
চট্টগ্রাম শহর থেকে কিছুটা দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকতটির নাম কাট্টলী সমুদ্র সৈকত। পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের এই সমুদ্র সৈকতটি অনেকের কাছেই অজানা। এই সৈকতটির আরেকটি নাম হল জেলেপাড়া সমুদ্র সৈকত। এখানে খুব কাছ থেকে জেলেদের জীবনযাত্রা দেখা যায় এবং ইচ্ছে হলে তাদের কাছ থেকে মাছ কিনেও আনা যায়।
একদিকে সমুদ্র সৈকত আর একদিকে গ্রামীণ পরিবেশ অন্য কোন সৈকতে খুজে পাওয়া যাবে না। আর সব থেকে ভালো লাগবে এখানকার কেওড়া বনে প্রচুর পাখি দেখে। আর এই কেওড়া বনের ভেতরে বসে সাগরের মৃদু হাওয়া আর গর্জন শুনে কাটিয়ে দেওয়া যায় একটা দিন। সাগর সৈকতে সাধারণত সামুদ্রিক পাখিদেরই দেখা যায়। এখানকার সৈকতে সামুদ্রিক পাখি ছাড়াও ঘুঘু, কাঠ শালিক, দোয়েল, ভাট শালিক, খঞ্জনা এমন সব পাখিদের ব্যপক প্রাধান্য রয়েছে। তাই কাট্টলী সমুদ্র সৈকত নিঃসন্দেহে একটা ব্যাতিক্রমী সৈকত।
(২) জেলে পাড়াকে ডান পাশে রেখে এমন অপ্রশস্ত একটা পায়ে হাটা রাস্তা দিয়ে সাগরের দিকে এগিয়ে যেতে হয়।
(৩) দূরে সাগরের পাড়ে প্রতিদিন ভোরে জেলে নৌকা ঘিরে এমন জটলা নিত্য দিনের।
(৪/৫) তাদের মাছের জুড়িগুলোর চিত্র কম বেশী এমন।
(৬/৭) জেলে পাড়া থেকে বাম পাশটা অর্থাৎ যে পাশটা দিয়ে জেলেরা যাতায়াত করে এ পাশটা কাদাময় সৈকত, অন্য কো্থাও সাধারণত এমন কাদাময় সৈকত দেখা যায় না।
(৮) জেলে পাড়া পার হয়ে সামনের ডান পাশের অংশে রয়েছে বিশাল কেওড়া বন। অন্য সৈকতে সাধারণত থাকে ঝাউ বন।
(৯) কেওড়া বনের যে অংশটা জোয়ারের সময় পানিতে তলিয়ে যায় সেখান দিয়ে রয়েছে বেশ কিছু ছোট ছোট গর্তময় এলাকা, এসব গর্তে আমি অনেক সাপ দেখেছি। তাই যারা ওখানে যাবে তাদের প্রতি পরামর্শ থাকবে আরো ডানে সরে গিয়ে যে অংশটা সমতল কেওড়া বনের ঐ অংশটায় ঘুরাফেরা করার জন্য।
(১০) পরিযায়ী পাখি রামচ্যাগা, সাদাচোরা, সাদা কাঁচিচোরা, রণপা পাখি বা গুলিন্দা, এখানে একটা পাখির নামই বললাম 😀
(১১) জেলে পাড়ার গরুগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে বনের ভেতর।
(১২) অচেনা একটা মিষ্টি কন্ঠ শুনে তাকিয়ে দেখলাম সকালের মিঠে রোদকে আরো মিঠে করে তুলছেন তিনি।
(১৩) কেওড়া বনের ভেতরের সমতল অংশ, এখানটায় পাখির মধুর গান, সাগরের গর্জন আর কেওড়া বনের মৃদুমন্দ বাতাসে গা এলিয়ে দিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায় একটা দিন অনায়াসেই। যারা টক খেতে ভালোবাসেন তারা চাইলে কেওড়া ফলও পেরে খেতে পারেন।
