
ছবি তোলা আমার শখ। এই শখটা পূরনের জন্য জীবনে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছি। বেশীর ভাগ পাখির ছবির জন্য ঢাকার বাহিরে যেতে হয়। যখন কোন অজানা অচেনা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হই তখন কোন চিন্তা থাকে না,
কোথায় থাকবো?
কি খাবো? ইত্যাদি ইত্যাদি।
ক্যামেরা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বের হয়ে পড়ি। গন্তব্যের বাস বা ট্রেন ধরে যাত্রা শুরু করি। অনেক সময় সঙ্গে কেউ থাকেন। অনেক সময় একাই চলাফেরা করি। ছবি তোলার জন্য এমনই একটি স্থান বেছে নিলাম কুষ্টিয়া। নিজের আপন বলতে কেউ নেই। কুষ্টিয়ার আমলা উপজেলায় থাকে কনিষ্ঠ একজন ফটোগ্রাফার। তার সাথে কথা বলেই চলে যাই। সময় মত পৌছার পর সেই ছোট ভাইটি তার নিজ বাড়িতে থাকার ব্যাবস্থা করে। ছেলেটির নাম মেহেদী। রাতের খাবার খেয়ে মেহেদীর সাথে ঘুমিয়ে পড়ি।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠি। নাস্তা না করেই ক্যামেরার ব্যাগ ও মনোপড কাঁধে ঝুলিয়ে বের হয়ে পড়ি। চোখ দুটি সবসময় নদীর ধারে, ঝিলের পাড়ে, ঝোপ-ঝাড়ে, জঙ্গলে, গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে থাকে পাখী খোঁজার নেশায়। মাটিতে কোটি টাকা পড়ে থাকলেও তাতে কোন সময় নজর যায় না বা লোভ জন্মায়না। লোভ জন্মায় শুধু নতুন বা অপরিচিত কোন পাখীর ছবি তোলার জন্য। এটা শুধূ আমার বেলায় না, সব বার্ড ফটোগ্রাফারের বেলায়ও প্রযোজ্য।
নদীর পাড় ধরে মাইলের পর মাইল হাঁটতে থাকি পাখীর একটি ভালো শট নেবার জন্য। সারাদিন না খেয়ে বা অর্ধাহারে ছবি তুলতে হয়। সঙ্গে থাকা ৫০০এম,এল সুপেয় পানিই জীবন বাঁচানোর সম্বল। অনেক সময় এই পানিও সঙ্গে থাকে না। এতো পরিশ্রম করে ছবি তুলতে হয়। মোদ্দা কথা তখন খাবারের চিন্তাও থাকে না। সারাদিন হাড়-ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর দিন শেষে যখন ল্যাপটপে বসে দেখি ছবি ঠিক মত হয়নি বা ফোকাস হয়নি তখন বার বার মনে পড়ে সেই কঠোর পরিশ্রম ও কষ্টের কথাগুলি। অনাহারে থাকার যন্ত্রনাটা তখন চাড়া দিয়ে উঠে। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
কিন্তু, সর্বশেষে পাখির যদি কোন মোমেন্ট ছবি পাই তখন সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে যাই। আনন্দে মনটা ভরে উঠে। ঠিক তেমনি ভাবে এই মাছরাঙার ছবি তুলতে পেরে যে আনন্দ পেয়েছি তাতে কুষ্টিয়া সফরের সব দুঃখ-কষ্ট ও পরিশ্রম মন থেকে মুঁছে যায়। দিনশেষে একজন ফটোগ্রাফারের সফলতা বা তৃপ্তি শুধুমাত্র একটি ভাল মানের ছবি।
বাংলা নামঃ পাতি মাছরাঙা
ইংরেজী নামঃ Common Kingfisher
ছবিটি কুষ্টিয়ার আমলা উপজেলার কৃষি বীজ ভান্ডার এলাকা থেকে।
১৮টি মন্তব্য
শাহরিন
পাখির ছবিটা অসাধারণ হয়েছে। আর ছবি তুলতে যেয়ে কষ্টের যে সাগর পাড়ি দেন তা কিন্তু না বললেও অনুভব করতে পেরেছিলাম ভাইয়া।
শামীম চৌধুরী
ধনবাদ। দোয়া করবেন।
রেহানা বীথি
আমাদের এক ছেলে(ভাসুরের ছেলে) র নেশা পাখির ছবি তোলা। এমনিতেই কিছুটা অলস প্রকৃতির, কিন্তু পাখির ছবির ব্যাপারে তার কোনো ক্লান্তি নেই। সেই ভোরে বেরিয়ে সারাদিন ছবি তুলে কাদামাটি মেখে বাড়ি ফেরে।
ওর তোলা এক একটা ছবি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
আপনার তোলা মাছরাঙার ছবিটিও অদ্ভুত সুন্দর।
শামীম চৌধুরী
নাম কি আপু আপনার ভাতিজার?
