
কাঁত হয়ে নুঁয়ে পড়া গাছ থেকে পুকুরের ঠিক মধ্যিখানে, টুপ করে ঝড়ে পড়া তালের ডুবে যাওয়ায় সৃষ্ট; মিষ্টি জলের বুকের উপর দিয়ে যে কিশোরী ঢেউ গুলি ছুটে গিয়ে আছড়ে পড়ে পুকুর পাড়ে-
তেমনি চনমনে দুরন্ত ঢেউ খেলানো ছন্দে ভরা কোন মায়াবী জলপরী; হটাৎ চোখে পড়ে ঘুমন্ত শহরের ছিটকে পড়া আধো আলোয়- চলন্ত ইন্টারসিটি ট্রেনের দুই বগির মধ্যিখানের সংযোগে।
পালমোলিভের হালকা সুবাসের সাথে ওডি অ্যাপারেল বা কেলভিন ক্লাইন এর মিক্সড পারফিউমের গন্ধে মৌ মৌ পরিবেশ। গোলাপী বর্ডারের সাদা এডিডাসের উপর গাঢ় নীল জিন্সের কোমরের বাম পাশে ঝুলে আছে গোলাপী আস্তরের বেল্ট এর ডগা। তার ঠিক আড়াই ইঞ্চি উপরে লাগানো বোতামটার নিচের অংশ টান লেগে আছে কাঁধে ঝোলানো চামড়ার ভ্যানিটি ব্যাগে। মেদহীন তুলতুলে চামড়ার খানিক কম্পন থেকে যখন চোখ সরে, ততক্ষনে শহরের আলোরা লুকুচুরি খেলতে শুরু করেছে। পরের তিন মিনিটে মুখখানা দেখি। এক হাঁটু ভাঁজ করে কালচে লোহার পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে কোন জীবন্ত অপ্সরা।
বেহায়া চোখ- ভূত দেখেনিতো আবার! চিমটি কেটে শিউর হতে মন চাইছিল। মনে হয় মধ্যরাতে তন্দ্রাভাঙ্গা মানুষের চোখ শুধু রূপটাই দেখে, দোষ-গুণ খুঁজে দেখার জন্য মস্তিষ্কের যে অংশটার চেতনা দরকার, সে অংশটা সম্ভবত ঘুমন্ত থাকে সে সময়ের নিদ্রা বিরতিতে। তাইতো বিবাহিত জীবনে হাজারটা সন্ধ্যারাতের ঝগড়া, মাঝরাতে মিটে যায় অজানা ইশারায়।
কি আর করা- চার চারটি তাজা হুইস্কির পেগ এতো নেশা ধরায় না, যতটা নেশা বিধাতার পূর্ণ অবসরের নিদারুণ মমতায় গড়া সৃষ্টিতে।
আসলে হলদেটে গোলাপী জলে শিহরণ জাগে মনে- সে তো ইচ্ছের কাছ থেকে সুখের নেশায় কেড়ে নেয়া অবসন্নতা, অপ্সরীদের চোখ ধাঁধানো কাঠামো আলোড়ন তুলে চোখে- সে যে অবেলায় ভেঙ্গে যাওয়া কৈশর নিদ্রার আন-কনট্রোল্ড দুরন্তপনা।
মনে হয় কোন আমাবস্যার চিকচিকে আঁধারে প্রচন্ড কালবৈশাখীর ঝড়ের বিপরীতে সাগরের ঠিক মধ্যিখানে লোনা জলে তিন ঘন্টা সাঁতরানোর পর এক পেয়ালা মিষ্টি জলের নেশা।
শুনেছি পুরুষের চোখ- দুনিয়ার সমস্ত ঐশর্য একীভূত করে, একটা কবিতায় সাজায় একটাই নারীমূর্তী। তেমন শতশত প্রেমিক কবিদের কল্পনায় আর উপমায় লিখা হাজারো উপসর্গের বাস্তব সামঞ্চস্য খুঁজে দেখার ইচ্ছেটা আপাতত ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছিলাম সামনের কম্পার্টমেন্টে- একটা খুব কড়ড়া কফি খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো- মেস্ত্রে থেকে ভিসুভিয়ানো প্রায় এগারো ঘন্টার পথ- ট্রেনে একবার ঘুম ভাঙ্গলে আমার আর তেমন চোখ লাগেনা কখনো- বারোটা বেজে বিশ, আরও ছয় ঘন্টা বাকি।
