
দেশে লকডাউন শুরু হলে ঘরেও নানারকম লকডাউন হয়। আজ প্রথম লকডাউন কেমন কাটল? কারও কারও অতি চমৎকার হলেও আমার ভীষন খারাপ। বউসহ সবাই বলে সরকারী চাকুরেরা নাকি অফিসে তেমন কাজকর্ম করে না। তাই লকডাউনে বউ বুয়াকে বেতন দিয়ে ছুটিতে রেখেছে। এখন সমস্ত কাজ আমাকে দিয়ে করাবে। সকালটাই এমন শুরু হলো- ‘এই শুনছ, বাবুর পটিটা ফেলে দাওতো? থালাগুলো ধুয়ে ফেল? তোমার গোসলের সাথে আমার কাপড়গুলোও কেচে দিও।’
ভালোলাগে বলেন? আগে তো অফিসের নাম করে গিয়ে খালি আড্ডা দিতাম। বিকেলে ফিরে খুব খাটুনি গেছে এমন ভান করে থাকতাম। বউ আর কোন কাজের কথা বলত না। বরং গরম পানিসহ সব এগিয়ে দিত। বারান্দায় বসে আড়াম করে সন্ধ্যার চা খেতাম। শুক্রবারেও অফিসের নাম করে ক্লাবে গিয়ে আড্ডা দিতাম। লকডাউন হয়ে পরছি বিপদে। ঘরে বউ এর প্যাদানী, বাইরে পুলিশের প্যাদানী।
অনেকদিন রুটি বানানো দেখি না। আজ বউ রুটি বানাচ্ছে আমি পাশে দাঁড়িয়ে দেখছি। ভাগ্যিস আমি বানাতে পারি না, না হলে আমাকে দিয়েই বানিয়ে নিত। অবশ্য শুধু দেখছিলাম না। শাড়ির ফাঁক দিয়ে বউ এর পেট দেখা যাচ্ছিল। কাজ তো কিছু চাই, তাই একটু ছুঁয়ে দিতে মন চাইল। মাগো মা, বেলনা দিয়ে কি মাইরটাই না দিল।
“ যাও, ভাগো যত্তোসব আদিক্ষেতা।“
আরে ভাই, আদিক্ষেতা কেমনে বলেন তো? বিয়ের পর তো এমন করলে খুশিই হত।
মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাইরে যাবারও উপায় নেই,পুলিশ পাহাড়ায়। গতবার বউ এর প্যাদানী খেয়ে বাইরে গিয়ে দেখি পুলিশ। নিজেকে লুকাতে রাস্তার পাশেই বসে গেলাম ট্রাউজারের চেন খুলে পেশাব করতে। পেশাব কি যখন তখন বেরোয়। পুলিশও পেছনে দাঁড়িয়ে, পেশাবও বেরোয় না। অগত্যা উঠে দাঁড়ালাম যা থাকে কপালে। ওমা, ট্রাউজারের জিপার আর লাগে না। অনেক চেষ্টার পরও লাগাতে পারলাম না। এদিকে পুলিশ পেছনে পিটুনি শুরু করলে মান- সম্মান তো কিছুই থাকবে না। অগত্যা দুহাতে চেপে ধরে পুলিশকে পরিচয় দিলাম। পুলিশ সালাম দিয়ে বলল, ‘ স্যার আপনি?’
লজ্জায় আমার খান খান হবার যোগাড়। বাড়িতে গিয়ে বউকে নিয়ে স্যারের জিপারের গল্প বলে কি হাসিটাই না হাসবে।
সারাদিন বাড়িতে বউ এর কাজ করতে করতে ক্লান্ত। মোটামুটি দিন গেল। রাতে তো মন আনচান। সিগারেট ধরানোর কোন অধিকার নেই। বাড়িটা যেন তার একার।এদিকে পবিত্র রমজান মাস। কি হবে আল্লাই জানে। ইফতারের পর বউ আবার একগাদা কাজ দিল। সিগারেট না টেনে মাথা গরম, সাফ জানিয়ে দিলাম আর কোন কাজ করতে পারব না। আমি ভীষন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। সারাদিন এত কাজ করলাম তবুও ডাইনীর মন ভরল না।
মেজাজ ভীষন খারাপ, বউ খাবারের টেবিলে একটা কথাও বলেনি। আজ বিছানাতেও জায়গা হবে না। তাই খাবারের পর মুভি দেখতে বসলাম।
মুভি দেখতে দেখতে মনটা ভালো হয়ে গেল। বেশ হাসির ও রোমান্টিক মুভি।
“ অক্ষয় কুমার বেশ রাত করে বাড়ি ফিরেছে বউ দরজা খোলেনি। কোনমতে মই যোগাড় করে সেটি বেয়ে উপরে উঠে বউ এর বকা খেল। এ সময় চুপ থাকাই শ্রেয় তাই কিছু না বলে নিজেই রুটি শেকে নিল। বউকে খাওয়ালো। খুশি করার জন্য বউকে হুইস্কি বানিয়ে দিলো। অতপর বউ বেশি পেগ খেয়ে টাললি হয়ে গেল। এমন সময় বাচ্চা জেগে গেল তাকে পটিও করালো।
মনটা হঠাৎ বউ এর জন্য কেমন করে উঠল। রাগ- ক্ষোভ সব ফেলে বিছানায় গেলাম। কি মায়াময় ঘুম! মেয়েরা ঘুমালে আলাদা সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।একগোছা চুল কপাল বেয়ে গালের পাশ দিয়ে গেছে। সরিয়ে দিয়ে গালে একটা চুমু দিতে মন চাইল। বিশ্বাস করেন, এর চেয়ে কিন্তু বেশি কিছুর ইচ্ছে ছিল না। বউ না জানি কি না কি ভাবলো!
