গেলাম তবে;
যে পথটা মরা পাতারা বেজন্মার মত দখল নিয়েছে: শত চেষ্টায় হার মেনে জেনে গেছি, ওর নিচে মাটিও পচে গেছে। হারিয়েছে উর্বরতার অহংকার। একপয়সার কানাকড়ি সম্বল করে খেয়াপারের ভাবনায় নদীর ঘাটে এসে দাঁড়াই; ঘাটমরাদের সোল্লাসে জল ঘোলা করতে দেখলাম ঘৃণার চোখে। জলে ডুবিয়ে মারছে নিরাপরাধ এক বউঝি’কে; বারবার চিৎকার করে আকাশ -জলে তুফান উঠিয়ে বাঁচতে চাইছে বউটা,, পরনের শাড়ি ভেসে গেছে জোয়ারের বাণে। আমার সম্বল তো এক পয়সা!
আটকে গেলো নরম কাদামাটির চোরা ফাঁদে, কতক কলমীর কবর দেখছি পায়ের কাছেই, এপিটাফে খোদাই করা লেখা– ফুটতে চাওয়া অপরাধে দণ্ডিত লাশ এখানে…..
মুঠো খুলে দেখি– এক পয়সার কিনার ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছে।
নিজের দিকে তাকালাম, সাদা ধবধবে থান কাদায় মাখামাখি হয়ে আছে। মাথা বরাবর ঝুলে আছে মহুয়ার থোকা থোকা ফুল; এই এতকিছু দেখেও আমি মাতাল হই ওই ফুলের গন্ধে।
ঘাট মরাদের মধ্য থেকে একজন চোখ ফেরায় আমার দিকে, এগিয়ে আসতে থাকে, এবার আমায় জলে ডোবাবে বলে……
আরেকটা এপিটাফ তৈরী হবে এখানেই……..
গেলাম তবে…..
২৬টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
সব পালিয়েছে। আমি হাজির। আবার আসব🥰🥰
বন্যা লিপি
এত্তগুলা ❤❤❤❤❤ আপনি পালাননি বলে। প্রথম হবার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো উইথ লাভ❤❤
রোকসানা খন্দকার রুকু
নারী মানে একটা আবরণে ঢাকা মুক্তো। সবাই সেটিকে উম্মোচিত করতে পারেনা। অনেক সাহসীরাও হেরে যায়। তারপরও নারী হবার চেষ্টা, তার মুক্তির চেষ্টা॥ চলুক,,, চালিয়ে যাই😍😍
জিসান শা ইকরাম
লেখা পড়ে ভয় পেলাম,
গেলাম তবে! মানে কি?
সাদা থান কাপড়েও আমার ভয়।
ভয় পেলেও, লেখা খুবই ভালো হয়েছে।
লেখা কেবল লেখার জন্যই হোক।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
ভয় পাইয়াই মন্তব্য করছেন?😓😓😓😓 লেখার সারমর্ম বোঝার আগেই ডর খাইলে হইব? সাদা থান বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে নারীর বসন। নারীর প্রতিবন্ধকতাকে এভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি মাত্র। এবার ভয় ভাঙুক।
শ্রদ্ধা জানবেন।
জিসান শা ইকরাম
ভয় ভেঙেছে মন্তব্য করার পর পরপরই।
এই প্রতিবন্ধকতা কখনো চলে যাবে আমাদের দেশ হতে, তা মনে হচ্ছে না।
শুভ কামনা।
স্বপ্ন নীলা
দারুন লিখেছেন। আসলে এটা একটা অনুগল্প হয়েছে। টান টান উত্তেজনার ভেতর দিয়ে শেষ অবধি এগিয়ে যাওয়া কি কম কথা !! অসাধারণ
বন্যা লিপি
আপনার “দারুন লিখেছেন” মন্তব্য আমার দারুন ভালোলাগা দিয়েছে মনে স্বপ্ন নীলা! লেখাটাকে আপনার মনে অণুগল্পের নাম দিতেই পারেন, ওতে আমার তেমন আপত্তি নেই। পাঠকের কাছে উপস্থাপিত দৃশ্যপট একান্ত পাঠকের চিত্তানন্দের পরিচায়ক। লেখার সার্থকতা এখানেই মূল্যায়িত। শব্দেরা কখন কেমন করে এসে উঁকি দেয় মনে, আমার জানা নেই, আমি স্রেফ টপকে ফেলে দেই টাইপিংএর নির্ভারে। ভালবাসা আপনাকে❤
পপি তালুকদার
অন্য ভাব নিয়ে পড়ছিলাম তবে শেষে কিঞ্চিত ভয় লেগেছে।ভালো থাকবেন।
বন্যা লিপি
যে ভাবটা নিয়ে পড়ছিলেন, ওটুকু
কেন বললেন না এখানে?
