কানাডায় এলাম ২০১১ সালে ৩১ জানুয়ারী। স্বপ্নের দেশ। সেই কবে থেকে কানাডা আসবো আসবো কিন্তু সেই এলাম বয়স যখন বাংলাদেশের হিসেবে আর তরুণী নই। তাতে কি! এসেছি, স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ব্রাশেলস এয়ারপোর্ট থেকে যখন আকাশে প্লেনটা উড়লো, আমার চোখে আটলান্টিক ভাসছে। সাগরের মধ্যে বঙ্গোপসাগর দিয়ে আমার সমুদ্র দেখা। তারপর ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর স্বাভাবিক ভাবেই আটলান্টিক দেখার ইচ্ছেটা আরোও প্রবল হয়ে উঠেছে। মন্ট্রিল পৌঁছার পর আমার বড়ো কাকুর বন্ধু শ্যামল কাকু-কাকীমনি এলেন এয়ারপোর্টে। সাথে ছিলেন মানু মামা এবং মামী। মামার বাসায় গেলাম, কি আয়োজন। খেলাম-গল্প হলো। ট্রানজিটের সময় ছিলো খুবই কম। কিন্তু ওইটুকু সময়ের মধ্যে এতো আদর পেয়েছি কাকু-কাকীমনি-মামা-মামীর যে কি বলবো! অসম্ভব ভালো মানুষ। প্লেনে উঠে খুব কান্না পাচ্ছিলো। আদর কেউ হারাতে চায়না। একটা কথা বলে রাখি কাকু-কাকীমনি জানেনা, তাঁদের আমি অনেক ভালোবাসি। কিন্তু ওদের সেটা বলবোনা।
যাক এলাম নোভাষ্কোষিয়ার হ্যালিফেক্স শহরে। আমার বর অপেক্ষায় ছিলো। ছেলে তো বাবাকে দেখে লাফ। চোখের সামনে আটলান্টিক। আর সেই আটলান্টিক যেখানে টাইটানিক ডুবেছিলো আমরা সেই জায়গার কাছাকাছি। কিন্তু তরুণ যেখানে চাকরী করতো সেটা হ্যালিফেক্স থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা পথ দূরে। বাসে যেতে হয়। ছোট্ট শহর নাম এন্টিগোনিশ। অসম্ভব শান্ত একটা শহর। কিছু ছবি দিচ্ছি নীচে, তাহলেই বোঝা যাবে কেমন এই শহরটা!
ফিরে আসি মাংসের ফ্যাক্টরীর গল্পে। ম্যাকডোনাল্ডস ছাড়ার পর গুরপ্রীত নামের এক পাঞ্জাবী মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। সে ওই ফ্যাক্টরীতে চাকরী করে। বললাম ফুল-টাইম কাজ করতে পারবোনা। ফ্যাক্টরীর বস সে রাজি হলো। প্রথম যেদিন গেলাম কাজে, বিশাল অবস্থা। মুখে মাস্ক, মাথায় নেট, ইউনিফর্ম, আর আমার যা ওজন তখন ছিলো তার সম-পরিমাণ ওজনের বুটজুতা। কাজ হচ্ছে সসেজ প্যাকেট করা। শুধু সসেজ না, ড্রাই মিটগুলোকে কেটে প্যাকেটে রাখা। আমি কাজ করছিলাম প্যাকেট সেকশনে। যেমন গন্ধ, তেমন ঠান্ডা। জিরো ডিগ্রী সবসময়। আর ফ্রিজার রুমে যেখানে ড্রাই মিটগুলো রাখা হতো, সেখানে বিশাল বড়ো বড়ো ট্রলি সেগুলো টেনে আনতো হতো। ওই রুমে গেলে মনে হতো আজই আমার জীবনের শেষ দিন। এদিকে মাঝে-মধ্যে আমাদের নিয়ে যাওয়া হতো মাংস যেখানে কাটা হয় সেসব প্যাকেট করতে। আর এসব প্যাকেট খুব যে ধীরে-সুস্থে, তা কিন্তু নয়। মিনিটে ৪/৫ প্যাকেট। লুকোনোর কিছু নেই। আমি ছিলাম সবার থেকে