মানুষ সামাজিক জীব। সমাজই তার উত্তম স্থল। সমাজেই রয়েছে মনুষ্যবোধ, শিষ্টাচার ও নৈতিকতা নিয়ে গড়ে উঠার বা বেড়ে সকল উপাদান।
আমরা যে যেখানেই থাকিনা কেন শিখার জন্য সব জায়গা ও পরিস্থিতির মাঝেই শিখে নিতে হয়।
আমি একদা বাইসাইকেলে রাস্তা ভ্রমণ করে যাচ্ছি। সামনে গ্রাম্য বড় ভাই, বাইসাইকেলেই অগ্রমান। বড়ভাইয়ের সামনে একজন গ্রাম্য মুরুব্বী হেটে যাচ্ছে। কিছু সময় পিছু পিছু যাচ্ছি। এক সময় আমি সামনেরত ভাইকে বললাম,” ভাই বেল বাজান”। ভাইয়ের উত্তর, “সে আমার চেয়ে বয়সে বড় বেল দেওয়া যাবেনা”।
আমি চুপ বনে নিশ্চুপ রইলাম। ভাই লেখা পড়া যানেনা কিন্তু তার আদব আমআকে মোহিত করে, বড় আমার চেয়েও অনেক বড় বয়সে, অক্ষর জ্ঞ্যান না থাকলেও তার কাছে থেকে শিখলাম। যদিও আমি তখন ক্লাশ ফোর বা ফাইভে পড়ি।
তাই আমি মনে করি শিক্ষা সকল সময়, সকল জায়গাতেই আছে। এটাই মানুষের আদর্শবান হয়ে গড়ে উঠার আদর্শনীয় স্থান , সমাজ আদর্শনীয় স্বভাবে গড়ে উঠার স্থল।
একদিন ক্লাশে ক্লাশ করি। ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় ইংরেজি ক্লাশ করছি। আমাদের কলেজ সরকারী নতুন হওয়াতে সব ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকে পুর্ণ নয়। ইংরেজীর টিচার কম ছিল। দুইজন সম্ভবত ইংলিশ ডিপার্টমেনট স্যার। একজন স্যার পান এতো পরিমান খেত যে, তার কথা অস্পষ্ট, সবাই গ্রহণ করতে পারতাম না বা উচ্চারণ বুঝতে পারতাম না। স্যার যখন ক্লাশে ঠুকতে আমরা পিছনের দরজা দিয়া পালাতাম।
ইসলামের ইতিহাস বিভাগের একজন স্যার ছিলেন, সহযোগী অধ্যাপক জনাব মোঃ আমজাদ হোসেন। তিনিই আমাদের ইংরেজীর ক্লাশ নিতেন। স্যারের ক্লাশ নেওয়ার কৌশল মুগ্ধ করত সবাইকে।
একদিন স্যার ক্লাশ নিচ্ছেন। কেউ কেউ বেঞ্চির উপর পা তুলে বসত। তাতএ স্যার মনক্ষুন্ন হলেও সরাসরি কিছুই বলতেন না। অন্যদিন বা অন্যক্লাশ অন্য সুন্দর গল্পের মাধ্যমে জানান দিতেন।
একদিন স্যার পড়াচ্ছেন। ক্লাশ শেষের ১০ বা ১৫ মিনিট বাকি তখন তিনি একটা গল্প বলার কৌশলে আদব কায়দা সম্পর্কে বলতেন।
