৪র্থ গল্প – ফরটি নাইন
ডা. মাসুম রহমানের কাছে ববিচিত্র একজন রোগী আসেন আসাদুজ্জামান নামে। তার বক্তব্য তিনি প্রতিনিয়ত খাটো হয়ে যাচ্ছেন। বিয়ের সময় তার হাইট ছিল ৫ফুট ৭ইঞ্চি, আর তার স্ত্রীর মৃত্যুর ৫ বছর পরে আজ তার উচ্চতা ৪ফুট ৯ইঞ্চি। ডা. রোগীর কথা কিছুই বিশ্বাস করলেন না। কিন্তু রোগী নাছরবান্দার মতো তার পিছনে লেগে রইল। বিশেষ বিশেষ দিনে তাকে কার্ড পাঠাতে শুরু করলো, প্রতি মাসে চিঠি লেখা শুরু করলো। বছর খানেক পরে মাসুম সাহেব দেশের বাইরে চলে গিয়ে রেহাই পেলেন। কিন্তু অনেক অনেক বছর পরে হঠাত করে তিনি লক্ষ্য করলেন তার উচ্চতা কমতে শুরু করেছে। কমতে কমতে তার উচ্চতা এখন ৪ফুট ৯ইঞ্চিতে এসে গেছে।
৫ম গল্প – সগিরন বুয়া
সগিরন টুটুল নামের একটি বাচ্চাকে দিনের বেলা দেখাশোনা করে, তার কাজই হচ্ছে টুটুলকে দেখে রাখা। সগিরনের একটি মেয়ে ছিল, প্রচণ্ড অভাবের কারণে সেই মেয়েকে বেচে দিতে হয়ে ছিল। সেই মেয়ের সাথে মনে মনে মিল খোজে টুটুলের।
৬ষ্ঠ গল্প – নয়া রিকশা
কুদ্দুস ও জাহেদার প্রথম সন্তান ছেলে হয়েছে। কুদ্দুস ভাড়ায় রিকশা চালায়। ছেলেকে নিয়ে তাদের স্বপ্নের শেষ নাই। হঠাত করেই নবজাতক বাচ্চার একটা অভিনয়ের জন্য জাহেদার কাছে তার ছেলেকে চায়। জাহেদা ছেলেকে দিতে রাজি হয়। কিন্তু শুটিং চলাকালীন হাত থেকে পরে বাচ্চাটি মারা যায়। ছবির ডাইরেক্টর সাহেব জাহেদাকে দশ হাজার টাকি দিয়ে বলেযান বাচ্চা মারা গেছে হার্ট এ্যাটাক করে।
৭ম গল্প – আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ
মীরা তার হতদরিদ্র প্রেমিককে দুপুরে খাবার নিমন্ত্রণ দেয়। সে তার বাবার সাথে গিয়ে নানা ধরনের মাছ কিনে নিয়ে আসে। সেগুলি রান্নাও হয়, কিন্তু মীরা তার বাবার ভয়ে তার প্রেমিককে বাসায় নিতে পারে না, কারণ তার বিয়ে ঠিক করা আছে এক ডাক্তার ছেলের সাথে। তাই সে তার প্রেমিক যখন তার বাড়ির কাছে আসে তখন তার হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে বলে সামনের রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিতে। এদিকে মীরার কান্না দেখে তার বাবা সেই ছেলেকে রেস্টুরেন্ট থেকে ডেকে বাসায় নিয়ে যায় খেতে।
৮ম গল্প – আনোভা
মকবুল আমেরিকায় ট্যাক্সি চালায়। এক তুষার পাতের রাতে সে নিউইয়র্ক ফেরার সময় রাস্তা থেকে এক মহিলা আর তার বাচ্চা মেয়েকে গাড়িতে নেয়। কিছু দূর এসে খাবার দোকানের সামনে গাড়ি থামিয়ে সে দেখে গাড়িতে শুধু মেয়েটি বসে আছে, তার মা চলন্ত গাড়ি থেকে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। মেয়েটির নাম আনোভা।
মকবুল পুলিশে ফোন করে জানায় ঘটনাটি। পুলিশ মেয়েটিকে নিয়ে যায় কিন্তু তার সম্পর্কে কোনো তথ্য বের করতে পারে না। পরে মকবুল আনোভার সাথে দেখা করতে গেলে আনোভা জানায় যে তার মায়ের সাথে মকবুলের আবার দেখা হবে। তারপর থেকে মকবুল সেই বিশেষ রাতে সেই একই রাস্তায় ঘুরাঘুরি করে আনোভার মায়ের দেখা পাওয়ার জন্য।
৯ম গল্প – তিনি
হঠাত করেই লক্ষ্য করলেন তিন এ্যালিফেন্ট রোডে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি কে, তার নাম কি, কোথায় থাকেন কি করেন, এখানে কেন এসেছেন কিছুই মনে করতে পারছেন না। এদিক সেদিক ঘুরে তার সারাটা দিন কেটে গেল, কিন্তু কিছুই মনে পড়লো না। দুপুরে পার্কে ঘুমিয়েছেন, ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার পকেটে অল্প যে কটা টাকা ছিল সেটাও কেউ নিয়ে গেছে। এক সময় রাত নেমে আসে, শুরু হয় বৃষ্টি। তিনি এ্যালিফেন্ট রোডের বন্ধ দোকানের সামনে একা দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকেন।
১০ম গল্প – আলাউদ্দিনের ফাঁসি
