মাতোয়ালী আমাকে জিজ্ঞেস করলো, খাজা বাবার দরবারে দেওয়ার জন্য গোলাপ পাপড়ি ও গিলাফ নিতে চাই কিনা?
জবাবে বললাম, গোলাপ পাপড়ি নেবো শুধু।
উনি বুঝে গেলেন আমার নিয়ত, এক দোকানে নিয়ে গিয়ে এক ঝুড়ি গোলাপ পাপড়ি কিনে দিলেন, এরপর আমাকে নিয়ে এগিয়ে চললেন গেইটের দিকে, গেইটের ভিতর নিয়ে গিয়ে প্রথমে নিয়ে গেলেন দরবারের ঔরস শরীফের জন্য রাখা বড় ডেক (ডেকচি) যেখানে রাখা সেই জায়গায়, ওখানে যে দুইটা ডেক রাখা আছে তা দেখে আমি অবাক হলাম।
ডেক গুলোর বড়টাতে কমছে কম বিশজন মানুষ ভিতরে আরামসে বসে থাকতে পারবে, আর ছোটটা কিছুড়া ছোট বড়টার তুলনায়।
জিজ্ঞেস করলাম এতো বড় ডেকে কিভাবে রান্না হয়, নিচে দেখছি বড় চুল্লি এর উপরে ডেক, রান্না করলেও সেখান থেকে খাবার কিভাবে তোলা হয়?
উনি জানালেন, রান্নার পর হট প্রুফ ড্রেস পড়ে কয়েকজন লোক নামে এই ডেকের ভিতর, ওরাই খাবার তুলে দেয়।
উনি আমাকে বললেন, অনেকে এইখানে আসেন মানত করে, ওরা কেউ কেউ মানত অনুযায়ী পুরা ডেকের খরচা দেন, আবার অনেকে শেয়ার করেন, যেমন ভিতরে দেখুন অনেক টাকা পয়সা ডেকের ভিতরে দেওয়া আছে, যার যা মানত সেই অনুযায়ী লোকজন টাকা ডেকের ভিতরে দিয়ে যান।
ছোটবেলায় শুনেছিলাম আমার আব্বা পুরা ডেকের টাকা দিয়েছিলেন, আমি নিজেও মানত করে কিছু টাকা ডেকের ভিতর দিয়ে দিলাম।
এরপর আমরা এগিয়ে গেলাম খাজা বাবা মইনউদ্দিন চিশতির দরবারের উদ্দেশ্যে।
খাজা বাবা, যার ডাক না আসলে নাকি কেউই উনার দরবারে যেতে পারেননা, উনার দরগাহ জিয়ারত করে অনেকের মনের আশা পূরণ হয়েছে।
আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি খাজা বাবার দরবারের দিকে, চুম্বকের মতো যেন আমাকে টানছে খাজা বাবা।
কথিত আছে বড় পীর হিসেবে সুপরিচিত আবদুল কাদির জিলানী (রহঃ)– এর সাথে তাঁর সম্পর্ক এতোই ভালো ছিল যে, কিছু কিছু জায়গায় খাজা মঈনুদ্দিনকে তাঁর ভাগ্নে বলেও উল্লেখ করা হয়।
তাঁর জীবনীতে বর্ণিত আছে, ইরাকের বাগদাদে আবদুল কাদির জিলানীর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন তিনি।
এ সময় জিলানী তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ইরাকের দায়িত্ব শেখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্তানের দায়িত্ব আপনাকে দেয়া হলো।”
এরপর খাজা বাবা তখন ভারতবর্ষে আসেন এবং ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন, উনি সাতানব্বই বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেন, উনার দাফন এইখানেই করা হয়।
