আসুন সুন্দর ব্যবহার করি .

ইমন ৮ এপ্রিল ২০১৫, বুধবার, ০২:৪২:৫১অপরাহ্ন বিবিধ ১৬ মন্তব্য

বোনের বাসায় যাচ্ছি গুলশানে। হাতে বেনসন সুইচ জ্বলছে। হেব্বি পার্টে অাছি।
রাতে রাজকীয় খানা খাবো, এসি রুমে ঘুমাবো, ভেবেই মন মেজাজ পুরাই টং হইয়া অাছে।
-এই খালি যাবা?
-জ্বি মামা
-রোড নাম্বার ০
রিকশা চলছে। অামি সেইরকম ফীলে অাছি। অাপার বাসায় ঠান্ডা গড়ম পানি রেডি। গিয়েই একটা গোসল দিমু।
তারপর রুমে দরজা দিয়ে হালকা ভলিউমে “শ্রীকান্তে “র গান সাথে কফি খাবো।
হঠাৎ রিকশাটা অাইল্যান্ডের উপরে ওঠে ধপাস করে পরলো। ঝাঁকি খেলাম একটা।
মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে “এই! কি বাল চালাও -_- চোখ নাই?
– মামা অন্ধকারে কিছু দেহি নাই 🙁
– চোখ থাকে কই তোমগর বাল! টাকা দিয়া রিকশায় যাচ্ছি অারামসে যাবো বলে, অার তুমি কিডনি ফাঁটানোর ব্যাবস্থা করছো !বাল্মার !

সে রিকশাটা থামালো। পিছনে ঘুরে অামাকে থাপ্পর দিলোনা। হাত ধরে স্পষ্ট, অমায়িক, নম্র, বিনয়ী ভাষায় বললো,
-মামা, সরি ভুল হয়ে গেছে। টেনশনে কামে মনযোগ দিতে পারিনা। গত চার রাত ধরে ঘুমাতে পারিনা।….

ঘটনার অাকস্মিকতায় অামি থতমতো খেয়ে বসে অাছি। বললাম -ঠিক অাছে যাও।।
নিজের উপরে ভিষণ রাগে, ক্ষোভে চুপ করে অাছি। অপরাধ প্রবনতায় ভুগতে থাকলাম।
ভাবলাম সে কেনো কিছুদিন ধরে ঘুমাতে পারেনা? কি টেনশন তার? এটা যেনে অন্ততো, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারলেও পাপের বুঝাটা কমতে পারে।
-মামা কি হইছে? ঘুমাইতে পারোনা কেন?
কিচ্ছু বলতেছেনা। চুপচাপে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছে।
অাবার জিজ্ঞেস করলাম,
-মামা, এতো টেনশন কিসের?
এবার রিকশা একটু স্লো করলো। বললো,
-মামা ভালোই অাছিলাম। মফস্বলে একটা দোকান ছিলো।
ব্যাবসা ভালোই চলতেছিলো। একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক হয়, মেয়েটা অনার্স পরে।
মাঝখানে হঠাৎ করে অাগের মতো ভাও দেয়না। খালি ব্যাস্ততা দেখায়।
অনেক কান্দাকাটির পরে অাবার স্বভাবিক হয় সম্পর্ক।
একদিন তাদের বাড়িতে গেলে প্রতিবেশীরা ধরে বিয়া করাইয়া দেয়।
তারপরে, ভালোই চলছিলো। বউ কলেজে যাইতো, অামি ব্যাবসা।
হঠাৎ একদিন বাড়ি গিয়া দেখি বউ বাপের বাড়ি গেছে।
ফোন দিলে বলে, বাপের বাড়িতে থাকবো। অাইবোনা অার। বিভিন্ন সমস্যার কারণে অামাগর বাড়িতে থাকবেনা।খবর নিয়া শুনি অারেক পোলার লগে খাতির হইছে, তারে বিয়া করবো।

হঠাৎ একদিন পুলিশে অাইসা ধরে নিলো। নারী নির্যাতনের মামলা।
অনেক ঝামেলা শেষে তালাক দিলাম নিজেই। দোকান বিক্রী করে দেনমোহরের টাহা দিলাম।
এহন রিকশা চালাই।
-অার ঐ মাইয়া?
-বিয়া করছে অাবার। মাইয়া হইছে। ভালোই অাছে। (কন্ঠটা অার্দ্র)।
-কবের ঘটনা মামা এইডা?
-তিন বছর অাগের।
-কও কি! মাইয়াতো ঠিকই বিয়া কইরা লাইছে। সুখে অাছে। অার তুমি করতাছোনা কেনো!

ততক্ষনে পুরনো ক্ষতে সেই রকম খোঁচা লাগছে। বললো,
-মামা, তিনডা বছর ধইরা পেটে ভাত যায়না। রাগে,দুঃখে এলাকা ছাইড়া শহরে রিকশা চালাই। এলাকায় যাইনা, বাড়িতে যাইনা। সবখানে ওরে দেহা যায়, উঠানে, বাহানে,ঘরে খালি অরে দেখি…. শালির বেডি জীবনটা শেষ কইরা লাইছে।….

অামার গন্তব্যে চলে অাসছি।
অালিশান বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে রাস্তার জানোয়ারের মতো নিকৃষ্ট মনে হলো।
মাথাটা উঠাতে পারতেছিলামনা লজ্জ্বায়।
যে মানুষটা এমন করে ভালবাসতে পারে তার সাথে অামি এমন ব্যাবহার করলাম….
ততক্ষনে রিকশা থেকে নামলাম।
বাসার দারোয়ান সেলুট দিয়ে হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে অাছে।
সাহস করে রিকশাওয়ালার হাতে ধরে বললাম,
-মামা, অামার খুব ভুল হয়ে গেছে তোমাকে ঐভাবে বলা। অামাকে মাফ করে দেও।
সে অতি কষ্টে নাকি অানন্দে জানিনা, কেঁদে দিলো। ধন্যাবাদ বলে,
হনহন করে উপরে ওঠে গেলাম।

[[মোরালঃ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, রিকশা ড্রাইভার, বাসের কন্ডাক্টার, হেল্পার, হোটেলের পিচ্চিদেরকে ,বেয়ারাদেরকে -তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কখনো করেননি !বা অাপনার পাশের বন্ধুটা করেনি! বা অাপনার অাত্মীয়!

কখনো কি সরি বা মাফ চেয়েছেন কুত্তার মতো ঘেউ ঘেউ করার পরে বা গালি দেয়ার পরে?

কখনো কি এটা ভেবেছেন ,এদের প্রত্যেকের একটা জীবনের গল্প অাছে?

কর্পোরেট সহকর্মীদের মিনিটে মিনিটে থেংকস দেন।
কিন্তু এই মামাদের সাথে যে দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যায় করেন, কখনো কি ধন্যবাদ দেন!

অাসেন অাজকে থেকে শপথ করি।
এই মামাদেরকে ধন্যবাদ দিবো। ভুল করলে ‘সরি ‘ বলবো।
সকল মামাদের ধন্যবাদ ।সকল দুঃর্ব্যাবহারের জন্য ‘সরি ‘ মামা।

৬৩৩জন ৬৩৩জন
0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