(১৪/১৫) সাগর পাড়ে সাধারণত দোয়েল বা ঘুঘু পাখিদের দেখা যায়না, কিন্তু এখানে ওদের বিচরণ অবাধ।
(১৬/১৭) সাগর থেকে মাছ ধরে ফিরছে ওরা।
(১৮) কেওড়া বনের ফাঁকে এক টুকরো সাগর।
(১৯) সবুজ পাতার ফাঁকে এই সবুজ মাছরাঙাদের দেখাটা বেশ কঠিন।
(২০) ফিরে আসার সময় দেখা জেলে পাড়ার কর্মব্যস্ততা।
(২১) বীচে ঢুকতে হয় জেলে পাড়াকে ডানে রেখে, আর ঠিক বাম পাশেই কিছুটা উঁচু জায়গা রয়েছে ওখানে চটপটি ফুসকা, নাগর দোলা, ঘোড়ায় চড়া ইত্যাদি কার্যক্রমের পসার বসে। আমি খুব ভোরে ওখানে গিয়েছিলাম এবং পসার বসার আগেই চলে এসেছি।
৩৬টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
কাট্টলী সমুদ্র সৈকতে জেলে পাড়ার চমৎকার সব ছবি দিয়ে আমাদের ভ্রমণে নিরুৎসায়িত করলেন কারন আপনার লেখা পড়ে ও ছবি দেখেই মুগ্ধ।আরো চাই এমন লেখা।
কামাল উদ্দিন
এমন পোষ্ট আরো অনেক পাবেন মমি ভাই, কিন্তু উৎসাহ হারাবেন না যেন…………শুভ সকাল।
মনির হোসেন মমি
না ভাই ওটাতো মজা করেই বলেছি….মানে দেখার আগ্রহ আরো বাড়ীয়ে দিচ্ছেন। ধন্যবাদ।
কামাল উদ্দিন
হুমম, আমি তো সেটা বুঝতেই পেরেছি ভাই 😀
ছাইরাছ হেলাল
দেখলাম, দেখলাম।
ছবি ক্যামনে তুলে সেগুলো নিয়ে লিখতে শুরু করুন।
আমরাও তুলুম আর এমন করে দিতে থাকুম।
কামাল উদ্দিন
হেলাল ভাই, ছবি তোলার ব্যাপারে কোন রকম দিক নির্দেশনা আমার কাছে পাবেন না, আমার শুধু যেটা ভালোলাগে সেটারই ছবি তুলি, অন্য কোন বিশেষত নাই………শুভ কামনা জানবেন ভাই।
জিসান শা ইকরাম
কাট্টলী সমুদ্র সৈকতের নাম এই প্রথম জানলাম,
ধন্যবাদ আপনাকে এমন সৈকতের নাম জানানোর জন্য।
ভালো লাগছে আপনার ছবি ব্লগ।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
আপনাদের ভালোলাগা অবশ্যই আমাকে পাগলামীতে উৎসাহ দিবে ইকরাম ভাই………শুভ কামনা সব সময়।
তৌহিদ
কাট্টলী সমুদ্র সৈকতের নাম শুনেছি যাওয়া হয়নি কখ। আপনার লেখা পড়ে সে ইচ্ছে আরও জাগ্রত হলো। সুন্দর ছবি তোলেন আপনি।
শুভকামনা ভাই।
তৌহিদ
কখনো হবে।
কামাল উদ্দিন
চট্টগ্রাম গেলে ওখানে যাওয়াটা অত্যন্ত সহজ, হয়তো কোন একদিন ঠিকই আপনার যাওয়া হবে………ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকুন, সব সময়।
নিতাই বাবু
ভ্রমণকাহিনী নিয়ে আপনার পোস্টগুলোও সোনেলা ব্লগে একরকম ব্যতিক্রমী পোস্ট। পোস্টে আপনার ছবি আপলোড করাও কিন্তু দারুণ! কাট্টলী সমুদ্র সৈকত শিরোনামে এই পোস্ট পড়ে অনেককিছু জানা হলো। যা আগে তেমন জানা ছিল না। তাই আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ! সাথে রক্তিম গোলাপের শুভেচ্ছা!
