আর্য রা কে? কোথা থেকে এসেছে? কেমন করে এসেছে? কেন এসেছিলো? তাদের ভাষা কি? তারা দেখতে কেমন ছিল এবং সে সময়ে এই উপমহাদেশে কারা ছিল এ নিয়ে ইতিহাসবিদ, নৃবিজ্ঞানী আর ভাষা বিদদের বিস্তর গবেষণা রয়েছে ।
গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি মানুষ জাতি অর্থাৎ “ হোমো সফিয়ান “ আফ্রিকাতে ২০০,০০০ বছর আগে জীবন আরম্ভ করে । হোমো সফিয়ান দের একটা গ্রুপ আফ্রিকা থেকে বের হয় ৭০,০০০ থেকে ১০০,০০০ বছর আগে । যাকে বলা হয় “ আউট অব আফ্রিকা”।
তখন মানুষ জাতি ঘরবাড়ি করে এক জায়গাতে বসবাস করতো না। তারা ছিল ‘ হান্টার এন্ড গেদারার ’ । জীবিকার জন্য ছুটে বেড়ানোই ছিল তাদের জীবন । সে সময় এই হান্টার গেদারার হিসাবেই কিছু মানুষ আমাদের এই উপমহাদেশে আসে ।
তখন এই উপমহাদেশে জঙ্গলে ভরা ছিল । আদিবাসী হিসাবে জঙ্গলে বসবাস করতো সাঁওতাল শ্রেণী । নৃবিজ্ঞানীদের মতে প্রায় ৬০ হাজার বছর আগে তাদের আগমন হয় এই উপমহাদেশে । সে সময় দেশ বলে কিছু ছিলনা । সীমানা ছিল না।
মানুষ যখন থিতু হতে শিখল তাদের দরকার হল চাষের জমি ,ঘরবারি আর তখন পোষমানাতে শিখল জীবজন্তু । এই থিতু হওয়ার সময়টা মাত্র ১০/১২ হাজার বছর আগে। মানুষ জাতি সৃষ্টি হওয়ার সময়ের কাছে এই সময় টা খুবই অল্প সময় ।
আর্কিওলজিরা সাম্প্রতিক কালে তুরস্কের আনাতলিয়াতে প্রথম মানব বসতি খুঁজে পেয়েছেন । ‘ গব্লেকিটেপে’ হল প্রথম মন্দির । সেটাও এই আনাতলিয়াতে। ১০ থেকে ১২ হাজার বছরের পুরানো । টাইগ্রিস আর ইউফ্রেটিস নদী দুটি আরম্ভ হয়েছে তুরস্কের দক্ষিন পূর্বে। সেখানেই এই পৃথিবীর প্রথম ভিলেজ বা গ্রাম গড়ে উঠে। এখন যে দেশ গুলো সেখানে আছে তখন এই নামে কোন দেশ ছিলনা ।
ফোটো ক্রেডিটঃ উইকিপেডিয়া
কোথা থেকে আর্যরা এখানে আসেঃ
গবেষকরা গবেষণা করে পেলেন যে মানব জাতি নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে বা মাইগ্রেনড হয়। অনেক থিওরি আছে আর্যদের আগমন নিয়ে । এক থিওরি অনুযায়ী প্রায় ১৫০০ BC বছর আগে Caucasus mountainএর পাদদেশ থেকে রাশিয়ার দক্ষিণ দিক থেকে আর্যদের আগমন হয়।এরা ছিল Catlle Herding Nomands অর্থাৎ গবাদি পশু চরানো মানুষ । আর এক থিওরি অনুযায়ী পারস্যের উত্তর দিক থেকে আর্য দের আগমন । সে সময় ইরানী বলতে পার্সিয়ান, Kurds.Oastuns, Tajiks, Baloch, Lurs মানব গোষ্ঠীকে বলা হতো । ইরান থেকে আসা জনগোষ্ঠী কে বলা হয় “ Non-indo-aryan”। মোটামুটি ভাবে বলা যায় ইরান এবং Alania যা বর্তমানে মধ্য এশিয়ায় , এই এলাকা থেকে আসে আর্য জাতি ।
এইসব যায়গা থেকেই একটা শ্রেণী ইউরোপর দিকে একটা শ্রেণী আরবের দিকে আর একটা শ্রেণী আসে আমাদের এই ভারতে।
মাইগ্রেসানের কারনঃ
নৃবিজ্ঞানীদের মতে BCE ৩৫০০ থেকে BCE ৩০০০ বছর আগে ইকলজিকাল পরিবর্তন এবং পানির সমস্যা আরম্ভ হয় এই সমস্ত স্থানে এবং এরই ফল স্বরূপ বিরাট আকারের মাইগ্রেসান হয়ে ছিল ।তাহলে আমরা দেখতে পাই আর্য জাতি যুদ্ধ করতে করতে এই ভারতে আসেনি । বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারনে আস্তে আস্তে তারা এই উপমহাদেশে, ইউরোপ এবং আরবের দিকে প্রবেশ করে ।
ভাষাঃ
১৭৮৬ সালে William Jones নামে একজন ভাষাবিদ তাঁর ভাষা গবেষণার মাধ্যমে ভাষার ব্যাপারে এক বিরাট দুয়ার খুলে দেন ।
তিনি কলকাতায় এসে ছিলেন একজন জাজ হিসাবে। কিন্তু ভাষা গবেষণা নিয়ে তিনি এতো গভীরে প্রবেশ করেছিলেন যে তিনি বাকি জীবন ভারত বর্ষে থেকে যান এবং তার গবেষণা চালিয়ে যান ।