ক্লাশের শেষ সময়ে স্যার বললেন আজ তোমাদের একটি গল্প বলি। স্যার বলল আমরা একদিন ট্রেন ভ্রমণে যাচ্ছি। সামনের সিটে কয়েকজন মুরুব্বি ও কিছু ইয়াং ছেলে বসে গল্প করছে। স্যারের পাশে বসা এক মুরুব্বী বলেলন, ইয়াং ছেলের নক করে” তোমরা ইয়াং ভবিতসতের সুনাগরিক হবে, তাই তোমাদের কিছু আদব শিক্ষা অতি প্রয়োজন, তাহল তোমাদের পাশে মুরুব্বী বসে আছে তাদের সামনে তোমাদের সিটে পা তুলে বসা সমিচিন নয়।” স্যার বলল, ছেলে গুলো কোন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ পা নিচে নামিয়ে বসলেন।
সমাজএর সুনাগরিক দায়িত্ববান মুরুব্বীগণ পারে সমাজের তথা অনুজদের চালচলন, আদব ও কথা বলার ভংগি কৌশল শিক্ষা দিয়ে ভবিতষতের সুনাগরিক তৌরি করার অগ্রহনি ভুমিকা।
আর একটি গল্প বলে শেষ করি। আমি মানে ক্লাশ সেভেনে পড়ি। ক্লাশ টেনের কয়েকজন দুষ্ট বড় ভাই তাদের বান্ধবির ঠ্যাং মেরে ফেলে দিয়েছে। আমাদের প্রধান শিক্ষক খুব কড়া বিশেষ করে নারী কেলেংকারির ও বেয়াদবির খেত্রে। প্রধান শিক্ষকসহ কয়েক শিক্ষক তিন ছাত্রকে পিটালেন। পিটানোর পর অভিভাবককে পিয়ন দিয়ে ডেকে পাঠালেন। কোন অভিভাবক আসলেন না। স্কুল যা শাস্তি দেয় তারা কোন অভিযোগ করবেন না। তাদের সন্তানদের কাজের জন্য তারা লজ্জিত। পিয়নের মাধ্যমেই জানিয়ে দিয়েছে।
পুনশচঃ বর্তমানে অভিভাবক দলবল নিয়ে শিক্ষকের উপর প্রহার করা শুরু করেন। যা অতি গর্হিত অপরাধ বলে আমি মনে করি।
এখন সমাজের সুনাগরিক আগের ন্যায় সুদায়িত্ব পালন করেনা। সমাজে নাই বা দেশে নায় একত্রিত বসবাসের অভ্যাস। দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা ভাতিজা ও ভাতিজির গল্পবাজি বা আড্ডাবাজখানা। অনেকেই চেনেনা দাদা-দাদি, নানা-নানি ও চাচা, ফুফু, চাচাতো ভাইবোন। আসবে কোথা থেকে সামাজিক শিক্ষা।
সবাই এখন ব্যাস্ত সিংগেল ফ্যামিলি প্লানে।
পুস্তক বা কিতাবের বাহিরে সরেজমিনে আদব কায়দা, নৈতিকতা, সজ্জন, শিষ্টাচার শিক্ষার জায়গা বড়রা। আবার গ্রামেই ফিরে যেতে ই হয় সুস্থ মনমানসিকতা তৈরীর জন্য।
২৭টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব চমৎকার একটি শিক্ষনীয় পোষ্ট দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। সত্যিই শেখার বয়স, জায়গা বলে নির্দিষ্ট কিছু নেই। যেকোন সময় যেকোন মুহুর্তে শেখা যায়, উচিত শেখাটা। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার মন্তব্য আমাকে খুব অনুপ্রানিত করল আপু। পরিবারই এখন ভংগুর শিখব কোথায়?
