দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মূল ভিলেন হচ্ছে হিটলার। এই একজন ব্যক্তির জন্য পুরো বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ চলেছিল। আহত নিহত হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ। হিটলার শুধু ইহুদিই নিধন করেছিল এক লাখের উপর। নির্যাতন নিপীড়ন এর বিভৎসতার এক অন্য রুপ দেখেছিল বিশ্ববাসী। এই হিটলার কিন্তু প্রচন্ড মেধাবী ছিলেন। খুব দরিদ্র পরিবার থেকে শুধু মেধার জোড়ে হিটলার হয়েছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর। চমৎকার ছবি আঁকতেন। অর্থাৎ তার একটা শিল্পি মনও ছিল। কিন্তু তার মেধা, শিল্পি সত্তা সব ছাপিয়ে যায় সেই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের ভয়াবহতায়। বিশ্ব ইতিহাসে হিটলার একটি “ঘৃণার” নাম।
সিরিয়াল কিলাররা সাধারণত খুব ট্যালেন্টেড হয়।
অতদূর না গিয়ে আমাদের এই বাংলাদেশেএ ইতিহাসেই দেখতে পাই ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। নিঃসন্দেহে মেধাবী ছিলেন। কিন্তু নৈতিকতার মানদন্ডে সে একদম তলানিতে। যেসব পাক আর্মি অফিসার এদেশের নিরিহ জনগণকে হত্যা, ধর্ষণ করেছিল তারাও তো মেধার জোড়েই অফিসার হয়েছিল। কিন্তু তাদের প্রাতিষ্ঠানিক বা সামরিক শিক্ষা তাদের মানুষ করতে পারেনি। তারচেয়েও ভয়াবহ ছিল এদেশীয় রাজাকার আলবদর ও আলশামস এর নেতারা। জামাতের আমির গোলাম আজম একজন উচ্চশিক্ষিত ও মেধাবী ব্যক্তি ছিলেন। তাও ইসলামি শিক্ষায়। কিন্তু তার ইতিহাস আমরা জানি। মুজাহিদ, নিজামী ইসলামি ছাত্রসংঘের মেধাবী ছাত্রনেতা ছিল। কিন্তু নিজ স্বজাতিকে খুন, ধর্ষন করতে তাদের নীতিতে বাধেনি। সভ্যতার চরম বিপর্যয় দেখেছি আমরা।
স্বাধীনতার পর বা আগে এদেশে এমনকি সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় অনৈতিক কাজ, ক্রাইমগুলো করে শিক্ষিত ও মেধাবী মানুষেরা। মেধাবীদের অপরাধেও থাকে মেধার ছাপ। কিন্তু মানব সভ্যতার জন্য তাদের এই মেধা কেবল বিপর্যয়ই ডেকে আনে, সভ্যতাকে পিছিয়ে দেয়। মানব প্রজাতি হলেও তাদের আমরা “পশু” বলি। অর্থাৎ, মেধার সাথে মূল্যবোধ, নৈতিকতার খুব একটা সম্পর্ক আছে বলে মনে করি না। কম মেধাবী বা মেধাহীন মানুষও নীতি নৈতিকতা দিয়ে সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে পারে, পৃথিবীর সৌন্দর্য বাড়াতে পারে।
হুমায়ুন আজাদ, অভিজিত, রাজিব হায়দার…মেধাবী ছিল। প্রগতিশীলতার নামে তাদের ঘৃণার চর্চার কারণে, মানুষের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল কার্যকলাপের কারণে তাদের নির্মম হত্যাকান্ডে এদেশের বেশিরভাগ মানুষ প্রতিবাদ দূরে থাক বরং খুশি হয়েছিল। তারা সভ্যতার সবক শেখাতে ভুল পন্থা নিয়েছিল। যেসব নাস্তিক বিদেশে এসাইলাম নিয়ে আছে তারাও “বিজ্ঞানমনস্ক ও মেধাবী” হিসেবে প্রচারিত। জংগিদের মত তারাও চরমপন্থি। চরমপন্থা সভ্যতার অন্তরায়।
এদেশের শিবিরের “মেধাবীরা” রগ কাটায় পারদর্শী। কিছু প্রাইভেট মেধাবী মেধার ধাক্কায় এলেম অর্জন করতে করতে নিজের বুকে বোমা বেধে পাবলিক প্লেসে আত্মাহুতি দিয়ে ধর্ম উদ্ধার করতে গিয়ে নরক নসিব করে নেয়।
এদেশের সবচেয়ে স্বিকৃত মেধাবী হল বিসিএস ক্যাডাররা। কিন্তু কয়জন প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি মুক্ত? কয়জন আছে যার ঘুষের টাকা হাতে নিতে গেলে বুক কেপে ওঠে, আত্ম গ্লানিতে ভোগে কয়জন।
একটা জোক্স বলি-
– অমুক স্যার ঘুষ খায় না।
– কত পর্যন্ত খায় না?
