১৯৭৪ সাল, তখন আমার বাবা জাহাঙ্গীরনগর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। যে সময়ের কথা বলছি তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন নির্বাচনে জাসদ জিতবে তাই তিনি সরকারের কাছে ছাত্রদের জন্য নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। কিন্তু তার পরিবর্তে একদিন দুপুরবেলা কয়েকজন ছাত্র বিনা অনুমতিতে উনার অফিস কক্ষে প্রবেশ করে এবং একজন একটি পিস্তল বেড় কোরে বলে, নির্বাচন বন্ধ করে দিন। তিনি বললেন, তা কখনোই সম্ভব নয় এবং সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে হয় সে জন্য আমি নিরাপত্তা সরকারের কাছে আবেদন করেছি। তোমরা কারা? একজন বলল তোর বাপ। তিনি বুঝলেন, চুপ করে থেকে বললেন আগামীকাল নির্বাচন হবেই- তোমরা আমাকে মেরে ফেললেও হবে বলে তিনি অফিস ত্যাগ করলেন। এবং নির্বাচনের আগের রাতেই সেই— সময় দুইজন ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি শুনা মাত্রই সেই রাতে ছুটে গেলেন এবং বিকেলে ফিরলেন নির্বাচন শেষ করে। জাসদ জিতেছিল। উনার সাহসের পুরস্কার তিনি পেয়েছিলেন। কি ভাবে তা বলছি: বাবা নাগপুর হিন্দি কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ভারত সরকারের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেলেন। তিনি যেদিন ফ্লাই করলেন ঠিক তার এক ঘণ্টা পরে- বেশ কয়েকটি পত্রিকা অফিস থেকে কল এলো। আমি তখন বাসায়। প্রতর্ক্যেই জিজ্ঞেস করছে, স্যার কি ভারত চলে গেছেন, তিনি তো এখন আর উপাচার্য নেই? আমি বললাম আমি এবিষয়ে কিছুই জানি না। যাই হোক, খবরটি সত্য যখন জানলাম তখন আমার একটি কথাই মনে হয়েছিল, একটি স্বাধীন দেশের এতো স্বাধীনতা? আমার বাবা নাগপুর হিন্দি কনফারেন্স শেষ করে দিল্লীতে যখন পৌঁছুলেন তখন তিনি জানতে পারলেন জনাব, এ। আর মল্লিকের কাছ থেকে, তিনি আর উপাচার্য নেই। আমার মনে হয় বাবা ও সেই সময় নিশ্চয়ই অবাক হয়েছিলেন,একটি স্বাধীন দেশের এতো স্বাধীনতা? যাই হোক সেদিন দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়য়ের উপাচার্যর সঙ্গে উনার একটি মিটিং ছিল। বাবা উনাকে ফোন করে বলেন, আমার পক্ষে আপনার সাথে দেখা করা সম্ভব হচ্ছে কারন আমি এখন আর উপাচার্য নই। আমাকে না জানিয়েই আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়য়ের উপাচার্য কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, আপনি আমার কাছে উপাচার্য পদের বলে আসছেন না, আপনি সৈয়দ আলী আহসান, এটাই অনেক বড়। আপনি আসুন। আমরা সাহিত্য নিয়ে আলাপ করব। এরপর বাবা গেলেন এবং লজ্জিত হলেন যখন দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়য়ের উপাচার্য আলাপ শেষে বললেন, কি দেশ স্বাধীন করলে যেখানে, আপনি একজন বিশ্ব বিখ্যাত মানুষ যার সম্মান তোমাদের স্বাধীন দেশের এতো স্বাধীনতায় ক্ষুণ্ণ হল।
( আমার শারিরক অসুস্থতার জন্য ব্লগে আমি একেবারেই অনিয়িমিত হয়ে পরেছি।) ক্ষমা করবেন।
৭টি মন্তব্য
নীহারিকা
স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা একটি গোষ্ঠী খর্ব করেই চলছে। আর এর জ্বলন্ত উদাহরণ আপনার বাবার ঘটনা। স্বাধীন দেশে যা খুশি তাই করবো একে স্বাধীনতা বলে না।
আপনি ভালো থাকবেন। সুস্থ হয়ে ব্লগে আসুন।
শুভকামনা।
ইঞ্জা
আমার প্রশ্ন, এই দেশ কবে স্বাধীন ছিলো?
অপার্থিব
এটা রাষ্ট্রের বা সরকারের চরিত্রগত সমস্যা। স্বাধীনতার একটা মুল উদ্দেশ্য সুষ্ঠ গণতন্ত্র অর্জনের ব্যর্থতা থেকেই এই জাতীয় সমস্যা তৈরী হয়।
ছাইরাছ হেলাল
আপনি না বললে এমন করে জানা হতো না।
আপনার সুস্থতা অবশ্যই কামনা করি।
নীলাঞ্জনা নীলা
স্বাধীনতা? দেশ কী আদৌ স্বাধীন?
সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন।
জিসান শা ইকরাম
স্যার অধ্যাপক আলি আহসান আপনার পিতা! শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আপনার পিতাকে। উনি আমার প্রিয় একজন ব্যাক্তিত্ব।
একটি অপ্রকাশিত ইতিহাস আপনি প্রকাশ করলেন।
কিছু উদ্ভট স্বাধীনতা স্বাধীনিতাকে ক্ষুন্ন করে দেয়।
ধন্যবাদ এমন লেখা দেয়ার জন্য।
দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
শুন্য শুন্যালয়
দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই উপাচার্য কী এখন বেঁচে আছেন? হয়তো নয়। তাহলে আমার দেশে তাকিয়ে দেখবেন তিনি স্বাধীনতা কাকে বলে। আমি লজ্জিত।
সশ্রদ্ধ সালাম আপনার সম্মানীয় পিতার জন্য।
আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন দ্রুত, এই প্রার্থনা করছি।