
যদি যোদ্ধা হন তবে টিকে যাবেন।
বিশাল দেহের অধিকারী হয়েও ডাইনোসর টিকে থাকতে পারেনি, পেরেছে তেলাপোকা। কাজেই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে টিকে থাকার শক্তি সঞ্চয় করতে হবে।
করোনার থাবার খবর এখন কাছাকাছি গণ্ডির মধ্যে চলে এসেছে। প্রায়ই নিজেদের পরিচিতিজনদের কেউ করোনাক্রান্ত হয়ে মারা পড়ার খবর ভেসে আসছে। জানা যাচ্ছে টুপটাপ ইনি-উনি চলে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আমরা দেখছি এদেশের হাজার জনতা গায়ে গা লাগিয়ে চলেও আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে আছেন দিব্যি। গতমাসে গার্মেন্টস কর্মীদের ঢাকামুখী যে মিছিল ঘটেছিল, সে হিসাবে ইতোমধ্যে প্রচুর মারা পড়ার কথা। সেটি কিন্তু হয়নি। ঘটনাবলী যখন এরকম, তখন করোনার আক্রমনটা ঠিক কোন এঙ্গেলে এগুচ্ছে এটা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
এ পর্যন্ত আমরা শুনে আসছি, সামাজিক দূরত্বই করোনা থেকে নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায়। আমরা সেটা মেনে চলার যথাসম্ভব চেষ্টা করছিও। আবার আক্রান্ত হলে কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে তাও মোটামুটি ধারণার মধ্যে আছে। সে হিসাবে সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমেই ঘরে বসে দিনাতিপাত চলছে। কাউকে কাউকে তো বের হতেই হচ্ছে। যারা বের হচ্ছেন, তারাই কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন, কুলিয়ে উঠতে না পেরে মারা পড়ছেন। আবার দেখা যাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই পুরুষ। এর কারণ হিসাবে জানা যায় নারীদেহে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামক হরমোন করোনা প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করছে বলে নারী মৃত্যুর হার কম। গতকাল বাংলাদেশে চৌদ্দ জনের তেরজনই ছিলেন পুরুষ। যাহোক, এর সবই ঘটছে ভাইরাসটিকে স্পষ্টভাবে বুঝতে না পারার কারণে।
দুদিন আগে জানা গেল বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ তাদের ষাটজন করোনা রোগীকে সুস্থ করে তুলেছে ত্রিশ টাকার ঔষধ ব্যবহারে। এটি আমাদের মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে। অথচ মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা এই মহামারিকালকে সামনে রেখে ব্যবসায়িক ফায়দা লুটতে ছয় দশে ষাট হাজার টাকার ঔষধ বিক্রির হিসাব ফেঁদেছিলেন। যে ঔষধটি কি না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্য নির্ধারিত হয়েছে এক ডলার, আমাদের দেশে এটিই ৭১ ডলারের বিনিময়ে পাওয়া যাবে বলা হয়েছে। এই যখন আমাদের ব্যবসায়ীদের মানসিকতা তখন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের খবরটি সাধারণ জনতার জন্য আশা জাগানিয়া এক খবর।
মূলতঃ করোনা যে গতিতে হাঁটছে, হয়তো খুব সহজে এর বিনাশ ঘটানো সম্ভব হবে না। উহানে জন্মের পর থেকে এর গতিবিধি বিশ্লেষণ করে এ পর্যন্ত যা স্পষ্ট হয়েছে সময়ের সাথেসাথে এটি তার জিন পরিবর্তন করে রূপ বদলে ফেলছে। যার দরুন বিশ্বের তাবত বিজ্ঞানিরা রাতদিন পরিশ্রম করে বিজ্ঞানের পথে হেঁটে হেঁটে উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে আমাদের দুই বাপ-বেটি বিজ্ঞানী ডাঃ সমীর সাহা ও সেঁজুতি সাহা সম্প্রতি এর জিনোম সিকোয়েন্স করেছেন। এভাবেই হয়তো একদিন ঠিক একে পর্যুদস্ত করা সম্ভবপর হবে। হবেই, সে আজ হোক বা কাল। কিন্তু ততোদিন তো আমাদের টিকে থাকতে হবে। টিকে থাকার জন্য লড়াইয়ে নিজেদের প্রস্তুত করে মাঠে নেমে পড়তে হবে। জীবন তো থেমে থাকার নয়। চলমান জীবনে জীবীকার প্রয়োজনে মাঠে নামতে হবে। সেজন্য নিজেদের প্রস্তুতও করতে হবে।
এটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে পৃথিবী সহজে আর আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছেনা। বিশ্বায়নের এ যুগে বিশ্বের যে রূপ আমরা এতোদিন দেখে এসেছি সে পরিস্থিতিতে সহসা আর ফিরতে পারবে না পৃথিবী। করোনা ভাইরাস পৃথিবীকে এক টার্নিং পয়েন্টে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে যে গ্লোবালাইজেশন যুগে পা রেখেছিল পৃথিবী, করোনা এসে যেন সব মুহুর্তেই স্তব্ধ করে দিয়েছে। গ্লোবাল ভিলেজে পা রেখে মানুষ এক ভিন্ন ধারায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠেছিল। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা দেশীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তঃদেশীয় পরিসরে পরিব্যাপ্তি লাভ করেছিল। ফলে সারা বিশ্ব একটি পরিব্যাপ্ত সমাজে পরিণত হয়েছিল। অভিন্ন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ যুগপৎ অংশ গ্রহণ করে এগিয়ে যাচ্ছিল। এটি আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। আর এই পদ্ধতির চালিকাশক্তি হয়ে ওঠেছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ।
