“ভালো করে তাকাও। পাশাপাশি তিনটা তারা দেখতে পাচ্ছো?” মাহবুব খুব উতসাহ নিয়ে লুবনাকে টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশ দেখাচ্ছে বাসার ছাদে। মাহবুবের স্ত্রী লুবনা আর ওর বিবাহবার্ষিকী ছিল গতকাল। এই টেলিস্কোপটা গিফট করেছে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী মাহবুব আমিন। অত্যন্ত দামী এই টেলিস্কোপটা আমেরিকা থেকে আনিয়েছে। বিয়ের পর এটাই প্রথম এনিভার্সারি।ডিসেম্বরের এই শীতের রাতে লুবনাকে ছাদে এনে টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশের অপার্থিব সৌন্দর্য দেখাচ্ছে।
“হ্যা, এটা হল অরিয়ন অর্থাৎ কালপুরুষ মন্ডল। একজন পৌরাণিক যোদ্ধার কল্পিত রুপ। এই তিনটা তারা হল যোদ্ধার কোমরের বেল্ট। দেখতে পাচ্ছো!?
– হ্যা, খুব সুন্দর!
– হ্যা, এই তিনটা তারার নাম হল আর্দ্রা, বানরাজা আর কার্তিকেয়।…..
– ওয়াও!
– এবার এই হাতলটা ধরে টেলিস্কোপটা উত্তর দিকে তাক করো…হ্যা হ্যা ব্যাস…এবার চোখ রাখ এখানে।
টেলিস্কোপে আবারো চোখ রাখে লুবনা। ওর খুব শীত করছে। কিন্তু মাহবুবের আনন্দটা মাটি হবে তাই কিছু বলছে না।
– দেখো প্রশ্নবোধক চিহ্নের মত সাতটা তারা। খালি চোখেও বোঝা যায়। সবচেয়ে পরিচিত এটা। গ্রেট বিয়ার। বাংলায় যাকে বলে সপ্তর্ষিমণ্ডল। ”
স্ত্রীকে নিজের প্রিয় বিষয়ে লেকচার দিতে খুব ভাল লাগছে মাহবুবের।
“এই সাতটা তারা দিয়ে একটা ভাল্লুক আঁকা যায়। এর নামগুলোও খুব সুন্দর।”
– তাই!? কী নাম তারাগুলোর?
অনিচ্ছাসত্ত্বেও জিজ্ঞেস করে লুবনা।
-ক্রতু
পুলহ
পুলস্ত্য
অত্রি
অঙ্গিরা
বশিষ্ঠ
মরীচি
-বাহ, দারুনতো!
লুবনার রেস্পন্স দেখে মাহবুবের উতসাহ বেড়ে যায়। ও এই নামগুলোর ব্যাখ্যা দিতে শুরু করে। লুবনা কিছুই শুনতে পায় না। মাহবুবের মুখের দিকে তাকিয়ে ও এক বছর আগের কথা ভাবছে।
ছেলে নাসার বিজ্ঞানী। খুবই ব্রিলিয়ান্ট। উপার্জন ভয়াবহ রকমের ভাল। দেখতেও দারুন হ্যান্ডসাম। তাই বাবা মায়ের লক্ষি মেয়ে লুবনা বিয়েতে কোন আপত্তি করেনি। কিন্তু এই লোক শুধু বোঝে বিজ্ঞান আর মহাকাশ। সংসার, প্রেম ওর জন্য না। প্রচুর ব্যস্ত থাকে সবসময় আর হুটহাট বিদেশ যেতে হয়। প্রেমিক না হলেও লুবনার প্রতি মাহবুব খুবই আন্তরিক। বিদেশ থেকে আসার সময় প্রতিবারই সুন্দর সুন্দর জিনিস নিয়ে আসবে। লুবনার সাথে কথা কম বলে কিন্তু যেটুকু বলে খুব সুন্দর করে বলে। কিন্তু এই লোক প্রেম বোঝে না। চাঁদের নাড়ি নক্ষত্র তার মুখস্ত কিন্তু জোসনা বুঝে না। পূর্নিমা মানেই ওর কাছে ফুল মুন। উল্কা বৃষ্টি নিয়ে যতটা আগ্রহী সেই তুলনার বর্ষার বৃষ্টি নিয়ে ততই বিরক্ত। কারণ মেঘলা আকাশে টেলিস্কোপ অকার্যকর। লুবনাকে এই দামী টেলিস্কোপ না দিয়ে যদি একটা ফুল দিত অথবা সাথে নিয়ে বাইরে কোথাও খেতে যেত দুজনে হয়তো ক্যান্ডেল লাইট ডিনার!!! কিন্তু এসব মাহবুবের কল্পনাতেও নাই। এই তারা না দেখিয়ে মাহবুব যদি ওর দুই হাত ধরে বসে থাকতো তাহলে বেশি খুশি হত ও। কত রাত বিছানায় শুয়ে চাতক পাখির মত অপেক্ষা করেছে স্বামীর আদরের জন্য কিন্তু সে বেচারা সারারার নিজের গবেষণায় মত্ত। এই এক বছরে ওরা খুব কম সময়ই একান্তে কাটিয়েছে। বিছানায়ও মাহবুব বেশ রোবটিক। লুবনা না হলে হয়তো সংসারই টিকতো না। কিন্তু এই মেধাবী লোকটাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে লুবনা। কারণ মাহবুব একজন ভাল মানুষও। লুবনার বার্থডে ভুলেগেছিল এবার। তাই এনিভার্সারি মনে রেখেছে কোন উপায়ে।
