হুমায়ূন আহমেদ
ঢাকা শহরে চিত্রাদের বাড়িটি একতালা। মা বাবা আর ছোট বোন নিয়ে তাদের সংসার। চিত্রার মা শায়লা বানু হাইপার টেনশনের রোগী আর তার বাবা চৌধুরী খলিলুর রহমান আলাভোলা টাইপ ভালো মানুষ।
এক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের সাথে চিত্রার বিয়ের কথা হচ্ছে। কথাবার্তার এক পর্যায়ে বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। প্রথমে এ্যাঙ্গেজমেন্টের কথা হয়, কিন্তু ছেলে পক্ষ ঠিক করে সেদিনই সাথে করে কাজি নিয়ে আসবে এবং বিয়ের কাজটাও শেষ করে ফেলবে। শুধু তাইনা, বিয়ের পরে সেদিনই চিত্রাকে নিয়ে যাবে।
চিত্রার ছোট বন মীরা, এবার SSC দিয়েছে, অত্যন্ত রূপবতী। ইদানিং ফোনে যেন কার সাথে কথা বলে। শায়লাবানু বিষয়টা লক্ষ্য করেন, একদিন তিনি মীরাকে ডেকে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করেন। মীরা স্বীকার করে যে সে একটা ছেলের সাথে টেলিফোনে কথা বলে কিন্তু ছেলেটাকে সে চেনে না, কখনো দেখেনি। শায়লা বানু যুক্তি দিয়ে মীরাকে বুঝি দেন যে ফোনের ছেলেটি মজনু ছাড়া আর কেউ না। মজনু চিত্রাদের ভাড়াটিয়ার বাসায় থাক, ইন্টারমিডিয়েট পাশ। পারে, দুবছর আগে সে এসেছে চাকরির খোজে, চাকরি মেলেনি। এই কথা শুনে মীরাও চিন্তা করে দেখে আসলেই তাই হতে পারে। শায়লা বানু একদিন তার ভাড়াটিয়াকে ডেকে এনে জানান যে মজনু তার ছোট মেয়েকে ফোনে ডিস্টার্ব করে। এই কথা শুনে তিনি মজনুকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ১০০বার কান ধরে উঠবস করিয়ে বাড়ি থেকে তারিয়ে দেন। কিন্তু মজনু যখন কান ধরে উঠবস করছে তখনই আবার ফোন আসে সেই ছেলেটির, মীরা বুঝতে পারে ভুল হয়ে গেছে মজনু আসলে ফোন করে না।
রহমান সাহেবের ছোট বোন ফরিদা। ওর আবার একটু হাতটানের স্বভাব আছে, ডিপাটমেন্টাল স্টোর থেকে এটা সেটা তুলে নিয়ে আসে, এমনকি চিত্রাদের বাসে থেকেও একবার একটা সোনার হার চুরি করে নিয়ে এসেছি। ফরিদা তার স্বামীর সাথে রাগারাগি করে, এবং তার স্বামী তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ফরিদা চিত্রাদের বাড়িতে চলে আসলে রহমান সাহেব ফরিদাকে তার স্বামীর কাছে দিয়ে আসতে যায়। ফরিদার স্বামী ফরিদাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয় না। রহমান সাহেব তার বোনকে সেখানেই রেখে বাড়িতে চলে আসেন। এদিকে ফরিদা ঠিক করে সকাল হলেই সে ৫তালার ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করবে। যেদিন চিত্রার বিয়ে হওয়ার কথা সেদিন সকালেই ফরিদা ছাদ থেকে লাফ দেয়।
রহমান সাহেব তার বোনের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান বোন মারা গেছে কেউ একজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি একটা এ্যাম্বুলেন্সে করে তার মৃত বোনকে নিয়ে তার গ্রামের বাড়ির দিকে চলতে শুরু করেন, বর্তমানের কোন ঠিকানাই তিনি মনে করতে পারেন না, তার মাথা এলো মেলো হয়ে যায়। তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানাও তিনি ভুলে যান।
১৬টি মন্তব্য
স্বপ্ন নীলা
আসলে হুমায়ুন আহমেদ কি করে যে লিখতেন, তার মাথায় গিজ গিজ করতো শুধু সাহিত্য বুদ্ধি —
মরুভূমির জলদস্যু
ঠিক বলেছেন।
জিসান শা ইকরাম
বইটি পড়িনি।
তবে পড়বো আশা রাখি।
মরুভূমির জলদস্যু
শুভকামনা রইলো।
নুসরাত মৌরিন
হুমায়ুন আহমেদের লেখা বইগুলোর মাঝে এই বইটা আমার বিশেষ প্রিয়।ধন্যবাদ,অনেকদিন পর বইটার কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।বুক শেলফ থেকে নামিয়ে বইটা আরো একবার পড়তে ইচ্ছে করছে…।
মরুভূমির জলদস্যু
আমি হুমায়ূন আহমেদের বেশির ভাগ বইই এখন দ্বিতীয় বার পড়তেছি।
ইমন
এটা ভালো উদ্যোগ . এই টাইপের লেখা দরকার।
মরুভূমির জলদস্যু
ধন্যবাদ
লীলাবতী
রিভিউ ভালো লেগেছে।হুমায়ুন আহমেদ এর লেখা মানেই চমক।
মরুভূমির জলদস্যু
হিমু আর মিসির আলিই সবচেয়ে বেশী ভালো লাগতো, আর সাইন্সফিকশন গুলিও।
খেয়ালী মেয়ে
বইটা পড়েছি, আজ আবার রিভিউ পড়ে ভুলে যাওয়া অনেক কিছু মনে পড়ে গেলো…
মরুভূমির জলদস্যু
ঠিক এই কারণেই আম,ই সামান্য লিখে রাখি নিজের জন্য। সেটাই এখানে ওখানে চালান করে দি।
মেহেরী তাজ
পড়েছি। আপনার দেওয়া রিভিউ পড়ে মনে হচ্ছে আজ আবার পড়ি।
হুমায়ূন আহমেদ তো কি আর বলবো!
মরুভূমির জলদস্যু
হুমায়ূন আহমেদর লেখায় এক ধরনের সারল্য আছে, তাই টানে।
অলিভার
নগরজীবনের এই সাধারণ মানুষের ঘটনার মাঝেও যে কত অসাধারণ গল্প থাকতে পারে তা বোধ করি একমাত্র হুমায়ূন আহমেদ স্যরের লেখা গুলি পড়লেই জানা যায়। তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ ঘটনা, অথচ উনার লেখনীতে নতুন মাত্রা পেয়ে জয় করেছে পাঠকের অন্তর।
মাঝে মাঝে স্পয়লার রিভিউও কিন্তু মন্দ লাগে না। বরং পড়া বই নতুন করে পড়ার ইচ্ছে জাগিয়ে দেয়।
আরও অনেক রিভিউ আশা করছি 🙂
মরুভূমির জলদস্যু
অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
আসলেই প্রায় নাথাকা অংশেও চমৎকার গল্প বের করতে পারতেন হুমায়ূন আহমেদ।