সন্ধ্যার আলো অন্ধকারে পতিত হওয়ার সাথে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে।প্রকৃতির শির শির শব্দ ব্যাতীত এই নিস্তব্ধ নির্জন লাউ ক্ষেতের পাশে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে কেবল সজল।বাকী বন্ধুরা ভয়ে পালিয়ে যায়।এরই মধ্যে বাপ হারা সজলের মা আছেন তার এক মাত্র ভরসা,মায়েরও চোখের মণি সে।মায়ের নিকট ছেলের বন্ধুরা এসে যখন বলল তখন মা যেনো পাগলের মতো হয়ে গেলেন,কি রেখে কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না।তার হাউ মাউ চিৎকারে প্রতিবেশী বেশ কয়েক জন তার নিকট ছুটে এলেন।ঘটনা বুঝতে পেরে তারা তাকে সহ ছুটে চললেন লাউ ক্ষেতের দিকে।
অনেক লতা পাতায় পেচানো তার নিস্তদ্ধ শরীর পরে আছে লাউ ক্ষেতেটির এক পাশে। সজলকে আর কেউ খোজেঁ না পেলেও মায়ের চোখঁ কিন্তু ফাকি দেয়নি,সে ছেলেকে লতা পাতায় মুড়ানো অবস্থায় আচ করতে পেরে দৌড়ে তাকে ঝাপটে ধরে চিৎকার দেন।তার সাথে আসা প্রতিবেশী এক শিক্ষিত যুবক সজলের হাতের শিরা ধরে অনুমান করছেন,সে জীবিত না মৃত।
-সজল সুস্থ্য আছে জলদি তাকে বাসায় নিয়ে যান এবং ডাক্তার দেখান।
মায়ের থেকে আরেক প্রতিবেশী সজলকে কোলে তুলে বাসায় নিয়ে আসলেন।সজলদের মাটি দিয়ে তৈরী ছুনের ঘরের বারান্দা একটি মাদুর পাটি বিছিয়ে তাকে শুয়ালেন।মা তার ময়লাকৃত শরীর পরিস্কার করার সাথে সাথে গ্রামের ডাক্তার চলে এলেন,প্রতিবেশী কে কখন যে ডাক্তারকে আসতে বলেছেন তা মা ধারনা করতে পারলেন না।ডাক্তার তার শিরা উপ শিরা ভালো করে পর্যবেক্ষন করেন,সে ঔষধ লিখে মায়ের হাতে ধরিয়ে দিলেন একটি প্রেসক্রিপসনস।মা প্রতিবেশী এক জনকে ঔষধ ক্রয়ে প্রেসক্রিপসনটি দিলেন,কিছু ক্ষণের মধ্যে সে ঔষধ নিয়ে দ্রুতই চলে এলেন।ঔষধ খাবারের পনের বিশ মিনিট পর সে মোটা মোটি স্বভাবিক হয়,তবে সে কারো সাথে কোন কথা বলে না কিংবা কারো কোন প্রশ্নের উত্তরও তেমন একটা দেয় না শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে লোকজনের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে চোখ মুখ ভেঙ্গিয়ে কি যেন বলতে চায় যা নিঃশব্দ।
মা ছেলেকে নিয়ে খুব চিন্তায় পরে গেলেন।যে ছেলে ছিলো অপ্রতিরোধ্য চঞ্চল আর বাচাল আজ সে নিশ্চুপ।এমনও দিন গেছে ছেলের নামে দিনে কয়েক বার কয়েক জনের কাছ থেকে দৈনিক অপকর্মের নালিশঁ আসতো।প্রত্যহ সকালে ঘর হতে বের হতো আর বাসায় ফিরত দুপুরে ঠিক খাবারের আগে,কোন মতে খাবার খেয়েই আবারো দে দৌড় দূরন্তপণার সব কান্ড কাজে। সেই চঞ্চল ছেলেটি হঠাৎ বোবার মতো হয়ে গেল তা বোধকরি মায়ের মন মানছে না।
দিন অতিবাহিত হয়ে এক সপ্তাহ হয়ে গেলো ছেলের কোন পরিবর্তন দেখছেন না তার মা।এ ছাড়াও তার অঙ্গ ভঙ্গির অ-স্বাভাবিক আচরণ দেখতে পান যা ঘনটার আগে কখনো ছিলো না।যেমন কেউ এলেই নিঃশব্দে দু হাত কপালে তুলে সালাম দিবে,কখনো কখনো হঠাৎ নিঃশব্দে কান্নার জল গড়িয়ে পরে গাল বেয়ে, অনবরত যখন চোখ গড়িয়ে জল পড়ে তখন তার চোখ দুটো ক্রমশতঃ লাল হতে থাকে যা দেখলে যে কারোর ভয় পাবার কথা।আর পরিচিত জনও তার কাছে মাঝে মাঝে অচেনা মনে হয় ভয়ে জড়োসরো হয়ে পড়ে,একমাত্র মা ছাড়া আর কারোর সাথে কথা কিংবা আদর সোহাগে পছন্দ করে না।হঠাৎ হঠাৎ রেগে অন্যকে আঘাত করার চেষ্টা করে।
এক দিন তার সহপাঠি রতন তাকে স্কুলে নিয়ে যেতে এসেছে।সে তখন শীতল পাটিতে বারান্দায় শুয়ে আছে।রতন স্কুল ড্রেস পড়ে বইপত্র বুকের উপর হাতে চেপে তার কাছে গিয়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ডাকছে।
-এই সজল….এই…..সজল স্কুলে যাবি না? হাসান স্যার তোকে যেতে বলেছেন।তুই যাবি….????