থেমে গেলাম- অনিচ্ছায়, অজান্তেই । কখনো কেন জানি, অজানা কোন জংলী ফুলের নাম জানতে খুব ইচ্ছে হয়। বিশেষ করে তেমন ফুল, যে ফুলের সুবাসিত রূপ, এতো কাছে থেকে আগে কখনো দেখেনি দু চোখ।
মুখ ভরে একরাশি ধোঁয়া টেনে নিয়ে চকচকে গোলাপি ঠোটদুটি ঠিক চুমুর ভঙ্গিতে ঠেলে দিলো সোজা—— মুখ বরাবর-
খেয়াল করলাম, বেড়ে যাচ্ছে হার্টবীট। আধো অন্ধকারে ধোঁয়া ঠিকঠাক দেখতে না পেলেও নাকের সামনে হাতের তালু এপাশ ওপাশ করতে করতে মুখে প্রচন্ড মিষ্টি একটা হাসি নিয়ে ধরা গলায় বললাম- হ্যালো-
অর্ধেক পোড়া সিগারেটটা ভেন্টিলেটর দিয়ে বাইরে ফেলেই তেমন সুন্দর এক হাসি ফিরিয়ে দিল সে, ও – হাই, হ্যালো-
বলেই দ্রুততার সাথে আমার সামনের কম্পার্টমেন্টের দিকে সোজা আঙ্গুল তুলে বলল- ২৪/বি এর উপরে গ্রীন রংয়ের একটা ছোট ব্যাগ আছে, কষ্ট করে আনবে-
ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসার আগেই ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে নোঙ্গর করে ট্রেন- ইতিমধ্যে সে দরজার নিচে প্লাটফরমের হলদে দাগটার উপর। হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা ওর হাতে তুলে দিতেই অন্য হাতটা উঁচু করে বলল- ধন্যবাদ বন্ধু – আবার দেখা হবে।
জনসমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পুকুরের মিঠা জলে সেই দুরন্ত কিশোরী মায়াবী ঢেউ দেখছিলাম-
ফিরেও তাকায় নি একটিবার-।
আজকাল মাঝে মধ্যে স্বপ্নে দেখি-
সে আর আমি,
পাশাপাশি দুটি সীট,
উড়ন্ত সোনালী চুলে দুরন্ত ঢেউ,
ট্রেনের মিষ্টি দুলনী সাথে দুলে উঠে মন-
এবার বুঝি নামটা জানা হবে ;
আবারও ভাঙ্গে স্বপ্ন-
এক ফুট দুরে দাড়িয়ে থাকা জীবনের একটি মাত্র ক্রাশের নাম আজও অজানা_____॥
-0-
১৮টি মন্তব্য
অনন্য অর্ণব
আজকাল বুঝি ট্রেনের কম্পার্টমেন্টেও ক্রাশ লুকানো থাকে…তবে সে যদি তার একগাছি সোনালী চুলের বিনিময়ে ব্যাগটা নিয়ে যেতো…আমি হলে ঠিকই বলে ফেলতাম
– দেখি দেখি, আপনি একটু পেছনে ঘুরে দাঁড়ান তো। আপনার এই একটা চুল বেশি কোঁকড়ানো। মা বলতেন মাথাভর্তি সরু চুলের মধ্যে যখন একটা বেশি কোঁকড়ানো থাকে, তখন ওটা তুলে ফেলতে হয়। তা না হলে আপনার মাথা ব্যথা হতে পারে,,, এই বলে একগাছি সোনালী চুল তুলে রেখে দিতাম,,,,হা হা হা🤣🤣
এস.জেড বাবু
ইশশ
পরের বার এই বুদ্ধি কাজে লাগাতে হবে- হাহাহা
চমৎকার এবং মজার কমেন্ট
মুগ্ধ ভাইজান
অনন্য অর্ণব
ছোটগল্প তো এমনই হওয়া উচিত,,, শেষ হইয়াও হইলো না শেষ❤️