জজ নুরুল হক সাহেবের সামনে কাঠ দগড়ায় দাঁড়ানো আলাউদ্দিন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ একটি শিশুকে অপহরণের পরে হত্যা করার। বাচ্চাটিকে অপহরণের পরে ২০লাখ টাকা মুক্তিপন চায় সে। বাচ্চাটির পরিবার ১০ লাখ টাকা দেয়ার পরে বাকি ১০ লাখ টাকা নিতে এসে পুলিশের হাতে ধরা পরে সে। এদিকে বাচ্চাটির লাশ পাওয়া যায় আশুলিয়ায় বস্তা বন্দি অবস্থায়। সেই ছবি আসে পত্রিকাতেও। পুলিশ আলাউদ্দিনের বাসা থেকে বাচ্চাটির পায়ের জুতা উদ্ধার করে আদালতে জমা দেয়। এ দিকে পত্রিকাতে বাচ্চাটির লাশের যে ছবি আসে সেখানে দেখা যায় বাচ্চাটির পায়ে জুতা আছে। জজ সাহেব বুঝতে পারেন যে কেসটি পুলিশ সাজিয়েছে আলাউদ্দিনকে ফাঁসানোর জন্য, তাই তিনি আলাউদ্দিনকে খালাস করে দেন।
কদিন পরে আলাউদ্দিন জজ সাহেবের বাসায় এসে বলে যে বাচ্চাটির যে জুতা তার বাসায় পাওয়া গেছে সেই জুতা সে নিজেই বাজার থেকে কিনে এনে রেখে ছিল। বাচ্চাটিকে আসলে সেই অপহরণ করে হত্যা করেছে।
১১তম গল্প – ভালোবাসা
আবুল কাশেমের সাথে বিয়ের পরে সুইটি বেশ কিছু দিন গ্রামের বাড়িতেই ছিল। তখন কাশেম সুইটির হাত খরচা হিসেবে প্রতিমাসে ৭০০ টাকা পাঠাতো। কিছু দিন পরে সুইটি যখন তার স্বামীর সংসার করতে ঢাকায় আসলো তখন দেখল সংসার বলতে তেমন কিছু নেই। কদিন পরেই জানতে পারলো তার স্বামী আসলে মলম পাটির লোক। কিন্তু তার পরেও সে তার স্বামীকে ছেড়ে যেতে পারলো না। সে তার স্বামীর প্রেমে পরে গেছে। ভালোবাসা এমনই হয়।
১২তম গল্প – টিকটিকি
জহির তার স্ত্রীকে খুন করে, আর একজন পুলিশ অফিসার তাকে প্রশ্ন করে খুব সহজেই সেটা ধরে ফেলে।
১৩তম গল্প – ভূত
ইসলাম উদ্দিন চাকুরী থেকে রিটায়ার্ড করার পরে চলেছেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। তার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। পেনশনের টাকা দিয়ে উত্তরায় একটা জমি কিনেছিলেন, সেটার দখল পাননি। ব্যবসায় করার জন্য বন্ধুর সাথে পাটনার হিসেবে ৪ লাখ টাকা খাটিয়ে ছিলেন সেটাও ভরা ডুবি যায়। তিনি যখন তার গ্রামের পরিত্যক্ত ভাঙ্গা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালেন তখন চারধার অন্ধকার হয়ে গেছে। তিনি প্রচণ্ড তৃষার্ত ছিলেন, ঠিক সেই সময় তার পেছন থেকে একটি ছোট ছেলে বলে উঠলো ডাব খান। তিনি ডাব খেতে খেতে ছেলেটির সাথে আলাপ করে জানতে পারলেন ছেলেটি তার বাড়িতেই একা একা থাকে। রাতে তিনি খিচুরি রাঁধলেন, কিন্তু গোছল করে এসে দেখেন ছেলেটি কোথাও নেই, আবার শোয়ার সময় দেখলেন ছেলেটি তার পাশে শুয়ে আছে, কিন্তু সকাল হতেই আবার ছেলেটি নেই হয়ে গেল। কদিনের মধ্যেই ছেলেটির সাথে তার ভীষণ ভাব হয়ে গেল, ছেলেটিকে তিনি বক্র বলে ডাকেন। এই কদিন তিনি এটাও নিশ্চিত হলেন যে বক্র আসলে মানুষ না, অন্য কিছু। বক্র মাঝে মাঝেই তার জন্য নানান জিনিস নিয়ে আসে নদীর তলা থেকে, সবই স্বর্ণের। কিন্তু তার কোনো লোভ হয় না, তিনি সব আবার আগের যায়গায় রেখে আসতে বলেন। বছর ৫ পরে তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পরে। সেই সময় তার ব্যবসার পাটনার তার সাথে দেখা করতে আসেন। ১০ হাজার টাকা তাকে দিতে চান কিন্তু তিনি তা নিতে রাজি হন না। রাতে বক্র আসে তার জন্য মাছ নিয়ে, সেই মাছ আগুনে পুরিয়ে লবণ মেখে তিনি খান। তিনি ছাড়া আর কেউই বক্রকে দেখতে পায় না।
২০টি মন্তব্য
অপার্থিব
অনেক দিন আগে পড়েছিলাম। “পঙ্গু হামিদ” ও “মিস মনোয়ারা” গল্প দুটি ভাল লেগেছিল।
মরুভূমির জলদস্যু
মন্তব্যে নিজের ভালো লাগা জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।
অনিকেত নন্দিনী
এমন রিভিউ পেলে পড়া বইও আবার পড়তে ইচ্ছা করে। বইটা সংগ্রহে নাই। 🙁
মরুভূমির জলদস্যু
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
অনিকেত নন্দিনী
খালি ধন্যবাদ! ;?