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, আপনাদের এমন শুভ কামনা জানিয়ে মন্তব্য করাটা আমার জন্য বাড়তি পাওনা।
মোঃ মজিবর রহমান
বার নাম্বার ব্যাখ্যাটা মনে ধরেছে কামাল ভাই
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ মজিবর ভাই, শ্রদ্ধা জানবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল থাকুন।
কামাল উদ্দিন
আপনিও ভালো থাকু, সব সময়।
নৃ মাসুদ রানা
ছবির সাথে সাথে লেখা, আহা! মনোমুগ্ধকর। আমি প্রতিবারই ছবির প্রেমে পরে যাচ্ছি।
কামাল উদ্দিন
আমিও প্রকৃতির প্রেমে পড়ি বারে বার………শুভেচ্ছা জানবেন ভাই।
মোহাম্মদ দিদার
বেশ মুগ্ধ হলাম পরে আর দেখে
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দিদার ভাই, ভালো থাকুন সব সময়।
এস.জেড বাবু
কি দারুন ছবি তুলে রে ভাইজান।
আমার চোখে- বেষ্ট ছবি ৮ আর ১৭
নতুন জায়গা সম্পর্কে জানলাম-
অনবদ্য চমৎকার পোষ্ট।
কামাল উদ্দিন
ছবিতে আপনার এমন মারকিং আমাকে খুবই উৎসাহিত করে বাবু ভা।
কামাল উদ্দিন
ভাই
এস.জেড বাবু
সুন্দর কিছু দেখলে আমি না বলে থাকতে পারি না।
আপনি রাগ করেন না জেনে সত্যি খুব ভাল লাগছে।
তবে হ্যাঁ – একেক জনের পছন্দ এক এক রকম।
অন্যগুলো অন্য কারো পছন্দ হবে আমি শিউর।
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাই,
আকবর হোসেন রবিন
লেখা ও ছবি খুব ভালো লাগলো। এই জায়গাটা আমার খুব বেশি পরিচিত। আমার বাসা থেকে ৩০ টাকা রিক্সা ভাড়ায় যাওয়া যায়। একসময় প্রতি শুক্রবারে বন্ধুরা মিলে দলবেঁধে খেলতে যেতাম। অবশ্য, এখন দুই তিন মাসে একবার যাওয়া হয়। এখানে বিকালটা বেশি সুন্দর।
ধন্যবাদ ভাই, কাট্টলী সমুদ্র সৈকত নিয়ে এত সুন্দর একটা ফিচার/ভ্রমণকাহিনী লেখার জন্য।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাই, কোন এক বিকালে অখানে যাওয়ার ইচ্ছেটা রাখলাম।
সঞ্জয় মালাকার
কাট্টলী সমুদ্র সৈকতের নাম এই প্রথম শুনলাম
নতুন জায়গা সম্পর্কে জানলাম-।
লেখা আর ছবিগুলো অসাধারণ,
আগে তেমন জানা ছিল না। তাই আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।
কামাল উদ্দিন
কষ্ট করে পড়েছেন বলে আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ দাদা।
হৃদয়ের কথা
নাম জানতাম এই সৈকতের। তবে যাওয়া হয়নি। আপনার চোখে দেখলাম সৈকত। ছবিব্লগ ভালো লেগেছে।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাইজান, শুভ কামনা জানবেন সব সময়।
আরজু মুক্তা
কাট্টলি বাড়ির পাশেই। ইচ্ছে হলেই চলে যাই ঘুরতে।
কামাল উদ্দিন
তাহলে তো আপনি সুখী মানুষ আপু 🙂
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনি প্রতিবার নতুন নতুন জায়গার নাম, ছবি, বিবরণ দেন, আর আমি মন্তব্যে লিখি,, আগে জানতাম না,,, ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুদ হয়ে যাচ্ছে।
ছবি গুলো দেখে মনে হচ্ছে এই সৈকতে জন-উপস্থিতি খুব কম। পর্যটক খুব একটা যায় না। হতে পারে বেশির ভাগ মানুষ এখনো এই সৈকত সম্পর্কে অবগত নন। এতে কিন্ত একটা জিনিস ভালো হয়েছে,,, জীব বৈচিত্র এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
ছবি ব্লগ ক্রমাগত ভালো লাগছে।
শুভ কামনা 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
আমি একটা সময় শুধু ঘুরেই বেড়াতাম বেশী, যেখানে যতটা সৌন্দর্য্যের সন্ধান পেতাম তা দেখে নেওয়ার জন্য ছুটতাম। এখন আর অতটা সময় পাইনা তবু জীবন থেকে কিছুটা সময় একান্তই নিজের করে নেওয়ার চেষ্টাটা করি। এই সৈকতে সাধারণত বিকেল টাইমে পর্যটকরা আসে বেশী, আমি গিয়েছিলাম ভোর বেলায়…………..শুভ কামনা জানবেন আপু।