রেহানা বীথি
তারিক। মোঃ তারিক হাসান
শামীম চৌধুরী
চাপাইনবাবগঞ্জের ছেলে। ঢাকায় উত্তরায় থাকে কি আপু।
মনির হোসেন মমি
একেই বলে সৃষ্টি সূখের উল্লাসে…কখনো কি হাইজ্যাকারের কবলে পড়েছেন?যদিও কামনা করি না।
শামীম চৌধুরী
নাহ। আপনাদের দোয়ায় এখনো এমন পরিস্থিতির শিকার হইনি। তবে অনেকের ক্যামেরা ছিনতাই হয়েছে ঢাকা শহর থেকে।
জাহিদ হাসান শিশির
বাহ ! খুব ভালো কাজ।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ হে, নতুন অতিথি।
তৌহিদ
আপনি এত কষ্ট করেন বলেই আমরা পাখি নিয়ে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারি। তবে যেখানেই থাকবেন ভ্রমনে সতর্ক থাকবেন ভাইজান।
শুভকামনা রইলো।
শামীম চৌধুরী
সবসময় সজাগ থাকি সতর্কভাবে চলাফেরা ও থাকার জন্য। বাকিটা তোমাদের দোয়া।
আরজু মুক্তা
আপনি কষ্ট করেন বলেই এতো এতো সুন্দর ছবি আমরা পাই।
আপনার কষ্ট সার্থক হোক।
শুভকামনা
শামীম চৌধুরী
আপনার জন্যও রইলো শুভ কামনা আপু।
ছাইরাছ হেলাল
মাঝে মাঝে ভাবি ‘বয়স কালে’ কেন আপনার সাথে দেখে হলো না!!
ছবি প্রশংসা করবো না ছবি তোলকের তাই ভাবছি।
মেটাডেটা বলুন তো। দেখে রাখি অন্তত।
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনার ছবি তোলার অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশংসা করা এখন আর সাজেনা। প্রতিটি ছবির সাথে পেছনের গল্পগুলো আমাদের জানাচ্ছেন তাতে আপনাকে একজন সুলেখক হিসেবেই বেশি মানি। এত দারুন বর্ননার কারনেই ছবিগুলো আরো প্রানবন্ত লাগে।
ফিচার ছবির পেছনের দৃশ্য অনেক সুন্দর, মনোরম। এমন জায়গায় গেলে মুগ্ধ হয়ে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে। ছবি তোলার কথা মনেই থাকেনা। 🙂
ভালো থাকুন। শুভ কামনা অবিরত 🌹🌹
মোঃ মজিবর রহমান
শামীম ভাই আমলা একাটি ইউনিয়ন। তবে জায়গাটি ভালই। মাছ্রাংগায় মন ভিজিয়ে রাংগিয়ে দিলেন আপনার কস্টে তোলা ফটতে। শুভেচ্ছা রইল।
ইঞ্জা
ফেইসবুক বা অন্য গ্রুপে পড়েছিলাম আপনার অভিজ্ঞতা, আপনার প্রতিটি লেখায় আমাকে চুম্বকের মতো ধরে রাখে, ধন্যবাদ ভাই।