আমাকে প্রথমেই খাজা বাবার দরগাহ ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়, আমি জিয়ারত শুরু করলে মাতোয়ালি সাহেব সাথে আনা গোলাপ পাঁপড়ি খাজা বাবার দরগাহর উপর ছিটিয়ে দিতে লাগলেন।
……… চলবে।
ছবিঃ গুগল।
৩২টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
মন ভরে গেল।১০০ভাগ পবিত্র স্থান। এ সব স্থানে গেলে মন এমনিতেই পবিত্র হয়ে যায়।আপনার উছিলায় পবিত্র মানুষটির দরবার শরীফ দেখতে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।তার রহমতের দৃষ্টি আমাদের সবার মাঝে পড়ুক তার উছিলায় যেন আমরা পাপী মাফ পেয়ে যাই।আমীন।
ইঞ্জা
আমীন।
ধন্যবাদ ভাই, খুব সুন্দর মন্তব্য দিয়ে খাজা বাবার গুণকির্তন করলেন, আবারও ধন্যবাদ। 😍
তৌহিদ
দাদা আপনার তথ্য ঠিক আছে, আমি পড়লাম অন্য বইয়ে ডিটেইলস।
অনেক দিন বাগদাদে অবস্থানের পর বিদায় বেলায় বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) নির্দেশ প্রদান করেন, হে মইনুদ্দিন তুমি হিন্দুস্থান সফর করবে। পথে পথে দিন কাটে মইনুদ্দিনের আর রাত কাটে কবরস্থানে। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে মইনুদ্দিনের সুখ্যাতি। যেখানেই যান প্রচন্ড ভীড় জমে যায় মানুষের।
হিজরী ৫৮৩ সালে হযরত খাজা মইনুদ্দিন পবিত্র হজ্ব পালন করেন। আশেকে রসুল, নবী প্রেমে দেওয়ানা হযরত খাজাকে আল্লাহর রসুল (সঃ) নির্দেশ প্রদান করেন হিন্দুস্থান গমণ করার জন্য। সেখানকার বেলায়েত প্রদান করা হয় তাঁকে।
নির্দেশ পাওয়ার পর একদিন চিন্তিত অবস্থায় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন মইনুদ্দিন। সেই অবস্থায় দেখলেন, হজরত মোহাম্মদ (সঃ) তাঁর হাতে আজমীর শহরের দৃশ্য দেখিয়ে দিলেন সাথে দিলেন দিক নির্দেশনা। এরপর দয়াল নবী (সঃ) দিলেন একটি সুমিষ্ট আনার। হিন্দুস্থানের দিকে রওয়ানা দিলেন মইনুদ্দিন সাথে কুতুবুদ্দিন। প্রথমে লাহোর, লাহোর থেকে দিল্লী হয়ে মইনুদ্দিন আসেন আজমীর শহরে।
তবে বিস্তারিত আরো চমকপ্রদ কিন্তু।
ছাইরাছ হেলাল
মন দিয়ে পড়তেছি, আমাদের উপমহাদেশের অতি বিখ্যাত পীর সাহেবের
মাজার জিয়ারতের সৌভাগ্য আপনার হয়েছে, যা অনেকের-ই হয় না।
অনেক ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত, উনি আমাকে এই সুযোগ করে দিয়েছেন, এখন অপেক্ষা কখন আল্লাহ্ কারিম কখন ডাকবেন তার ঘর দেখে আসার, হজ্ব করার সুযোগ দেবেন এই অপেক্ষায় আছি।
ধন্যবাদ ভাইজান।
তৌহিদ
খাজা মইনুদ্দিন চিশতির ভারতবর্ষ আসার যে কথা আপনি লিখেছেন সেটা সত্য নয় বা যারা বলেছেন তিনি হয়তো জানতেন না।কারন আমি যেটা শুনেছি তার সাথে এই তথ্যের মিল পাচ্ছিনা।
বিস্তারিত তথ্য পেলে জানাচ্ছি দাদা। তবে তার দরবার দেখার ইচ্ছে আছে।