বন্ধু রতনের ডাক শুনে তার আত্মা যেনো জড় থেকে জীবে এলো।একটু ঘাড় ঘুরিয়ে বন্ধুর দিকে তাকালো।রতন তার তাকানোর ভাব দেখে ভয় পেয়ে গেলো,সে আর কোন কথা বললা না শুধু নিঃশব্দে সে পিছু নিলো।
একা একা বসে আছে সে,এমন ভাব যেনো এই পৃথিবী তার এক অচেনা জগৎ সে কে?কেনো এই পৃথিবীতে?কি হবে তার ভবিষৎ কিছুই যেনো সে ভাবতে পারে না,দিনের পরিক্রমায় সে এক পা দু পা করে হাটে তবে একই স্থানে,এই হাটা হাটির মাঝে হঠাৎ তার চোখ পড়ে পেপে গাছের পাকা পেপেগুলো উপর।হয়তো লোভ সামলাতে পারেনি তাই সে পেপে গাছের নিকট চোর পুলিশ খেলার মতো ধীরে ধীরে গিয়ে সব পাকা পেপেগুলো পেরে,আগুছালো ভাবে পেপে গাছের গোড়ায় বসেই তা খেতে লাগলো।
সজলের মা গরুর খাবারে জন্য গরু দুটো নিয়ে একটি ধান ক্ষেতে বেধে ঘরে এসে ছেলেকে না দেখতে পেয়ে চিৎকার দিয়ে বাড়ীর বাহিরে চলে যান।সে যাকেই পাচ্ছেন তাকেই জিজ্ঞাসা করছেন।
-ও বাবারা আমার ছেলেডারে দেখছো?
কারো কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে হতাশ মায়ের মন।সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন গ্রামের মাতাব্বর শ্রেণীর এক হুজুর টাইপের ব্যাক্তি।মুখ ভর্তি পান পানের পিক যেনো তার দাড়ি বেয়ে পড়ছে,মুখ ভঙ্গিমায় পান চিবুচ্ছেন;মাঝে মাঝে পানের রস ছুড়ে ফেলছেন যথা তথায়।সজলের মাকে চিৎকার অবস্থায় দেখে সে আরো দ্রুত তার কাছা কাছি চলে আসেন।
-আরে ফরিদের বউ না(ফরিদ সজলের মৃত পিতা)।
তাকে দেখে গ্রাম্য সলভ সজলের মা আচলঁ টেনে মাথায় ঘুমটা টানেন।কান্নার শব্দও থেমে গেলো।
-হ…চাচা।
-কি অইছে,হুনলাম তোমার পোলারে নাকি ভূতে ধরছে?
-না হ ঐতো…লাউ ক্ষেতে গেছিলো…
-আরে বুঝছি,.. বুঝছি…তয় ভয় নাই আমাগো হুজুর এক বড়ো কামেলদার হুজুর আছেন তার কাছে একদিন ছেলেরে নিয়া আইসো।এমন ঝাড়া ঝাড়বে জীবনের জন্য ভূত মা মা বলে পালাবে,ছেলে ভালো হয়ে যাবে,বুঝলে?
