
আজ অনেকদিন পর ভালো করে গোসল করলো ছায়া, গত আট নয়দিন গোসল কি তাই ভালো করে দেখেনি ও, হাসপাতালের জেনারেল টয়লেটেই গোসল করতে হতো।
ফ্রেস হয়ে রেডি হতে হতেই অনেক সময় লেগে গেলো ছায়ার, দ্রুত রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখে অনিক কিচেনে রান্না করছে, তা দেখে বললো সরি আমার দেরি হয়ে গেলো।
না অসুবিধা নেই, খিদে লেগেছে নিশ্চয়?
হাঁ।
এই রান্না প্রায় হয়ে এসেছে, ফ্রিজে কিছু কিউই ফ্রুট, আপেল সহ কিছু অন্য ফ্রুট আছে, চাইলে খেতে পার।
ছায়া এগিয়ে গিয়ে ফ্রিজ খুলে দেখতে লাগলো এরপর একটা পিচ ফল নিয়ে কিচেন টেবিলের উপর রাখা ফ্রুট নাইফ নিয়ে ছিলতে লাগলো।
আমি হসপিটালে ফোন দিয়েছিলাম আনকেলের খবর নিতে, বললো এখনো সেন্স আসতে দেরি আছে।
কোন অসুবিধা হচ্ছে নাতো বাবার, ছায়া উদ্বীগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
না না, কোন অসুবিধা হচ্ছেনা উনার।
ছায়া পিচ ফলটি স্লাইস করে কেটে একটা প্লেটে রেখে এগিয়ে ধরলো অনিকের দিকে, অনিকে বললো তুমি খাও, আমি আপেল একটা খেয়েছি।
ছায়া এক স্লাইস নিয়ে মুখে দিয়ে বললো, কি রান্না করছেন?
তেমন কিছুনা, রুই মাছ, মুরগী আর ভাত।
ওহ।
ছায়া টিভি রুমে বসে একটা ফ্যাশন ম্যাগাজিন পড়ছিলো, এই সময় অনিক ডাক দিলো, চলে আসো ডিনার রেডি।
ছায়া উঠে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো।
অনিক আরেকটা চেয়ারে বসে বললো, নাও শুরু কর, মাছ গুলো বোনলেস।
কি মাছ এইটা?
কোরাল।
তাহলে বোনলেস কেন?
আসলে আমি বীচ সাইড ফিস মার্কেট থেকে এনেছিলাম, ওরা কাটার সময় বোন গুলো খুলে ফেলে।
তাই?
হুম।
আমি ভাত বেড়ে দিই, ছায়া বললো।
আরেহ নানা, এইখানে ফরমালিটির কিছুই নেই।
ইতিমধ্যে ছায়া অনিকের প্লেটে ভাত বেড়ে দিলো, এরপর নিজেও নিলো।
অনেকদিন পর মাছ খাচ্ছি তাও দেশিয় রান্নায়।
আসলে দেশিয় রান্না আমি খুবই কম করি, আজ তুমি থাকায় ভাবলাম এই স্টাইলেই করি।
মুরগীটা একটু অন্য স্টাইলে মনে হচ্ছে, ছায়া জিজ্ঞেস করলো।
নিয়ে দেখো, এ রান্না অবশ্য খুলনা থেকে আম্মা শিখেছিলেন, এতে টমেটো, গোল মরিচ, কাঁচা মরিচ দিয়ে রান্না, রান্নাটা বেশ ইজি, খেতেও ভালো।
তাই, একটু মিষ্টি টাইপের।
হাঁ একটু চিনি দিয়েছি।
বাহ বেশ টেস্টি।
খাওয়া শেষে ছায়া প্লেট নিয়ে উঠে গেল বেসিনে।
পরদিন সকালে ছায়া ব্রেকফাস্ট করেই ছায়া চলে গেলো হাসপাতেলে, অনিক অফিসে পোঁছেই নিজ কেবিনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, দরজায় নক শুনে মাথা তুলে তাকিয়ে বললো, মামা প্লিজ কাম।
লুসি রুমে প্রবেশ করে বললো, অনিক একটা মেয়ে চাকরির খোঁজে এসেছে, আমেরিকান বাট তোমার দেশের।
তাই, তুমি তাড়াতাড়ি বিদায় নিতে চাও কেন মামা লুসি?
নট দ্যাট, কিন্তু মেয়েটা এই জবের জন্য ফিট।
কিভাবে বুঝলে?