ইঞ্জা
হয়ত আমারটা, নাহয় আপনারটা, কোন একটা সত্য হতে পারে, অনুরোধ করবো আপনি যা শুনেছেন তা জানানোর জন্য, অপেক্ষায় রইলাম ভাই, ধন্যবাদ। 😊
তৌহিদ
হ্যা চেষ্টা করবো দাদা।
তৌহিদ
দাদা আপনার তথ্য ঠিক আছে, আমি পড়লাম অন্য বইয়ে ডিটেইলস।
অনেক দিন বাগদাদে অবস্থানের পর বিদায় বেলায় বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) নির্দেশ প্রদান করেন, হে মইনুদ্দিন তুমি হিন্দুস্থান সফর করবে। পথে পথে দিন কাটে মইনুদ্দিনের আর রাত কাটে কবরস্থানে। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে মইনুদ্দিনের সুখ্যাতি। যেখানেই যান প্রচন্ড ভীড় জমে যায় মানুষের।
হিজরী ৫৮৩ সালে হযরত খাজা মইনুদ্দিন পবিত্র হজ্ব পালন করেন। আশেকে রসুল, নবী প্রেমে দেওয়ানা হযরত খাজাকে আল্লাহর রসুল (সঃ) নির্দেশ প্রদান করেন হিন্দুস্থান গমণ করার জন্য। সেখানকার বেলায়েত প্রদান করা হয় তাঁকে।
নির্দেশ পাওয়ার পর একদিন চিন্তিত অবস্থায় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন মইনুদ্দিন। সেই অবস্থায় দেখলেন, হজরত মোহাম্মদ (সঃ) তাঁর হাতে আজমীর শহরের দৃশ্য দেখিয়ে দিলেন সাথে দিলেন দিক নির্দেশনা। এরপর দয়াল নবী (সঃ) দিলেন একটি সুমিষ্ট আনার। হিন্দুস্থানের দিকে রওয়ানা দিলেন মইনুদ্দিন সাথে কুতুবুদ্দিন। প্রথমে লাহোর, লাহোর থেকে দিল্লী হয়ে মইনুদ্দিন আসেন আজমীর শহরে।
তবে বিস্তারিত আরো চমকপ্রদ কিন্তু।
ইঞ্জা
হাঁ ভাই, আমি গুগলে পড়েছি, ধন্যবাদ সুন্দর তথ্যটি দেওয়ার জন্য।
মোঃ মজিবর রহমান
তার দরবারে রান্না করতে তেমন কোন মসলা ব্যাবহার হই না, তবুও আল্লাহর রহমতে খুব টেস্টি। শুনেছি
তার দরবারে হিন্দু মাড়োয়ারিরা ট্রাক ট্রাক চাল ডাল সবজি দেন উপকারের জন্য।
ইঞ্জা
বিষয়টা আমার জানা ছিলোনা ভাই, ধন্যবাদ নতুন তথ্যটির জন্য।
মোঃ মজিবর রহমান
ওকে ব্রাদার
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ভাই
চাটিগাঁ থেকে বাহার
ভ্রমণে আপনার সাথে আছি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
ইঞ্জা
খুব খুশি হলাম ভাই, ধন্যবাদ।
মাছুম হাবিবী
আমার জীবনের বড় একটি শখ খাজা বাবার মাজার জিয়ারত করা। আল্লাহ্ যদি শখটা পূরণ করেন। আর আপনার লেখাটি পড়ে মাজার জিয়ারতের শখটা দ্বিগুণ বেড়ে গেল। অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম ভাইয়া।
ইঞ্জা
শখ যদি থাকে, আল্লাহ্ যদি তৌফিক দিয়ে থাকেন, একবার ঘুরে আসুন ভাই, একজন কামেল আউলিয়ার সাথে সাক্ষাত করাও ভাগ্যের ব্যাপার। 😊
আরজু মুক্তা
ভ্রমন মনকে প্রসারিত করে। চলুক ভ্রমণ কাহিনী। আমি পিছে পিছে।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, খুব খুশি হলাম।
