
রিংটোন বাজছে——-ক্রিং ক্রিং ক্রিং।
ঘড়ি দেখলাম। আটটা বাজতে পনেরো মিনিট। সেল বের করে দেখি, ম্যাডাম। সাত সকালে ফোন! নিশ্চয় জটিলতা।
গুড মর্নিং ম্যাডাম।
ফোন ধরছো না কেনো? বাসা থেকে বের হয়েছো?
না,,,, এইতো বের হচ্ছি। জি, বলেন।
উকিল পাড়ায় যেতে হবে। ওখানে এস.পি সাহেবের বাংলোর পিছনে একটা বস্তি আছে। ওখানে, কালামকে খুঁজে বের করবে। ও ইয়াবা পাচারকারী। ক্যামেরা আর টেপরেকর্ডার সাথে নিও। বাকিটা হোয়াটস্ এ্যাপে দিয়েছি। দেখে নিও। এসে রিপোর্ট দিবে। বাই।
টুৎ টুৎ—–!
বেটি আর কাম পাইলো না। বুয়া আসে নাই। নাস্তা করতে বাহিরে যাবো। দিলো শান্তিটা নষ্ট করে। জটিল কাম মানে শান্তা। এইটা বেটি ভালো করেই জানে।
আমি শান্তা। ক্রাইম রিপোর্টার। কেমনে যে এই কাজ আমায় পেয়ে বসলো? অথচ আমি শান্ত। সারাক্ষণ গান শুনি। চা খাই। ঘুমাই। তাহলে কাজ করে কে? আরে এই আমি গান শুনতে শুনতে কাজ করি। কেডস পরে, মাথায় মাঙ্কি টুপি দিলাম। এবার ঠাণ্ডা মনে হয় সাইবেরিয়া থেকে আসছে।
শামসুল ভাই, আজকার মেনু কী?
আফা, আপনার জন্য পরোটা আর মুরগির মাংস।
নিয়া আসেন। তবে চা কড়া। চিনি বেশি না।
জানি তো আমি।
এই রিকসা! উকিল পাড়া চলো।
এইদিকটায় কখনো আসা হয়নি। পাড়াটা তো ছিমছাম। সব বাড়ির সামনে বাগান। বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে।
এইখানে থামো। ভাড়া মিটায় দিলাম।
গলির মুখে আরামছে, একজন বিড়ি টানছে। জলিল বিড়ি এখানকার বিখ্যাত। আমি লম্বা সালাম দিলাম। চাচা কেমন আছেন?
আছি মা, তা কার খোঁজে আসছেন?
কারও খোঁজে না, চাচা। আপনাদের এই বস্তির মানুষ জনরে নিয়া গল্প লিখবো।
এইটা আমার ঘর। লন, বসেন।
আপনার নাম কি চাচা?
কফছার। আমার দুই মেয়ে, দুই ছেলে। সবার বিয়া হইছে। তয় ছোট জামাইটা বড়লোক।
নাম কি?
কালাম। সবাই বলে কাইল্লা কালাম।
ও।
কিছুক্ষণ পর মৌমাছির মতো বৌ পোলাপানের ভীড়, আমার চারপাশে। এক মহিলা বড় একটা মেয়েকে কম্বল জড়ায় নিয়ে আসছে।
কি হইছে ওর?
আফা ও অটিস্টিক আজ বিশ বছর ধরে এমন করে নিয়ে বেড়াই।
ওর বাবা নাই?
আছে।
কে জানি পিছন থেকে বললো। রমযান। শালা, সাতটা বিয়া করছে।
কি বলেন? সাতটা!!! সামলায় কেমনে?
