‘ রাজা লক্ষণ সেন ও বখতিয়ার খলজী’

বাংলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজবংশ শাষন করেছে। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের মতে, যে কোনো রাজবংশের শাষন সময় চার পুরুষের অধীক দেখা যায় নাই। তেমনি বাংলায় পালবংশের পর সেন বংশকে আমরা দেখতে পাই। ধারণা করা হয় পালবংশের অবক্ষয়ের যুগে সেনবংশের উত্থান হয়। সেনরাজারা বাংলার আদিবাসী ছালেন, নাকি বাইরে থেকে এসেছে এ বিষয়ে বিতর্ক আছে। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, সেন বংশীয় লোকেরা পাল রাজাদের অধীনে উচ্চপদে কাজ করতেন। পরে, পাল বংশের দুর্বলতার সুযোগে তারা বাংলার ক্ষমতা দখল করে।

দেখা যায়, সেন বংশে রাজা বিজয় সেন ও বল্লাল সেনের পরঘ রাজা লক্ষণসেন ক্ষমতায় বসেন। রাজা লক্ষণ সেন তার পিতার মৃত্যুর পর প্রায় ৬০ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। লক্ষণ সেনের পিতামহ বেঁচে থাকতে ধারণা করা হয় তিনি তখন সেনাপতি হিসেবে গৌড়, কামরূপ, কলিঙ্গ ও কাশী জয় করেন।
তবে শেষ জীবনে তিনি একের পর এক বিপর্যয়ের সম্মুখিন হন। লক্ষণ সেনের রাজত্বকালে সর্বপ্রধান ঘটনা ছিল তুর্কি সেনাপতি ‘ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজীর বাংলা অভিযান। বখতিয়ার খলজী ছিলেন সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবকের অধীনস্ত একজন যায়গীদার। তিনি চুনার নামক স্থানের যায়গীদারি করতেন।
বখতিয়ার খলজী বাংলা অভিযানের উদ্যোগ নেন। বৃদ্ধ লক্ষণ সেন তার রাজধানীকে তুর্কি আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারেননি। তার কারণ হিসেবে ইতিহাস পড়ে আমরা দেখতে পাই যে, রাজা লক্ষণ সেন ছিলেন একজন সাহিত্যানুরাগ মানুষ। তিনি তার পিতার অসমাপ্ত গ্রন্থ ‘অদ্ভুদ সাগর’ সমাপ্ত করেন। তিনি একজন ভালো যোদ্ধা ছিলেন তার পিতা ও পিতামহের সময়ে। সেই সময়েই তিনি বিভিন্ন রাজ্য জয় করেন। লক্ষণ সেন ধর্মীয় পন্ডিত অর্থাৎ পুরোহিতদের কথা খুবই বিশ্বাস করতেন। তার রাজসভার এক রাজবৈদযজ্ঞ পণ্ডিত ও ভ্রাক্ষণ জ্যোতিষিরা রাজা লক্ষণ সেনকে বলেন, তাদের শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, তুর্কি সেনা কর্তৃক বঙ্গ জয়ের স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে। এবং সে লোক হবে খর্বকায় ব্যক্তি। আর বখতিয়ার খলজী ছিলেন খর্বকায় ব্যক্তি। তার হাত ছিল সাধারণ মানুষের হাতের থেকে প্রায় আধা হাত লম্বা। বখতিয়ার খলজী ঘোড়া বিক্রেতার ছদ্মবেশে ১৮ জন অশ্বরোহী নিয়ে রাজধানী নদীয়া ঢুকে পড়েন। আগে লক্ষণ সেনের সৈন্যরা ভবিষ্যত বাণীর কথা শুনে এবং বখতিয়ার খলজীকে দেখে কোনোরকম শত্রুদের আক্রমনের বিরুদ্ধে না লড়ে পালিয়ে যান। রাজা লক্ষণসেন তখন মধ্যাণ্যভোজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনিও বখতিয়ার খলজীর আক্রমনে কোনো রকম বাধা না দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে নৌকায় চেপে পূর্ব বাংলায় সপরিবারে পালিয়ে যান। তাই একপ্রাকার বিনা যুদ্ধে বখতিয়ার খলজী গৌড়সহ পশ্চিম বাংলা অধিকার করেন। পরে রাজা লক্ষণ সেন পূর্ব বাংলার বিক্রমপুর থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলা শাষন করতে থাকেন। সম্ভাবত ১২০৭ খ্রীঃ তার মৃত্যু হয়।
ইতিহাসের এক অমোঘ নিয়মে বাংলায় সেনবংসের পতন ঘটে।

৯১০জন ৯১০জন
0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