স্লো। সকালে যখন ছেলেটাকে স্কুল বাসে উঠিয়ে ট্যাক্সিতে যেতাম, অনেক যন্ত্রণা হতো। কান্না পেতো। সে সময় যে হাসিটুকু ছিলো, নিজের সাথে অভিনয়। কিন্তু দু’ সপ্তাহ পর যখন বেতন পেলাম মনে হলো এই কষ্ট স্বার্থক। ছেলেকে নিয়ে রেষ্টুরেন্টে গেলাম। পিজ্জার অর্ডার দিলাম। এভাবেই কিছুটা সময় আনন্দ করতাম বেতন পাবার পর। হয় চায়েনিজ রেষ্টুরেন্ট নয়তো পিজ্জা নয়তো ম্যাকডোনাল্ডস।
বাসায় ফিরে মনে হতো শুয়ে থাকি। কিচ্ছু করিনা। তাও কাজ করে যাচ্ছিলাম। রাতভর ঘুমাতে পারতাম না। বান্ধবী ঊর্মীর সাথে ফোনে কথা বলতাম আমার জন্যে ওরও ঘুম হতোনা। বকে-ঝকে ঘুমাতে পাঠাতো। এতো পরিশ্রম, তার উপর ঘুম নেই। তখন আমার বর দেশে গেছে। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরীর জন্য। একদিন আমাদের সুপারভাইজার অ্যালেন ডিসেম্বর থার্টি ফার্ষ্টের ইনভাইট করলো। আমি ভাবলাম এটা বুঝি কোম্পানীর পার্টি। ঊর্মীকে জিজ্ঞাসা করলাম আচ্ছা কি নিয়ে যাওয়া যায়? কারণ আমি এসব প্রোগ্রামে কখনো যাইনি কানাডায় এসে। ঊর্মী বললো একটা রেড ওয়াইন কিনে নিতে। সবাই নাকি রেড ওয়াইনই নিয়ে যায়। জীবনে প্রথম LCBO তে ঢুকলাম। মাথায় কাজ করেনা। এতো এতো? কোনটা ওয়াইন? একজন মহিলা সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলো, কি কিনতে চাই? বললাম রেড ওয়াইন। আমি যে ভালোই আনাড়ি সেটা সে বুঝে গেলো। বললো কোন দেশের? বললাম কোন কোন দেশের আছে। এমন ভাব নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম যেনো আমি সবজান্তা শমশেরী বেগম। এখন দুনিয়ার দেশের নাম বলে গেলো। বললাম আমায় কানাডারটাই দাও। এখন জিজ্ঞাসা করে কানাডার কোথাকার? এ তো মহা জ্বালা। বললাম এন্টিগোনিশের কিছু আছে? মহিলা হেসে বলে নোভাষ্কোশিয়ারটা আছে। বললাম তাই দাও। হায়রে ওয়াইন একদিন একটু চুমুক দিয়ে বমি করে ভাসিয়ে ফেলেছিলাম। এ জীবনে প্রতিজ্ঞা করেছি ওয়াইন তোমায় নমষ্কার। ওহ বলে রাখি সিগারেটও টেষ্ট করেছি, জানিনা কি পায় ওটা খেয়ে।
কিনে প্যাকেট করে সন্ধ্যার সময় রওয়ানা হলাম। গিয়ে দেখি গুরপ্রীতও ওয়াইন নিয়ে এসেছে। সেও খায়না। এই প্রথম সে কিনেছে। আর এসেছে দুটো মেয়ে। এছাড়া আমাদের গ্রুপের আর কেউ নেই। জিজ্ঞাসা করলাম অ্যালেনকে। বললো এই তো। আমি অবাক, বললো অফিস পার্টি। মনের মধ্যে কেমন জানি একটা চলছিলো। গুরপ্রীতকে বললাম আমি যাচ্ছি। বললো ও আমি চলে গেলে কার সাথে যাবে? ওর বর ওকে মেরেই ফেলবে। কিন্তু আমার মাথায় সব উলটাপালটা চিন্তা ঘুরছে। আর আমি যা ভাবি, সেটা কেন জানি ফলে যায়। অ্যালেনকে বললাম আমি চলে যাবো। সে বললো কেন? আমা্দের