ও বায়োকেমিস্ট।
রিয়েলি!
হুম, দেখা করবে?
ঠিক আছে আসতে বলো।
একটু পর নক শুনে চোখ তুলে তাকালো অনিক, সাথে সাথে চোখ নামিয়ে বললো, কাম ইন।
ইংরেজিতে বললো, বসো।
মেয়েটি বসার পর একটা ফাইল এগিয়ে দিলো, অনিক হাত বাড়িয়ে নিয়ে ফাইল উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলো এরপর বললো, বাংলা জানো?
জ্বি জানি।
ওকে তোমার সম্পর্কে ব্রিফ ভাবে বলো।
আমি আফরিন শেখ, জন্মগত ভাবে আমেরিকান হলেও আমি বাঙ্গালী, আমি বায়ো ও পেট্রো কেমিকেলিস্ট, আমার ইউনিভার্সিটি এবং রেজাল্ট সব ফাইলে আছে, আমি এক বছর এভারগ্রীন অয়েল কোম্পানিতে জব করেছি, কিন্তু কোম্পানির এমডির ইন্ডিসেন্ট প্রপোজালের কারণে জব ছাড়তে বাধ্য হই, বলে আফরিন চুপ করলো।
তুমি কি জানো একজন সেক্রেটারির কি কি কাজ হতে পারে, অনিক প্রশ্ন করলো।
জ্বি আমি ওখানে এমডির সেক্রেটারি ছিলাম।
অনিক উঠে গিয়ে কফি পট থেকে কফি নিলো, তুমি কফি নেবে, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
না ধন্যবাদ।
অনিক কফিতে চুমুক দিয়ে চেয়ারে বসলো, তুমি জানো তোমাকে আমার সাথে বিভিন্ন দেশে যেতে হবে, বিভিন্ন বিজনেস ডিল, মিটিং এইসব করতে হবে?
জ্বি জানি।
তা তোমার এক্সপেক্টেশন কত?
আপনাদের নিয়ম অনুযায়ী দেবেন, ঝটপট উত্তর আফরিনের।
আমরা উইকলি সেলারি লোয়ার গ্রেডদের দিই।
জ্বি এইখানে তাই আশা করছিলাম।
ওকে ওয়েট বলেই লেভিনকে কল দিলো, কয়েকটা রিং হতেই অপর পাশে রিসিভ করলো লেভিন, বললো হাই অনিক।
হাই, লেভিন তুমি কি ব্যস্ত, যদি সমস্যা না থাকে একটু আসোনা।
ওকে আসছি।
একটু পরেই লেভিন এলো, এসে একটা চেয়ার দখল করে বসলো, বলো কি খবর বন্ধু?
লেভিন, এ হলো আফরিন।
হাই বিউটিফুল বলে লেভিন হ্যান্ডসেইক করলো আফরিনের সাথে।
শুনো ওক্ব মামা লুসির স্থলে নিয়োগ দিতে চাই।
ভেরি গুড, আমার আপত্তি নেই।
ওকে আফরিন, তোমার প্রাথমিক সেলারি হবে দুই হাজার ডলার প্রথম ছয় মাসের জন্য যা প্রবেশনারি পিরিয়ড হবে, এরপর সেলারি হবে তিন হাজার পাঁচশো, সাথে ফ্রিঞ্চ বেনেফিট পাবে কাজ অনুসারে, ইজ দিস ওকে উইত ইউ?
নো প্রবলেম, আফরিন বললো।
ওকে তাহলে তুমি একটু ওয়েটিং রুমে বসো, মামা লুসিকে বলে দিচ্ছি তোমাকে এপয়নমেন্ট লেটার দেওয়ার জন্য।
ধন্যবাদ, আমি এখন আসি।
ওকে, সি ইউ।
আফরিন বেরিয়ে যাওয়ার পর লেভিন বললো, বন্ধু এতো সুন্দর মেয়েকে কিভাবে পেলি?
