
ঘটনা এক
——–
কয়েকদিন আগে ফেসবুক খুলেই মাই ডে তে পোস্ট করা এক মায়ের চোখের জলের ছবি দেখলাম। উনি আমার এক ফেসবুক বন্ধু। দুইটা ছেলেমেয়ের মা। উনি ডিভোর্সি। ছেলেমেয়েকে নিয়ে এতোদিন ছিলেন। সাত বছর ধরে ছেলে তার কাছেই ছিলো এখন সাত বছর পর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বাচ্চার কাস্টডি বাবা পাবেন তাই ছেলে বাবার কাছে গতো এগারো মাস ধরে। এতোদিন বাবা খোঁজ করেনি, এখন ছেলের অধিকার তার??? তার মানে মা কি শুধু একটা বাচ্চার ন্যানি? পালন করবে এরপর বাবার?
আমি প্রায়ই তার ছেলের জন্য হাহাকার করা পোস্ট দেখি। উনার বাচ্চা ছেলেটার কাল জন্মদিন ছিলো, জন্মদিনে ছেলেরে একটু উইশ করার জন্য উনি বারবার তাদের কাছে অনুরোধ করেছেন, একটু কথা বলতে চেয়েছেণ তাকে সেটাও করতে দেওয়া হয়নি। উনার প্রতিদিনের ফেসবুক পোস্টে ছেলের জন্য হাহাকার, কান্না। এক মা নিজে যে বাচ্চাকে জন্ম দিয়েছেন তিনি আজ সেই সন্তানের জন্মদিনে একটু কথা বলতে পারছেন না এর থেকে কষ্টের আর কি আছে আমি জানি না। এই হলো আইন, সমাজ, সমঅধিকার….. নারী অধিকারের চেহারা……. । আমার ভয়ানক মন খারাপ হয়ে গেলো ওই মায়ের ছবিটা দেখে॥
ঘটনা দুই
——-
পরিচিত একটা আন্টির কথা মনে পরছে। উনার হাজবেন্ড কিছু অন্যায় হলেই ওনারে বাসা থেকে বের করে দিতেন। উনি ওনার কাপড়চোপড় নিয়ে একটা ছোট ব্যাগসহ বের হয়ে যেতেন। এরপর এলাকা দিয়ে ঘুরতেন, উনার যাওয়ার জায়গা ছিলো না। নিজের পছন্দের বিয়ে বলে বাপের বাড়িও বলতে পারতেন না, তারতো হাসাহাসি করবে। উনার দুই বাচ্চা, বহুদিনের গোছানো ঘরবাড়ি সব মুহূর্তে নেই হয়ে যেতো….. উনারে গেট লস্ট বলে বের করে দেওয়া হতো। মানুষজন উনার দিকে অবাক হয়ে তাকাতো, তখন উনার কি মনে হতো? মনে হতো নিজেরে কোনোভাবে অদৃশ্য করে ফেললে হয়তো বেঁচে যাওয়া যেতো। শুনেছিলাম উনি নাকি অনেকবার সুইসাইড করতে গেছেন পারেন নাই….. মায়া…. মায়া বড় খারাপ জিনিস। তখন ছোট ছিলাম অতো বুঝতাম না। এখন তার কথা মনে করি…. একটা ব্যাগ হাতে অসহায় এক রমনী। এরপর উনার হাজবেন্ড এক সময় উনারে ডেকে নিয়ে যেতেন। আপনারা হয়তো বলবেন উনার আত্মসম্মান নেই, তাই যেতেন। কিন্তু উনি ফিরতেন কারণ আর কিছু তার করার ছিলো না। প্রতিবার উনার ভয় হতো হয়তো এবার আর উনারে ডাকা হবে না। এরপর ডাকা হতো, উনি পুরান খেলনার মতো ফিরতেন, যাকে ইচ্ছে করলে ফেলে দেয়া যায়, ইচ্ছে করলে ঘরে রাখা যায়।
—————
আমরা নারীরা এমন ভাবেই থাকি, রাখা হয় আমাদের।
১০টি মন্তব্য
তৌহিদ
আমাদের সমাজে নারীদের মুল্যায়ন সঠিকভাবে অনেকেই করিনা। একজন নারী মা, জায়া, জননী, সহধর্মিণী, বোন। এসব আমরা কেন বুঝতে চাইনা?
