চাঁদ রাতে বাঙালি পাড়া খ্যাত জ্যাকসন হাইটস সারারাত জমজমাট থাকে। প্রশস্ত ফুটপাতে সবাই মেহেদি দেয়ায় ব্যস্ত। উৎসব উপলক্ষে রাস্তায়, গাছগুলোয় লাইটিং করা। সবমিলে আলো ঝলমলে এক আনন্দঘন পরিবেশ হয়ে উঠে এলাকাটি।
কথা ছিল বন্ধুদের সাথে আড্ডা হবে। দু’হাতে মেহেদি হবে। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাওয়া হবে। রাতভর ব্যস্ততা বিহীন নিশ্চিন্ত ঘুরে বেড়ানো হবে। কাজ সব গুছিয়ে সে উদ্দেশ্যেই বেরিয়ে পরি রাত এগারোটায়। গান শুনতে শুনতে হাওয়ায় উড়তে উড়তে যাচ্ছিলাম। কাছাকাছি যেতেই জ্যামে আটকে থাকি। ঈদ জ্যাম। এক ঘণ্টা এ গলি আর ও গলি ঘুরে পার্কিং না পেয়ে ফিরে আসি কিছু কাজ বাকি পরে আছে বলে। জীবন থেকে বেহুদাই ষাট’টি মিনিট চলে গেলো…
কথা ছিল নিউইয়র্কের ঈদের দিন দেশে ফোন করবো। কি কিনেছি, কি রেঁধেছি, কি করেছি দিনভর এসব বলবো মা’য়ের সাথে। মা উত্তরে বলবে, এটা করলি ক্যান, এটা এভাবে রাঁধলি না ক্যান, ওভাবে রাঁধলে আরো মজা হতো।
কথা ছিল বাংলাদেশের ঈদের দিন ভোরে ফোন করবো। জিগ্যেস করবো, আব্বা কি করেন ? ওপাশের ব্যস্ত মানুষটা বলে উঠবেন, রেডি হইতাসি… নামাজের দেরি হইয়া যাইতাসে… তোর আম্মার সাথে কথা ক…। অতঃপর, আম্মা ফোন ধরেই বলা শুরু করবে, কি শাড়ি পরবে… কি রান্না করবে… কি পরিকল্পনা সারাদিনের… বাসার পাশ দিয়ে ফেরি করা শাক সব্জি বিক্রেতা’রা ঈদ উপলক্ষে গ্রামে চলে গেসে… শাক পাওয়া যাচ্ছে না… ডায়াবেটিকস সামান্য বেড়েছে…
এমন কতো কি-ই তো কথা ছিল ! ঈদ আসে, ঈদ যায়। কথা’রা কথা-ই থেকে যায়। সব আনন্দ আর কোলাহলের মাঝেও পৃথিবীর কোথাও কোথাও কিছু সন্তানের ভেতরটা মেঘলা, অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। কখনো বা সেখানে বৃষ্টি ঝরে অবিরল ধারায়…
যাদের বাবা-মা বেঁচে আছে, তাঁদের খুব বলতে ইচ্ছে হয়, তোমরা তোমাদের বাবা-মা’কে আগলে রাখো, যতোটা রাখা যায়, ঠিক ততোটাই। এমন মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে গেলে আর যে ফিরে আসে না… কোনকিছুর বিনিময়েই না…
শুভেচ্ছা সকলকে…
২৮টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
যারা হারিয়েছে এ যন্ত্রণা শুধুই তাদের, পাঁজর এফোঁড়-ওফোঁড় করা।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন। যারা হারিয়েছেন, তাঁদের যন্ত্রণাগুলো কতটা কষ্ট ছুঁয়ে যায় তা শুধুই অনুভবের।
আশা জাগানিয়া
কথা কথা থাকে,কিন্তু হয়ে ওঠে না।আপু নিউইয়র্কে এবারের ঈদ নাকি সবচেয়ে জমজমাট হয়েছে?পত্রিকায় পড়লাম। ঈদের দিনের কিছু ছবি দিলে দেখতে পারতাম।ঈদ মোবারক আপু।
রিমি রুম্মান
ইদানিংকার ঈদ গুলো জমজমাটই হয়। আমার এ দেশের প্রথমদিককার অনেকগুলো ঈদ নিরানন্দের কেটেছে। বুঝার উপায় ছিল না যে সেদিন ঈদ। এখন পুরো রমযান জুড়ে থাকে ধর্মীয় আবহ। আর ঈদ যেন দেশের ঈদ এর মতই জমজমাট। এরপর এমন লেখা দিলে ছবি দিবো অবশ্যই।
জিসান শা ইকরাম
বাবা বেঁচে নেই,বুঝি এখন কতটা হারিয়েছি আমি।
রিমি রুম্মান
আমরা হারিয়েছি। দিনে দিনে আরও হারাবো। একটু একটু করে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরবো। নিজেরা হারিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিবো মনে মনে। এটাই বাস্তবতা।
সিকদার
কেউ নাই । এখন নিজেই বাবা । তবুও ইছছে হয় তাই নিজেরে সবার অগোচর করে, শূন্য তাকিয়ে ডাকি “আম্মা” ।জানি সাড়া পাব না তবুও ব্যাকুল হয়ে থাকি এই বুজি আম্মা এসে বলবে ” কিরে? কিছু বলবি ?”