অনিক হেসে বললো, তুই চাইলে ওকে তোর সেক্রেটারি করে দিই।
না না না, আমার বউ দেখলে স্রেফ গলা কাটবে আমার।
অনিক হো হো হো করে হাসতে লাগলো।
……… চলবে।
ছবিঃ গুগল।
৩৮টি মন্তব্য
তৌহিদ
দাদা, নতুন সেক্রেটারিকে নিয়ে এসেতো মোড় ঘুড়ায় দিলেন গল্পের। ভালো লাগছে পড়তে ধারাবাহিকটি।
ইঞ্জা দাদা, পোস্টে এত তাড়াহুড়া করলে চলবেনা কিন্তু। রয়ে সয়ে বার বার রিভাইজ দিয়ে তারপর পোস্টাইবেন। ডাবল এন্ট্রি হয়ে গিয়েছে।
আর বানানে খেয়াল রাখা দরকার দাদাভাই, একটা ভুল শব্দ গল্পে বাক্যের অর্থ পরিবর্তন করে দিতে পারে। ছুডো মানুষ তাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
শুভেচ্ছা জানবেন দাদা 💜💜
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, প্রথমেই বলে রাখি আমি যা লিখি তার কপি এনে এখানে পেস্ট করি সেলফোন দিয়ে, এমন হয়েছে হয় হাত দুইবার লেগে ডাবল এন্ট্রি হয়ে গেছে, আপনি বলাতে তা ঠিক করে দিয়েছি।
বানান ভুলের বিষয়টি আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল বলতে পারেন, কারণ আমি বাংলায় বেশ কাঁচা, যার উপযুক্ত কারণও আছে, অনুরোধ করবো যখনই ভুল চোখে পড়বে দয়া করে কোনটা ভুল হয়েছে উল্লেখ করবেন সুদ্ধটা সহ, এতে আমি উপকৃত হবো। 😊
তৌহিদ
এসব ভুল অনিচ্ছাকৃতইই দাদা, কেউ কি তার নিজের লেখায় ভুল করতে চায় ইচ্ছেকরে।
ব্যাপারনা, আমরাইতো।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই আমাকে বুঝার জন্য
সাবিনা ইয়াসমিন
লেখাটা একবার ঠিক করে নিতে হবে। ডাবল চলে এসেছে ভাইজান।
গল্প ভালো এগুচ্ছে, পড়তে থাকি।
শুভ কামনা ভাইজান 🌹🌹
ইঞ্জা
আপু অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিলো যা আপনারা বলার সাথে সাথে ঠিক করে নিয়েছি। 😊
আপু লক্ষ্য করুন আপনারা কয়েকজন মাত্র কমেন্ট করেছেন, বাকিরা যেমন জিসান ভাই, রিতু আপু, বন্যা আপু সহ অনেকেই আমার লেখাতে কমেন্ট কম করেন, হয়ত আমিই দোষি তা আসেননা আমাকে উৎসাহ দিতে, ফলশ্রুতিতে আমার লেখার গতিও ভালো হয়না। 😣
আমি চেষ্টা করবো আমার লেখা যেন আরো ভালো হয়, দোয়া করবেন আপু, ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
অন্যদের কথা ঠিক বলতে পারবো না, আমার যতটুকু মনে হয় ধারাবাহিক লেখাতে প্রতি পর্বে একই রকম কমেন্ট করতে ব্লগাররা হয়তো সাচ্ছন্দ বোধ করেন না।
যেমন, চলুক ভালো লাগছে বা দারুন হচ্ছে এই টাইপের কমেন্ট বারবার করতে / দেখতে ভালো লাগে না অনেকের। আপনার কাছেও অনেক সময় বিরক্তিকর মনে হবে একই কমেন্ট সবার কাছ থেকে পেতে।
যাইহোক, সোনেলা উঠোনে সবাই আমরা আমরাই। কমেন্টে আসুক বা না আসুক পোস্ট সকলেই পড়ে এই বিশ্বাস আমাশের রাখতে হবে ভাইজান।
শুভকামনা সব সময় 🌹🌹
সাবিনা ইয়াসমিন
* আমাদের 😊
ইঞ্জা
আপু আমি জানি সবাই পড়েন কিন্তু লেখা নিয়ে কেউ আলোচনা না করলে গল্প লেখাটা আমার হয়ে উঠেনা, এর কারণ হলো আমি নিজেই বুঝতে পারিনা লেখাটি কেমন হচ্ছে, কিভাবে এগিয়ে নিতে হবে, ইত্যাদি।