পৌঁছে দেবে পরে। কিন্তু আমার অসম্ভব জেদ। বললাম স্যরি অ্যালেন আমার ছেলেটা বাসায়, ওকে ফেলে পার্টি ভালো লাগে না। আর অফিস পার্টিতে শুধু আমরা চারজন মেয়ে কেন? ট্যাক্সি কল করে ফেলেছি অ্যালেন বললো “ঠিক আছে আমি দিয়ে আসছি তোমাদের।” গুরপ্রীত আমার হাতটা ধরে বললো আমি যেনো ট্যাক্সিতে না যাই। ওটা শুনলাম। ঊর্মীকে এসে বললাম, ও তো অনেক রাগ। আমায় বকলো। এখানে বেশীরভাগ প্রাইভেট কোম্পানিতে প্রমোশনের বদলে সুপারভাইজারকে খুশী করতে হয় শরীর দিয়ে। যখন জানলাম আমি পুরো থ’। এরপর কাজে যেতাম আমায় কাজ দিতোনা। ঘন্টা কমিয়ে দিতে শুরু করলো। তাও যা পাচ্ছিলাম সেটাও মেনেই নিয়েছিলাম। কিন্তু একদিন এন্টিগোনিশে বিশাল ঝড়। পত্রিকায়/টিভিতে সবজায়গায় ওই খবর এসেছিলো। বাংলাদেশেও খবরটা পত্রিকায় এবং টিভিতে এসেছিলো। সেই ঝড়ের জন্য ছেলের স্কুল পর্যন্ত ছুটি হয়ে গিয়েছিলো। স্কুল থেকে ফ্যাক্টরী্তে ফোন দেয়া হয়েছিলো। আমাদের সুপারভাইজার অ্যালেন আমায় খবরটা দেয়নি। বাইরে যে কি ভয়ঙ্কর ঝড় হয়ে গেছে ভেতর থেকে সেটা বোঝা যায়না। আমি তিনটের সময় কাজ শেষ করে ড্রেশ পড়ে ক্যাব কল করলাম। ছোট্ট এলাকা প্রায় সব ক্যাব ড্রাইভাররাই চেনে আমায়। বললো ৩০ মিনিট লেগে যাবে। বললাম এতো দেরী? ড্রাইভার ফোনেই বললো আমার ছেলের স্কুল তো সেই ১১ টার সময় ছুটি হয়ে গেছে। আমি কাজে কেন? সে জানে আমি ছেলেকে নিয়ে একা থাকি। আমার কি অবস্থা তখন সে যে কেউ বুঝবে। ট্যাক্সি এলো উঠলাম, বাসায় গিয়ে দেখি দরোজা বন্ধ। আমি তো জানি তীর্থর কাছে কোনো চাবি নেই। ওর সব বন্ধুদের ফোন দিলাম। ওরা বললো নভোনীলকে তো দেখেছে স্কুল থেকে বেড়িয়ে যেতে। কোথাও নেই আমার ছেলেটা। ওর বয়স তখন ৯ চলছে। কিচ্ছু ভাবতে পারলাম না। আমি কাঁদতে পারিনা। শ্বাস আটকে আসছিলো। এপার্টমেন্টের নীচ তলায় সুপারভাইজার মহিলা থাকতো। ওই মানুষটার দরোজায় নাড়া দিলাম। খুললো, বললো নভোনীল ইজ হিয়ার। শ্যারল(ওর নাম) বুঝেছিলো আমার অবস্থা। হাতটা ধরে এনে বসালো। এতো ভালো মানুষ এখনও আছে? সেই ১১ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ওর কাজ থাকা সত্ত্বেও বাইরে যায়নি। তীর্থকে খাবার দিয়েছে, টিভি ছেড়ে দিয়েছে। অথচ শ্যারলকে আমি কখনো হাসতে দেখিনি। খুব চুপচাপ আর কেমন জানি গম্ভীর মুখ। যখন আসি শ্যারলের হাতটা ধরে আনন্দের জল ঝরিয়ে এসেছি। মানুষটার বয়স প্রায় ৬৪/৬৫। দিদিমারা যেভাবে খেয়াল নেয়, ঠিক ওভাবেই নিয়েছে। পরে বললো ও ব্যাঙ্কে যাবে ঝড় আসার আগে। বের হতেই দেখে সিঁড়িতে তীর্থ বসা। বুঝলো আমি আসিনি বাসায়। এরপর তো সারাদিন।
