
সবুজ ফোন করে খবর দিলো,
‘স্যার, কাজটা হয়ে গেছে।’
‘হয়ে গেছে? ঠিকাছে, রাখো।’
শফিক সাহেব ড্রয়িং রুমের দিকে এগুলেন। বিশাল বড় ড্রয়িং রুমের একপাশে দামী সোফা শোভা পাচ্ছে, তার উল্টো দিকে দেয়ালে টাঙানো ঝকঝকে টিভি। রিমোটটা হাতে নিয়ে টিভিটা ছাড়লেন৷ একের পর এক বাংলাদেশী চ্যানেল ঘাটতে লাগলেন, কোনটাতে খবর হচ্ছে! কিন্তু এখন বাজে রাত একটা চল্লিশ। এমন সময় খবর হবে না, হয়ত আরও বিশ মিনিট পর হবে। তাছাড়া সংবাদকর্মীদের কাছে খবরটা পৌঁছাতে হবে তো? এই বিশ মিনিট কি করবে ভেবে পাচ্ছেন না শফিক সাহেব। যখন তিনি কোন কিছু ভেবে না পান, তখনই ইরার কথা মাথায় আসে। এবারেও তাই হলো। একবার ভাবলেন ইরাকে একটা ফোন দেবেন, আরেকবার ভাবলেন, এত রাতে ফোন করাটা ঠিক হবে না। ভেবে ভেবে পাঁচ ছ’ মিনিট অতিবাহিত করলেন। কিন্তু কিছুতেই ইরাকে মাথা থেকে তাড়াতে পারছেন না।
ইরা রাতের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ খবরের কাগজ পড়ে তারপর ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। চেনা নাম্বার…
:হ্যালো
:ইরা…
:শুনতে পাচ্ছি
:এত রাতে তোমাকে বিরক্ত করতে চাইনি। কিন্তু কিছুতেই তোমাকে তাড়াতে পারছিলাম না!
:আমাকে তাড়াবে মানে? কোথায় আমি?
:আমার মাথার ভেতর।
:আমরা যখন মাথা থেকে কোনকিছুকে জোর করে তাড়াতে চাই, তখন তা আরও চেপে বসে।
:তুমি এত সুন্দর করে কথা বলো, তাইতো আমি মুগ্ধ হয়ে শুনি।
আরও কিছু টুকটাক কথা হলো।
এমন সময় হঠাৎ চোখ গেলো ঘড়ির দিকে। ঠিক দুটো বাজে। শফিক সাহেব তড়িঘড়ি করে ফোনটা কাটলেন। চোখ রাখলেন বাংলা চ্যানেলে। একটার পর একটা চ্যানেল পাল্টাচ্ছেন আর সংবাদ শিরোনাম শুনছেন। কিন্তু কোথাও পাচ্ছেন না কাঙ্খিত খবরটি। অবশেষে একটি চ্যানেলে স্থির হলেন। সেখানে দেখাচ্ছে ‘এই মাত্র পাওয়া… ‘
‘এইমাত্র আমাদের হাতে একটি বিশেষ সংবাদ এসে পৌঁছেছে। সখীপুর বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। আগুনে পুড়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি। ভিটেমাটি ও সর্বশেষ সঞ্চয়টুকু হারিয়ে বস্তিবাসী এখন দিশেহারা। ফায়ার সার্ভিসের ১৪ টি ইউনিট আগুন নেভাতে চেষ্টা করছে। থেকে থেকে আগুন জ্বলে উঠছে। সহায় সম্বল হারিয়ে বস্তিবাসী নেমেছে পথে।…’
এই খবর দেখার পর শান্তিতে ঘুম যান শফিক সাহেব।
ভোর পাঁচটায় হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। শফিক সাহেব বিরবির করে বলছেন : এই মাঝরাতে আবার কে ফোন দিলো? ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলেন ইরা! তিনি নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছেন না। তবুও ফোনটা ধরলেন…
: আমি কি স্বপ্ন দেখছি? মাঝরাতে তুমি?
:মাঝরাত নয়, ভোর হতে একটু বাকি। এখন ফজরের সময়। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি এই সময়ে ঘুম থেকে উঠি।
:আচ্ছা বাবা ঠিকাছে। আমার ভুল হয়ে গেছে। কি বলবে বলো। এমনিতেই রাত করে ঘুমিয়েছি।
: রাত তো হবেই। নইলে অন্যের ক্ষতি করবে কি করে?
: মানে? কি বলো তুমি?
:আমি সব জানি। সখীপুর…
:ইরা টিভিতে খবরটা আমিও দেখেছি। কিন্তু বিশ্বাস করো…
:তোমাকে আমি চিনি,তাই নয় কি?
: এখন আমি অনেক বদলে গেছি।
:তোমার মত মানুষেরা কোনদিন বদলায় না। ঐ জমিতে তোমার কোম্পানি শিফট করার কথা না?
:বিশ্বাস করো,আমার প্রতিদ্বন্দ্বী রহমান সাহেব, ওনি হয়ত আমার ওপর দায় চাপানোর জন্য এটা করে থাকতে পারে।
পর্ব-১
চলবে…
১৯টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
সুকোমল ভাবনার অনন্য লেখা।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ আপনাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
শুরু টা ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন শুভ রাত্রি
নীরা সাদীয়া
আশা করছি পরের পর্বগুলোতেও পাশে পাব।
সুপায়ন বড়ুয়া
পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে গল্পের মাধ্যমে বাস্তবতাটা তুলে আনলেন।
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
এস.জেড বাবু
কি বলবো ?
বৃহত্তম স্বার্থে ক্ষুদ্রতম বলিদান না একক স্বার্থে বৃহত্তর কোরবানি?
সমাজপতি আর বিত্তশালীরা এমনি হয়- গল্পটা সামনে এগিয়ে যাক, আমরাও তেমন বলিদানকারী একজনকে চিনতে পারবো।
শুভকামনা
নীরা সাদীয়া
হুম, এটাই সমাজের আসল চরিত্র। দেখা যাক শেষ অব্দি কি হয়। পাশেই পাব এই প্রত্যাশা।
সুরাইয়া পারভীন
শুরুটা চমৎকার লেগেছে। দেখা যাক শফিক সাহেব সত্যিই কিছু করেছে কিনা?
পরের পর্বের অপেক্ষায় শুভকামনা রইলো
নীরা সাদীয়া
পরের পর্বগুলো একে একে পোস্ট করা হচ্ছে। আশা করি পাশেই পাব।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্!
চমৎকার ভাবনার সহিত লেখনী।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ ভাই। শুভ কামনা জানবেন।
জিসান শা ইকরাম
সম্পদের লোভ মানুষকে অমানুষ করে দেয়,
এই ধরনের লোকের সাথে ইরা সম্পর্ক রাখে কেন?
প্রথম পর্ব ভালো হয়েছে,
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
এই ধরনের লোকের সাথে ইরার সম্পর্কটা পরের পর্বগুলোতে আরও খোলাসা হয়েছে। আশা করছি শেষ অব্দি পাশেই পাবো।
রেহানা বীথি
কী ভয়ানক মানসিকতা, বস্তিতে আগুন দেখে শান্তির ঘুম!
ভালো লিখলেন।
নীরা সাদীয়া
এরা এমনি হয়। সম্পদশালীরা লোভী হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।
হালিম নজরুল
বস্তিতে আগুন দেখেও ঘুমানো যায়!
ভাল লিখেছেন।
নীরা সাদীয়া
যায়। তার পেছনের কারনটা পরের পর্বে পেয়ে যাবেন। শুভ কামনা রইলো।
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ।