পরম করুনাময় আল্লাহ তা আলার আমাদের মুসলিম জাতিকে দুটি আনন্দগন দিন দিয়েছেন।একটি ঈদুল ফিতর আর একটি ঈদুল আজহা অথাৎ একটি রোজার আর একটি কোরবানীর ঈদ।দুটোই মুসলমানদের সবচেয়ে প্রিয় আনন্দগন দিন।যখন রোজা আসে তখন কিছু অনিয়মিত মুসলমানরা রোজার মাসে রোজা রাখতে ব্যাস্ততায় এমন ভাব যে নিয়মিত মুসলমানরাও অবাক হয় ,ভালো কথা তারা আল্লাহ পথে এসেছেন কিন্তু তারা রোজা যাওয়ার সাথে সাথে যে সব ইবাদত ভুলে যায় সেটা কি?সেটা কি ছিল তার বাৎসরিক লোক দেখানো ইবাদত?নাকি অন্য কিছু হাসিলের উদ্দ্যেশ্য।আমি আর সে দিকে যাবনা ইবাদত যার যার জবাবও তার তার।
ছোট বেলায় যখন ঈদ আসত তখন ঘুম থেকে খুব ভোরে উঠে চলে যেতাম শীতলক্ষ্যার নদীতে দল বেধে নতুন লাক্স সাবান নতুন লুঙ্গি নিয়ে।মনের আনন্দে সাতরিয়ে বাবার হাতটি ধরে চলে যেতাম ঈদঁ গা মাঠে ঈদের নামাজ পড়তে।নামাজ শেষে কোলাকুলি করে বাসায় ফিরে কিছু একটা ঈদের রান্না খেয়ে বেড়িয়ে পড়তাম বকসিসের খোজে বাড়ী বাড়ী।ঈদ উপলক্ষ্যে নতুন চটপতির দোকান হতে চটপতি খেতাম অন্যকেও খাওয়াতাম।রাতে টিভি দেখা।তখন প্রতি ঈদে বিটিভিতে বরেণ্য ব্যাক্তিত্ত্ব আমজাদ হোসেনের ঈদ স্পেশাল নাটক ” জব্বর আলী”হতো।“টাকা দাও দুবাই যামু”ব্যাঙ্গা নামক আর এক বরেণ্য ব্যাক্তিত্ত্ব মমতাজ আলীর চরিত্রের কথা কার না জানা।আর শ্রদ্ধেয় আমজাদ হোসেনের “বাত্তি নাইরে বাত্তি নাইরে কবরে”সেই তজবি হাতে বাক্য আজও হৃদয়ে দাগ কাটে ।তখন ঐ বিটিভিই ছিল বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম।সবাই দেখত খুব আগ্রহ করে।টিভি দেখার পোক ছিলাম এ বাড়ী ঐ বাড়ীতে ধন্যা দিতাম এমন কি কাজের বিনিময়ে কোন টারজান,বাইনিক ওমেন,সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান,যদি কিছু মনে না করেন(ম্যাগাজিং অনুষ্ঠান)দি ফল গাই যখন হত।এখন দেখার সংখ্যার চেয়ে দেখানোর সংখ্যাই বেশী।তাই কোন চ্যানেলের কোন কিছুই ঠিকমত দেখতে পারিনা বিজ্ঞাপনে হারিয়ে যাই চ্যানেল টু চ্যানেলে।এখন সেই ঈদ গা নেই ঈদের নামাজ পড়তে হয় মসজিদে মসজিদে।হুজুর কিংবা লোকাল নেতাদের কিছুতেই এক করা যায়না যে ঈদ গায়ে ঈদের নামাজ পড়তে।এখানে ঈদের নামাজ শেষে যে টাকা বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা,হুজুরদের জন্য তোলা হয় তাও এ ক্ষেত্রে বাধা বলে আমার ধারনা।
কোরবানী ঈদে একটু ভিন্ন ইমেজ।বিশেষ করে গরু নিয়ে কৌতুহল ছিল সবচেয়ে বেশী।কোরবানীর পর পুরো দিনটাই চলে যায় গরুর পিছনে।ছোট বেলায় বেড়িয়ে পড়তাম সিনেমা দেখতে ঈদের নতুন ছবির প্রথম শো দেখতে হবে যে করে হউক।ব্লেডের আচর খেয়েও টিকেট কেটেছি।আগের মত এখন আর ঈদের ইমেজ নেই।এখন খোলা জমির পরিমান কমে ইট পাথড়ে বসত ভিটা হচ্ছে।ইট পাথরের সাথে মানুষের মনগুলোও কঠিন পদার্থে রূপ নিয়েছে।আগের মত পাড়া প্রতিবেশীদের তেমন একটা খোজ আর নেন না।
