
আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-৪১)
না ভাবি ওরা খাবে না, হালকা নাস্তা দিলেই চলবে।
রোহান নতুন মেহমান দুপুরে না খেয়ে যাবে ব্যাপারটা কেমন দেখায় না!
আরে ভাবী সমস্যা নেই ওরা সবাই আগামীকাল বিয়েতে যাবে, আজ শুধু মিতুর সাথে পরিচিত হয়ে চলে আসবে।
ওকে বুঝছি, রোহান শোন মিতুর ভাইয়া বিকালে তোমাদের ওখানে যাব হলুদ এর আয়োজন নিয়ে একটু দেরিও হতে পারে।
ওকে ভাবী।
মিতুকে একটু ফোনটা দেন।
নেও মিতু কথা বলো।
হ্যাঁ রোহান বলো!
ওরা কিছুক্ষনেই মধ্যেই তোমাদের বাসায় যাবে, জানু আমিও আসবো নাকি!!
হি হি হি হি হি তোমার ইচ্ছে হলে আসতে পারো মানা করছে কে!
না রে পাগলি একটু অপেক্ষা করি কাল তো দেখা হবেই।
আর শোন হলুদের সব ছবি তুলে আমাকে রাতে ইমুতে পাঠাবে।
হুম! সেইম তুমিও
আচ্ছা রাখছি, ভালো থাকো।
আল্লাহ্ হাফেজ।
আরাফ অফিস থেকে দুপুরে বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ খেয়াল করলো তার অফিসের পিয়ন।
খালিদ হাতে একটা গোলাপ নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
আরাফ গাড়ির কাচটা নিচে নামিয়ে বললো,,, আরে খালিদ যে, এইখানে কি করো.?
খালিদ সাহেব গোলাপটা পিচনের দিকে আড়াল করে বললো, বাসায় যাবো স্যার,তাই রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। ওহ্! আচ্ছা তোমার বাসা কোথায়.?
জ্বী স্যার আমার বাসা উওরাতে।।আরে আমার বাসাও ওদিকে।
আস তোমার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে যাব।
খালিদ হাসি মুখে আরাফের গাড়িতে উঠে বসলো।
গাড়িটা চলছে দুজনেই গল্প করতেছে খালিদ গোলাপটা আরাফের চোখের সামনে থেকে আড়াল করার চেষ্টা করলো।
আরাফ সব দেখেও না দেখার ভান করে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি ফেরাল।
কথার মাঝে খালিদের ফোনটা বেজে ওঠল, আমি আসতেছি আর কিছুক্ষন লাগবে।
আরে রিক্সায় না আমাদের অফিসের বড় স্যার এর সাথে ওনার গাড়িতে আসতেছি।
স্যার! হ্যাঁ বলো।
সামনে বড় মিষ্টির দোকানটার কাছে একটু দাঁড়াবেন বাসায় মিষ্টি নিয়ে যাব।
জামাল জ্বী স্যার।
সামনে মিষ্টির দোকানে পাশে একটু থামাও খালিদ মিষ্টি কিনবে।
স্যার! আজ আমাদের ৪র্থ বিবাহ্বার্ষিকী তাই আমার স্ত্রীর জন্য একটা গোলাপ নিলাম, আর মিষ্টি নিব। ড্রাইভার মিষ্টির দোকানের সামনে গাড়ি থামাল স্যার এখানে ভালো মিষ্টি পাওয়া যায়।
Happy anniversay খালিদ,তোমার বউকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিও।
জ্বী স্যার।
চল আমিও নামব বলেই আরাফ গাড়ি থেকে নামল,খালিদ মিষ্টি কেনার জন্য দোকানে ঢুকবে আরাফ থামিয়ে দিল।
খালিদ চল আমি একটু শপিং করবো পরে যাওয়ার সময় মিষ্টি নিবে। আচ্ছা স্যার বলেই খালিদ আরাফের পিচু নিল ওরা লিফট করে ৫ তলায় উঠল বিশাল বড় বড় শপিং মল খালিদের চোখ কপালে উঠল।
বড় লোকেরা এখানে শপিং করে আর আমাদের মতো গরীবের জন্য ফুটপাতের দোকান বা মধ্যবিত্তের জন্য মার্কেট বলে।
স্যার বসুন সবদিকে দোকানিরা ডাকছিলো, আরাফ “একদর” লেখা সাইনবোর্ডের শপিংমলে বসলো।
স্যার কি নিবেন বলুন!
