ইতিহাস প্রমান করতে ব্যর্থ আমার কাছে। সে আমার নিজস্ব ভাবনা। চাপিয়ে দিইনা কারো ওপর।কবে কোন ঘটনার কারনে জন্মেছিলো ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ ভালবাসা দিবস বলে বিশ্ব দরবারে পালিত হবে! যেবার প্রথম শুনেছিলাম! কপাল কুঁচকে গিয়েছিলো আমার। এর কাহিনী কী? অনেক পরে জেনেছি, কি হতে আজ এ পর্যায়ে নেমেছে*( হ্যাঁ, নেমেছে- বলে উল্লেখ করলাম।) ভালবাসাবাসির ফর্মূলা!!!-
ঘর টেকেনা ভালবাসায়! এই তারিখে একতোড়া ফুল নিয়ে হাজির হন কর্তা সাহেব। কি চাও? এটাই প্রমান করতে যথেষ্ঠ!!কর্তা সাহেব বড্ড রোমান্টিক ভালবাসা দেখাতে? ছ্যাঃ….. ওহে কর্তা সাহেব মাসাধিক্যকালের কথা বন্ধ, ঝগড়ার সুরাহা অমিমাংশিত। আর তুমি অফিস ফেরৎ একতোড়া ফুল আনয়নে ভাবছ মিটে গেলো দূরত্ব? বলি মতলবখানা কি বলোত? গিন্নি’র চোখে মুখে তো হাসি ফোটার কোনো লক্ষনই নেই! বরং গিন্নি গ্যাঁট হয়ে বসে যাঁতিতে কাঁচা সুপারি জোরে সোরে কচর কচর করে কাটছে। পারলে মিনসের বিগত দিনের নষ্ট উক্তিগুলোকে কেটে বাদ দিতে পারলে বড় ভালো লাগত, তাতো হচ্ছে না; বরং বেচারা সুপারির গাত্র কুচি কুচি হয়ে ফুল সুপারির রুপ ধারন করছে। মিনসে কর্তা তো এমনটাই করে আসছে সেই কুড়ি বছর ধরে। কুড়ি বছর আগে না হয় গিন্নির বয়স কম ছিলো বলে ফুল পেয়েই মোমের মত গলে টলে একাকার হয়ে পিরিতে হাবুডুবু খেত। এখন সে ল্যাঠা নেইকো আর! এখন বুঝি গিন্নি বোঝেনা ভালবাসার আকার কেমন? গিন্নি এখন বড় ডরে ভয়ে থাকে, ঘুমের মধ্যে কবে না জানি মিনসে হাত পা ছুঁড়ে টুরে গিন্নির জীবনটাই কুপোকাৎ করে ছাড়ে! বেঘোরে ঘুমায় রাতে! মাঝ রাত্তিরে মাঝে মাঝে কি সব স্বপ্ন টপ্ন দেখে! তারপর শুরু উল্টাপাল্টা লাথি, ঘুষি ইচ্ছে মত। ঝাকি দিয়ে জিজ্ঞেস করলে বলে–‘ কি হইছে? আমি কি করছি?” মর জ্বালা। এ মিনসে আবার পিরিতের কি বোঝে? ছিলো বুঝি কোনো এককালে পিরিতের রকম সকম কর্তার মনের মতন! ইচ্ছে হলে নতুন বউ নিয়ে একটু ঘুরতে বের হতো নয়ত কোনো আত্মিয়ের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যেত। চাইলে বড়জোড় সংসদ ভবন এলাকায় নিয়ে বাদাম, ফুসকা খাওয়াত! সেতো সেই যখন বাচ্চা কাচ্চা হয়নি তখনকার কথা! বাচ্চা কাচ্চা হবার পরে ও কিছুদিন কর্তা মশাই ঘুরতে টুরতে নিয়ে যেতেন, জোড়াজুড়ি করলে ছেলে মেয়ে। বাচ্চা কাচ্চাদের পড়াশুনার চাপে সব ভেসে গেছে সেই কবে সে হিসেব আঙুলে কষতেও ভুলে গেছে গিন্নি রানী। কি সব কয় আজকালকার ছেলে ছোকরারা ভ্যালেন্টাইন না বিশ্ব ভালবাসার দিন! তো মিনসে কর্তা তোমার কি তাতে? তুমি কেন আদিখ্যেতা দেখাও এসব নিয়ে? কবে নির্জনে বসে দুটো কয়েছ কথা মিষ্টি হেসে? কবে জানতে চেয়েছ- বউ তুমি কি খেয়েছ? বেলা কত হলো খেয়াল করেছ? খাবে আর কখন? অবেলায় শুয়ে থাকতে দেখে ঠেলা দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছ, ” ও বউ তুমি শুয়ে আছ কেন শরীর খারাপ করেনি তো? প্রচণ্ড জ্বরে তাপে শরীর পুড়ে গেলে জানতে চেয়েছ -‘ তোমার কষ্ট হচ্ছে? এক্খুনি চলো ডাক্তার দেখাবে’ বুড়ো মিনসে তুমি এতদিন বদে এক তোড়া ফুল এনে বললে- হাহ্….. যতই ঝগড়া ঝাটি কর…….. ‘ তারপর?? কথাটাও শেষ করতে শিখলে না, তো বুঝবে গিন্নি রানী?