পরের দিন কাজে গেলাম। বসের রুমে গিয়ে বললাম আমি চাকরী ছাড়বো। কারণ ঠিক করে ফেলেছি হ্যামিল্টন আসবো, নার্সিং নিয়ে পড়বো। তবে বসকে বললাম আমার ছেলের স্কুল ছুটি হয়ে গেছিলো ঝড়ের জন্য স্কুল থেকে ফোন এসেছিলো আমায় কেন খবর দাওনি তোমরা? ওহ আমি পরেরদিন সকালে স্কুলে ফোন দিয়ে প্রিন্সিপালকে বললাম তোমরা কেন আমায় ফোন দাওনি? প্রিন্সিপাল বললো ওরা ফোন দিয়েছে। এমন রিস্ক ওরা নেয়না। আমি যেনো অফিসে গিয়ে চেক করি। অ্যালেনকে ডাকা হলো সে আবার বসের ছেলে। আমি বললাম তোমাদের নামে আমি কেস করবো। এতোটাই রেগে গিয়েছিলাম, আমায় স্যরি স্যরি শুরু করলো। বস বললো আমায় সময় বাড়িয়ে দেবে। বললাম তুমি সময়ের কথা বলছো আর আমি আজ চাকরী ছাড়তে এসেছি। কেস আর করিনি। সবাই বললো চলেই তো আসছি আর ঝামেলা বাড়িয়ে কাজ নেই। ওহ ওই পার্টির পর গুরপ্রীত এসে বলে আমায় অ্যালেনের ওখানে যাবো নাকি। বললাম কেন? আমায় সে অনেক অনুরোধ করলো। যখন বুঝলো আমি যাবোনা, আমায় বললো যেনো আমি ওর স্বামীকে কিছু না বলি। আসলে আমার বাসায় হঠাৎ এসেছিলো ওইদিন আমাদের কাজ ছিলোনা। ও ওর বরকে বলে এসেছিলো কাজ আছে আর আমায় নিয়ে কাজে যাবে। হাসলাম, বললাম গুরপ্রীত মেয়েরা যদি নিজের সম্মান না রাখতে পারে, পুরুষ কি সম্মান দেবে? বললো “দেখো চাকরীটা আমার খুব দরকার।” হ্যামিল্টন আসার কিছুদিন আগে শুনেছি গুরপ্রীত সুপারভাইজার হয়েছে।
মাংসের ফ্যাক্টরীতে একজন ফিলিপিনো ভদ্রলোক ছিলো অসম্ভব ভালো একজন মানুষ। আমাদেরই বয়সী, কিন্তু সিনিয়র। তার প্রমোশন পাবার কথা ছিলো। জীবন আমায় অনেক কিছু দেখিয়েছে, কিন্তু কিভাবে জানি সবধরণের প্রতিকূলতা থেকে বাঁচিয়েও এনেছে। যা চেয়েছি, তাই পেয়েছি। একটাই শিক্ষা পেয়েছি জীবন থেকে কর্মফল। আমি যা করবো, সেটাই পাবো। ভালোবাসায় খাঁদ থাকলে মানে মনের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলে সেই ভালোবাসা স্বার্থক হয়না। অনেক উদাহরণ থাকতে কেন ভালোবাসা নিয়েই বললাম? ভালোবাসা ছাড়া আর কি কিছু আছে জীবনে? ওটাই তো আজ লিখিয়ে নিলো। কি পরিমাণ ব্যস্ত আমি ছিলাম আজ, কাল অনেক সকালে দৌঁড়োতে হবে। শনিবার বাস কম। তারপরেও কেন লিখলাম? ভালোবাসা পেতে চাইলে এটুকু কষ্ট তো করতেই হবে, নয় কি?
**”আমি হাসতে জানি
চোখের জল হাসির ট্রাম কার্ড দিয়ে পাল্টে দেই জীবন
অনেক কষ্টে নুয়ে পড়তে পড়তে
আবার তীরন্দাজের মতো উঠে দাঁড়াই
কারণ,
আমার সমস্ত অহম কেবল প্রেম তোমাকে ঘিরে
ভালোবাসতে জানি বলেই তো
সারাটি রাত কাটিয়ে দিয়েও দিনেও ক্লান্ত হইনা…” **লেখাটি মাংসের ফ্যাক্টরীতে বসে লিখেছিলাম ব্রেক টাইমে।
এই মেয়ে
তুমি যাচ্ছো মেয়ে কোন পথে?