সাবিনা ইয়াসমিন
পীর-আউলিয়া-মাশায়েখদের জীবন বৃত্তান্ত, ইতিহাস নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক প্রায়শই হয়/ হচ্ছে। তাই আমরা ব্যপারটি বাদ রাখছি। আপনি একটি উপমহাদেশ ঘুরেছেন, সেই ভ্রমনের আনন্দ আমাদের সাথে শেয়ার করছেন এতেই আমরা ধন্য। ইনশাআল্লাহ
সাথে থাকবো পথের শেষ পর্যন্ত।
শুভ কামনা ভাইজান। 🌹🌹
ইঞ্জা
খুব সুন্দর মন্তব্য, পীর মাসায়েকদের নিয়ে অনেক তথ্য আছে, কিন্তু এইখান থেকে আমাদের বেছে নিতে হবে সত্যটি।
সাথে থাকুন আপু, নতুন পর্ব দিয়েছি।
জিসান শা ইকরাম
এত্তবড় ডেক!! এ তো বড় সর একটি পানির ট্যাংকির মত,
ধারনাও করা যায় না, এতে রান্না করে নাড়েন কিভাবে?
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
বড় সর পানির টাংকির চাইতেও বড় ভাইজান, আমি নিজেই আশ্চর্য হয়েছিলাম এতো বড় ডেক দেখে।
পরের পর্ব আজ দিয়েছি, দেখবেন প্লিজ।
রেজওয়ান
নতুন কিছু জানলাম। যদিও আমি কখনো মানত করিনি কারণ মানত ব্যাপারটা আসলে ঠিক বুঝি না আমি। তবে ভারত ভ্রমণের ইচ্ছা আছে মাস দুই সময় নিয়ে ভারত ভ্রমণ করবো হয়তো একদিন👌
ইঞ্জা
মানত না বুঝার কি আছে রেজওয়ান, মানত হলো কোন কিছু পাওয়ার মানষে কেউ যদি শিরনী দেয়, মেজবান দেয়, কোন মাজার জিয়ারত করে আল্লাহর কাছে বলে,” হে আল্লাহ্ তুমি উনার উছিলায় আমার কাজটি সফল করে দাও, আমীন”, একেই বলে মানত।
রেজওয়ান
আসলে কারো উছিলায় কিছু চাওয়া হয়নি কখনো। এমন ভাবে মাজারে বা কারো কবরে গিয়ে কিছু চাওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু বলিওনি কখনো তাই বলেছিলাম মানতের সম্পর্কে ধারণা শুন্যের কোঠায়।
ইঞ্জা
আসলে তুমি যা চাইবে তা আল্লাহর কাছেই চাইবে, শুধু উছিলা বা মারফত হবেন সেই আওলিয়া যার মাজার জিয়ারত করতে গিয়েছো, তোমার চাওয়াটা যা আগে থেকেই ছিলো রা হলো মানত।
শাহরিন
ডেক দেখেই তো মাথা নষ্ট।
ইঞ্জা
জ্বি আপু, এমন ডেক আমি আর দেখিনি।
মণি কাশফিতা
ভাইয়া, ভীষণ ভালো লেগেছে আমার, আসলে আমিও খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রহঃ) কে ভীষণ পছন্দ করি।
আমি তাঁর জীবনী পড়ে, জানতে পেরেছি যে, তিনি হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) এর বংশধর এবং উনার পিতা-মাতা তাঁকে শৈশবে হাসান বলে ডাকতেন। এবং বড় পীরসাহেব আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর বংশধর। এই দুজন মানুষ এবং এই দুজনের পূর্ব পুরুষগণ সবাই আমার কাছে অধিক প্রিয়জন।
ইঞ্জা
আলহামদুলিল্লাহ, এ অনেক বড় বিষয় আপু, খুব খুশি হলাম।