম্পূর্ণ আমার দেখা বাস্তবতা। আমার নিজের দেখা। আমার বিল্ডিংএর চারপাশের সবকটা বিল্ডিংএ যা ঘটছে প্রতিদিন। কয়েকদিন আগে ছাদে দেখা দৃশ্য তুলে এনেছি দ্বিতীয় অংশে।
বাসুলিয়া টাংগাইলের একটা জায়গার নাম।
৩/৪ বার টাংগাইল গিয়েছিলাম। আর ওখানকার একজনার সাথে পরিচয় আছে এটাও সত্য। আকাশে লকডাউন? আমার আকাশটাও সিমীত খুব।
একটা ট্রেন্ড চলছে এখন অনলাইন কিছু গ্রুপে ২০/২২/৩০/৩৩/১০০০/ এক মিনিটের গল্প লেখার। অনেকে আমাকে ট্যাগ দিচ্ছেন, মেনশন করছেন। যার ফলশ্রুতিতে আমার এ প্রয়াস।
গল্পটা আমাকে বিতর্কের মুখে ফেলে দিলো মনে হচ্ছে। লেখকের স্বাধীনতা নেই? তাহলে আসলেই কলম থেমে যাবে।
যা দুঃখজনক।
আমার কোনো ঘুড়িটুড়ি নেই সাবিনা।
ঘুড়ি ওড়া দেখতেই ভালো লাগে…… নিয়ন্ত্রনের মধ্যে নাটাইএর সাথে।
তোমার চারপাশে জানলা দিয়ে দেখা যায়না ঘুড়ি ওড়া? আমার এলাকায় চলে এসো।
রোজ বিকেলে চলে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব।আমার ছোটোছেলেটাও রোজ বিকেলে ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে ওঠে।
ভালবাসা তোমাকে❤❤
সাবধানে থেকো
ভালো থেকো।
বন্যা লিপি
ময়না…..তোমার মন্তব্যের জবাবে কি লিখছি দ্বিতীয়বার পড়তে এসে…. আমার নিজের জবাবে নিজেই মেজাজ খারাপ করে ফেলছি।
কি লিখছি এগুলা আমি তোমারে?
স্যরি স্যরি স্যরি সখী…. কিছু মনে করোনা প্লিজ্…..আসলে কোয়ারেন্টাইনে থেকে থেকে, আর মাসাবধি পর্যন্ত বুয়া ছাড়া কাজ করতে করতে মেজাজ ৪৪০’হইয়া রইছে। প্লিজ রাগ কোরো না ময়না।
ভালবাসি তোমাকে এত্ত এত্ত❤❤❤❤❤
নীরা সাদীয়া
ঘুড়ি ওড়ানোর শখ আমার বহুদিনের। আমার নিজেরও মন চায় ঘুড়ির সুতোয় চড়ে উড়ে আসি আকাশটা।
সুপায়ন বড়ুয়া
ঘুড়ি ওড়ানোর মজা টাই আলাদা
স্মৃতি কাতর হয়ে গেলাম।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
বাহ্ দারুন বললেন তো! ঘুড়ির সাথে উড়তে। মনটাকে ঘুড়ি করে ছেড়ে দিন আকাশ ঘুড়ে আসুক।
নীরা সাদিয়া।
আপনাকে শুভেচ্ছা।ভালো থাকবেন সবসময়।
বন্যা লিপি
সুপায়ন দাদা,
আসলেই ঘুড়ি ওড়ানো দেখাটা আমার খুব ভালো লাগে। ছোটবেলা খালার শশুড় বাড়িতে বেড়াতে গেলে, খালার দেবরেরা খুব ঘুড়ি ওড়াতো আর ঘুড়ির প্যাঁচ খেলতো। আমি খুব উপভোগ করতাম তাঁদের এই ঘুড়িওড়ানো।
শুভ কামনা আপনার জন্য।
বন্যা লিপি
ব্যাপারটাই বুঝলাম না, হচ্ছেটা কি? একজনার মন্তব্যের জবাব আরেকজনার ঘরে চলে যাচ্ছে কি করে? কতৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
আরজু মুক্তা
আসলেই সবাই এখন ছাদে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। ভালোই লাগছে দেখতে।
বন্যা লিপি
হ্যাঁ আপু, হয়তো প্রথম প্যারাটা একটু রোমন্টিক ধাঁচ মনে হতে পারে অনেকের। ভালো করে পড়লে বোঝাযাবে ওখানে রোমান্টিকতার র ও নাই। যাস্ট দুই বাল্য বন্ধুর কথপকথন।
দ্বিতীয় প্যারাটাই লেখার মূল বক্তব্য।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এতো দিনের বন্দীত্বে সবার ই হাঁসফাঁস অবস্থা।কেউ ঘুড়ি হতে চায়, কেউ বা পাখি , কেউবা মুক্ত আকাশে ভাসমান মেঘকুঞ্জ। কেউবা শুধুই ঘুরতে চায় পুরো দু’খানা পা-কে ভর করে। এসব আদুরে নামের আড়ালে চাপা পড়ে যায় আসল নামটাই । কবে যে মুক্তি পাবো এই বন্দী দশা থেকে। ভালো থাকবেন।সুস্থ থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
বন্যা লিপি
একটা গান মনে পড়ে গেলো….. মনটাকে ঘুড়ি করে দাও।” মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।শুভ কামনা। ভালো থাকবেন সবসময়।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
