অনেক বছর আগের কথা। তখনো মোবাইলে যোগাযোগ তেমন একটা প্রসার লাভ করেনি। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে চিঠিপত্রই ছিল অন্যতম মাধ্যম। ডাক পিয়ন চিঠি দিয়ে যায়। কিন্তু এ ঠিকানায় চিঠির প্রাপক থাকে না। এমনকি কখনো ছিলও না। তাই চিঠি ডাক পিয়ন এর কাছে ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ক্রমাগত ভুল ঠিকানায় চিঠি আসতেই থাকে। কাছাকাছি কিছু বাসায় খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি এই নামে কেউ থাকে কিনা। প্রাপক কে খুঁজে পাওয়া যায় না। ভুল ঠিকানায় চিঠি আসতেই থাকে।
একদিন দেখতে পাই পিয়নের কাছে ফেরত দেওয়া চিঠি রাস্তায় পড়ে আছে। তারমানে ফেরত দেয়া চিঠি পিয়ন রাস্তায় ফেলে দিয়ে যেত। চিঠিটি কুড়িয়ে নিয়ে এলাম। যদিও কারো চিঠি খুলে পড়া অন্যায়। সে অন্যায় কাজই করলাম। প্রেরকের ঠিকানা লেখা ছিল। খামটি না খুলেও চিঠি ফেরত দেওয়া যেত। তবু চিঠিটি পড়ে নিলাম। অজান্তেই চোখ ভারী হয়ে এলো। দিদির কাছে লেখা ছোট বোনের চিঠি। যার সাথে অনেকদিন যাবত পরিবারের যোগাযোগ নেই। চিঠি পড়ে বুঝতে পারলাম ছোট বোনটির বাবা নেই মাকে নিয়ে তার সংসার। সামনে তার এস সি পরীক্ষা। দিদির কাছে তার ছোট্ট আবদার। ” দিদি আমাকে একটি ঘড়ি কিনে পাঠাবি। জামাইবাবুকে নিয়ে বাড়িতে আসিস।” চিঠির ভাষার আকুতি বা অনুভূতি যাই বলি না কেন। ছোট বোনের সেই আকুতি শব্দের মালায় তুলে ধরা সম্ভব নয়।
খুব খারাপ লাগছিল। ইচ্ছে করছিল একটি ঘড়ি কিনে পাঠিয়ে দেই। জীবনের কিছু কিছু ইচ্ছেকে বাধা দিয়ে থামিয়ে দিতে হয়। চিঠি, চিঠির খাম ও নতুন একটি চিঠি লিখে উক্ত ঠিকানায় রেজিস্টার ডাকযোগে পাঠালাম। জানিয়ে দিলাম এতোদিন সে ভুল ঠিকানায় চিঠি লিখে আসছে। কিছুদিন পর তার ঠিকানা থেকে আবার চিঠি আসলো। তবে ভুল ঠিকানায় নয়, ধন্যবাদ জানিয়ে। সে জানালো দিদির ঠিকানা পেয়েছে। তাঁর কাকা তাকে ঘড়ি কিনে দিয়েছে। এবার তার আবদার নতুন দিদির কাছে। আসছে পূজায় তাদের বাড়ি যেতে হবে। তার বাড়ি ছিল রংপুর। ইচ্ছে করলেই যাওয়া সম্ভব নয়। তবু তাকে জানালাম কখনো যদি সময় হয়, তাহলে এক সময় যাবো। মাঝে মাঝে আমাকে চিঠি লিখতো। আমি যথাসম্ভব উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতাম। হঠাৎ কেন জানি কিভাবে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তার আর কোন খবর পাইনি। হয়তো ব্যস্ততার কারণে তার চিঠির উত্তর দেয়া হয়নি। মাঝে মাঝে তার কথা মনে হয়। জানিনা সে কেমন আছে কোথায় আছে। যেখানেই থাকুক ছোট বোনটি যেন ভালো থাকে।
১৮টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
কত কিছুই না ঘটে আমাদের জীবনে, এমন করে কত কিছুই না ঘটে ।
হালিমা আক্তার
কত কিছু ঘটে বলেই তো জীবন বৈচিত্র্যময়। শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
আলমগীর সরকার লিটন
সুন্দর লেখেছেন হালিমা আপু এখন আর সেই ডাকপিয়ন নেই
হালিমা আক্তার
অনেক অনেক ধন্যবাদ।ডাক পিয়ন নেই। সেই অনুভূতি ও নাই।
মোঃ মজিবর রহমান
চিঠির পড়ে অত্যান্ত মনের গভীর থেকেই ধন্যবাদ। সম্পর্ক হয়েই যায়। যার রেশ থাকে আজীবন। ধন্যবাদ।
হালিমা আক্তার
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চিঠির যুগে ফিরে গেলাম। ছোট বোনের আকুতি বেশ ভালোই অনুভব করতে পারলাম। এভাবেই তখন অচেনা, অজানা সম্পর্কে জড়িয়ে পরতো । খুব খুব মিস করি সেই সময়টাকে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সেই সময়ের আবেগটাকে সামনে আনার জন্য।
হালিমা আক্তার
আসলেই সেই সময়টা কতনা সুন্দর ছিল। আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
জিসান শা ইকরাম
বড় অদ্ভুত মানুষের মন, জীবন।
কখন কোথায় মায়ায় জড়িয়ে যায়, কিছুই বোঝা যায় না।
চিঠির ছোট বোন যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক।
শুভ কামনা।
হালিমা আক্তার
এই অদ্ভুত মায়া আছে বলেই জীবন আজও এত সুন্দর। ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
আরজু মুক্তা
হালিমা আপা, আমার এখন ইচ্ছে করছে সেই চিঠির মানুষ হয়ে আপনাকে লিখতে।
কতো কিছু যে ঘটে। আর অবলীলায় মনের গহীনে জায়গা করে নেয়।
সুন্দর এবং মন ছোঁয়া অনুভূতি।
শুভ কামনা
হালিমা আক্তার
সত্যিই আপা। চিঠি লেখার সে দিন গুলোর কথা ভুলে যায় না। জীবনের ছোট ছোট কথা ছোট ঘটনা কখন যে মনের গহীনে জায়গা করে নেয়। অনেক ধন্যবাদ আপা সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
রোকসানা খন্দকার রুকু
চিঠি আসলেই অন্যরকম একটা অনুভূতি যোগাতো। খুব ভালো লাগলো জেনে যে সে তার দিদিকে খুঁজে পেয়েছে।
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো।
হালিমা আক্তার
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
কিছু সম্পর্ক মানুষকে এভাবেই বেঁধে রাখে
অপরিচিত হয়েও যেন আত্মার আপন।
তাইতো সারাজীবন অন্দরে জেগে থাকে এক সত্যের আলোয় গড়া অমলিন তারা।
মুগ্ধতায় শুভ কামনা রেখে গেলাম নিরন্তর।
হালিমা আক্তার
জীবন চলার পথে কিছু স্মৃতি এভাবেই মনের আঙিনায় গেঁথে থাকে। শুভ কামনা।
উর্বশী
চিঠির যুগের কথা আসোলেই ভুলে যাওয়ার নয়।একটি চিঠিতে পারে একটি সম্পর্কে বেধে ফেলতে। কখন যে মনের মাঝে আসন পেতে বসে যায় আপন হয়ে।সুন্দর অনুভূতির প্রকাশ। অফুরান শুভ কামনা রইলো।
হালিমা আক্তার
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।