আমি তো ভাবছিলাম বইটা নামাবার লিংক দেবেন। 🙁 ^:^
মরুভূমির জলদস্যু
http://www.pdf-archive.com/2014/07/13/aaj-dupure-tomar-nimantron-by-humayun-ahmed-new-book-2009/
এই নেন
ভোরের শিশির
মানুষের মনোজগতের অদ্ভুত কিছু ব্যাপার নিয়ে হুমায়ুন আহমেদ সর্বদাই লিখেছেন…
এবং আবারো, আপনার এইরকম রিভিউ পোস্ট অনন্য… ধন্যবাদ ম.জ. ভাইয়া 😀
মরুভূমির জলদস্যু
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে প্রিয় শিশির। -{@
ভোরের শিশির
😀
আমি ভাবছি, বইমেলা শুরু হলে কি কান্ডই না ঘটাবেন আপনি 😀
মরুভূমির জলদস্যু
কিছুই না।
আগে বই মেলা থেকে গাদা গাদা বই কিনতাম, এমনও হয়েছে বাড়ি ফেরার ভাড়াও শেষ হয়ে গেছে। এখন বই কিনি না। আর নতুন বই আমি পুরনো করে পড়ি। :p
রিমি রুম্মান
ভাল লাগলো অনেকদিন পর হুমায়ুন আহমেদ এর লেখা পড়ে। সত্যি বলতে কি, লেখকের ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনাগুলোতে আমি এতোটাই বিরক্ত যে, এরপর আর লেখকের কোন লেখাই পড়া হয়নি। অনেক ধন্যবাদ আপনার কল্যাণে আবারো লেখাগুলো পড়া হল বলে।
মরুভূমির জলদস্যু
লেখকের ব্যাক্তিগত জীবন যতটানা নিজের তারচেয়ে অনেক বেশী সমাজের। সমাজে অনেকটাই প্রভাব পড়েছে, তবে পাঠকের পাড়ায় ঘাটতি আসাটা ঠিক না। -{@
জিসান শা ইকরাম
গল্পকে এত ছোট করে উপস্থাপন করা কঠিন
আপনি পারছেন এমন করে।
গল্পের একটিও পড়া হয়নি পূর্বে…… বইটি কিনতে হবে।
শুভ কামনা।
মরুভূমির জলদস্যু
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। চাইলো আরো ছোট করা যায়, কিন্তু তাতে অনেক কিছুই বাদ যাবে।
অরুনি মায়া
হুমায়ুন আহমেদের প্রতিভার কথা আর কি বলব ,উনি শুধু উনারই তুলনা | অসাধারণ ও অদ্ভুত চিন্তাশক্তির অধিকারী |
ধন্যবাদ দস্যু ভাই সংক্ষিপ্ত গল্প গুলোর জন্য 🙂
মরুভূমির জলদস্যু
স্বাগতম আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আসলেই হুমায়ূন আহমেদের তুলনা হয় না।
ছাইরাছ হেলাল
ভাবছি, এত সংক্ষেপ করেন কী করে।
পড়লাম সব কটাই। বহুমাত্রিক প্রতিভা তাঁর। তার ভক্ত না হয়েও কিছু জানাশোনার চেষ্টা করেছি,
তার লেখাগুলো। বাদশা নামদার পড়ে অবাক হয়েছি, ইতিহাস নিয়ে এর আগে এমন কোন লেখা আমার পড়া হয় নি।
ভূত বেশ লাগল।
মরুভূমির জলদস্যু
আমিও কোন লেখকেরই ভক্ত নই, তবে অনেকের লেখাই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। -{@
মোঃ মজিবর রহমান
খুব ভাল লাগলো তবে রাজাকার হামিদ আর ভাল
ধন্যবাদ ভাই।
মরুভূমির জলদস্যু
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