লোকটা মানিবব্যাগ খুলে পাঁচটাকা বের করে ছেলেটাকে দিলো। ছেলেটা এতিম। বয়স ও খুব একটা বেশি না। টাকা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো নাম কি?
-তামিম
-বাহ্! সুন্দর নাম। কে রাখছে?
– জানি না। সব্বাই এই নামে ডাকে আর আমিও সাঁয় দেই!
– ও! তোর মা বাবা কই থাকে?
– হেইয়াও জানি না। বুঝ গেয়ান হওনের পর থেইক্যা রেল স্টেশনে থাকি। আমার লগে আরো অনেক গুলা থাকে! আমার দোস্তসববগুলা।
– ওওও! ঈদের আগে কি তোদের নতুন জামা দেয়া হয়?
– কয়েক বছর আগে একবার দিছিলো! আর দেয় নাই! কেয়া! আপ্নে দিবেন? আমারে একলা দিলে কিন্তু নিমু না। আমার দোস্তগুলারেও দিতে হবে।
– লোকটা চিন্তায় পড়ে গেল! মানিব্যাগে এত টাকা তো নাই। তাছাড়া আজকে ব্যাংকে যাইতে হবে। ৫ লক্ষ টাকা তুলতে হবে। তারপরও জিজ্ঞেস করলেন ” তা তোমার দোস্তরা মিলে মোট কতজন আছো? ”
– খাঁড়ান গুইনা লই! তামিম হাতের করে গুনতে শুরু করলো ” আব্বাস, লিটন, তইমুর, নিলয়, মামুন, ফরিদ, বল্টু, শাকিল, নুরু। মোট দশ জন আমি সহ । দিবেন কিইন্যা ?
-হুম। দিবো। তুমি তোমার সব বন্ধুদের ডেকে এনে এখানে অপেক্ষা করো। আমি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এনে তোমাদের নিয়ে যাবো।
– বন্ধু না দোস্ত , আর যদি না আসেন?
– আসবো।
– ঠিকাছে।

লোকটা ব্যাংকে গেল। টাকা তুললো, তারপর দশ হাজার টাকা আলাদা করে রেখে বাকী টাকা একটা বেগে ভরে রাখলো। সেখানে তার নাম ঠিকানা, মোবাইল নম্বর সব ছিলো।

তিনি তামিম ও তার দোস্তদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। পথে মধ্যে মোটর সাইকেলবাহী ছিন্তাইকারী এসে এক হেঁছকা টান দিয়ে তার টাকার বেগ টা নিয়ে উধাহ্ হয়ে গেলো।

লোকটার মাথার উপর যেন আঁকাশ ভেঙ্গে পড়লো। টাকার শোকে তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়লো। তিনি চোখ মুছে তামিমের উদ্দ্যশে আবার রওনা দিলেন। টাকা যখন চিন্তাই কারী নিয়েই গেল তাহলে আর ওদের নতুন জামা কিনে দেয়ার দর্কার নেই! একথা একবার তার মাথায় এলো। আবার তিনি ভাবলেন যা হওয়ার ভালোর জন্যই হয়। তারা তো আমাকে আঘাত করতে পারতো। টাকার জন্য খুনের ঘটনা তো বিরল না।
কিন্তু তা তো করে নি। শুধু শুধু কেন এতিম বাচ্চা আর পথশিশুদের কষ্ট দিবো। তিনি ভাবতে ভাবতে তামিমের কাছে চলে আসলো। তামিমের সাথে তার দোস্তরাও আছে।

তিনি তাদের পছন্দ মতো জামা প্যান্ট কিনে দিলেন। বাকী দশ হাজার টাকার এক টকাও তিনি নিজের জন্য রাখেন নি। তারপর তাদের বিদায় দিয়ে তিনি বাসায় গেলেন। একদিকে তার মন খ্রাপ। আরেকদিকে তার ভিতর একটা আত্মতৃপ্তি কাজ করছিলো।

বাসায় গিয়ে মলিন মুখে বাথরুমে ঢুকলেন। সেখান থেকে গোসল করে বের হলেন। তার স্ত্রী বললো -” কি ব্যপার! তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেন! কি হইছে?
– কেমন দেখাচ্ছে?
– এমন ভাব করে আছো যেন তোমার বউ মরে গেছে! কিন্তু আমি তো আছি। তা আর কোন বউ নাই তো তোমার? তাদের কেউ মরছে নাকি?
– লোকটার মুখ আরো মলিন হয়ে গেল! এই মহিলা ননস্টপ কথা কিভাবে বলতে পারে তা তার মাথায় ঢুকে না।

হটাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। তার স্ত্রী দরজা খুলে একটু চমকে গেলেন। দুইজন পুলিশ এসেছে। হাতে একটা কালো বেগ! পুলিশ বললো “- আমি সিনিয়র এসপি রায়হান। ভিতরে আসতে পারি?
-জ্বী, আসুন।
– উনি আপনার হাজব্যান্ড?
-হুম।
-উনার নাম আনিসুল ইসলাম?
– হুম, উনি কি করছে? উনারে ধইরা নিয়া যাবেন?
– না।
– এইযে আনিসুল সাহেব আপনি কি বোকা নাকি?
– জ্বী!! কেন?
– আপনার টাকা ছিন্তাই হইছে, অথচ থানায় কোন জিডি করেন নাই কেন?
– ছিন্তাইর টাকা কি ফেরৎ পাওয়া যায়!!
– যাবে না কেন! এই যে আপনার টাকা। দেখুন ঠিক আছে কিনা?
-বলেন কি? কোথায় পেলেন?
– সে অনেক কথা! আপাতত আমরা যাই।
– সেকি কথা! চা খেয়ে যান অন্তত!
– না! অন্য একদিন আসবো।

আনিসুল মনে মনে ভাবে ” যা হয় ভালোর জন্যই হয়! আর যারা অন্যের ক্ষতি করে না, তাদের ক্ষতিও আল্লাহ্ হয়তো হতে দেয় নাহ্

৫৪৫জন ৫৪৫জন
0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