“অঙ্গীরা হল…..” মাহবুব বলেই চলছে। লুবনার উপস্থিতিও যেন ভুলে গেছে। লুবনা হঠাত মাহবুবকে জড়িয়ে ধরে। কিছুটা হকচকিয়ে যায় মাহবুব।
“সরি লুবনা। তুমি শীতে কাপছো! আমি বুঝতে পারিনি। চলো নিচে যাই।”
আরো শক্ত করে ধরে লুবনা।
“না।”
-“তাহলে!?”
-“আমার মনে একটা আকাশ আছে তুমি জানো?”
– হাহাহাহ তাই!?
– হ্যা, সেই আকাশে একটাই মাত্র নক্ষত্র! দিনরাতই আমার আকাশে সেই লক্ষত্র জ্বলজ্বল করে। আমি তারে ধরতে পারি না। ”
বলতে থাকে লুবনা।
“সেই আকাশ দেখার মত কোন টেলিস্কোপ কি আছে তোমার কাছে?”
লুবনার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে মাহবুবের বুকে।
“আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার কাজে কর্মে বিঘ্ন ঘটুক আমি চাই না। কিন্তু একটু সময় আমাকে দিতে পারো তুমি!?”
মাহবুব দুই হাত দিয়ে লুবনার দুই গাল চেপে মুখটা তুলে ধরে। আলতো করে চুমু খায় কপালে।
“সরি লুবনা। আমি সেই আকাশটা দেখার চেষ্টা করবো এখন থেকে।”
বিজ্ঞানী মাহবুব আমিন স্ত্রীর মাথা চেপে ধরে নিজের বুকে।
পৃথিবী নামক এই গ্রহের একটা পাকা দালানের ছাদে দুই নরনারী প্রেমের সাক্ষি হয়ে রইল কেবল কালপুরুষ আর বড় ভাল্লুকটা।
২৪টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
চমৎকার একটি ভিন্ন সাধের গল্প পড়লাম।মেয়েরা কেবলি পুরুষদের ঘরে বন্দি করে রাখতে তা স্পষ্টই গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন।পড়ে মুগ্ধ হলাম গুরু। -{@
শিপু ভাই
ধন্যবাদ ভাই
মৌনতা রিতু
এই গল্প মনে হচ্ছে আমার ছেলেরই ভবিষ্যত গল্প। আমার বড় ছেলে এবার ক্লাস সেভেনে উঠেছে। সে ছোটবেলা থেকেই চাঁদ তারা এসব নিয়ে প্রশ্ন করত। ইস্টিফেন হকিং সম্পর্কে সব তার জানা। হাবোল টেলিস্কোপ তার কেনার শখ হইছিল একবার। পরে বলছে,” জান মা, ওটা নাসার নিজস্ব টেলিস্কোপ।” বলে মা,” আমাকে একটা বেহালা কিনে দেও মা, বেহালা বাজালে ব্রেইন বাড়বে আইনাস্টাইনের মতো।
এবার ক্যাডেট ভাইভা বোর্ডে ওকে যখন জিজ্ঞেস করেছে,” তুমি কি হতে চাও?” ওর ইচ্ছার কথা শুনে উনারা খুব অবাকই হয়েছে। যখন শুনেছে মেমন ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষনা করছে, খুবই বাহবা দিয়েছে ওকে।
আসলে মন বোঝা না বোঝা সময় দেওয়া না দেওয়া এটা ডিপেন্ড করে মানসিকতার উপর।
অনেক ভাল লাগা রইলো গল্পে। মনে হচ্ছে আমার ছেলে ছেলের বৌ এর দৃশ্য দেখলাম। এমন দৃশ্য দেখানোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
বাবাটার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল!