পরবর্তীতে এটিকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে পৃথিবী ঢুকে পড়ে তথ্য প্রযুক্তি যুগে। এমনি করে তথ্য প্রযুক্তি হয়ে ওঠে গ্লোবাল ভিলেজে প্রধান সহায়ক শক্তি। কিন্তু করোনার আগমনে সামাজিক দূরত্বের সৃষ্টিতে গ্লোবাল ভিলেজে ধাক্কা লাগলেও তথ্য প্রযুক্তি সাপোর্ট হয়ে দাঁড়ায়। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যায় বহুগুণ। তথ্য প্রযুক্তিতে ভর করেই মানুষ চলতে শুরু করে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগ বেড়ে যায়। পারিবারিক সম্প্রীতিও এই করোনাকালে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে ওঠেছে। সীমিত আকারে অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে এগিয়ে চলছে। থেমে থাকেনা কিছুই। মানুষ থেমে থাকতে পারে না। প্রয়োজনের সাথে সময়ের তাল মিলিয়েই পরিবর্তন আনতে হয়, হবে।
গ্লোবালাইজেশন যুগে পা রেখে মানুষ যে ধারায় চলতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেছিল, সময়ের প্রয়োজনে এখন সেখানেও বিশাল পরিবর্তন আসবে। এতোদিন লকডাউন করে রাখা হয়েছিল, সামনে হয়তো লকডাউন ওঠে যাবে। এরপর বিশাল পরিবর্তনশীল এক পৃথিবীর মুখোমুখি দাঁড়াবো আমরা। এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। এই নতুন পৃথিবীতে নিজের লড়াইটা কেবলই নিজের। সেটা ব্যক্তিজীবনে হোক বা জাতীয় জীবনে। টিকে থাকার এ লড়াইয়ে নিজের অর্জিত শক্তিটাই মূল শক্তি। কাজেই আত্মশক্তি, শারীরিক শক্তি, জাতীয়শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার বিকল্প নেই।
এ লেখাটি যখন শেষ করলাম, তখন স্বাস্থ্য বিভাগের আপডেট দেখছি গত চব্বিশ ঘন্টায় দেশে ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চ।
৯টি মন্তব্য
ইঞ্জা
সত্যি দুঃখজনক যে লোভী শ্রেণীর ব্যবসায়ীরাই করোনাকে পুঁজি করে ব্যবসা করার তালে আছে কিন্তু অন্যান্য দেশে এমন হয়না, ওরা পারলে ফ্রি দিবে।
চমৎকার পোস্ট দিলেন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপনাকে এখনকার অবস্থা টা খুব ভালো ভাবে লিখলেন। জানিনা কি হচ্ছে, করোনা তার পথ প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে! কে বাঁচবে, কে মরবে বোঝা দায় কারণ করোনার রহস্যময়তা। ঈশ্বর সহায় হোন সবার। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
ফয়জুল মহী
সুচিন্তিত মনোভাবের প্রকাশ
সাবিনা ইয়াসমিন
অস্থির সময় পার করছি আমরা। প্রতিমূহুর্তে চেঞ্জ হচ্ছে আম জনতার মানসিক অবস্থান। কখনো আক্রান্তদের সংখ্যা আর প্রানহানীর খবরে ভীত হচ্ছি, আবার পরমূহুর্তেই আশা জাগানো নিউজে উচ্ছাসিত হচ্ছি। পাল্টে যাচ্ছে চিরচেনা চারদিক, কাছের-দূরের সম্পর্ক গুলো। পরিবর্তন এসেছে জন জীবন সহ প্রকৃতিতেও।
এর মাঝে কিছু অপরিবর্তিত জিনিসও জানা হলো। তা হলো, আমাদের দেশের অসাধু মুনাফাখোরেরা ভয় পায়না কোন কিছুতেই। এরা কেবলই সুযোগ সন্ধানের ধান্দায় থাকে। আর ভয় নেই ক্ষুধায় কাতর মানুষের, তারা জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন দেয়ার ঝুঁকি নিতেও ভয় না। জানিনা আগামীদিন গুলোতে আমাদের জন্যে কি অপেক্ষা করছে। তবুও আশা রাখি একদিন হয়তো সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
ভালো থাকুন রুবা আপু,
শুভ কামনা 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
করোনার কোনো ঔষধ এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। বাংলাদেশে পাঁচটি ঔষধ কোম্পানীকে করোনার ঔষধ হিসেবে একটা ঔষধ এর উৎপাদনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে আমেরিকার মেডিকেল বোর্ড এই ঔষধকে করোনার ঔষধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ আমেরিকায় সবচেয়ে বেশী মৃত্যু করোনায়। এই ঔষধ যদি কার্যকরই হতো তবে আমেরিকায় এত মানুষ মারা যায় কিভাবে?
একমাত্র ব্যবসার কারনেই আমাদের দেশে এই ঔষধকে করোনার ঔষধ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
অত্যন্ত ভালো একটি পোষ্ট।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
করোনা নিয়ে অনেক আশাব্যঞ্জক খবরে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি পাশাপাশি বিশ্ব রাজনীতিতে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে তাতে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়বে নিশ্চিত।
ভালো লিখেছেন আপু।
রেহানা বীথি
এখন প্রতি মুহূর্তের অনিশ্চয়তা। তবু আমরা মানুষ, আমরা আশা বেঁধে রাখতেই অভ্যস্ত।
ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার পোস্টটির জন্য।
শামীম চৌধুরী
ইশশ আপু। এই করোনা এখন জীবনটাকে দূর্বিসহ করে তুলেছে। আর ভালো লাগে না। করোনা কোন গল্প।
হালিম নজরুল
করোনাকে পুজি করে যারা লুটতে চায়, তারা ধ্বংস হোক।