আগেই বলে রাখি এটা আমার মন খারাপের কথামালা। হাসির কিছু নাই। আপনি সব সময় হাসিতে থাকতে চাইলে এটা এড়িয়ে যেতে পারেন।

মন খারাপ কেন? সেটা জানি না। এরকমটা প্রায়ই হয়। মন খারাপ, ইচ্ছে করে দেয়ালে মাথা ঠুকি! কিন্তু কি হইছে নিজেই বুঝি না।

এখন আমি গ্রামে আছি। আমার ছোট ভাইগ্নার নাম শাকের। ক্লাস থ্রীতে পড়ে। ওকে নামতা শিখতে দিয়েছি। আমি অন্যরুমে মন খারাপ করে বসে আছি। হটাৎ কিছু সংখ্যা কানে ভেসে এলো। ৯×২=১৭! ৯×৩=৩৩! পাশেই শলা ছিলো। হন্তদন্ত করে গেলাম বগা পন্ডিতের মতো। বগা পন্ডিত আমার স্কুল জীবনের শিক্ষক ছিলো। উনার হাতে আমি যত মাইর খাইছি ওত মাইর আর কোথাও খাই নাই। যাইহোক, যেয়ে দেখি ভাইগ্না পায়ের উপর পা তুলে গেমস খেলে মোবাইলে আর মুখে আমাকে শোনাইয়া ভুজুং ভাজুং নামতা পড়ে। খুব রাগ হইলো বোন জামাইর উপর। পিচ্ছি টিচ্ছি সবাইকে একটা করে মোবাইল দিয়ে রাখছে! দুইটা বাড়ি পিঠি বসিয়ে ২০ মিনিট সময় দিয়ে চলে এলাম ছাদে।

কারন আমার মন খারাপ। আকাশেরও মনে হয় মন খারাপ। ছাদের কিনারায় দেয়া সাইড ওয়ালের উপর শুয়ে আঁকাশ দেখছি। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। মেঘগুলা বড্ড অলসভাবে ধীরে ধীরে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ছুটে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা মেঘ চাঁদটাকে ঢেকে রেখেছে।

খুব করে চাইলাম চাঁদটাকে দেখতে। হটাৎ চাঁদ মেঘ ফুটো করে আমার চোখের সামনে দৃশ্যমান হলো। কয়েকটা ছবি তুলে রাখলাম। মোবাইলের মিউজিক অংশে চলছে রবীন্দ্র সঙ্গীত।

শুয়ে শুয়ে চাঁদ দেখা আমার বাচ্চাকালের স্বভাব। যখন আমার বয়স তিন তখন থেকেই চাঁদ দেখতাম গ্রামের উঠানে শীতল পাটিতে শুয়ে শুয়ে। সাথে থাকতো বাড়ির বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধারা। আর থাকতো আমার মা। তারা আমাকে সহ আরো কিছু বাচ্চাকাচ্চাকে কিচ্ছা শুনাতো। সোনার কাঠি রূপার কাঠির কিচ্ছা, পিঠা গাছের কিচ্ছা, পান্তা ভাত চোর ও বুড়ির কিচ্ছা, চাঁদের বুড়ির কিচ্ছা, এক বিঘিচ্ছার কিচ্ছা।

ছোট বেলায় তাদের কিচ্ছা শুনে আমি ভাবতাম সত্যিই চাঁদে কোন বুড়ি আছে। আর বুড়ির মনে অনেক দুঃখ। সে মনের দুঃখে সুতা বানায়। তার মনে কি দুঃখ সে প্রশ্ন কখনো করা হয় নাই। ছোট বেলার স্মৃতি মনে করে মন ভালো করা যেত। কিছুক্ষন কিচ্ছা শুনার পরই মা খাওয়াতে নিয়ে যেতেন। ভাত এক নেলা মুখে দিয়েই এই উঠোন থেকে ঐ উঠোনে দৌঁড়াতাম। সাথে দৌঁড়াতো চাঁদমামা। কি অদ্ভুত ভালো লাগতো তখন! আমিও হাঁটি চাঁদও হাঁটে!

এখন আর মন ভালো হয় না শৈশব চারন করে। কারন শৈশবে মা ছিলো। এখন মা নেই। শৈশবে কথায় কথায় যখন ভূত পর্ব চলে আসতো তখনই কাম সারছে! কে কিভাবে ভূত দেখছে! কয়টা দেখছে! কোন বাগানে দেখছে! মাছ খাইতে দেখছে! গাছে বইসা থাকতে দেখছে সব চইলা আইতো! ভয়ে গুটিশুটি মেরে শুনতাম। ভালো লাগতো আবার ভয়ও লাগতো! মায়ের পাশে থাকতাম। মায়ের কাপড় ধরে বসে থাকতাম!

আমার মন খারাপ আসলে। মন খারাপ থাকলে অনেকেই অনেক কিছু করে। আমার বন্ধু গার্লফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে সেই বকাঝকা করে। আরেকজন একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আয়নার সামনে বসে নানারকম মুখভঙ্গি করে। হাসে কান্দে বিদগুটে শব্দ করে! আমার এক মেয়ে ফ্রেন্ড দরজা জানালা বন্ধ করে মুড়ি চাবায়! আরেক ফ্রেন্ড হিন্দি রিমিক্স গান ছেড়ে দিয়ে নেত্য করে! কত উপায়ে সবাই মনকে ভালো রাখতে চায়!

আমার নানা যখন জীবিত ছিলো তখন দেখতাম তিনি মন খারাপ করলে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকতেন। কিছু খেতে বললে হ্যাঁ না কিছু বলতেন না। শুধু বিছানায় এপাশ ওপাশ করতেন! সারাদিনের ক্ষুধা কতক্ষন আর মন খারাপ করে থাকা যায়। আমায় ডেকে কইতেন, আরিফ নানার জুতাজোড়া খাটের নিচ থেকে বের কর। চা খাইতে যামু। পরে সবাই তোষামোদ করে ভাত খাওয়াইতাম নানাকে। নানি অবশ্য এত রাগ করেন না। নানি এখনো জীবিত আছেন। আলহামদুলিল্লাহ্।

তবে আমার মন খারাপ। মা মারা যাওয়ার পর আমার ভিতর কিছু টেনশন ঢুকে গেছে। সারাদিন খট খট শব্দে বাজতে থাকে। মায়ের আদরে বেড়ে উঠা একটা ছেলে হটাৎ করে মা হারালে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। মন নিয়ে কতকথা বলছি। সত্যিই আমার মন খারাপ! লেখা পড়ে মনে হতে পারে আমি স্মৃতিচারণ করছি। হয়তো করছি তবে সেটা মন ভালো করার জন্য।

আমার ভীষন মন খারাপ। একদিনে সব কথা লেখা যাবে না। আবার লিখবো। লেখাতেই শুধু একটু শান্তি পাই। আর শান্তি পাই আকাশ দেখতে, রাতের আকাশ, মেঘলা আকাশ, চাঁদের বুড়ির আকাশ।

৮৯৭জন ৮৯৭জন
0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