আলমগীর সরকার লিটন
সত্যই মজিব দা শিখার কোন শেষ নেই কিন্তু আমরা শিখতেই চাই না কারণ ভীতরে দেমাক আছে যাই হোক আমাদের সবকিছু ঝেরে ফেলে দিয়ে সুন্দর শিখাটা নেওয়া উচিত বলে মনে করি ———অনেক শুভেচ্ছা নিবেন মজিব দা
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা লিটন ভাই। পরিবার থেকে শেখে শিষ্টাচার আবার বেয়াদবি দুটোই।
সুন্দির মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
ফয়জুল মহী
আদব শিষ্টাচার শিক্ষালয় হল নিজ নিজ পরিবার । পরিবারই বিশাল শিক্ষাক্ষত্র।
মোঃ মজিবর রহমান
খাটি কথা বলেছেন মাহি ভাই। পরিবার বিশাল শিক্ষা খেত্র।
ভাল থাকুন
সঞ্জয় মালাকার
খুব চমৎকার একটি শিক্ষনীয় পোষ্ট দাদা পড়ে মুগ্ধহলাম।
ধন্যবাদ দাদা আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো
মোঃ মজিবর রহমান
পড়ার জন্যি অশেষ ধন্যবাদ ভাইসাব
রেজওয়ানা কবির
শিক্ষনীয় লেখা। ভালো লাগল।
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকুন। অবিরিত
নিতাই বাবু
আদব-কায়দা আর মুরুব্বিদের দেখে সম্মান করা হচ্ছে, এ যুগের ছেলেপুলেদের কাছে একরকম বেয়াদবির সামিল। তাই দিন-দিন মানসম্মানও হ্রাস পাচ্ছে। ছেলে মানে না বাবাকে, বাবা মানে না দাদাকে এ অবস্থাই চলছে। শেখাবে কে? যিনি শেখাবেন, তিনি নিজেও একজন বেয়াদবির মাস্টার। তাই শেখা হচ্ছে না, কারোই।
ভালো লিখেছেন দাদা। শিক্ষামূলক পোস্ট।
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর মন্তিব্য দাদামশায়। আপনার ভাল থাকুন
মনির হোসেন মমি
সঠিক আদব কায়দা একজন প্রকৃত মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ। আমাদের সমাজের সামাজিকতা শিক্ষা এবং পারিবারিক শিক্ষার মাঝে যদি আদব কায়দার সঠিক দৃশ্য দেখা যায় তবে সমাজে বখাটের সংখ্যা সহজেই কমে যায়। খুব সুন্দর লেখা।
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ মনির ভাই। শুভ কামনা রইল।
শামীম চৌধুরী
স্মৃতি চারনে শিক্ষনীয় অনেক কিছু শিখে নিলাম। ভাল লিখেছেন। শুভ কামনা রইলো।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার প্রতি শুভকামনা এওইল ভাইজান
ছাইরাছ হেলাল
শিক্ষার ও শেখার শেষ নেই, আমৃত্যু আমাদের শিখতে হয়।
মোঃ মজিবর রহমান
ঠিক বলেছেন কুবিরাজ বস।
সুপায়ন বড়ুয়া
আদব কায়দা শিষ্টাচার পরিবার সমাজ থেকে শিখা হয়।
আপনার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষনীয় অনেক কিছু পাওয়া গেল ।
ভাল লিখেছেন। শুভ কামনা
মোঃ মজিবর রহমান
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই
তৌহিদ
লেখাটি শিক্ষণীয়। তবে আদব শিক্ষার বিষয়টি প্রথম আসে পরিবার, নিজের চেষ্টা এবং শিক্ষা থেকে। আদব একটি অনুভবের বিষয়। যারা বোঝেনা তাদের বুঝিয়েও ফল হয়না।
আবার আমার আপনার কাছে যা বেয়াদবি অন্যদের কাছে তা নাও হতে পারে। বাপপ, চাচা, ছেলে, মুরুব্বি সবাইকে একসাথে ধুমপান করতে দেখেছি। এটা ব্যাপারনা!
ভালো থাকুন ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
ঘরে বসে অনেক ফ্যামিলি ভাই, চাচা একসংগে বিড়ি, তাস, কেরাম খেলে কিন্তু বাহিরে তারা শিষ্টাচার যুক্ত। এখানে সমস্যা দেখিনা তৌহিদ ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
খাটি কথা বলেছেন মাহি ভাই। পরিবার বিশাল শিক্ষা খেত্র।
ভাল থাকুন
আরজু মুক্তা
সব শিক্ষাই প্রথমে পরিবার, তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে ওঠে। কলেজের একজন শিক্ষক যদি ছাত্রদের নিয়ে বসে সিগারেট খায়, ঐ ছাত্র কী শিক্ষা নেবে? তাহলে, পরিবেশ পরিস্থিতি বড়দের কাছ থেকেই পাওয়া যায়।
শিক্ষণীয় পোস্ট। আপনাকে ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
শিশিক্ষনীয় পোষ্ট।
ভালো লাগলো। শুভ কামনা।
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ আপু।