গতকাল রাতে তেল, গ্যাস এবং দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের বিপর্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তা(!) করতে করতে ঘুম আসতে দেরি হয়েছিলো বিপ্লবীর। তাই সকালে বউয়ের ঝাড়ি খেয়ে ঘুম ভাঙল। ছেলে পড়াশোনা করে একটি স্বনামধন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে, স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাই বাসায় নাস্তা না করেই নিজের নতুন গাড়িতে বসিয়ে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসলেন তিনি।
আসার পথে একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে ঢুকলেন বিপ্লবী। হট ডগ আর চিকেন বার্গারে কামড় দিয়ে বাইরে রাস্তায় তাকাতেই দেখলেন কিছু শ্রমিক কড়া রোদে ঘেমেনেয়ে ঠেলাগাড়ি চালিয়ে মালামাল বহন করছেন। শরীরে আগুন ধরে গেল বিপ্লবীর। এই দেশে শ্রমিকেরা ভালো নেই। চিকেন বার্গার কামড়ে ধরেই নিজের এনড্রয়েড স্মার্টফোনটি বের করলেন তিনি। কিবোর্ডে ঝড় তুলে দিয়ে দিলেন শ্রমিকের দূরবস্থা এবং অধিকার নিয়ে একটি জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস। ঘটে গেলো দিনের প্রথম বিপ্লব!
বিপ্লবের প্রথম অংশ শেষ করে গাড়িতে করে অফিসের পথে রওনা দিলেন বিপ্লবী। আজ অনেক গরম। ড্রাইভারকে বললেন এসিটা বাড়িয়ে দিতে। ল্যাপটপটা অন করলেন বিপ্লবী এইবার ব্লগে কিছু লেখা দরকার। মাও, লেনিন, স্টালিন এবং আরও নানা খাসা থিওরি মিশিয়ে আরও একটি আগুণঝরা লেখা পয়দা করলেন বিপ্লবী। ঘটে গেলো দিনের দ্বিতীয় বিপ্লব!
অফিসে এসে কাজের ফাঁকে আমেরিকান এম্ব্যাসির ওয়েবসাটে একটু ঢুঁ মারলেন বিপ্লবী। আমেরিকায় সিটিজেনশিপ পাওয়ার কাজটা বেশ এগিয়েছে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। এইবার ফেইসবুকে নারীর অধিকার নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি দিনের তৃতীয় বিপ্লবটি ঘটিয়ে ফেললেন!
বাসায় এসে একটু এনজেলিনা জোলির “GIA” এবং কেট উইন্সলেটের “The Reader” মুভি দুইটার বিশেষ সিনগুলো দেখে সামান্য পরিমাণ বিনোদন লাভ করলেন বিপ্লবী। একটু গোপন সাইটেও দেখলেন সানি লিওনের কোন নতুন ভিডিও আসলো কিনা। তারপর তেল, গ্যাস, এবং বাকশালী আওয়ামিলীগের ভারতকে দেশ বেঁচে দেওয়ার প্রতিবাদের ফেইসবুকে একটি তুখোড় স্ট্যাটাস দিয়ে দিনের চতুর্থ বিপ্লবটি ঘটিয়ে ফেললেন তিনি!
রাত হয়েছে। বউ ঘুমোতে ডাকছে বিপ্লবীকে। এইবার বউয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ঘুমোতে গেলেন। সেখানে ফ্যামিলি প্ল্যানিং এবং আর একটি বাচ্চা কবে নেবেন তা নিয়ে কিছুক্ষণ বউয়ের সাথে আলোচনা করে আরও একটি বিপ্লব ঘটানোর প্রস্তুতি নিলেন তিনি। এই বিপ্লবের কথা অনুক্তই থাকুক। কিছু কথা থাক না গোপন! কিছু বিপ্লব ঘটুক অগোচরে!
৭টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
হা হা হা।। নয়া বিপ্লবের ঝড় বয়ে যায় এখন ।।
দারুন দারুন… নিয়মিত লেখোনা কেনো এখানে দাদা?
খোঁচা বেশ পছন্দ হইছে… 🙂
লীলাবতী
বিপ্লবীদের বিরুদ্ধেই আসলে বিপ্লব করা উচিত । গোপন বিপ্লবের কথা না বলাই ভালো 🙂
আজিম
হাঁ, এরকম বিপ্লবী-তেই ভরা আমাদের দেশ । তবে তেল-গ্যাস-জ্বালানী বিষয়ে বলা হয়েছে বলে এই বিষয়ের আন্দোলনরত মানুষগনের কথা বলা হয়নি বলে আমি মনে করি । যদি তা না হয় অর্থাৎ এই বিষয়ের আন্দোলনরত আনু মুহাম্মদ অথবা মোঃ শহিদুল্লাহ সাহেবের কথা পরোক্ষে বলা যদি হয়ে থাকে, তবে আমি বলবো, ভুল । তাঁরা এরকম নন ।
আর একটি কথা, অধিকাংশ বিপ্লবীই আলোচিত পোস্টের মতো হলেও এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কারন জীবন বিলিয়ে দেওয়ার মতো বিপ্লবীও কিন্তু এদেশে আছে ।
জিসান শা ইকরাম
বিপ্লব শব্দটি একসময় শ্রদ্ধার সাথে বলা হতো। আর আজ তা হয়ে গিয়েছে মুরি চানাচুরের মত সহজ লভ্য।
ভালো লিখেছে।
প্রজন্ম ৭১
দু একজন ব্যাতিক্রম হলেও প্রায় সব বিপ্লবীই এমন। (y)
সিনথিয়া খোন্দকার
চরম হইছে। দিনে তিনবার করে বিপ্লব করেন এমন বিপলোভী ই তো চাই। 😀
সিনথিয়া খোন্দকার
চরম হইছে (y) । দিনে তিনবার করে বিপ্লব করেন এমন বিপলোভী ই তো চাই। 😀