পাঞ্জাবী আর শাড়ী দেখান বলে খালিদকে ইশারা করলো নাও পছন্দ করো।
স্যার আমার পছন্দ আপনার ভালো লাগবে! সেটা পরে দেখা যাবে আগে পছন্দ করো।
খালিদ হালকা বাদামী রং এর একটা পাঞ্জাবী পছন্দ করলো কারন আরাফের গায়ের রং ফর্সা স্যার এটা আপনাকে ভালো লাগবে।
তোমার পছন্দ হয়েছে.? জ্বী স্যার ওকে এবার পাঞ্জাবী দেখান।
কয়েকটা শাড়ী দেখে আরাফ জিজ্ঞাস করলো,খালিদ তোমার বউয়ের গায়ের রং কেমন।
স্যার কাঁচা হলুদ রং মানে ফর্সা সব রং তাকে ভালো লাগে, স্যার ভাবীর জন্য শাড়ী কিনবেন।
আরাফ হাসল না, এটা পেকেট করুন বলেই আরাফ ফিরোজা রং এর একটা শাড়ী তুলে নিল।
প্রিয়ার প্রিয় রং ফিরোজা তাই আরাফ তার জীবনের বেশি পোশাক পড়েছে এই ফিরোজা রং এর প্রিয়ার স্মৃতি মনে রেখে।
কত দাম আসছে.?
স্যার মাত্র ৫ হাজার টাকা।
আরাফ মানিব্যাগ থেকে ৫ হাজার টাকা ক্যাস একাউন্টে জমা দিয়ে পেকেট দুটো খালিদের হাতে ধরিয়ে দিল। চল কাজ শেষ আমরা নিচে যাব,বলেই খালিদকে নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে আসলো।
দুজনেই লিফটে করে নিচে নামল তারপর একটা বড় দোকানে ঢুকল আরাফ কি জানি কিনল খালিদ দেখতে পেল না।
ওরা সোজা মিষ্টির দোকানে ঢুকল আরাফ ১০ কেজি মিষ্টি কিনল।
স্যার আমার জন্য দুই কেজি নেব আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকি তো সবার বাসায় দিব। লাগবে না গাড়িতে চল পরে সব বুঝিয়ে বলতেছি, খালিদ বোকার মতো গাড়িতে গিয়ে বসল।
স্যার আপনাদের কাপড়ের ব্যাগ গুলে আরাফের দিকে পেকেট দুটো এগিয়ে দিল।
খালিদ এগুলো তোমার কাছে রাখ বলে ৫টি মিষ্টির পেকেট খালিদের হাতে দিল।
সাথে বড় আরেকটা পেকেট,
স্যার আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!
পাঞ্জাবী,শাড়ী তোমাদের বিবাহ্ বার্ষিকিতে আমি উপহার দিলাম।
আর মিষ্টি গুলো সবার বাসায় দিবে বলবে তোমাদের জন্য দোয়া করতে।
আর বড় পেকেটে একটা বিবাহ বার্ষিকীর কেক ওটা সন্ধ্যায় কাটবে।
স্যার আমি এগুলো নিতে পারব না, আমাকে মাপ করে দেন। আমরা গরীব কিন্তু লোভী না এত উপহার আমার লাগবে না আপনি আমাকে যে স্নেহ করেন আমি তাতেই নিজেকে ধন্য মনে করি।
খালিদ মাথা উঁচু করো, আমি যদি আজ তোমার বড় ভাই হতাম তাহলে পারতে আমার উপহার গুলো ফিরিতে দিতে।
বড় ভাই!
হ্যাঁ আমার ফ্যাক্টরীর প্রতিটা কর্মী আমার ভাই,বোনের মতো ওদের একটু খুশিতে রাখতে পারলে আমার ভালো লাগবে।
খালিদের চোখে আনন্দে পানি পড়তে লাগলো মুখে কোন ভাষা নেই।
তোমার বউকে বলো সন্ধ্যার পর আমি আসবো, তোমাদের দোয়া রইল।
স্যার আপনি আসবেন, আমার মতো গরীবের বাড়িতে!
হ্যাঁ অবশ্যই আসবো।
স্যার খালিদ সাহেবের বাসার সামনে চলে আসছি।
স্যার আমি যাচ্ছি সন্ধ্যার পর গরীবের বাড়িতে পায়ের ধুলো দিতে আসবেন প্লীজ।
আচ্ছা যাও, আমি আসবো।
জামাল বাসায় চলো…রোহান আর কতক্ষন অপেক্ষা করবো মিতু ভাবিদের বাসায় যাব না!