তেমনি প্রতিটা সেক্টরের সবচেয়ে করাপ্টেড পার্সনটাই দেখবেন সবচেয়ে মেধাবী। জামালপুরের সেই ডিসি, ডি আই জি মিজান, ডি আইজি প্রিজন…. এদের মেধা নিয়ে আপনার সন্দেহ আছে???
সম্প্রতি আলোচিত বুয়েটের আবিরার হত্যার আসামীদের নিয়ে কথা প্রসংগে অনেকেই (আমিও) আফসোস করেছি যে- আহা, মেধাবী ছেলেগুলো বিপথে গিয়ে খুন করে ফেললো। তারা দেশকে ভাল সার্ভিস দিতে পারতো। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম আমার এই চিন্তায় ভুল আছে। এই ছেলেগুলোর মেধা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু এরা নীতি নৈতিকতার মানদন্ডে অনুত্তীর্ণ । ইঞ্জিনিয়ার হয়ে এরা হত একেকটা চোর। মেধাকে কাজে লাগাতো দুর্নীতি করতে। মেধার জোরে পাওয়া পদকে ব্যবহার করতো দেশের ক্ষতি সাধন করে নিজেদের আখের গোছাতে।তাই এদের মেধা নিয়ে আফসোস করার কিছু নাই। এরা ক্ষতিকর প্রাণ। মানবতার, সভ্যতার জন্য বিপদজনক এই মেধাগুলো। এদের বিনাশ হওয়াই ভাল!!!
দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য । যেই মেধা সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর, মানবতার জন্য ক্ষতিকর, দেশের জন্য সমাজের জন্য ক্ষতিকর সেসব মেধার বিনাশ হোক।
২৪টি মন্তব্য
নাজমুল হুদা
ভালো মানুষ হওয়া আর মানুষ হওয়া অনেক পার্থক্য।
ভালো মানুষ দেশপ্রেমিক নষ্ট করার জন্য আজকের রাজনীতি দায়ী।
শিপু ভাই
অনেকটাই
মোহাম্মদ দিদার
বেশ যুক্তি সংগত কথা।
চিন্তাধারা ও ছিলো গভীর।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ
মনির হোসেন মমি
আপনার শেষের কথার সাথে আমিও একমত -দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য । এদের নিয়ে যারা আফসোস করেন তাদেরও মেধা আছে তবে কথায় আছে চোরে চোরে মাস্তদ ভাই।পারফেক্ট লেখকের মত অনেক কিছুই তুলে ধরলেন লেখায়-সেই ২য় বিশ্ব যুদ্ধ থেকে শুরু করে ‘৭১ । অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া বিষয়টি বুঝিয়ে দেয়ায়।
শিপু ভাই
আপনাকেও ধন্যবাদ প্রিয় মমি ভাই
মোঃ মজিবর রহমান
বুদ্ধিজিবি হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী জেনারেল রাও ফরমান কিন্তু।
আর হ্যা আমি হিটলারকে পছন্দ করি। তিনি ইহুদি হত্যা করেছিলেন ওবং বলেছিলেন কিছু বাচিএ রাখলাম ভবিসসত প্রজন্ম জানবে ইহুদি কত খারাপ। তা মুসলমানরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছএন।
শেষে আপনি খুব চুলচেরা যে বিশ্লেষন করলেন আমি ওকমত নই। এদের কে বিপথগামি করছে? কারা এদের পরিচালনা করছে?
আপনি বলবেন অরা অন্যের কথায় চলবে কেন? তারা চলতে বাধ্য হই। আপনি শিবির কে খারাপ বলবেন কিন্তু দুর্নিতি তে কয়জন আছে বলতে পারবেন???
শিবির বাদে দল, লীগ, সমাজ এই সংগঠনের কয়জনকে নিতিবান পাবেন, বুকে হাত দিয়ে নিশ্চিত বলুন!!!