মেনে নিতে হবে সবকিছু যেখানেই যাও
তোমার জন্যে নিত্য-নতূন নিয়ম
ঘাড় গুঁজে মেনে নিতে হবে
পথে যাচ্ছো হেঁটে
তোমাকে কেউ জড়িয়ে নিতে পারে আলগোছে
অথবা ভীড়ের মধ্যে বুকের গোপনে ছুঁয়ে ফেলতে পারে
তোমাকে চুপ করে সয়ে যেতে হবে
যদি বলে ফেলো কাউকে বাজে মেয়েমানুষ আখ্যা পাবে
জানোনা নারী কে নারীর বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছে কারা?
তুমি অফিসে যাবে
উন্নতি চাও?
বসের কাছে উন্মুক্ত করো নিজেকে—
ভালো বৌ হতে চাইলে মুখ বুজে থাকো,
শরীর খুলে দাও রাতে মন না চাইলেও।
তোমার জন্যে নিয়ম মেয়ে—এই তো দেখোনা আমি ভালো মেয়ে নই
যা মন চায় তা-ই করি–
আমার জন্যে আমি নিয়ম তৈরী করি।
খেলার বদলে খেলা করি,
রাতের পর রাত জেগে আড্ডা দেই বলে
আমি ভালো মেয়ে নই।
পেতে চাইনা সমাজপতিদের তথাকথিত নিয়ম মেনে চলে ভালো উপাধি।শোনো মেয়ে অনেক তো সয়েছো
শরীর-মন দুটোকেই ধর্ষিত করেছো
বালিশে মুখ চেপে কেঁদেছো
কে দেখেছে তোমার চোখের জল?
কেউ কি মুঁছিয়ে দিয়েছে আদর করে নিঃস্বার্থভাবে?
ভালোবাসা পেয়েছো প্রেমিকের থেকে কিসের বিনিময়ে?
এবার বদল করো নিজেকে
মেনেছো
মুখ বুঁজে থেকেছো
এবার থেকে নিয়ম তৈরী করো আমার মতো
ছাদ কিংবা আকাশ দুটোর নীচেই একই নিয়ম দিয়ে যাওয়া
ভয় কিসের তবে?
**কবিতাটি লিখেছিলাম ওই ঘটনার পরে। মেয়েদের জীবন দেখে।
এন্টিগোনিশ , কানাডা
১২ এপ্রিল , ২০১১ ইং।
২২টি মন্তব্য
অনিকেত নন্দিনী
দিদি, আমাদের কি শরীর ছাড়া কিছুই নেই? অ্যালেনের মতো নেকড়েগুলি কি সবাইকেই গুরপ্রীতের মত ভাবে? এক পাল্লায় সবাইকে মাপা যায়?