এস.জেড বাবু
আন্তরিক ধন্যবাদ ও নিরন্তর শুভেচ্ছা রইলো
সুরাইয়া পারভিন
কি বলে মন্তব্য করলে এতো সুন্দর লেখার যথার্থ মন্তব্য করা হবে বুঝতে পারছি না। প্রতিটি লাইন অনবদ্য।
আধভাঙ্গা ঘুমে কোনো রমণীকে ভূত বা কোনো ভূতকে রমণী ভেবে ভুল করা অস্বাভাবিক নয়।
“হুইস্কির পেগ এতো নেশা ধরায় না, যতটা নেশা বিধাতার পূর্ণ অবসরের নিদারুণ মমতায় গড়া সৃষ্টিতে”
সত্যিই দারুণ সৃষ্টি
এস.জেড বাবু
প্রাণবন্ত মন্তব্য-
শুভেচ্ছা আর ধন্যবাদ যেন মলিন-
আপনার সমৃদ্ধ জীবন কামনা করছি আপু
মাছুম হাবিবী
আহা ক্রাশ, এই একটি শব্দের উন্মাদনায় পুরো বিশ্ব আজ বিষমিত! খুব ভালো লাগলো
এস.জেড বাবু
অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইলো
নিতাই বাবু
ভালো লেগেছে দাদা। অনেক ভালো লিখেছেন।
এস.জেড বাবু
নিরন্তর শুভ কামনা প্রিয় ভাইজান-
আরজু মুক্তা
সোনালি চুল। জীবনানন্দ থাকলে, সোনালি চুল নিয়ে কবিতা লিখে ফেলতেন, সোনালী রংয়ের চুল। আহা।
এস.জেড বাবু
সুন্দর বলেছেন-
কোন এক জীবনানন্দ লিখে ফেলবে সোনালী চুলের কথা।
শুভেচ্ছা আপু
ছাইরাছ হেলাল
যেমন অদ্ভুত কিন্তু চোখা বর্ণনা দিলেন এক অপ্সরীর,
সে তো এখন দিব্যি হেঁটে বেড়াচ্ছে সারা লেখা জুড়ে, নাহ্, ভূত সে নয় তা বুঝতেই পারছি।
এস.জেড বাবু
হুমম সত্যি-
সে অচেনা কোন শহরের বাসিন্দা ছিলো-
একটা কফি অফার করার ইচ্ছে পুরণ হয়নি। হাহাহা।
অশেষ ধন্যবাদ ভাইজান
মনির হোসেন মমি
মেস্ত্রে থেকে ভিসুভিয়ান কোন দেশের?
যেভাবে বর্ননা করলেন তাতে মনে হল আমিও দেখছিলাম অপ্সরীকে। খুব ভাল লাগল। শব্দ বাক্যে দারুণ সংযোজন।
এস.জেড বাবু
মেস্ত্রে – ইতালির জলের শহর ভেনিসের আগের ষ্টেশন। ভেনিস রিজিওন। আমার বাসা থেকে চার মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ।
আর ভিসুভিয়ানো নাপোলি রিজিয়নের শহর।
সুপ্ত আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস এর পাদদেশে উঁচুনিচু সবুজ শহর।
অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো মমি ভাই।
কমেন্টে মুগ্ধতা।
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাইয়া।
এস.জেড বাবু
মেস্ত্রে – ইতালির জলের শহর ভেনিসের আগের ষ্টেশন। ভেনিস রিজিওন। আমার বাসা থেকে চার মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ।
আর ভিসুভিয়ানো নাপোলি রিজিয়নের শহর।
সুপ্ত আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস এর পাদদেশে উঁচুনিচু সবুজ শহর।
অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো মমি ভাই।
কমেন্টে মুগ্ধতা।