শিবির রাজনিতির স্বার্থে অনেক করে কিন্তু দুর্নিতে কয়জন বলুন।
হিটলার দেশের জন্য করেছে কিন্তু আমাদের সরকার দেশের জন্য ছাত্ররাজনিতিকে সুসঠভাবেও পরিচালনা করে না।
শিপু ভাই
বিম্পি জামাত শাসনামলে জামাত শিবিরের দুর্নীতির অনেক ঘটনা আছে
মোঃ মজিবর রহমান
বিগত কেয়ারটেকার সরকার তাহলে তাদের ছেড়ে দিয়েছিল তাই বোঝাবেন। মুদ্রার দুই পাশেই দোস আছে। সুতরাং কয়জন তখন গ্রেফতার হয়েছিল লিস্ট খুজলে ১০ জনু পাওয়া যাবেকিনা সন্দেহ আছে।। আমি জামাত করিনা। কিন্তু গ্রিনা করিও তবুও সততা, ন্যায় তাদের অন্য দলের তুলনায় অনেক অনেক কম ।আছে। ১৯৭১ সালের জন্য আমি তাদের গ্রিনা করি।
সাবিনা ইয়াসমিন
মেধাবীদের ক্রাইমেও থাকে মেধার ছাপ। ইতিহাসে যত ভয়ংকর অপরাধ যজ্ঞ ঘটেছে সবই ঘটেছে এই মেধার জোরেই। মেধাবীরা যেকোনো ক্রাইমকে আর্টের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম! এটা প্রমাণিত নোংরা সত্য।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ 🙂
জিসান শা ইকরাম
নীতি নৈতিকতার শিক্ষা আসে পরিবার থেকে, এতে মেধার কিছু নেই।
আমার ৩২ বছরের ঠিকাদারী জীবনে কয়েকশত ইঞ্জিনিয়ারকে ঘুষ দিতে হয়েছে। মাত্র একজন ইঞ্জিনিয়ার পেয়েছিলাম, যিনি ঘুষ নেননি কখনো। ঘুষখোর ইঞ্জিনিয়ার সমাজে ঐ ইঞ্জিনিয়ার শেষ পর্যন্ত চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বিদেশে গিয়ে চাকরি করেন এখন।
আমি একজন সরকারী কর্মকর্তা পাইনি যাকে বিনা ঘুষে কাজ করাতে পেরেছি।
উগ্রতা কোনো কিছুতেই ভালো না, তা আস্তিক হোক বা নাস্তিক।
শিপু ভাই
সহমত মামা
চাটিগাঁ থেকে বাহার
“দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য। যেই মেধা সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর, মানবতার জন্য ক্ষতিকর, দেশের জন্য সমাজের জন্য ক্ষতিকর সেসব মেধার বিনাশ হোক।”
আপনার সাথে একমত।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ বাহার ভাই
আকবর হোসেন রবিন
“দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য” “পাপকে ঘৃণা কর পাপীকে নয়” বারবার এই দুইটা বাক্যের মধ্যে দ্বন্ধ তৈরি হচ্ছে।
শিপু ভাই
ঘৃণা না করলেও মাখামাখিও করা যাবে না
ইঞ্জা
দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য । যেই মেধা সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর, মানবতার জন্য ক্ষতিকর, দেশের জন্য সমাজের জন্য ক্ষতিকর সেসব মেধার বিনাশ হোক, এইটিই চমৎকার বলেছেন ভাই।
আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি এই দেশে ভালো মানুষের সংখ্যা খুবই কম, ফলশ্রুতিতে ঘুষ, দূর্নীতিতে ভরে গেছে এই দেশ।
অসাধারণ পোস্ট দিলেন ভাই, খুব ভালো লাগলো।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ ইঞ্জা ভাই
ইঞ্জা
ভালোবাসা ❤
রেহানা বীথি
পোস্টে অনেক কথাই উঠে এসেছে। অপরাধী, সে মেধায় পারদর্শী হোক আর না হোক, ঘৃণা করি আমরা। কিন্তু যে ব্যক্তি অপরাধ করছে, সে একদিনে অপরাধী হয়ে ওঠে না। আর্থ – সামাজিক, পারিবারিক, বন্ধুমহল এসবের ওপর নির্ভর করে একজনের ব্যক্তিগত সত্ত্বা গড়ে ওঠে।
বর্তমানে শুধু আমাদের দেশ নয়, গোটা বিশ্বই এক অসুস্থতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতা আর প্রতিহিংসাই যেন জীবনের মোক্ষ। নেই কোনও সহনশীলতা। ক্ষুধার্ত পথশিশুকেও আমরা একটা রুটি চুরির দায়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করি নির্দ্বিধায়।
শিপু ভাই
এর সমাধান কী?
আরজু মুক্তা
আসলেই, এরা প্রকৃত মানুষ হতো না।
শিপু ভাই
আমিও তাই মনে করি