মাথা ঝাকিয়ে হ্যা সম্ভোদন করলেন সে।মাতাব্বর শ্রেনী লোকটি চলে গেলেন।এর মধ্যে মা তার ঘরের বারান্দার দিকে চোখের জল মুছতে মুছতে যাচ্ছেন।একটু সামনে এগিয়ে লক্ষ্য করলেন ঘরের বারান্দায় তার ছেলে অনেক গুলো পাকা আধা পাকা পেপে নিয়ে বসে,একটার পর একটা পেপের কিছুটা অংশ মুখে দিচ্ছে আর কিছুটা ফেলে দিচ্ছে।মা তা দেখে ছেলেকে কিছু না বলে পেপে গাছটির দিকে গেলেন।সেখানেও সে লক্ষ্য করলেন পেপে গাছটিতে কম করে হলেও বিশ পচিশটি পাকা আধাপাকা পেপে ছিলো যা এখন একটিও নেই।এটাও দেখলেন যে অসংখ্য পেপের ঝুটা গাছটির গোড়ায় গোড়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।মা অবাক হন এমন ভাবে এতোগুলো পেপে বা খাবার সে কখনো খায়নি!তবে কি মাতাব্বর যা বললেন লোকে যা বলে,তাই সত্যি।নাহ্…আর দেরি করা চলবে না,কালই হুজুঁরের দরবারে ছেলেকে নিয়ে যাবো।দেখি কার উছিলায় ছেলে আমার সেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
চলবে…
২২টি মন্তব্য
নাসির সারওয়ার
আমি ভুত খুবই ডরাই। তবুও পরে্র সবগুলোই পরুম…।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ভুত ডরায় না এমন মানুষ খুবই কম।ধন্যবাদ ভাইয়া। -{@
নিহারীকা জান্নাত
ভুত ব্যাপারটা খুবই ইন্টারেস্টিং। জীবনে যে কত ভুত দেখার চেষ্টা করেছি, কিন্ত সফল হইনি। আফসোস!
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ভূত থাকলেতো দেখবেন।ধন্যবাদ পড়ার জন্য -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
ভূতে ধরা মানুষের অভাব নেই।
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি চাই মনির ভাই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আমার কোন লেখাই রাফ নেই।তাই চেষ্টা করব। -{@ ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
আমার এখন ভুতের ভয় কেটা গেছে, আছি,
চালিয়ে যান।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এখনতো কত কিছুইতেই ভয় নেই তবে একটা সময় ছিলো।ধন্যবাদ -{@
মোঃ মজিবর রহমান
ভুত কি খুজে ফিরি ভয়ে এখন ডরাই নি।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ডর ভয় কি এখনো আছে? -{@
মৌনতা রিতু
এই সব বিষয়ে আমার অনেক অভিজ্ঞতা আছে।
হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরনগুলোকে মানুষ এই ভূতে ধরাই কেন বলে বুঝি না।
চলুক মনির ভাই। দেখি মাতব্বরের কামেলদার ভুত কেমনে ছাড়ায়।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হুম থাকবেইতো।আপনার মতো কজন আছে এমন চাকুরীর বদলে সারা দেশ ঘুড়লেন।ধন্যবাদ। -{@
ব্লগার সজীব
ভুতকে ভয় পাই খুব। তবে পড়তে ভালই লেগেছে। চলুক।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সজীব ভাই আপনাকে কম দেখি কেনো আপনার কিন্তু জরিমানা হবে।ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
যাক বাঁচা গেল, এইবারে ভুত নেই বাকিটার অপেক্ষায় রইলাম।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ ভাইয়া -{@
ইঞ্জা
😀
জিসান শা ইকরাম
পেপে খেলো কে? অবাক ঘটনা,
চলুক লেখা, সাথেই আছি।
শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
অনেক দিনের অভুক্ত ও এক ঘরোয়া থেকে যখন পাকা পেপেগুলো দেখল তখনি কিছু খেয়েছে কিছু ফেলেছে -{@ ধন্যবাদ।
আবু খায়ের আনিছ
চলুন, আমি নাকি শুধু একা ভৌতিক গল্প লিখি, এখন একজন সঙ্গী পাওয়া গেলো।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আমি আপনার মতো গা ছমছম শিহরণ জাগাতে পারি না।ধন্যবাদ -{@
আবু খায়ের আনিছ
চেষ্টা কি বৃথা যায় নাকি?