ওহে মিনসে, তুমি বরং ডালে নুন হলো কিনা, তরকারিতে স্বাদ হলো কিনা তাই খোঁজো। এইসব ভালবাসাটাসা শিকেয় থাকুক তোমার ছেলে মেয়ের জন্যি। ও তোমার কম্মো নয় হে বুড়ো মিনসে!
তবু কেউ প্রকাশ করে ভালবাসা এভাবেও। সারা বছরে যে লোকের কাছে ভালবাসা কি জিনিস জানার বাইরে থাকে। ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ সে লোকের ইচ্ছে করে তাঁর বুড়ো গিন্নির জন্য কয়েকটা রঙবেঙের গ্লাডিওলাস আর দুটো গোলাপের তোড়া কিনে এনে বউকে দেয়।
কেউ ছেড়ে চলে যায় ভালবাসার মূল্য না বুঝেই। কেউ খুব পুরোনো পাতা থেকে উঁকি দিয়ে ইনবক্সে একটা ছোট্ট হিন্দী গানের ক্লিপিং পাঠিয়ে জানান দেয়– তোমাকে না পেয়ে আমার দিনরাত্রি ডু্বেছে অন্ধকারে”
লিখে রেখে দিয়ে যায় কবিতায় কেয়েকটা চরন–” “স্রোতের মতন আসে তালগাছ সমুদ্র মর্মর
আমাদের মৃত্যু হবে এরকম বসন্ত বাতাসে
যখন স্বর্গীয় জ্যোৎস্না গাঢ়তম ইন্দ্রের আকাশে
তখন আসন্ন হয় তোমার আমার রুপান্তর। “…….জগৎ জুড়ে ভালবাসা একদিনের তরে নয়। ভালবাসা মানে তোমাকে পেলাম না বলে দূরে সরে তোমাকে ভুলে গিয়ে বেঁচে থাকা নয়। প্রতিদিন তোমার নামে একটু একটু করে নিঃশ্বেষ হতে থাকার নামও তো ভালবাসা হয়!
কোথাও কোনো পাহাড়ের আড়ালে টিকে রয়েছে চিরহরিৎ বসন্ত!
নির্ঘুম চোখের পাহারায় খুঁজে চলেছি জোনাক আলোর সুরঙ্গ
এখনো পুরোনো পৃষ্ঠা ওল্টাই খুঁজে পেতে ক’য়েকটা শব্দের শরীর।
প্রতি অক্ষরের গায়ে লেখা ছিলো যার নাম- ভালবাসি…..
১৬টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
ফাল্গুনের শুভেচ্ছা রইল প্রিয় লিপি আপু ভাল থাকবেন অনেক
বন্যা লিপি
আপনিও ভালো থাকবেন লিটন ভাই। শুভ কামনা রইল।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ সবাই করতে পারে না তাদের জন্য এই দিবসটি দরকার অন্তত কিছুটা হলেও অন্যদের দেখাদেখি তারা তাদের মনের কথা বলতে বা প্রকাশ করতে পারবে। তবে ভালোবাসা, দিবসে আটকে না রেখে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ হোক। ভালোবাসা প্রকাশিত হতেই হবে তেমন ও নয় তবুও ভালোবাসার প্রকাশ পেলে ভালো লাগারই কথা। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো। শুভ বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের অফুরন্ত শুভেচ্ছা
বন্যা লিপি
দেখাদেখি বিষয়টাই তো আমার সহ্য হয় না দি’ভাই! দুনিয়াশুদ্ধ মানুষ যদি দেখাদেখি ভালবাসা প্রকাশ করে, তবে আমার বড্ড আপত্তি আছে তাতে। আমি নাই ওতে।আমিও বলি, ভালবাসা আমার মন মানলে প্রকাশের দরকারটা কি?
আরজু মুক্তা
ভালো বললেন। এটা পড়ে স্বামীকুলের যদি একটু বোধদোয় হয়। তাহলে হলো।
ভালোবাসা দেখানোর জন্য নয়। প্রতিদিন সাজুক নতুন করে, নতুন ভাবনায়, নতুন দীপশিখায়, হৃদয়ের অলিতে গলিতে।
ভালোবাসা অবিরাম
বন্যা লিপি
স্বামী’কুল স্বামীই থাকে, অথবা পুরুষ, প্রেমময় স্বামী বড্ড বিরল।বোধদয় কদাচিৎ কারো কারো হয় হয়ত। বেশির ভাগ নয়।ভালবাসার স্বরুপ না বুঝেও কেউ কেউ আজীবন কাটিয়ে গেছে/ যাচ্ছে সংসার নামক মহাসমুদ্রের বৈতরণী।
ভালাসা তবু অবিরাম…….
