ছেলে রনি নিজ ঘরে সারা দিন শুয়ে থাকে। কোন কিছু খেতে চায়না । রাতে নাকি ভালো ঘুমও আসে না । নিজেকে সব কিছু থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
সিমটোম গুলো চলছে অনেক দিন থেকে। স্কুল থেকে কমপ্লেন এসেছে বাচ্চা কথায় কথায় মেজাজ দেখায়। কারর সাথে মিশতে পারেনা। এবং পড়ায় ভীষণ অমনোযোগী ।
মা ভেবে পায়না কি করবে। স্কুলের কাউন্সেলর থাকে বাচ্চাদের কথা শোনার জন্য। মকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
আমিনা তাড়াতাড়ি নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে রওনা দায়। আয়নাতে চোখ পড়ে, চেহারায় একটা কষ্টের আভাষ পড়ে গেছে। চোখের কোণে কালি । কে বলবে , আমিনা ছোটো ছোটো দুই বাচ্চার মা যার বয়স মাত্র বিশের কোঠায় ।
সামনে বসা কাউন্সেলর । বাচ্চার কথা বলতে থাকেন তিনি। বের করার চেষ্টা করেন সত্যি ঘটনা। তারা তো প্রফেশনাল, কথা বের করেন সু – চিন্তিত ভাবে।
কথায় কথায় বের হয়ে পড়ে আসল ব্যাপার । পরিবারের মধ্যে চলমান অশান্তি , রনির বাবার অত্যাচার,কন্ট্রোলিংক আচরণ, মানসিক ভাবে অত্যাচার এসব বের হয়ে পড়ে।
যা সে কোনদিন কারর কাছে বলতে পারে নাই। কাউন্সেলর এমন একটি পেশা যাকে নিরপেক্ষ (Non-judgemental) হতে হয় ,ভালো লিসেনার অর্থাৎ যে কিনা সব কিছু মনোযোগ দিয়ে শোনে এবং গোপনীয়তা বজায় রাখে।
আমিনা এই পারিবারিক অশান্তি কারর সাথে শেয়ার করতে পারেনা মানুষের Non judgemental আচরণ এবং গসিপ ছড়ানোর ভয়ে।ভরসা পেয়ে সে সব কিছু তার কাছে শেয়ার করে ।
কিন্তু এগুলো তো বাচ্চার উপর প্রভাবিত হচ্ছে। একটা বাচ্চা কে বড় হতে হয় হাসিখুশি পরিবেশে।যেখানে সে দেখতে পাবে তার মা সন্মানিত হচ্ছে বাবার দ্বারা । এবং তখন সে এটাই শিখতে থাকবে। তা না হলে পরোবর্তি জীবনে সেও এই একি ব্যাবহার করবে তার নিজের বিবাহিত জীবনে।
এভাবে একটা পরিবার প্রস্ফুটিত হতে পারেনা। বাচ্চারা দেখতে দেখতে শিখে।
আমিনা ঘরে ফিরে। কাউন্সসেলিং ব্যাপারটা এমন, হয়ত কাউন্সেলর কিছু করতে পারবেনা, অর্থাৎ রনির বাবাকে অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকতে বলার এখতিয়ার তার নয়। কিন্তু মনের কথা বলাতে ক্ল্যাইন্টের মনের জোর বেড়ে যায় । একটা সিদ্ধান্ত নিতে শক্তিশালী মন গোড়ে উঠে।এবং একটা সাহসী প্রতিবাদী মন গোড়তে সাহায্য করে।
‘স্বভাবের প্রতিবাদ করা এবং তপ্ত লোহার উপর হাত বুলিয়ে আনা বোধ করি একই । উভই ক্ষেত্রে বীরত্ব থাকতে পারে তবে আরাম নাই।’ রবীন্দ্র নাথের উক্তিটি তাকে শক্তি দায়।
স্কুল কাউন্সেলর একটা লিস্ট ধরিয়ে দিলো আমিনাকে । যাতে লেখা আছে পারিবারিক নির্যাতন একটা বাচ্চার উপর কি কি প্রভাব ফেলতে পারে , যেমন বাচ্চা উদবিগ্নতা(angjaiti) এবং হতাশা বা ডিপ্রেশন ভুগতে পারে, রাতে বিছানা ভেজানো, নিদ্রাহীনতা, কনফিউজড, পড়াশোনায় মনোযোগ কমা, খেতে না পারা বা খিদে না থাকা ( Eating disorder) ,অতিরিক্ত রাগ, নিজেকে দোষী মনে করা, নিরাপত্তা হীনতা, একাকীত্ব, ভীত, ক্ষমতা হারানো, এসব তো থাকবেই আর বড় হলে ড্রাগ বা মদে আসক্ত ,হাত কাটা বা সেলফ হার্ম অথবা ওভার ডোজ ঘুমের ঔষধ সেবন করে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে।
সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট করা যায়না।আমিনা ভাবতে থাকে মা হিসেবে সন্তানের ক্ষতি সে হতে দিতে পারেনা।আমিনা শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। তাকে লড়তে হবে।
আমিনা ভাবতে থাকে কি সুন্দর হাসিখুশি একটা মানুষ ছিল বিয়ের আগে সে। একটা সুস্থ পরিবেশে সে বেড়ে উঠেছিল । যতো অশান্তি বিবাহিত জীবনে এসে।
আমিনা ভাবতে থাকে একেকটা বিয়ে মানে একেকটা মেয়ে কে পানিতে ফেলা। আর মেয়েটা প্রাণপণে চেষ্টা করে কি ভাবে কুলে উঠা যায়। যে সাঁতার দিয়ে কুলে উঠতে পারবে সে বাঁচতে পারলো যে কৌশল জানেনা তাকে ডুবতে হবে।
আমিনা একটা সিদ্ধান্ত নায় কি ভাবে সচেতনতা বাড়ানো যায়। মেয়েরা কে স্কুলের মাধ্যমে বোঝাতে হবে বিয়ে জিনিস টা কি? কি ইনভল্ব এতে । কি কি বাধা বা প্রথিবন্ধকতা আসতে পারে। নানা রকমের পারসোনালিটির পুরুষ মানুষের সম্মুখীন হতে পারে।
এটা কোন ভাবেই একটা সহজ জিনিস নয় অনেক দায় দায়িত্ব আছে। ছেলে খেলা তো নয়ই । ‘marriage is not a hindi film’।
অনেক সময় একটা মেয়েকে যথেষ্ট বাস্তব জ্ঞান হওয়ার আগেই বাবা/মাই বিয়ের মধ্যে ঠেলে দায়। যাকে বলা হয় যোরপুর্বক বিয়ে দেয়া (forse marriage) । এটা আইন করে বন্ধ করা উচিত।
বাবামা এবং সমাজ কে বোঝানো উচিত বা Raise Awareness করা উচিত তারা বাবা/মার সঠিক দায়িত্ব পালন করছে কি না। অনেক বাবামা পাত্রর কোন কিছু না দেখেই বিয়ে দিয়ে দায় যা নেগ্লেজেন্সির আওতায় পড়ে এবং যাকে আইন বিরুদ্ধ করা উচিত।
পাঠ্য পুস্তকে দেয়া উচিত কি ভাবে ভালো মা বাবা হওয়া যায় ।
আমিনা প্রস্তুত হতে থাকে সমাজকে বদলানর জন্য । একটা কিছু করতে হবে । ‘ আমরা যদি না জাগি মা ক্যামনে সকাল হবে।”
৩টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
চমৎকার বিশ্লেষণ। আমাদের দেশে মেয়েদের সামাজিক অবস্থান এখনো ভালো নয়। অনেক পুরুষ এখনো নিজেকে রাজা বাদশা ভাবে। পরিবর্তন হচ্ছে মন্থর গতিতে। বাবা মায়ের বিভেদ সন্তানের উপর মানসিক প্রভাব ফেলে এটাই অনেকে জানেন না।
নার্গিস রশিদ
পুরুষের নিজেকে রাজা বাদশা ভাবা বিষয়টি পরিবার থেকেই দেয়া হয়, বিশেষ ভাবে মা দ্বারা । পেছনের কারন স্বার্থ । বেশিরভাগ মার কোনো ইনকাম থাকেনা। ইনকাম না থাকার কারনে পেনশনও পায়না। বৃদ্ধ বয়েসে ছেলের উপর নির্ভর করতে হয় ।সেই বৃদ্ধ বয়েসের কথা চিন্তা করেই পুত্রের পাতে ভালো খাবার পড়ে মা দ্বারা। ছেলে দেখাশুনা করবে কিনা তার কিন্তু কোনো ঠিক নাই । অনেক ক্ষেত্রে ছেলের বাড়িতে গলগ্রহ হয়ে থাকতে হয়। সমস্যা গুলো কোথা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে এবং কি ভাবে তার সমাধান করা যায় তা চিন্তা করার সময় এসেছে। নানা রকম পলিসী সরকার থেকেই করতে হবে। জেন্ডার সমতা বাড়াতে হবে মন মানসিকতায় । অনেক বড়ো করে ফেললাম। দুঃখিত । শুভ কামনা অনেক।
স্বপ্ন নীলা
অতি চমৎকার একটি লেখা। বাবা-মাদের বেশি বেশি সচেতনতামূলক সেশন প্রয়োজন।
শুভকামনা রইলো।