গল্পটা পড়ে কষ্ট লাগছে, জিদ লাগছে, কান্না পাচ্ছে খুব।
নীলাঞ্জনা নীলা
কান্না অনেক দামী। যার-তার জন্যে ফেলতে হয়না। যে বোঝে কান্না দামী, সে কখনো কাঁদায় না। কাঁদার আগেই জল ধরে নেয় ভালোবেসে।
তাই নো কান্না। শুধু হাসি। 😀
আর ভালোবাসা (3
ইমন
পড়ে কষ্ট লাগছে, জিদ লাগছে, কান্না পাচ্ছে খুব…… মন্তব্য কারর্টেসী: ; অনিকেত নন্দিনী
নীলাঞ্জনা নীলা
কান্না ঝরে পড়েনি তো? কাঁদেনা কাঁদেনা := -{@
অরণ্য
নীলা আপু, আপনি ভাল লিখেন এবং লিখতে ভালবাসেন।
অফিসে বসে পড়লাম আপনার লেখাটি। (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
কয়েকটি নেশা আছে আমার। গান শুনতে, পড়তে, লিখতে, বাগান করতে আর আড্ডা দিতে। ইস প্রাণ জাগানো আড্ডা কতোদিন হয়না! 🙁
আর এই লেখাটির সাথে থাকার জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা। -{@
ছাইরাছ হেলাল
জীবনের কঠিন কঠোর সময় কাছে থেকে দেখেছেন, চুপসে গিয়ে ভেঙ্গে পড়েননি
বলে শত ঝড়ঝঞ্ঝার মাঝেই মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছেন নিজ গুনেই, সবাই তা পারে না, আপনি পেরেছেন।
নিয়মিত লিখতে হবে কিন্তু।
নীলাঞ্জনা নীলা
বলতে দ্বিধা নেই, আমি সহজে ভয় পাইনা, ঘাবড়ে যাইনা। মনের ভেতর ছারখার হয়ে গেলেও শক্ত থাকি। কারণ দূর্বল হয়ে গেলেই মানুষ স্বান্তনা দেয় নয়তো সমালোচনা করে। আর ও দুটো আমি নিতে পারিনা।
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এভাবে যে প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। -{@
ধন্যবাদ—–
সিকদার
এরিই নাম বেচে থাকা । নারী বলেন আর পুরুষ বলেন সবাই নির্যাতিত জানোয়ারদের কাছে, গুরপ্রীত অসহায় নারী তাই নিজেকে বিকিয়েছে সেখানে কোন পুরুষ হলে অন্য কিছু করে চাকরি বাচাতে হত। আর যারা আপনার মত সাহসী তারা জানে দুনিয়াটা ছোট নয় । চাইলেই অনেক কিছু আছে করার ।
নীলাঞ্জনা নীলা
অসহায় সকলেই। আসলে কি জানেন মানুষ তার নিজের অসহায়তাকে সবথেকে বেশী ইম্পোর্টেন্সী দেয়। গত দুই বছর চাকরী ছিলোনা আমার। কিন্তু বিশ্বাস ছিলো হবে।
আমি বিশ্বাস করি সততা মানুষকে এগিয়ে নেয়। ভালো যা কিছু পাই আমরা সততার জন্যেই কিন্তু।
ধন্যবাদ আপনাকে সিকদার। -{@
মেহেরী তাজ
আপু এই বুঝি বাস্তবতা!!
কষ্টের পর শান্তি আসে। আপনি এখন ভালো আছেন, দোয়া করি ভালো থাকুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপুমনি এই দোয়াই তো চাই আমি। ভালোবাসা অফুরান (3
ব্লগার সজীব
জানলাম অনেক কিছু।নারীদের এই অবস্থা তাহলে সব দেশেই কম বেশী আছে।অসহায় নারীরা আত্মসমর্পনে বাধ্য হয়।
বর্ননা চমৎকার ‘ ওই রুমে গেলে মনে হতো আজই আমার জীবনের শেষ দিন’, আহারে আমাদের নীলাদি কত কষ্ট করেছেন জিরো ডিগ্রীতে থেকে। প্রতি মিনিটে ৪-৫ প্যাকেট করা তো মেশিনের কাজ।
প্রবাসের এসব ঘটনা লিখুন আরো দিদি।কেউ একজন যদি অনুপ্রেরনা পান তবেই লেখা সার্থক।আমি তো আপনার জীবন সংগ্রামে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি।আপনি পারলে আমরা কেন পারবো না? -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার কি এমন সংগ্রাম! এমন আরোও অনেক আছে যাদের জীবন সংগ্রাম শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। কিন্তু আমি সেসব নিয়ে লিখবোনা। কারণ কেউ যখন কিছু বলে তখন অনেক বিশ্বাস নিয়ে বলে। সেই বিশ্বাসকে ভাঙ্গতে পারবোনা আমি। সেসব শোনার পর মনে হয়েছে আমি তো ভালোই ছিলাম এবং ভালো আছি।