খাটো করে এক মহিলা, সামনে এসে বসলো। বুঝলেন আফা! “এই রমযানের মতো বিশ্ব বেহায়া আর নাই। রিকশা চালালে চালালো। না হলে যে কোন এক বৌয়ের বাড়িতে গেলেই হলো। পেট ঠান্ডা তো জগত ঠান্ডা। বৌগুলো কারও না কারও বাসায় কাজ করে। আবার বৌগুলাক এক জাগাত রাখে নাই। ঐ দেখেন কইতে না কইতে রমযান আইছে।”
দেখলাম, বেশ ফিটফাট। চুল ব্যাক ব্রাশ। লুম্গি পরছে। কিন্তু কুচি ঠিক। একেবারে বস্তির হিরো।
রমযান সাহেব, কেমন আছেন?
ভালো আছি, আফা।
বিড়ি খান?
না, আফা। খারাপ কোন অভ্যেস নেই।
ভালো।
বুঝলাম এখানে আর সময় না দিয়ে, কাছেই থাকে এমন এক বান্ধবীকে ফোন দিলাম। ” তোর ওখানে খাবো!”
ওখানে খেতে খেতে রমযানের গল্প উঠতেই ও বললো, জানিস! রমযান আমার বাসার কাজের মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছে।
কালামকে নিয়ে রিপোর্ট লেখার কথা মাথা থেকে উবে গেলো।
বিয়ে পাগলের গল্প শুনে।
২৪টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
নিপুণ বস্তুনিষ্ঠ প্রকাশ
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ
শামীম চৌধুরী
খুব সুনদর।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হা হা ক্রাইম রিপোর্টার হয়ে গেল ম্যারেজ রিপোর্টার। ধন্যবাদ আপু। খুব ভালো লেগেছে গল্পটা। শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল
আরজু মুক্তা
আপনিও ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
আরে এ কোন লেখককে দেখছি!
নবতর অধ্যায়!
চালু রাখবেন তো, নাকি হাওয়া হাওয়া।
যে ব্যস্ত মানুষ আপনি! দিনে শ’তিনেক লাইক কম কথা নয়।
আরজু মুক্তা
গল্প কেমন লাগলো সেটা আগে বলেন?
ছাইরাছ হেলাল
অনেক ভাল, অবশ্যই ভিন্নরকম।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ক্রাইম থেকে ম্যারেজ রিপোর্টার।
তারমধ্য সাতটা বিয়া করছে!
বাহ্!
বেশ সুন্দর একটা গল্প দিদি।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ দাদা
রিমি রুম্মান
অন্যরকম লেখা। ভাল লাগলো
আরজু মুক্তা
আপনার গল্পগুলো আরও চমৎকার হয়।
ধন্যবাদ আপু
কামাল উদ্দিন
রমজানও কিন্তু ক্রাইম করছে, ওকে নিয়ে ভালো একটা রিপোর্ট লেখা উচিৎ
আরজু মুক্তা
ধীরে বৎস।
কামাল উদ্দিন
ওকে বড় আপু
হালিম নজরুল
ক্রাইম রিপোর্টার না ম্যারেজ রিপোর্টার! !!
আরজু মুক্তা
আস্তে আস্তে সবই পাবেন। সম্গে থাকুন
রেহানা বীথি
এই রিপোর্টার তো দেখি পেশার প্রতি খুব সিরিয়াস!! 😃😃
ভালো লাগলো বেশ।
আরজু মুক্তা
ভেজাল আপা, সবখানেই।
ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
গেলো কালামের খোঁজে, লাগলো রমযানের পিছে 🙂
ভালো হইছে প্রথম পর্ব,
আমার লেখার নায়িকার নাম কিন্তু শান্তা। নাম ছিনতাই হয়ে গেছে।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
রিপোর্টার হয়ে তো দেখি নামও ছিনতাই করছি।
আসছে ২য় পর্ব।
তৌহিদ
লেখা শুরু হলো যেভাবে কিন্তু এনে ফেললেন সাসপেন্স এ!! বিয়ে পাগলকে নিয়ে শান্তা কি করে এটাই দেখার বিষয়।
ভালো লাগছে পড়তে। পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিন।
আরজু মুক্তা
সাসপেন্স না থাকলে ভালো লাগে না।
২য় পর্ব দিয়ে দিবো।
শুভকামনা