শুরু থেকে স্বাধীনতার আনন্দিৎ মন নিয়ে তারূণ্যের উচ্ছ্বাসে আমিও উড়ছিলাম ছেলেদের ঘুড়ি হয়ে। কিন্তু শেষে এসে আপনি ফের বাস্তবতায় নামিয়ে দিলেন। শেষটা আসলেই ভীষণ বাস্তব, আবার বাস্তবের মতই কষ্টের দানা বাঁধানো, আবার একই সাথে লেখনী প্রতিভাও বটে।
জানেন আপু, নিজেকে এত এত ব্যস্ততার বাঁধনে আটকে রাখি যাতে আমার ভেতরে কোন টেনশন না ঢুকতে পারে, কোন হতাশা, কোন দুঃশ্চিন্তা, স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার দূর্বলতা, কোনকিছুই যেন আমাকে জড়িয়ে ফেলতে না পারে… তবুও, তবুও, এত কিছুর পরেও মাঝেমাঝে দীর্ঘস্বাস ঘন হয়ে বের হয়েই আসে।
দোয়া করবেন।
ভালো থাকবেন।
বন্যা লিপি
আপনার মন্তব্যে আপ্লুত হলাম। প্রথমত আপনার আত্মবচন আমাকে ভাবাচ্ছে! নিজেকে ব্যস্ত রাখা ভালো কথা অবশ্যই।কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো বিষয়টা আপনার মনগড়া এক বিধিনিয়মের ছকে আটকা। অর্থাৎ, আপনি জানেন যে, আপনি চাননা আপনাকে কোনো দুঃখ, কষ্ট, হতাসা বা কোনো বাস্তববিবর্জিত আবেগ যেন মনটাকে আচ্ছন্ন করে ফেলতে না পারে।
সেজন্য আপনি নিজেই নিজেকে তৈরী করে নিয়েছেন। এটা অবশ্যই সাধুবাদ জানাবার মতো বিষয়।
তবুও একটা তবুও থেকেই যায়”…..আপনার উক্তি অনুযায়ী….মাঝে মাঝেই বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসেই!
আসলেই…..ব্যাপারটা এমনই, যতই নিজেকে আত্মতুষ্টিতে ভরান না কেন! কখনো কখনো মন নামক পাখিটা খাঁচার ফাঁকফোকর খুঁজবেই মুক্ত আকাশে উড়ে পালাবার জন্য।
অনেক বেশি বকবক করে ফেললাম কি??
হবে হয়তো!
ভালো থ্কবেন।
ভালো রাখবেন নিজেকে।
খুব ভালো রাখবেন নিজেকে।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
পুরো শহরটাই লকডাউন, এরপরেও ঘুরিতে আকাশ ছুঁতে চাই।
খুব ভালো লাগলো আপু।
বন্যা লিপি
শহরের বাচ্চাগুলো এমনিতেই মাঠ পায়না। যেটুকুও বা পেত! এখন তাতেও লকডাউন। বাড়ির ছাদগুলোই এখন বিনোদনের আখড়া বিকেল হলেই।
তবু ওদের মনে থাকেনা ঘুড়ি ভোঁকাট্টা হয়ে কেটে গেলো বলে, ঘুড়িটা কুড়িয়ে আনা চাইই চাই। এখন যে কিনতেও পারা ডাবে না। তাই ছেলেটা ছুটছে ঘুড়িটা পেতেই হবে ভেবে। আমার তখনই চোখ গেলো ওর দিকে….. পারলে চিৎকার করে বলতাম…ফিরে যা ঘরে…….নিরাপদে থাক…সবখানে লকডাউন।
কৃতজ্ঞতা ভাইজান মন্তব্যে।
ভালো থাকবেন।
নিরাপদে থাকবেন
দোয়া করবেন সবার জন্য সবাই।
হালিম নজরুল
আমি গতকাল বাজারে ঘুড়ি খুজেঁছিলাম।
বন্যা লিপি
বাহ্…..পেয়েছিলেন? পেলে ওড়াবেন
জিসান শা ইকরাম
ঘুড়ি ওড়ানোর আসল মজা মাঠে, শহুরে বাড়ির ছাদ এ নয়।
যেটুকু আনন্দ পেত শহুরে ঘুড়ি ওড়ানোর, তাও আজ বাঁধাপ্রাপ্ত লকডাউনের কারনে।
লক ডাউন আমাদের সমস্ত আনন্দই মাটি করে দিচ্ছে।
লেখা ভালো হয়েছে।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
ছোটোছেলে সাকিন সহ ওর বন্ধুরা রোজ ছাদে ঘুড়ি ওড়ায়। চারপাশের সব ছাদে রোজ। এসব দেখেই মূলত আইডিয়া এলো কেমন হয় এমন করে দোভাবনার এমন এক ছোটোগল্প লিখলে? যেমন ভাবনা, তেমন কাজ! 😊😊😊
ভালো লাগলো জেনে ভালো লাগলো।
কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভালো থাকবেন।
তৌহিদ
আমি কিন্তু প্রতিদিন ঘুড়ি ওড়ানো দেখছি এখানে। কাক পড়শুই বানিয়ে ফেলবো একটা। ঘুড়ি ওড়াতে ইচ্ছে করছে খুব!!
বন্যা লিপি
আপনি সত্যি ভাগ্যবান ভাই। ছাদে উঠতে হয়না অন্তত। ওড়াবেন, বানাবেন সত্যি।
শুভ কামনা নিরন্তর। ভালো থাকবেন।