William Jones খুঁজে পেলেন সংস্কৃত , পার্সিয়ান, গ্রীক, ল্যাটিন, গথিক এবং Celtic (কেলটিক) ভাষার সাথে অনেক শব্দের মিল । ল্যাটিন ভাষাকে বলা হয় সকল ভাষার মা । এই ল্যাটিন থেকেই সংস্কৃত ভাষার সৃষ্টি । সংস্কৃত ভাষাকে বলা হয় ল্যাটিন ভাষার সিস্টার ভাষা । আর এই সংস্কৃত ভাষা থেকেই উৎপত্তি হিন্দি যা কিনা ইন্দো আরিয়ান দের ভাষা । উত্তর ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ এবং শ্রীলংকার অধিবাসী দের ভাষা এই সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তি । ইরান তথা পারস্যের ভাষার সাথেও মিল পাওয়া যায় ইন্দ- এরিয়ান দের ভাষা ।
এই ভাবে William Jones প্রমাণ করতে সক্ষম হন একই ভাষাভাষীর মানুষ একই কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন যায়গাতে ছড়িয়ে গেছে ।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়ঃ সংস্কৃত , ল্যাটিন , ইংলিশ।
* ক্রমশ …….
১৫টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
মানুষ জাতির থিতু হওয়ার সময়কাল জেনে অবাক হয়েছি, তার আগে থেকে জীবন যাত্রা সহজ হলে হয়তো শুরুর ইতিহাস ভালো করে জানা যেতো।
অনেক কিছু জানতে পারি আপনার লেখাগুলো থেকে।
আরও লিখুন, ক্রমাগত পর্ব গুলো পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
নার্গিস রশিদ
আগের ইতিহাস গুলো লেখব ভাবছি । ধন্যবাদ সাবিনা ।
মনির হোসেন মমি
ভাষা,জাতিগত বিস্তৃতি আগমন অনেক কিছুই জানছি।পর্ব চলুক।
যদি সম্ভব হয় পূর্ব লিংকগুলো প্রকশিত পোষ্টে সংযোগ করে দিলে পূর্বের পর্বগুলো পড়তে সহছ হয়।
নার্গিস রশিদ
ভালো লাগছে জেনে ভালো লাগলো । অনেক ধন্যবাদ ।
হালিমা আক্তার
আপনার লেখা পড়ে নতুন অনেক কিছু জানতে পারলাম, আপনার পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় রইলাম। ইতিহাস সমৃদ্ধ লেখা। শুভ কামনা।
নার্গিস রশিদ
অনেক ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক তথ্যবহুল লেখা। আর্য ও আর্যপূর্ব সভ্যতা, তাদের মধ্যে চলমান সঙ্ঘাত যা এউ উপমহাদেশের সংস্কৃতিতেও ছাপ রেখে গিয়েছে তা নিয়ে জানতে পারব আশা করছি। শুভকামনা।
নার্গিস রশিদ
অনেক ধন্যবাদ । আগের লেখা ” পুণ্ড্ররা হারিয়ে যায়নি তারা আমাদের মধ্যে আছে ” তাতে দ্রাবিড় এবং আর্যদের মধ্যে সংঘাত নিয়ে কিছুটা লেখা আছে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার এমন তথ্যবহুল লেখার জন্য অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা জানাই। অনেক অনেক কিছু জানতে পারছি আমাদের ইতিহাস, ভাষা, পুর্বপুরুষ নিয়ে। পুরোই বিমোহিত হয়ে পড়লাম। আপনার লেখনীতে জাদু আছে। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন
নার্গিস রশিদ
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন ।
আরজু মুক্তা
এমন লেখা আরও পড়তেই চাই। চাই আরও জানতে।
আপনার জন্য শুভকামনা সবসময়।
নার্গিস রশিদ
আপনাকে যে পড়তে ভালো লাগছে জেনে ভালো লাগলো। এবার ভাবছি লেখব ক্রম বিবর্তন আর মানুষের story । সময় লাগবে ।
নার্গিস রশিদ
অনেক ধন্যবাদ আপু। পাশে থাকবেন । শুভকামনা ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
মানবজাতির ইতিহাস জানার অনেক বাকি। পরের পর্ব অবশ্যই পড়ব।
শুভ কামনা রইল।
নার্গিস রশিদ
অনেক ধন্যবাদ । পাশে থাকুন , ভালো থাকুন ।