দুটি ঘটনাই পরিবারে নারীদের বাস্তব রুপ। নারীরা অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে পুরুষ শাসিত সমাজে যা কখনওই কাম্য নয়।
ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
দুটো ঘটনাই নারীদের প্রতি চরম বৈষম্যমুলক ঘটনা,
শিক্ষিত, অশিক্ষিত সমস্ত সমাজেরই নারীকে এই অবস্থানেই রেখেছে।
ন্যুন্যতম শ্রদ্ধা, সন্মান দেখাই না আমরা নারীদের প্রতি।
তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করি।
সচেতন হতে হবে আমাদের।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমরা এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে জন্মদাত্রী মাকে তার সন্তানেরা ময়লার ব্যগের মতো রাস্তায় ফেলে যায়, ধনী সন্তানেরা অতটা কঠোর হয় না। তারা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়। যে সমাজে মায়ের সম্মান নেই, সেই সমাজে স্ত্রীর মর্যাদা আর কত থাকবে? সোশ্যাল মিডিয়ায় সারাদিন লেকচার দেয়া ভদ্রলোক গুলোও বাড়িতে বউয়ের মুল্যায়ন করে কিনা, তা শুধু ঐ ব্যক্তির স্ত্রী-ই ভালো জানে। হ্যা, কিছু ভালো পুরুষ আছে। তাই এখনো নারীরা মনের কথা বলতে পারছে।
ভালো লাগলো লেখাটি
শুভ কামনা 🌹🌹
সঞ্জয় মালাকার
আমাদের সমাজে নারীদের মুল্যায়ন সঠিকভাবে অনেকেই করিনা। একজন নারী মা, জায়া, জননী, সহধর্মিণী, বোন। এসব আমরা কেন বুঝতে চাইনা?দুটো ঘটনাই নারীদের প্রতি চরম বৈষম্যমুলক ঘটনা,
শিক্ষিত, অশিক্ষিত সমস্ত সমাজেরই নারীকে এই অবস্থানেই রেখেছে।
ন্যুন্যতম শ্রদ্ধা, সন্মান দেখাই না আমরা নারীদের প্রতি।
তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করি।
শুভ কামনা 🌹🌹
পর্তুলিকা
নারীর অনেক বাড়ি। কিন্তু নিজের বাড়ি নেই। বাস্তব এবং তিক্ত সত্য এটা।
রাফি আরাফাত
ভিন্নধর্মী চেতনা। নতুন বিষয়ে লেখা। সব মিলে ভালো লাগলো।
শুভ কামনা
ফয়জুল মহী
ভালো থাকুন। আরো লিখুন। দারুণ ,বেশ লাগলো ।
নিতাই বাবু
এখনকার চেয়ে আগে এমন ঘটনা অনেক হতো। মায়ের জাতি নারীদের খেলনা পুতুলের মতনই কিছু পুরুষ নামের কাপুরুষারা ব্যবহার করতো। বর্তমানে কিন্তু নারীর প্রতি এমন অত্যাচার অবিচার অনেকাংশে কমে গেছে। তারপরও দেশের আনাচে-কানাচে কিছু-না-কিছু এমন ঘটনা ঘটে থাকে। তবে হ্যাঁ, মূর্খের হার কমছে, শিক্ষার হার বাড়ছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা খুব কমই হবে বলে আশা রাখি।
কামাল উদ্দিন
দুটো গল্পই মন খারাপ করা, আসলে আমাদের মানবিকতার ঘাটতিই এখানে মুখ্য। নারী অধিকার বা পুরুষ অধিকারটা বড় কিছুনা বলে আমি মনে করি।
মনির হোসেন মমি
দুটি ঘটনাই নারী চরিত্রের বাস্তবতা। সন্তান সাবালক হলে আইন পিতার পক্ষে আর সাবালক করতে যত কষ্ট করতে হয় তা নারীর জন্য যেন বাধ্যতামুলক।
অনেক দিন পর এলেন।খুব ভাল লাগল।