
একটানা এতগুলাে প্রশ্ন করে স্ত্রীর কাছ থেকে কোনরুপ সাড়া শব্দ না পেয়ে হাসনাত সাহেব সােহিনীর হাত ধরে তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন, কি হল কোন উত্তর দিচ্ছো না যে? আবার শরীর খারাপ করছে ? ভাল লাগছে না ?
সােহিনী নিশ্চুপ হয়ে তার স্বামীর বুকে মাথা ঘেষে তার স্বামীর বুকের গন্ধ শুকছেন। টু শব্দটি পর্যন্ত করলেন না। শুধু দুচোখ বেয়ে তার নিরব জলরাশি গড়িয়ে হাসনাত সাহেবের শার্টের বােতাম স্পর্শ করছে। মুহুর্তেই সােহিনী তার স্বামী হাসনাতের বুক চিড়ে একটা সাত/আট বছরের শিশুকে বের হয়ে তাদের বসার ঘরের দিকে দৌড়ে ছুটে যেতে দেখলেন। সােহিনীও বাচ্চাটির পিছন পিছন ডাকতে ডাকতে ছুটে গেলেন তাদের বসার ঘরের দিকে, বাবু!বাবু! এতাে জোরে দৌড়াচ্ছ কেন? ব্যাথা পাবে তাে বাবা।
এসব বলতে বলতে সােহিনী দৌড়াতে দৌড়াতে খুব ক্লান্ত শরীরে এক অচেনা ঝিল পাড়ে এসে পৌঁছালেন। চারিদিক নিস্তব্ধ হাহাকার । আশেপাশে জনমানবের চিহ্নটি পর্যন্ত নেই। সােহিনীর বাচ্চা নেই! স্বামী নেই! সােহিনী এবার কাঁদছে। খুব জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদছে,“ হাসনাত! তুমি কোথায়? তুমি কোথায়? তুমি আমায় ছেড়ে কোথাও যেওনা প্লিজ কোথাও যেও না! কোথাও যেও না! কোথাও না! সােহিনী খুব হাঁপাচ্ছে । কপাল থেকে ঘাম তার গলা বেয়ে বুকের উপর পরছে। মাথার চুলগুলাে সব ভিজে গেছে। পানির পিপাসায় গলা শুকিয়ে এসেছে। পায়ের পাতাগুলাে খুব জ্বালাপােড়া করছে। চোখ মেলে সােহিনী দেখে। তার রুমের সিলিং ফ্যান অফ। গা তার এখনাে কম্বলে মােড়ানাে। ঘড়ির কাটা ১১ ছুঁই ছুঁই। বালিশের পাশে থাকা সোহিনী তার মােবাইল ফোন সিন করে দেখে তার স্বামীর অফিস থেকে তাকে করা চুয়াল্লিশটা মিসড কল উঠে আছে।
সােহিনী খুব দ্রুত তার স্বামী হাসনাত সাহেবকে কল দিলেন। ওপাশ থেকে হাসনাত সাহেব কল রিসিভ করে মায়া জড়ানাে কন্ঠে বলেন, সোনা! কত্তগুলাে কল দিয়েছি তুমি জানাে! চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম আজ তােমায় নিয়ে। তুমি ঠিক আছাে তাে ? সােহিনী খুব লজ্জ্বিত কণ্ঠে উত্তর দিলেন, ওহহহ! সরি। আমি খেয়ালই করিনি তুমি এত্তগুলাে কল দিয়েছ। আমি ঠিক আছি। বাট জানো! আজও না আবার সেই দুঃস্বপ্নটা দেখেছি। এই স্নপ্নটা আমাকে খুব অস্থির করে তুলেছে। খুব চিন্তা হচ্ছে আমার। আমি কি এবার পারব তােমাকে বাবা হতে সাহায্য করতে? বলাে না! তােমাকে সন্তানের মুখ দেখাতে? ওপাশ থেকে হাসনাত সাহেব উচ্চস্বরে হাসলেন। সােহিনী তার স্বামীর হাসির শব্দ শুনে একটু রেগেই বললেন, তুমি এতাে হাসছাে কেন? আমি কি হাসির কোন প্রশ্ন করেছি তােমায় ? তােমার মন খারাপ হয় না? এই যে দেখতে দেখতে বিয়ের এগারটা বছর কেটে গেল। তুমি এখনও বাবা হতে পারো নি, শুধু আমারই অসুস্থতার কারণে! তােমার কখনাে রাগ হয় না, আমার উপর?
২৮টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
চমৎকার বুঝাপড়ার সংসার। মানুষের জীবন যখন সাংসারিক হয় তখন সন্তান তার মুখ্য কামনা। তাছাড়া নারীর নারীত্বতো সন্তান জন্মের।নারীদের এ চাওয়া জীবনের সব চেয়ে বড় পাওয়া। ব্যাকুলতাতো সোহানীর মাঝে থাকবেই। চলুক গল্প।
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ ভাইয়া ..