সজীব ভাইয়া নারীদের অবস্থা না ঘরকা, না ঘাটকা প্রায় সব জায়গাতেই।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য -{@
লীলাবতী
আপনি একজন আদর্শ নারী নীলাপু।আপনার জীবন সংগ্রাম তো আমাদের প্রেরনা।খুবই ভাল ভাবে তুলে এনেছেন মাংস ফ্যাক্টরির আপনার জীবনকে। আর মেয়ে কবিতাটি কয়েকবার পড়লাম।আমাদেরকেই সব সহ্য করে যেতে হয়।বড্ড অসহায় লাগে আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
নিজেকে অসহায় ভাববেন না লীলাবতী দিদি। আর অতো উঁচুতে আমায় রাখবেন না। আমি সাধারণ একজন মেয়ে। তাই লিখেছি, বিশাল হলে কতো কিছু লুকাতাম।
অনেক অনেক ভালোবাসা -{@ (3
জিসান শা ইকরাম
জানলাম তোমার মাংস ফ্যাক্টরীর জীবনকে।
অত্যন্ত শক্ত ব্যক্তিত্বের কারনে অনেক প্রতিকুলতার মাঝেও সোজা হয়ে আছো।
শ্রদ্ধা জানাচ্ছি তোমার এই ব্যক্তিত্বকে।
এই মেয়ে কবিতাটি মনে হয় প্রথম পড়লাম।
কি বলা যায় এই কবিতায় জানিনা ………
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা তুমি তো জানো আমায়, চেনো আমায়। ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত কতো বদল, কতো কিছু দেখলাম। এসব ঘটনা তোমাকে বলেছিও।
কবিতাটি ফেসবুকে দিয়েছিলাম তো! ভুলে গেছো? :@ রাগ করলাম।
শুন্য শুন্যালয়
মনটা খারাপ হয়ে গেলো আপু। কতো প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে বেড়িয়ে এসেছেন। নভোনীলের কথা শুনে আমি অবশ হয়ে গেছি। কি ভয়ংকর কথা!! ব্যাটা অ্যালেন কে আসলেই জেলে দেয়া উচিৎ ছিলো।
লেখাটা পড়ে নীলা আপুর প্রতি শ্রদ্ধা কএক গুন বেড়ে গেলো। এটাই সত্যি যেদিন নারী নিজেকে সম্মান দিতে শিখবে, সেদিন থেকে অন্যরা দেবে।
ছোট শহরটা অনেক সুন্দর আপু। নভোনীল বাবার জন্য অনেক আদর।
নীলাঞ্জনা নীলা
সেদিন আমি জীবনের সবথেকে বড়ো পরীক্ষা দিয়েছিলাম। যদি শ্যারল না থাকতো! এখনও ভাবলে…।
আমি মিস করি এন্টিগোনিশকে। ওখানে চাকরীর সংস্থান কম। তাই চলে আসতো হলো।
নভোনীল এখন নাদুস-নুদুস নেই। বড়ো হয়ে গেছে। ভাবে-সাবে যা দেখায় না! কবে যে একটা প্রেম করবে, তারই অপেক্ষায় আছি। :p
আপু অনেক ভালোবাসা। -{@ (3
আজিম
প্রবাসজীবনের গল্পটা পড়লাম। আগেরটাও পড়েছি। ভাল লিখেছেন। আপনার মতো এরকম সাহসী গল্প আজ আরেকটা পড়লাম amadershomoy.com-এ। এখন দেখি সেটা আর নাই, মনে হয় সরিয়ে নিয়েছে।
মহাখালী রেলগেটের কাছে এক বৃদ্ধ কর্তৃক এক নারী সাংবাদিককে হেনস্ত করার প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে যায় মেয়েটা। প্রতিবাদ করে, অনেক মানুষ জড়ো হয় এবং তাঁকেই (নারী সাংবাদিককে) বকাঝকা করে মানুষ, পোষাকের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে দু’একজন নারীও তাঁকে সরে যেতে বলে। কিন্তু তিনি মোবাইলে আরেক সাংবাদিক বন্ধুকে পুলিশ ডাকতে বলায় ধীরে ধীরে মানুষজন ভাগতে শুরু করে। শেষে কাফরুল থানায় মামলা করেন এবং সেখানে পুলিশকে আসতে বাধ্য করেন।
এটা আপনার ’এই মেয়ে’ কবিতার সাথে অনেকটা মিলে যায় বলে এতো কথা বললাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
মেয়েদেরকে এভাবেই আসতে হবে সামনে এগিয়ে।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটির সাথে থাকার জন্যে। 🙂