যেই সরাতে গেছি অমনি ঠাস করে গালে এক চড় দিয়ে বলল, ‘ রোজা রমজান মাস, অকর্মা সারাদিন বসে থেকে থেকে এখন এসেছিস আমাকে জ্বালাতন করতে। তোর না কাজ করার শক্তি নাই। এখন আবার এসবে,,,,,। খবরদার আমাকে ছুঁবি না।’
ভীষন রাগ হল, ‘এতবড় অপমান একটা চুমুর জন্য।তোকে আর জীবনেও ছুঁয়ে দেখব না। দেখি তুই কেমনে থাকিস আর কোনদিন ‘বাবু’ বলে এসে সোহাগ করে জডিয়ে ধরিস। দরকার কি আমার একার?’
বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে এপাশ- ওপাশ করছি। কিছুতেই ঘুম আসছে না। আর ডাইনীটা অঘোরে ঘুমাচ্ছে।
তন্দ্রার মত এসেছে মনে হল কে যেন ডাকছে। বউ ডাকছে। মেজাজ খিস্তি করে বললাম, ’আবার কি?’
-বিছানায় চল ঘুমাই। আমি জানি আমাকে ছাড়া তোমার ঘুম আসবে না। তুমি না ঘুমালে আমিও কষ্ট পাব। কাল তোমার মাথা ব্যথা করবে।
আমি বললাম, ‘ তোমাকে তো ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, সিগারেট খাওয়া যাবে না। সব তোমার আইন, তোমার বাড়ি তুমি ঘুমাও!’
বউ হাসলো। আচ্ছা সরি! আর সিগারেট খেয়ে অবশ্যই ব্রাশ করে আসবে!
ঈশ্! বউ কত ভালো। শুয়ে শুয়ে ভাবছি, জীবনে একজন মানুষের কত দরকার। তাকে ছাড়া ঘুম আসে না কিন্তু তাকে হেল্প করতে পুরুষ ইগোতে লাগে। অথচ সে প্রতিদিনই এই কাজগুলি বিরক্তিহীনভাবে করে যায়।
আজ করোনায় আরও বেশি মানুষ মারা গেছে। এ জীবনে আর লকডাউন নাও খুলতে পারে কিংবা এমনি করেই আমরাও হারিয়ে যেতে পারি। তাই সাবধানে থাকি, স্বাস্হ্যবিধি মেনে চলি। সবার লকডাউন আনন্দময় হোক পরিবারকে নিয়ে। জীবনের প্রতিটি দিনই আমাদের শেষ দিন ভেবে নিয়েই চলি। রমজান মোবারক ও নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল। সবার জন্য শুভ কামনা!!!!!
ছবি- নেট থেকে।
২২টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
স্বামী বেচারা নাজেহাল | খুব ভালো লাগলো | জানি না করোনা কোথায় নিয়ে যাবে | শুভ কামনা |
রোকসানা খন্দকার রুকু
আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কিইবা করার আছে। ধন্যবাদ ও ভালোবাসা রইল আপু।
ছাইরাছ হেলাল
লকডাউনের কথা বলে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছেন এবার রমজান-রাত্রির হালাল আহ্বান!!
কী রেখে কোথায় যাই, কী করি কে জানে।
পুরুষতান্ত্রিকতা ঠিকঠাক তুলে ধরা চাট্টিখানি কথা না!!