রিমি রুম্মান
আমার বাবা মারা গেছে পাঁচ বছর আগে। আর মা ৩ বছর আগে। এখন স্মৃতিগুলো কেমন জ্বলজ্বলে । এখনো সেইসব চেনা কণ্ঠস্বর শুনি।
সীমান্ত উন্মাদ
খুব আপনজন হারানো যে কি কষ্টের আপু। বুঝতে পারি।
আপনাকে ঈদের শুভেচ্ছা। অনেক অনেক ভাল কাটুক আপনার দিনক্ষন, শুভকামনা নিরন্তর।
রিমি রুম্মান
ঈদ এ আনন্দ হয়। ঘুরা ফেরা হয়। বলা চলে দেশের চেয়েও বেশি আড্ডা, বেড়ানো হয় এ দেশে। কেননা, এখানে নিরাপত্তা নিয়ে ভয় নেই। রাতভর ঘুরা যায়। সব আনন্দের মাঝেও সকলের অদেখার মাঝে আমার বাবা-মা’র সাথে কাটানো সময়গুলো জীবন্ত হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। ভাল থাকুক সকলের বাবা-মা।
প্রজন্ম ৭১
বাবার কথা মনে পরে গেলো আপু।
রিমি রুম্মান
এমন মনে পরবে প্রতিনিয়ত। সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি সকলের বাবা-মা’র জন্যে।
ব্লগার সজীব
আমরা যেন আমাদের মা বাবাকে কষ্ট না দেই কখনো।
রিমি রুম্মান
বাবা-মা জীবিত থাকতে আমরা ক’জন এটি মনে রাখি ?
হারিয়ে গেলেই কেবলই তাঁদের খুঁজি ফিরি…
লীলাবতী
কত কিছু ভাবি আমরা,এর অনেক কিছুই করা হয়না।বাবা মা না থাকার কথা ভাবতেই পারিনা আপু।
রিমি রুম্মান
এই বিদেশ বিভূঁইয়ের প্রতিটি ঈদ যেমন করে কাটতো, এখন তেমন করেই ভাবি। মাঝে মাঝে মনে থাকে না, আমার ফোন করার মানুষ দু’জন যে নেই। তাই যাঁদের আছে, তাঁদের বলি… “তোমরা তোমাদের বাবা-মা’ কে আগলে রাখো… যতোটা সম্ভব।”
শুন্য শুন্যালয়
আমার দিনরাত এই প্রার্থনা থাকে, আমার আয়ু যেন বিধাতা আমার বাবা-মা কে দিয়ে দেন। ইচ্ছে থাকলেও যে কতকিছু করে উঠতে পারিনা আপু 🙁
রিমি রুম্মান
ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছুই করা হয়না আমাদের, তবু চেষ্টাটুকু তো থাকে। ভাল থাকবেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
এখনও অভিমান রাখি মাঝে-মধ্যে। কতোদিন রাখতে পারবো জানিনা। ইচ্ছে করে মানুষ দুটোকে চোখের সামনে এনে রাখি। বাপি-মামনি আমি কখনোই বলতে পারিনি তোমাদের, জানবেও না। অনেক মিস করি। অনেক। কখনো ছেড়ে চলে যেওনা।
আপনার লেখা কাঁদায় কেন?
রিমি রুম্মান
বাবা-মা’কে নিয়ে লেখাগুলো লিখতে গিয়ে আমি নিজেও কাঁদি সকলের অগোচরে।
আজিম ফাইফ ও ফাইভ
বরাবরের মতোই সুন্দর গোছানো লিখা। মনে পড়িয়ে দেয় অনেক প্রিয় আর শ্রদ্ধেয় বাবার কথা, অনেক গুনের অধিকারী ছিলেন যিনি। সকলের বাবা-মায়েরা অনেক আয়ু নিয়ে ভাল থাকুন এই কামনা করি।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুক সকলের বাবা-মা। ভাল থাকুন আপনিও। শুভকামনা জানবেন।
আশা জাগানিয়া
এমন লেখা পড়লে কান্না পায় আপু।
রিমি রুম্মান
আমরা যা চাই, তা পাই না। অনেক কিছুই হতে পারতো। হয়নি। বাবা-মা’কে নিয়ে এত তাড়াতাড়ি স্মৃতিচারণ করতে হবে, ভাবিনি কোনদিন। ভাল থাকবেন।
লীলাবতী
আপু এটি আপনার শততম পোষ্ট 🙂 অভিনন্দন আপু -{@ ফেইসবুকে আপনার কমেন্ট পড়ে এখানে এসে দেখলাম।ডাবল সেঞ্চুরী চাই দ্রুত \|/
রিমি রুম্মান
শততম পোস্টটিও সেই বাবা-মা’কে নিয়ে লেখা হয়ে গেল। কেউ আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে জেনে ভাল লাগলো। 🙂
শুন্য শুন্যালয়
আমি এত দেরী করে ফেললাম। সেঞ্চুরীর উদযাপন হবেনা আপু? আজ একটা চমৎকার স্মৃতির লেখা হয়ে যাক আপু। অভিনন্দন প্রিয় আপুকে -{@
রিমি রুম্মান
এত কম কম এসেও এত লেখা লিখে ফেললাম !! 🙂