আরজু মুক্তা
ঐটাই বললাম
রেজওয়ানা কবির
একেকজনের ভালোবাসার প্রকাশভঙ্গী একেকরকম। তবে যারা ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে না, চাপা স্বভাবের তাদের কষ্টটা সহজে বোঝাও যায় না,তাই অপরদিকের মানুষটার বুঝতেও সমস্যা হয় আর যদিও বা প্রকাশ করে কোনএকদিন তবেতো গল্পের গিন্নীর মত অবস্থা। ভালোবাসার দিন যেকোনো সময় হতে পারে এর জন্য বিশেষ শুধু ভ্যালেনটাইন ডেই লাগে তাতো নয়, ভালোবাসা সবসময়, প্রতিক্ষন হতে পারে❤️❤️❤️।ভালো লিখেছেন আপু,শুভকামনা।
বন্যা লিপি
আমি তো বলি এরকম- ” আমি সমুদ্র দেখিনি, আমাকে সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যাবে? বালিয়ারিতে বালির ঘর বানাব, আর লোনা জলের সংখ্যা বাড়াব! সে বলে ওঠেঃ না
: নেবেনা আমায় সমুদ্র দেখাতে?
সে বলেঃ নেব
: তবে যে “না” বললে?
সে বললঃ তোকে সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যাব, তুই শাড়ির আঁচল উড়িয়ে, চুল খুলে বসবি কোনো উঁচু টিলার ওপর, তুই মুগ্ধ চোখে সাগর দেখবি আর আমি দেখব শুধু তোকে, আমার দুচোখ ভরে শুধু তোকে দেখব”
ভালবাসার প্রকাশভঙ্গী যেমনই হোক হৃদয় যেন জানে…. সে ভালবাসে বড্ডএই আমারে।
শুভ কামনা আপনার প্রতি❤❤
রোকসানা খন্দকার রুকু
দারুন লিখেছেন। এতেযদি আক্কেলহয়।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
কার আক্কেল হবে? যার হয়না ৬ তে তার হবেনা ৯ তে। যখন যেমন মনে ওঠে শব্দের ঝংকার! আমি সোনেলার ডায়রীর পাতায় লিখে রেখে যাই। আপনাদের পড়তে ভালো লাগলেই আমার জেনে ভালো লাগে। শুভ কামনা রইল।
প্রদীপ চক্রবর্তী
১৪ তারিখ ভালোবাসার বিশেষ দিন। এইদিনের পক্ষে একবিংশ শতাব্দীর, যুবক আমি নয়।
হ্যাঁ সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।
এতে কেউ আমায় ভালো বলুক আর মন্দ বলুক যায় আসেনা।
তবে একটা কথা ঐদিন ফুল বিক্রেতার কাছে আনন্দের দিন তাই আর পিছপা হতে পারিনা!
যদি খাবার জুটে ফুল বিক্রি করে এরচেয়ে বড়কিছু আর হতে পারেনা।
.
ভালোবাসা ভালোলাগা হোক প্রতিনিয়ত।
বিশেষ দিনের জন্য নয়।
.
যথার্থ লিখেছেন, দিদি।
বন্যা লিপি
তোমার সাথে এই একটা ব্যাপারে হান্ড্রেড পার্সেন্ট সহমত দাদাভাই, ফুল কুরানী শিশুটা কিছু ফুল বিক্রি করার উৎসব পেয়ে যায় এই বাহানায়। এটা অবশ্যই পজেটিভ দিক আমার কাছেও। সবসময়ের ভালবাসার কাছে বিশেষ দিনটাও একটা বিশেষ দিনই হোক। তাই বলে বাকিদিন গুলো নয় কেন? প্রতিসময়, প্রতিদিন, প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরাজ করুক ভালবাসা সবার মাঝে।
ছাইরাছ হেলাল
ফুলেল সুপারি কাটতে কাটতে ভালুবাসা বলে কিচ্ছু নেই ভাবলেই ল্যাঠা চুকে-বুকে যায়।
বন্যা লিপি
এইডা কিছু হইলো? ভালুবাসা ছাড়া চলবো কেমতে? ওই যে! ফুলের তোড়া!! তবু তো আনছে বুড়ো মিনসে😆😆
পপি তালুকদার
পৃথিবীতে একেক জন ব্যক্তি একেক ভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করে তারপরও প্রিয় মানুষের জন্য ভালোবাসা হোক প্রতিদিন।ছোট ছোট ভালো লাগার প্রতি হোক যত্নশীল তাহলে ই ভালবাসা হবে মধুময়।
লেখা টা ভালো লাগলো।