ভাল থাকুন, থাকুন নিরাপদে এই রমজানে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল ভাইয়া।
রেজওয়ানা কবির
হায়রে লকডাউন মানুষকে কত কিনা শিখিয়ে গেল, তবে স্বামী বেঁচারা কাহিল🤪তোমার রম্যে জিপারসহ পুলিশের ঘটনা পড়ে মনে হল তোমার দ্বারাই হাসির এই ধরনের লেখা সম্ভব, পাঠক নির্ঘাত মজা পাবে। দুষ্টু মিষ্টি স্বামী স্ত্রীর কাহিনী ভালো লাগল। শুভকামনা আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও ভালোবাসা নিও। চেষ্টা করেছি মাত্র।
শামীনুল হক হীরা
কি আর করা।।ঘরের লকডাউন বলে কথা।।
দারুণ লিখেছেন বিষয়টা নিয়ে।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।
তৌহিদুল ইসলাম
লকডাউনে প্রথম প্রথম প্যারা লাগতো, এখন মানিয়ে নিয়েছি। বরং বাসায় থাকলে সবাইকে কাজে সাহায্য করতে পারি যেটা ভালোলাগার জন্ম দেয়।
শুভকামনা আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সেজন্য ধন্যবাদ।
শুভ হোক লকডাউন।
জিসান শা ইকরাম
ঘরে বাইরে প্যাদানীর সমস্যা ভালো ভাবেই রম্যের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
” আমি জানি আমাকে ছাড়া তোমার ঘুম আসবে না। তুমি না ঘুমালে আমিও কষ্ট পাব। কাল তোমার মাথা ব্যথা করবে।” – এই সুখ আনন্দ ভালোবাসার জন্যই বেঁচে থাকা।
শতর্ক থাকি আমরা করোনা হতে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হ্যাঁ এই সুখ আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকি একসাথে।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
বিপরীত লিঙ্গের চরিত্রে ভালো মতোই ঢুকে গেছেন, মনে হচ্ছিলো সত্যি সত্যিই কোন পুরুষের লকডাউনে ঘটে যাওয়া নিত্তদিনের ঘটনা শুনছি। আসলেই কি তারা আড়ালে আবডালে বউকে ডাইনী বলে সম্বোধন করে!!
ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন, পথে ঘাটে মাস্ক ব্যবহার করতে ভুলবেন না। শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
পুরুষ ভাইদের পাশেও দাঁড়ানো দরকার। যা লিখি তাই লোকে ভাবে নিজের! মহা বিপদ তাই চরিত্র বদল করে লিখতে হবে। আর খালি ডাইনি না অনেক কিছুই বলে। আশেপাশে থিসিস করে লিখতে হবে একদিন!
ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহাহা, এটা দারুণ বলেছেন। লেখকরা, বিশেষ করে মেয়ে লেখকরা যা-ই লেখে এক শ্রেণির পাঠকেরা ধরেই নেয় এটা লেখকের ব্যক্তিগত কাহিনী। এই জন্য অনেক কিছু লেখা বাদ দিয়েছি।
আপনার গবেষণা চলুক, জানার অপেক্ষায় রইলাম 🙂
রোকসানা খন্দকার রুকু
হু মোকে মারা বুদ্ধি। আপনারাও লেখেন পড়তে মন চায়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পুরুষের চরিত্র/মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি কিভাবে এত সুন্দর করে রম্যের মাধ্যমে তুলে ধরলেন? স্যালুট জানাই আন্তরিক ভাবে। খুব ভালো লাগলো। এভাবেই পাশাপাশি ভালোবাসা, মান-অভিমান নিয়ে মানুষগুলো ভালো থাকুক। সাবধানে থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
রোকসানা খন্দকার রুকু
পুরুষরা ভাবে ঘরের কাজগুলো তাদের নয়। এটা ভুল।
আমরা সবাই মিলেমিশে থাকি এই কামনা।
আরজু মুক্তা
লকডাউনে এমন খুনসুটি চলুক। না হলে ঘরও বিষাদময় হবে। আপনার রম্য পড়ে পুরুষকুল আর একটু রোমান্টিক হলে মন্দ হয় না।
শুভ কামনা সবসময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বাসায় খুব তারাতারী পডিয়ে ফেলুন। অতপর রোমান্স ও রোমান্টিকতায় মধুময় হোক আপনাদের লকডাউন এই দোয়া করি।
শুভ কামনা।
পপি তালুকদার
লকডাউনে বেচারা পুরুষ মানুষগুলো মহা বিপদে পড়েছে। যাই হোক তাদের ও একটু শান্তিতে থাকতে দেওয়া দরকার তা না হলে ঘরে হরতাল শুরু হয়ে যাবে।
অনেক মজার রম্য পড়লাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও শুভকামনা আপু। ভালো থাকবেন।