মানুষ মাঝেমধ্যে অভ্যাসের দাস হয়ে যায় …
সামনে পরীক্ষা, বেশ মনযোগ দিয়েই পড়ে যাচ্ছে ফারিহা। পড়ার মাঝেই বারবার চোখ যাচ্ছে মোবাইলটার দিকে ! প্রতিদিন এই সময়টাতেই তো তাকে ফোন দিতো রাফি। কি থেকে কি হয়ে গেলো তাদের মধ্যে … ! কি সুন্দরই না ছিল সেই দিনগুলো। দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার।
মোবাইল হাতে বসে আছে রাফিও। ব্রেকআপ হয়েছে মাসখানেক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরেও তার অভ্যাসটা যাচ্ছে না। আগে এই সময়টাতে তার সাথে ফারিহার কথা হতো। এখনও সে এই সময়টা মোবাইল হাতে নিয়ে কাটিয়ে দেয়। এই বুঝি মিসকল আসলো … !
পড়ায় মন দিতে পারছে না ফারিহা। বসে বসে রাফির কথাই ভাবছে সে। গতদিন হটাত দেখেছিল তাকে। কেমন শুকিয়ে গেছে ! নিশ্চয়ই খাওয়া-দাওয়া করে না ঠিকমত। ছেলেটার এই এক সমস্যা। কত বার যে বলেছিল ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করতে ! ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠলো … এইবার আচ্ছামত বকতে হবে – ভেবে ফোনটা উঠাতে গিয়ে থেমে গেলো সে। ফোন দিয়েছে তার বেস্ট ফ্রেন্ড, রীতি। রাফির ফোন না।
ফোনটা হাতে নিয়ে বসেই আছে রাফি। গত কয়েকদিন ধরে খুব ইচ্ছা করছে ফারিহার ভয়েসটা শুনতে। কিন্তু অদ্ভুত কারণে ফোন দিচ্ছে না। প্রিয় মানুষটার উপরে তীব্র অভিমান, সহজে কি আর দূর হয় ! অনেক উসখুস করতে করতে ফোনটা দিয়েই দিলো … !
আবার ভাইব্রেট … ” কে দিলো ফোন ? ” – বেশ বিরক্তি নিয়েই তাকালো ফারিহা।
সাথে সাথে স্থির হয়ে গেলো সে …
কাঁপা কাঁপা হাতে রিসিভ করলো …
” হ্যালো! ”
পরের দুইটা মিনিট দুপাশ থেকে কেবলই নিঃশ্বাসের শব্দ শুনলো তারা একে অপরের …
এরপরে আর চুপ করে না থাকতে পেরে ফিসফিসিয়ে আবার ফারিহা বললো,
” হ্যালো ! ”
” কেমন আছো ? ” – বেশ কিছুক্ষণ পরে বললো রাফি।
এই ” কেমন আছো ” কথাটা তীব্র আবেদনময়ী। খুব কাছের কেউ একজন যদি খুব মোয়ালেম স্বরে জিজ্ঞেস করে তাহলে সব অভিমান দূরে যেতে বাধ্য … !
” আমি কেমন আছি সেটা দিয়ে তোমার কি ? নিজের কোন ঠিক নাই, কিছু নাই। খাওনা দাওনা … নিজের খবর নাই আসছে আমি কেমন আছি জানতে … ! ” – এক নিঃশ্বাসে জমানো রাগটা ঝেড়ে ফেললো সে।
– তুমি নেই আমার জীবনে আর আমি কি করে ঠিক থাকি ?
– ইশ ! ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল হচ্ছে, না ?
– তুমিই তো শিখাইসিলা !
– তোমারে এরপরে সামনে পাইলে আমি পিটামু।
– ও আচ্ছা। তারমানে তুমি আবার পিটাইতে চাও আমাকে ?
– হুম।
– আবার ফিরে আসো আমার জীবনে … কথা দিচ্ছি যত ইচ্ছা পিটাতে দিবো।
– বদমাশ ! আচ্ছা, তুমি কেন আমাকে ভুলতে পারো না ? আমি কেন এত স্পেশাল তোমার কাছে ?
” তোমার নাম আমি কাগজে লিখি নি যে মুছে যাবে
তোমার নাম আমি পাথরে লিখি নি যে ক্ষয়ে যাবে
তোমার নাম আমি লিখেছি হৃদয়ে সে জন্য চিরকাল রয়ে যাবে ! ”
– বাহ ! ভালই তো মিলাইসো … !
– পছন্দ হইসে ?
– না একদম ফালতু।
– আমি জানি !
– হইসে … কালকে আমার পরীক্ষা। পড়তে দাও।
– ওকে। টাটা …
– আগে যা হইসে তার জন্য সরি।
– ওসব কথা থাক না !
– ওকে। বায়, গুড নাইট।
ফোনটা কেটে যায়। অদ্ভুত শান্তিতে কল্পনার সমুদ্রে ভেসে চলা দুটি মন পাড়ি দেয় কঠিন বাস্তবতার পথে। তবে তাদের এখন ভয় নেই। কারণ তারা একলা নয়। খুব বিশ্বস্ত একটা কিছু আছে তাদের সাথে। অদ্ভুত কিন্তু প্রচণ্ড একটা শক্তিশালী কিছু আছে তাদের উপরে ছায়া হয়ে … !
১৬টি মন্তব্য
খেয়ালী মেয়ে
মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষের ছোট্ট একটা মিসকলও মন ভালো করে দেয়…দুই অক্ষরের হ্যালোও সব অভিমান ভুলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে……ফারিহা আর রাফির সামনে পথচলা শুভ হোক…..
ফ্রাঙ্কেনেস্টাইন
আসলেই …
ধন্যবাদ 🙂
অনিকেত নন্দিনী
আহা! পৃথিবীর তাবৎ সম্পর্কগুলোই যদি এমনি করে জোড়া লেগে যেতো!! ;?
ফ্রাঙ্কেনেস্টাইন
… তবে কতই না ভালো হতো 🙂
শুন্য শুন্যালয়
আপনার লেখাটা পড়ে একটা স্মৃতি মনে পড়লো, যাই হোক সে কথায় যাচ্ছিনা। এমন মন ভালো করিয়ে দেয়া ফোনকলই তো চাই।
ফ্রাঙ্কেনেস্টাইন
মাঝেমধ্যেই আমাদের এমন কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যায় 🙂
হিলিয়াম এইচ ই
আমার সে ফোনকল আসবে না গো!!! -_-
ফ্রাঙ্কেনেস্টাইন
অনেকেরই আসে না 🙁
রিমি রুম্মান
অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে পরীক্ষা দিক। -{@
ফ্রাঙ্কেনেস্টাইন
-{@ :p
রাসেল হাসান
খুব ভালো লাগলো। 🙂
ফ্রাঙ্কেনেস্টাইন
ধন্যবাদ -{@ 🙂
সিকদার
আমারে কেউউউউউউউউউউউউ মিস কল দ্যায় না ;(
ফ্রাঙ্কেনেস্টাইন
কাইন্দেন না 🙁 আমারেও কেউ দেয় না ;(
নীলাঞ্জনা নীলা
ইস আমাদের সময়ে সেলফোন থাকতো যদি :p
ফ্রাঙ্কেনেস্টাইন
তবে এমন ঘটনা ঘটার স্বপ্ন দেখতেন নাকি ? :p :D)