এমন প্রশ্ন অনেকক্ষন ধরে রোহানের মামাত বোন,ভাইয়েরা, বন্ধুরা করে যাচ্ছে।ওদের বা দোষ কোথায়! একজনের জন্য ৪-৫ জন মানুষ অপেক্ষা করছে। তোরা বস আমি দেখতেছে কি করা যায়, বলেই রোহান মায়ের রুমে প্রবেশ করলো।
রোহানকে দেখেই মা বললেন আমি হলুদের সব আয়োজন রেডি করে রাখছি,আরাফ আসলেই হাতে বুঝিয়ে দিবে।তার আর আসা সবাই পাগল হয়ে যাচ্ছে তো আম্মু! ভাইয়া ভাবি তো এখনো আসলো না,কখন মিতুদের বাসায় হলুদ নিয়ে যাবে তুমিই বলো।রোহান!জ্বী আম্মু।তুমি আরাফকে এখনি একবার কল দিয়ে বলো আমি ওদের তাড়াতড়ি আসতে বলেছি।
…..চলবে।
১৯টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দারুন। আরাফের মহানুভবতা অসীম। এমন বস সব প্রতিষ্ঠানে দরকার। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
একজন মানুষের ব্যবহারটা সবচেয়ে মূল্যবান কিন্তু আজকাল মানুষ সাহায্য করা তো দূরের কথা ভালো ব্যবহারটা করতেই ভুলে যায়।
আরাফের মতো মানুষ থাকলে হয়ত প্রতিটা কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম দিদি।
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল।
তৌহিদ
খালিদ মানুষটা বেশ রোমান্টিক বোঝা যাচ্ছে। আরাফের মনে কি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।
ভালো থাকুন আপু।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আমার মনে হয় প্রতিটা পুরুষের খালিদ সাহেবের মতো হওয়া উচিত।
তাতে প্রতিটা মেয়েই অর্থের অভাব পেলেও ভালোবাসা দিয়ে তা পূর্ণ করে নিতে পারবে।
ভাইয়া হাজার টাকার শাড়ীর চেয়ে একটা লাল গোলাপেই স্বামী স্ত্রীর কাছে বেশি ভালোবাসা বহন করে।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল ভাইয়া।
ভালো থাকুন।
হালিম নজরুল
ইদানিং চোখে খুব সমস্যা হচ্ছে। বড় লেখা পড়তে কষ্ট হচ্ছে। তবুও চেষ্টা করছি সাথে থাকবার।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
কৃতজ্ঞতা রইল ভাইয়া, পড়তে সমস্যা হলেও এতটা ধৈর্য নিয়ে আমার লেখা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিয়মিত পড়ছেন।
সত্যি সুন্দর মতামতে মুগ্ধ হলাম দোয়া রইল সুস্থ থাকুন
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল ভাইয়া।
ভালো থাকুন।
কামরুল ইসলাম
সুন্দর লিখেছেন,
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভালো লিখতে পারি কিনা! জানি না তবে চেষ্টা করছি।
আপনার সবার সুন্দর সুন্দর অনুপ্রেরনামূলক মন্তব্যে উৎসাহ্ পাই।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল
ভালো থাকুন।
শায়লা খান
খুবই ভালো লিখেছেন, মুগ্ধতা একরা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় আপু।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম,সব সময় পাশে থাকার অনুরোধ রইল।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল..
ভালো থাকুন।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ উপস্থাপন , মুগ্ধতা নিয়ে পড়লাম, ভালো লাগলো।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুরু থেকে প্রতিটা পর্ব পড়ে উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা রইল ভাইয়া।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকুন।
এস.জেড বাবু
বিবাহ বার্ষিকীর দুই কেজি মিষ্টি চেয়ে নিতে হয়না যদি আরাফের মতো কেউ কার বস হয়।
অসাধারণ একটা চরিত্র সাজিয়েছেন।
শুভকামনা আরাফ ও আপনার জন্য।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
কৃতজ্ঞতা রইল আপনার প্রতি আমাকে ব্লগে লেখায় অনুপ্রেরনায় দিবার জন্য।
উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকার অনুরোধ রইল সব সময়, দোয়া করবেন আমার জন্য।
আরাফের মতো মানুষেরা সমাজে বেঁচে আছে বলেই সমাজটা এতো সুন্দর।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকুন।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
বরাবরের মতোই ভালো লাগা । এগিয়ে চলুক লেখা। শুভ কামনা ।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, সব সময় এভাবে উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকুন।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, সব সময় এভাবে উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকুন।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
আরাফ তার স্টাফ খালিদের বিবাহ বার্ষিকীর জন্য এতকিছু গিফট করলো। আরাফের মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
পড়ছি আর পড়ছি।
সুরাইয়া নার্গিস
কৃতজ্ঞতা ভাইজান।
দেরি হলো আপনার রিপ্লে দিতে ক্ষমা করবেন।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা রইল।