রোজার ঈদের আগের রাত্র যাকে তথাকথিত আমরা চাদঁ রাত বলি অনুমানিক ১১টা হবে পাশের এক পরিচিত বাসার পাশ দিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ ঠুং ঠাং শব্দ পেয়ে ঘরে প্রবেশ করি আমাকে দেখে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চুপ হয়ে যায়।অভাবের সংসার দিন আনে দিন খায় স্বামী-স্ত্রীর ভাব দেখেই কিছুটা আচ করে ওদের ৬ বছর আর ৪ বছরের বাচ্চা দুটোকে ডাক দিয়ে জানতে চাইলাম ঈদে তাদের জন্য আব্বু কি এনেছে।প্রশ্ন করার সাথে সাথে স্ত্রীটি অশ্রুভেজাঁ নয়নে বাহিরে উঠোনে চলে যায়।বাচ্চা দুটোর নয়ন অশ্রুসিক্ত।বাচ্চা দুটোকে কাছে নিয়ে দুজনের হাতে কিছু টাকা গুজে দিয়ে ভারাক্রান্ত নয়ে বাসায় চলে আসি।
১৫টি মন্তব্য
নীহারিকা
সত্যি সময় বদলেছে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বদলেছি আমরাও।
মা মাটি দেশ
সময়ের কাছে হার মানতে হয়।এটাই সত্য।ধন্যবাদ।
আদিব আদ্নান
এমন ঈদের খবর আমাদের রাখা হয় না ।
ঈদ শুধু আনন্দের ই না অনেক দুঃখের ও হয় ।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
ভালো লেগেছে
ছোট বেলার ঈদ টা এমনই ছিল প্রায় ।
ভালো লিখেছেন ।
শুভ কামনা ।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ।
শিশির কনা
ভালো লেগেছে ভাই ঈদকে নিয়ে আপনার একান্ত অনুভূতি ।
মা মাটি দেশ
well come
স্বপ্ন
টাকা দাও দুবাই যামু , সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান , বায়োনিক উওম্যান এর কথা মনে পরে গেল। স্মৃতিতে নাড়া দেয়া লেখা ভালো লেগেছে ।
মা মাটি দেশ
অনেক ধন্যবাদ।
খসড়া
ঈদ আগে যেমন আনন্দের ছিল এখনও তেমনি আছে। আমাদের সময় আমরা যে ভাবে সময় কাটাতাম তা সেই সময়ের সর্বচ্চ আনন্দ। এখনকার বাচ্চারা যে ভাবে কাটায় সেটা তাদের সর্বোচ্চ আনন্দ। আমরা ইচ্ছে করলে বড় জোর স্মৃতির পাতা খুলে খুলে আমাদের সময়গুলি দেখতে পারি কিন্তু সেই আনন্দকি পাব? পাব না কারন বয়সটাই নাই। তখন ছিলাম বাবা মার সন্তান কোন দায়িত্ব নেই এখন নিজেই যে বাবা /মা অথবা পরিবারের অভিভাবক হচ্ছি।
তাই আমি বলি ঈদ বদলায় নি বদলেছি আমরা আমাদের বয়স। আমাদের সন্তানেরা ও বলবে আমাদের ছেলেবেলা এমন ছিল এখন কি এই সব।
খুব সুন্দর লিখেছেন। পোস্ট ঝরঝরে ও পরিষ্কার। পড়তে পড়তে আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেছিলাম। ওপরেকথাগুলি নিজেকে বলে নিজেকে সান্তনা দিলাম। ভাল থাকুন।
মা মাটি দেশ
অবশ্য সমালোচনা করবেন।তবে আগে ঈদের আনন্দ ছিল এনালগ এখনকার হলো ডিজিটাল।ধন্যবাদ।
বনলতা সেন
আলোর নীচে অন্ধকার , তবুও ভাল কেউ একজন আলো ফেলেছে ।
মা মাটি দেশ
কেউ না কেউ আলো নিয়ে আসবেই সৃষ্টি কর্তা কাউকে নিরাশ করেননা।
তৌহিদ
ছোটবেলার ঈদের স্মৃতি মনে পড়ে গেল আপনার লেখা পড়ে।