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ ভাইয়া। আর অপেক্ষায় রাখব না। আজ শেষ পর্বটা ব্লগে দিয়ে দিব।
সাবিনা ইয়াসমিন
সোহিনী মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে বলেই মনে হচ্ছে। নারীর চির আকাঙখিত স্বপ্ন থাকে মা হওয়ার। আর স্বামী যদি পূর্ণ ভালোবাসায় নারীকে গ্রহন করে, তবে স্ত্রীর মাঝে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করার আকাঙ্ক্ষা আরো তিব্রতায় রুপ নেয়।
পরের পর্বের অপেক্ষায়…
শুভ কামনা মুক্তা 🙂
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ আপু …..
মোঃ মজিবর রহমান
সােহিনী নিশ্চুপ হয়ে তার স্বামীর বুকে মাথা ঘেষে তার স্বামীর বুকের গন্ধ শুকছেন।
স্বামীর বুকে মাথা থাকলে মানসিক সমস্যা নিশ্চিত চলে যাবে, আশা করি। ভাল বাসা মিটায় আশা।
মুক্তা মৃণালিনী
হাহা দারুণ বলেছেন ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
মিথ্যা বলিনি তো বোন, একে অপরের পরিপুরক, তাই নয় কি?
আরজু মুক্তা
এরকম স্বামীই প্রত্যাশা করে সবাই। ছেলেমেয়ে না হোক। ভালোবাসা থাকুক।
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ আপু
চাটিগাঁ থেকে বাহার
স্বামিটা খুব ভালো মনে হল।
মুক্তা মৃণালিনী
হ্যা ভাইয়া এ গল্পে স্বামীটা খুব ভাল,,,
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার গল্প
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ আপুমণি❤
শবনম মোস্তারী
এখন পর্যন্ত সহিনীর প্রতি হাসনাত এর ভালোবাসা দেখে সত্যি মুগ্ধ। জানিনা পরে কি হবে ☺️
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
মুক্তা মৃণালিনী
পরের পর্বেে আশা করছি মুগ্ধতা বাড়বে আপু,,,
ইঞ্জা
নারীর সন্তান না হওয়ার আক্ষেপ আমি দেখেছি, দেখেছি নারীটির জন্য প্রিয়তম স্বামীর ভালোবাসা, এই জন্যই বুঝি আপনার এই লেখাটি।
খুব ভালো এগুচ্ছেন আপু, লেখার মান খুবই ভালো।
মুক্তা মৃণালিনী
জ্বি ভাইয়া। আপনাদের অনুপ্রেরণা আর আন্তরিকতাই আমাকে সোনেলায় লিখতে অনুপ্রাণিত করল। আশা করছি আমার গল্পের পরের পর্বগুলোতেও চমক আর মুগ্ধতা রেখে যেতে পারব। সে পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকুন প্রিয় ভাইয়া।
ইঞ্জা
আপনি জানেন কি, আপনার এই লেখা সর্বপঠিত, ইনশা আল্লাহ বকি গুলোও সেইরকম হবে, লিখে যান আপু, পাশে আছি। 😊
বন্যা লিপি
খুব চমৎকার ভালবাসাময় দম্পতির কাহিনী।
নিঃসন্তান নারীর কষ্ট নিজ চোখে দেখেছি।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
শুভ কামনা।
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ আর শুকরিয়া আপু❤
শামীম চৌধুরী
সংসার জীবনের মূল সুখ হচ্ছে নিজেদের মাঝে আন্ডাস্ট্যান্ডিং।
মুক্তা মৃণালিনী
দারুণ চমৎকার একটি কথা বলেছেন ভাইয়া। এ গল্পে মূলত আমি এই মেসেজটাই দিতে চাচ্ছিলাম। অশেষ ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য,,,
সঞ্জয় মালাকার
সংসার জীবনের মূল সুখ হচ্ছে নিজেদের মাঝে দুঃখ গুলো ভাগকরে নেওয়া।
খুব ভালো লাগলো পড়ে চমৎকার ভালবাসাময় দম্পতির কাহিনী।
শুভ কামনা দিদিভাই,
মুক্তা মৃণালিনী
একদম সঠিক বলেছেন দাদা। অশেষ ধন্যবাদ আর শুকরিয়া দাদা আপনার দারুণ চমৎকার মন্তব্যের জন্যে…
মাছুম হাবিবী
উদাস হওয়ার কিছু নেই। এরকম অনেক দম্পতী ই আছে যাদের সন্তান নেই। আল্লাহ্ জনক চাইবেন তখনই সন্তানের মা হতে পারবেন। সোহিনী উচিৎ আল্লাহ্ উপর ভরসা রাখা!!
মোহাম্মদ দিদার
ভালোবাসা এমনই হয়,
আর হওয়া উচি..
জিসান শা ইকরাম
বুঝতেই পারিনি সোহানি স্বপ্ন দেখছিলো।
সন্তানের জন্য হাহাকার সব নারীর থাকেই,
মাতৃত্ব নারীকে পুর্নতা দেয়।
গুছানো লেখা,
শুভ কামনা।