নীহারিকা জান্নাত
বিজ্ঞানীরা একটু পাগল টাইপের হয়। তবে মাহবুবের হঠাত প্রেমিক হয়ে ওঠাটা অস্বাভাবিক লেগেছে। অবশ ব্যতিক্রম তো থাকতেই পারে।
ভালো লেগেছে।
শিপু ভাই
মাহবুব জ্ঞানি লোক তাই অল্পতেই বুঝে গেছে মে বি! হাহাহাহা
আসলে আর লিখতে ইচ্ছে করেনি। এই গল্প দিয়ে উপন্যাস লেখাও সম্ভব।
থ্যাংকস আপু
নীলাঞ্জনা নীলা
বেশ লেখেন কিন্তু আপনি।
তবে ওই যে নিহারীকা আপার মতো আমারও কথা, খুব তাড়াতাড়ি রোমান্টিক হয়ে যাওয়াটা একটু খাপছাড়া লাগছে।
শিপু ভাই
লেখা বড় হয়ে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি রোমান্টিক হয়ে গেছে 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
ঠিক আছে। 🙂
মিষ্টি জিন
ছোট গল্প কিন্তু অনেক কিছু বলে , বুঝিয়ে দিলেন।
ভাল লেগেছে।
আপনার কঁথা অনেক শুনেছি সোনেলায়,আজ দেখা পেলাম। আমি জিন। তবে ভাল জিন।সাতমাস যাবত এসেছি সোনেলায়।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ।
আমারে একটা পরী খুইজা দিয়েন 😀
মিষ্টি জিন
শিপু ভাই ,আমার ভ্রমন প্যাচালীতে একটা গরীব লেবানিজ পরী আছে দেখেন তো চলে কি না!!!! :@
মিষ্টি জিন
ভুলে ভুল ইমো গিয়েছে এইটা হবে। :p
শিপু ভাই
দেখতে হবে 😀
শুন্য শুন্যালয়
অনেক ভাল লেগেছে। অভিমান করে নিজে নিজে কষ্ট পাওয়ার চাইতে প্রকাশই ভালো। শিপু ভাই দেখি রোমান্টিক গল্প ভালই লেখে 🙂
শিপু ভাই
থ্যাংকস!
আমি এম্নিতেও রোমান্টিক :D)
রিমি রুম্মান
গল্পটা ভালো লেগেছে। বিজ্ঞানীরা রোমান্টিক নয়, এটি আমার চিরকালের ধারনা। অকারনেই এমন ধারনা পোষণ করি ভেতরে। তবে আপনার গল্পের শেষাংশে বিজ্ঞানীকে রোমান্টিক হতে দেখে ভালো লেগেছে।
শুভকামনা … -{@
শিপু ভাই
থ্যাংকু 🙂
ছাইরাছ হেলাল
সহজে সুন্দর করে মানব-মানবীর প্রকৃত সম্পর্ক উন্মোচন করা হয়েছে,
এটি সুন্দর।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ মামা
আবু খায়ের আনিছ
যাকে ভালোবাস তাকে তোমার মতো করে নাও নয়ত তুমি তার মত হয়ে যাও।
ভালো লেগেছে গল্প।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ ভাই
রিফাত নওরিন
প্রথম থেকে বেশ গোছালো গল্পটা…
ভালো লেগেছে !!!!
শিপু ভাই
থ্যাংকু -{@