আতংকের নাম ‘কিশোর গ্যাং’

সুপর্ণা ফাল্গুনী ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ০১:৪১:৫৪পূর্বাহ্ন সমসাময়িক ২১ মন্তব্য

এখনকার সময়ে একটি আতংকের নাম ‘কিশোর গ্যাং’ । আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের অধিকাংশ এই আতংকের সাথে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে ভাবে জড়িয়ে পড়ছে‌। আজ আমরা শংকিত, ভীত কিশোর-কিশোরীদের চালচলন, সংস্কৃতি, সামাজিকতা, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মানদন্ড নিয়ে। আমাদের প্রজন্ম শিক্ষার আলোয় আলোকিত, উদ্ভাসিত হয়েছে কিন্তু আমাদের উত্তরসূরীরা প্রকৃত শিক্ষা লাভ করতে পারেনি বা আমরা তাদেরকে সেই শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। এর দায়ভার, ব্যর্থতা আমাদের উপরেই বর্তায়। আমরা তাদের হাতে সুশিক্ষা, মানবতা, সুস্থ ও সুন্দর সংস্কৃতি তুলে দিতে ব্যর্থ হয়েছি। পারিবারিক কোলাহল, অভিভাবকদেরকে দরকারের সময়ে কাছে না পাওয়া, সঠিক গাইডলাইন এর অভাবে এমনটা ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

 

কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা খুন, ছিনতাই-চাঁদাবাজি, শ্লীলতাহানি, ইভটিজিং ও মাদক ব্যবসার মতো অপরাধে বেশি জড়িয়ে পড়ছে। র‌্যাব জানায়, ২০২০ সালে বিভিন্ন অপরাধে কিশোর গ্যাংয়ের ২০ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে কিশোর গ্যাংয়ের ৭১ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শুরুতে মূলতঃ অন্যদের হামলা থেকে নিজেদের প্রটেক্ট করার জন্যই কয়েকজন বন্ধু একত্রিত হয়। পরে বেশ বড় একটা গ্যাং তৈরি হয়। পরে এখান থেকেই গুন্ডামি করে, গ্যাং বানায়, দেয়ালে দেয়ালে স্প্রে দিয়ে গ্যাংয়ের নাম লিখে। এভাবেই এটা একটি ট্রেন্ড এ পরিণত হয়ে যায়। ৫/৬ টা গাড়ি নিয়ে একসঙ্গে মুভ করে; একসময় বেশ বড় একটা গ্যাং তৈরি হয়ে যায়।

 

তবে গ্যাং তৈরি হওয়ার পর খুব দ্রুতই অন্য এলাকার গ্রুপগুলোর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়। অনেক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এরা। মেয়েলি বিষয়, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, এক এলাকার ছেলে অন্য এলাকায় গেলে, কাউকে গালি দিলে, ‘যথাযথ সম্মান’ না দেখালে, এমনকি বাঁকা চোখে তাকানোর কারণেও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গ্যাংয়ে একসময় অস্ত্র বহন করা, মাদক নেয়া শুরু হয়ে যায়। ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে দেয়ালে অনেক কিশোর গ্যাংয়ের নাম লেখা গ্রাফিতি চোখে পড়বে। মূলতঃ স্কুলে পড়তে গিয়ে কিংবা এলাকায় আড্ডা দিতে গিয়ে শুরুতে মজার ছলে এসব গ্রুপ তৈরি হয়। পরে সবরকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

 

সমাজবিজ্ঞানী রাশেদা ইরশাদ নাসির মনে করেন মূলতঃ দুটি কারণে কিশোররা এসব গ্যাং-সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়ছে।

 

প্রথমতঃ মাদক, অস্ত্রের দাপটসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।

দ্বিতীয়তঃ এখনকার শিশু-কিশোররা পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট মনোযোগ পাচ্ছে না।

 

ফলে কিশোররা যখন বন্ধুদের মাধ্যমে এসব গ্যাংগুলোতে প্রবেশ করছে এবং মাদক ও অস্ত্রের যোগান সহজেই পেয়ে যাচ্ছে তখন তার প্রলুব্ধ হওয়া এবং অপরাধপ্রবণ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তিনি মনে করেন, একদিকে সমাজে অপরাধী হওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে পরিবারে কিশোরদের একাকী বা বিচ্ছিন্ন না রেখে যথেষ্ট সময় দিতে হবে।

 

কিশোর গ্যাং-কেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি অপরাধ এবং খুনের ঘটনার পর থেকেই আইন-শৃংখলা বাহিনীর বাড়তি পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। গাজীপুরে এক কিশোর হত্যার ঘটনায় ‘ভাই-ব্রাদার’ নামে একটি কিশোর গ্যাংয়ের ৮ জনকে গ্রেফতারের কথা জানায় র‍্যাব। খুনের ঘটনা সংঘটিত হবার পর প্রশাসন পর্যন্ত নড়েচড়ে বসেছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের তাৎক্ষণিক ও ঢালাওভাবে গ্রেপ্তারে অনেক নির্দোষ কিশোর আটক পড়ছে ফলে সামাজিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে তারা, তাদের পরিবারের উপর নেমে আসে অমানুষিক , দুর্বিষহ পরিস্থিতি। সেই নিরপরাধ কিশোরদের কেউ কেউ ট্রমায় পর্যন্ত চলে যায় এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে।

 

পুলিশের মুখপাত্র সোহেল রানা বলেছেন, সারাদেশেই পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে তারা নির্দেশ দিয়েছেন কিশোরদের গ্যাং সংস্কৃতি এবং অপরাধ বন্ধ করতে; স্কুল-কলেজ, অভিভাবক এবং সুশীল সমাজের সমন্বয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম করতে।

 

আসুন আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে, তারুণ্যকে এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সচেষ্ট হই; একটি সুস্থ, সুন্দর প্রজন্ম গড়ে তুলতে সহায়তা করি। সামাজিক, পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ়, অটুট করি সেইসাথে সুন্দর, সুস্থ, মানসম্মত বিনোদনের ব্যবস্থা করি। তাহলেই আমরা একটি সুন্দর জাতি উপহার পাবো, আমাদের দেশটা একদিন সোনার সন্তানে ভরে উঠবে, বিশ্বের দরবারে আমাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হবে।

ছবি ও তথ্য-গুগল

৯১৩জন ৭৩৮জন
0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