“শেষে কিঞ্চিত ভয় লেগেছে।”
ভয়টা কেন লেগেছে তাও বুঝিয়ে বলতে পারতেন।
লেখার মাঝে কিন্তু ক্লু রাখা আছে মূলত সারমর্ম কি বোঝানো হয়েছে।
অন্য ভাব জাগাতে পারাটাও কিন্তু লেখার সার্থকতা কি বলেন? ধরেই নিতে পারি আমার লেখাটা আপনার মন্তব্যের কারনে সার্থক।
নিরন্তর শুভ কামনা।
পপি তালুকদার
শিরোনাম দেখে আনন্দ পেলাম “গেলাম তবে”তাই ভাব ছিল ফুরফুরে তবে লেখাটা শেষ পর্যন্ত পরে মৃত্যু, পরকাল এই সব কথা অজান্তে মনে পরে গেল তাই ভাব টা অন্য জগতে চলে গেছে।লেখক হিসাবে অবশ্যই স্বার্থক আপু।লেখনী শক্তির অসাধারণ ক্ষমতা আছে আপনার। শুভকামনা রইল।
আরজু মুক্তা
আমরা বারবার মরি। না, মৃত্যুর মৃত্যু হয়?
এ ধরনের মেটাফিজিক্যাল কবিতা বড় ভালো লাগে। গভীরতা বেশি থাকে।
শুভকামনা
বন্যা লিপি
আহ্…..এটা এ যাবৎ পাওয়া আমার সেরা মন্তব্য। সহজ বাংলায় অতলস্পর্শী বোধ রাখা হয় এই ধরনের লেখায়। আমার এই ধারাটা ভীষণ টানে। প্রত্যেকটা শব্দ ব্যাবহার হচ্ছে একেকটা উপমার আদলে। যে শব্দ পাঠকের নিউরোনে ভাবনার বিস্তার ঘটাতে বাধ্য করবে। এবং পড়ার উপকার সেখানেই উপলব্ধতা জয় করবে। এাটা টাইট হাগ রইলো, আর সাথে বিস্তর ভালবাসা❤❤❤
আরজু মুক্তা
ভালোবাসা সবসময়
তৌহিদ
আমরা হতাশার বাণী শুনতে চাইনা। সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নারী এগিয়ে চলুক এটাই চাই।
ভালো থাকুন আপু।
বন্যা লিপি
শুনতে না চাইলেও ঠেকানোও যাচ্ছে না প্রতিবন্ধকতা। ঠেকাতে পারছে কে কতটা?
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার এক ভাবনার প্রকাশ লিপি আপু অনেক শুভেচ্ছা রইল
বন্যা লিপি
আপনাকেও শুভেচ্ছা।
ছাইরাছ হেলাল
ঘাট-মরাদের উপেক্ষা করা কঠিন, চাই বা না-চাই।
আবার ঘাটে মরা-মুরাদের ভীড়-ভার না থাকলেই বা হয় কী করে!!
আর যেতে চাইলে-ই বা কে কাকে আটকাচ্ছে, যাক না, যে যেথায় খুশি।
আবার থাকলেও বা সমস্যা কী, থাকুক না!!
বন্যা লিপি
সবই তো বলে দিলেন! পক্ষ আর বিপক্ষ, আটকায়ও না কেউ, থাকেও না কেউ। যার যাবার নিয়তি সে থাকতে চাইলেও থাকতেই বা দিচ্ছে কই ঘাটের মরার দল! ঘাটের মরা’রা মরেনা, বরং মারে অকালে কলমী ফুলেদের। মারে ফুটতে চাওয়ার অপরাধে…….
ছাইরাছ হেলাল
ঢোলকলমিদের না ফোটাই ভালু!!
ফুলদের চৌদ্দ-খুন মাফ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
নারীরা এফিটাফে এভাবেই গেঁথে থাকে পর্যায়ক্রমে । সাদা থানে প্রতিবন্ধকতার অদৃশ্য শিকল বাঁধা থাকে । শুকনো মরা পাতায় মাটির উর্বরতা বাড়লেও তাতে এ সমাজের কিছু যায় আসে না তারা শুধু ফলটাই পেতে চায় শিকড় উপড়ে ফেলে দেয় নদীর পাড়ে । ফুটতে চাওয়ার অপরাধে এভাবেই দন্ডিত হতে হয়। চমৎকার উপমায় নারীর অন্তরায় গুলো তুলে ধরলেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
বন্যা লিপি
শুকনো মরা পাতার তলে উর্বর হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে কলমীর উর্বরতায় জায়গা নেই।
ভালো থাকুন ছোটদি।শুভ কামনা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
চরিত্রের অসম্ভব দৃঢ়তার প্রকাশ — এই এতকিছু দেখেও আমি মাতাল হই ওই ফুলের গন্ধে। ভালো থাকবেন আপা।
বন্যা লিপি
এখনো কলম চলছে…. হয়ত এপিটাফ রচনা হবার সময় ঘনিয়ে আসছে…… দৃঢ়তা নিঃস্ব হবার পথে।
ভালো থাকবেন।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দৃঢ়তা নিঃস্ব নয় আরও বেগবান এবং তেজোদীপ্ত হোক এই কামনাই রইলো।