এরপরেও বলি আমরা আমাদের লেখকদের উৎসাহিত করলে লেখার মান বাড়বে বই কমবেনা।
তৌহিদ
হুম এখন ঠিক আছে।
ইঞ্জা
😍
মনির হোসেন মমি
গল্প মোটামোটি ভাল লাগছে তবে পাঠক ধরে রাখাই ধরে রাখাই টাফ।পাঠক কেবল চুম্বক অংশটুকু খোজেঁ।অনিক ছায়া এবার এলো সেক্রেটারী ঘটনা জমবে ভাল।
ইঞ্জা
দোয়া রাখবেন ভাই
ছাইরাছ হেলাল
আফরিন আর ছায়া!! প্যাঁচ লাগান কঠিন করে।
ইঞ্জা
প্যাঁচ তো লাগবেই ভাই, পাশে থাকবেন। 😊
ছাইরাছ হেলাল
আছি তো।
ইঞ্জা
😆
মোঃ মজিবর রহমান
এক টানেই পড়লাম খুব খুব ভাল লাগ্ল। বড় ভাই, গল্পে মাঝে মাঝে কিছু উপদেশ ও আধ্যাত্মিক ডায়ালগ স্রিস্টি করুন তাতে আমার মনে হয় ভাল হবে।
তবে এই মত আমার , ক্ষমা সুন্দফর দ্রিস্টিতে দেখবেন।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই, আপনার উপদেশটা বেশ ভালো। 😍
শুন্য শুন্যালয়
রান্নার রেসিপিগুলো দিয়ে দিলে মন্দ হতোনা! 🙂
নতুন একজনের ইন্টার্ভিউ নিতে গিয়ে তুমি বলবে কেন? এটাতো মানা গেলোনা ভাই।
দেখা যাক কোথাকার ছায়া কোথায় গড়ায়।
ইঞ্জা
মুরগীর সাদা রান্নার রেসিপি দিতে পারি যদি আপনি সিরিয়াসলি চান, খেতে বেশ সুস্বাদু। 😆
নতুন ইন্টারভিউতে তুমি বলেছে, ওরে খোদা ভুল মানুষেরই হয়। 😨
ছাইরাছ হেলাল
গুপনে রেসিপি চালাচালি চলবে না।
ভাগ আমরাও চাই।
আলাদা পোস্ট দেন।
মোঃ মজিবর রহমান
শুন্য আপু রেসিপি পেলে খাওয়াবে ইঞ্জা ভাই।
অতি দ্রত রেসিপি দিন।
ইঞ্জা
ভাই রেসিপিটা গল্পতেই দেব ভাবছি
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ভাই
মাহমুদ আল মেহেদী
ভালো লাগছে বেশ। চলুক, আপেক্ষার শেষ নেই।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, অনুপ্রানিত হলাম।
জিসান শা ইকরাম
আপনার বর্ণনা গুলো খুব বিস্তারিত হয়, এটি পাঠকের জন্য ভালো।
লেখার ধরনটা বেশ আধুনিক,
নতুন নাইকার আগমনে আর একটি নড়েচড়ে বসতেই হয়।
চলুক–
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাইজান, আমি অকুণ্ঠ চিত্তে বলি সোনেলায় আমার লিখার উৎসাহ, আমি চেষ্টা করি আমার ব্লগ পাঠকরা যেন নিরাশ না হয়, বাকিটা আপনাদের দোয়া ও স্নেহ।
নতুন নায়িকার আগমন কিনা জানিনা, কারণ গল্পের নায়িকা কে তা এখনো আমারই জানা নেই, ইন্সট্যান্ট লেখার এই কুফল ভাইজান। 😆
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া সাতটি পর্বই পড়লাম। উফ কেন যে এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো! তাড়াতাড়ি দিন পরের পর্ব।
ইঞ্জা
আপু, সময় করে লিখি এরপর দিই, আপনি আসছেন যখন দ্রুত দেবো। 😆
রেজওয়ান
গল্পটাকি ঘুরাতে চাচ্ছেন ভাইজান?😂
ইঞ্জা
দেখোই না কই যায়। 😊
কামাল উদ্দিন
বিদেশে থাকে লোকজন আর যাই পারুক বা না পারুক রান্নাটা ভালো করে। এদিকে আবার নতুন সুন্দরী সেক্রেটারি নিয়োগ দিয়াছে অনিক শেষে ত্রিমুখি প্রেমের ঘটনা ঘটবে নাতো? যা ঘটে ঘটুক আমি আগালাম…….
ইঞ্জা
আরও অনেক কিছু ঘটবে ভাই, আপনি এগিয়ে যান।
শুভেচ্ছা।
কামাল উদ্দিন
লেগে রইলাম, শেষ না দেখে ছাড়ছি না আর
ইঞ্জা
❤❣